অভিশপ্ত দোলনা

অভিশপ্ত দোলনা

 

স্যার,এই দোলনায় যত মানুষ বসেছে একদিন আগে হোক আর পরে হোক সবাই আত্মহত্যা করে অথবা তার বীভৎস লাশ পাওয়া যায় ।কিন্তু আপনি এখনো বেঁচে আছেন কিভাবে?

রিতুকে নিয়ে এই পার্কে বেড়াতে আসছিলাম গত ৭দিন আগে।রিতুর কাছে ভালো লাগায় আবারো এসেছি।কিন্তু গার্ডের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।

-আপনি সেদিন আমাকে বলেন নাই কেন?

-স্যার, ওই দেখেন লেখা আছে দোলনায় বসা নিষেধ।আপনি কি লেখাটা পড়েন নাই?

এবার আমার চোখে লেখাটাই আটকে গেলো।রিতুকে দেখাতেই সে ভয়ে কেঁদে ফেললো।গার্ড আমাকে আবারো সাবধান করে দিয়ে বললো,

স্যার সাবধানে থাকবেন!

আপা,স্যারকে দেখে রাখবেন!কখন কি করে বসবে সে নিজেও জানেনা।

আমি আরেকটু বিস্তারিত শুনতে যাবো।কিন্তু তার আগেই তার বড় কারো ডাকে সে চলে গেল।

রিতু আমাকে ধরে বললো,

এখানে আর এক মূহুর্তও না।চলো, বাড়িতে চলো।

গার্ডের কথার সাথে আমার এক সপ্তাহের এক্সপেরিয়েন্স মেলানোর চেষ্টা করলাম।হ্যাঁ, এই এক সপ্তাহে আমার সাথে অনেক কিছুই হয়েছে।যেটাকে বলা হয় প্যারানরমাল একটিভিটি।আমি ঘুমের মাঝে স্বপ্নে শুধু দোলনাটার ছবিই দেখেছি।কিন্তু শুধু দোলনা দেখিনি।দোলনাতে একটা নারী বসে থাকে।

রিতু আমাকে ধরে জোরে একটা ঝাঁকুনি দিলে আমার সম্ভিত ফিরে আসে।আমি কল্পনায় ডুবে গিয়েছিলাম।

আমাকে জোর করে ধরে রিতু চলে আসলো।

সারাপথ আমার মাথায় গার্ডের কথা বাজতে থাকলো।কেন ওই দোলনাতে বসলে মানুষ মারা যায়?বা তাকে হত্যা করা হয়?যদি সত্যিই মারা যায় তাহলে আমি বেঁচে আছি কেন?

রিতু মেয়েটাও কেমন!গার্ডের থেকে ওই কথা শুনে কান্না শুরু করেছে তো থামার নাম নেই।আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে কাছে বসিয়ে বললাম,

আমার কিছুই হবে না!তুমি টেনশন করো না।হলে এই কদিনে হয়ে যেত!

তুমি এই কয়েকদিন যে এবনরমাল আচরণ করেছো তাতে আমার মনে এখন প্রশ্ন জাগছে৷ ওই দোলনায় বসার কারণেই এমন হচ্ছে কিনা!

আমি আবার কি আচরণ করলাম!ঘুম থেকে উঠে কত মানুষ হাঁটাহাঁটি করে।আমার এমন হয়েছে তাই তুমি রাগ করছো?

এই সাতদিনেই তোমার সাথে এমন হয়েছে!

রিতুকে রেখে আমি পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলাম।দরজার ওপাশে কিছুক্ষণ লাথিগুতো দিয়ে দরজা খুলতে বলে রিতু চুপ হয়ে গেল।।

প্রতিরাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি পার্কের ওই দোলনাটাই বসে আছি।আমার সাথে একটা মেয়ে বসা।মেয়েটার সাথে আমি অনেক গল্প করছি কিন্তু মেয়েটাকে চিনতে পারছি না।স্বপ্নটা একদিন দেখলে স্বাভাবিক বলে মনে হতো। কিন্তু প্রতিদিন একই স্বপ্ন কেন?

সিদ্ধান্ত নিলাম সমস্যাটার সমাধান আমাকে করতে হবে।

রাতে ঘুমানোর সময় দেখি জানালা খোলা।জানালা আটকাতে গিয়ে দেখি একটা বাচ্চা ছেলে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

ভয় পান না আমাকে দেখে?

তুমি কে?

আমার কথার উত্তর না দিয়ে বাচ্চাটা দৌঁড় দিল।হঠাৎ আমার মনে হলো আমি তো ৭ তলার উপরে, তাহলে এখানে বাচ্চা কিভাবে আসবে।কি হচ্ছে এসব?

আমি অনেক সাহস নিয়ে জানালা দিয়ে নীচে তাকালাম।নীচের ফ্লোরের আলোতেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না।তাহলে এটা কি আমার হ্যালুসিনেসন?

জানালা আটকিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।প্রচণ্ড টেনশন আর শরীরের উপর চাপ থাকায় খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।কিন্তু ঘুম ভাঙলো সেই আগের স্বপ্ন দেখে।কিন্তু আজ মেয়েটা আমার সাথে কথা বলছে সেটা বুঝতে পেরেছি,মেয়েটা আমাকে বলছে,

আমার সাথে প্রতিনিয়ত দেখা করবা!আমি তোমাকে প্রতিদিন চাই।

বলেই একটা হাসি দিয়ে দিল আর সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙে গেল।

বিছানা হাতরে দেখি রিতু বিছানায় নেই।বাথরুমে গেচগে ভেবে আমিও বাথরুমে গেলাম।দেখি রিতু বাথরুমের আয়নাতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কার সাথে যেন কথা বলছে।আমি রিতু বলে তাকে অনেকবার ডাক দিলেও সে আমার দিকে তাকাচ্ছিল না।আমি দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিলে সে আমার গায়ের উপরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।রিতুর মুখে পানি ছিটিয়ে তাকে বিছানায় এনে শোয়াই দিই।

পরেরদিন সকালে গার্ডের সাথে দেখা করার জন্য পার্কে যাই।যথারীতি দোলনার পাশেই গার্ডকে দেখতে পাই।একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখেই চোখ বড়বড় করে সালাম দিলো।আমি সালামের উত্তর দিয়ে বললাম,

চাচা,আপনি এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আমার দিকে?মনে হচ্ছে ভুত দেখছেন?

এই দোলনায় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যেই বসেছে, আমি তারই খোঁজ নিয়েছি দুদিন পরে।হয় কেউ অকারণে আত্মহত্যা করেছে,আর না হয় তার লাশ পাওয়া গিয়েছে।

আপনি বুঝলেন কিভাবে? এখানে বসলে মানুষ মারা যায়?

অভিশপ্ত দোলনা

প্রথম যখন এই দোলনা এখানে রাখা হয়,তার পরের দিন একজন আসে বসছিলো।সে মারা যায় একদিন পরেই।তার বউ এসে বলেছিলো সে নাকি খালি দোলনার কথা বলতো।সেখান থেকেই ধারণা পেয়ে ভুল করে বসা লোকদের পিছু নিতাম।

অগোছালোভাবেই গার্ড আমাকে কথাগুলো বললো।গার্ডের কথাশুনে মনে হলো এই দোলনার পিছনে নিশ্চয়ই একটা কাহিনী আছে।কিন্তু কি সেই কাহিনী?

গার্ডকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম।পিছন থেকে আমাকে সাবধানে থাকতে বললো।

অফিস থেকে ফিরতে একটু রাত হয়ে গেল।রাত আটটার পরেই আমাদের এলাকায় আর ভ্যান বা রিক্সা পাওয়া যায় না।তাই আমি কানে হেডফোন গুজে নিরিবিলি হাঁটছি।হঠাৎ আমার পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে উঠলাম।পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি একটা মেয়ে।আমি কান থেকে হেডফোন খুলে মেয়েটাকে বললাম,

কোনো সমস্যা?

আমাকে একটু এগিয়ে দেয়া যাবে?

আপনাকে আমি চিনি না,আপনাকে এগিয়ে দিতে যাবো কেন?

অপরিচিত একটা মেয়ে একলা যেতে পারছে না বলেই কিন্তু আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছে!

তা ঠিক,তবে চলুন!আপনার সাথে ছিনতাইকারী গ্যাঙের মিল নেই তো?

মেয়েটা একটা লাজুক হাসি দিয়ে বললো,

না।

পাশাপাশি কিছুসময় হাঁটার পর মেয়েটার পায়ের দিকে আমার নজর যায়।জিনিসটা ভালো করে খেয়াল করার পরে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।শিট,মেয়েটার পা উলটো দিকে এবং মেয়েটা মাটি থেকে মিনিমাম আধা হাত শুন্যে ভেসে যাচ্ছে।

ওটা দেখার পর মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতেই মেয়েটা একটা বীভৎস হাসি দেয়।যেই হাসিটার সাথে আমার স্বপ্নে দেখা মেয়েটার মিল আছে।

কান থেকে হেডফোন খুলে আয়তুল কুরসী পড়তে পড়তে আমি দৌঁড় দিই।আমার সমস্ত শক্তি আমার পায়ে কনভার্ট করে আমি দৌঁড়াতে থাকি।পিছনে ফেরার সাহস আর হয়নাই।

কিন্তু কিছুসময় পরেই একটা কান্নার আওয়াজ আমার কানে আসে।মনে হচ্ছিলো কেউ ঘরের বাইরে যাবে কিন্তু অন্যকেউ আটকিয়ে রাখলে যেভাবে মানুষ কান্না করে সেভাবে।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ির সামনে এসে দরজায় নক করতেই রিতু এসে দরজা খুলে দেয়।অল্প সময়ের মধ্যে দরজা খুললেও ভয়ের কারণে রিতুকে বলি,

এত সময় লাগে দরজা খুলতে?

রিতু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বলে,

তুমি?

হ্যাঁ, আমি। দরজা থেকে সরে যাও।আমি ভয় পেয়েছি!

তুমি এখানে আসলে কিভাবে?একটু আগেই না তুমি ঘরে ঢুকে বাথরুমে শাওয়ার নিতে গেলে?

মানে?

মানে তুমি তো কিছু সময় আগেই বাড়িতে এসেছো।আমার সাথে কথা বললে না,রাগে গজগজ করতে করতে বাথরুমে গেলে!

রিতু তোমার মাথা ঠিক আছে?আমি মাত্রই আসলাম।

রিতু ভয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

আমি আর রুমে যাচ্ছিনা।

আমি অভয় দিয়ে তাকে রুমে নিয়ে গেলাম।সমস্ত রুম,বাথরুম,রান্নাঘর চেক করেও অন্যকারো উপস্থিতি পেলাম না।

রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে রিতুকে ঘুমিয়ে যেতে বললাম।কিন্তু বেচারীর মনে একটা ভয়,গার্ডের কথামতো আমি যদি নিজের কিছু করে ফেলি।তাই সে আমাকে একা থাকতে দিবে না।

বাধ্য হয়ে বিছানায় তার সাথে বসে থাকলাম।রিতু ঘুমিয়ে গেলে ল্যাপটপটা অন করে ইভানা পার্কের বিস্তারিত কিছু তথ্য জানার৷ জন্য গুগলে ঢুকলাম।কিছুসময় ঘাটাঘাটি করার পর দোলনার ছবি পেলাম।

হ্যাঁ এটা সেই দোলনা।দোলনাটা এসেছে কোথা থেকে বা কেন এখানে সেটা জানার জন্য ঢুকতে যাবো, তখনি দোলনা দুললে যেই শব্দ হয় সেই শব্দ আমার কানে আসলো।জানালার ওপাশ থেকে শব্দটা আসছে।

আমি বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে যেতেই দেখি,একটা দোলনা আমার জানালা সোজা দুলছে।আর দোলনায় বসে আছে সেই মেয়েটা। যার সাথে আমার আজ রাতে দেখা হয়েছিলো।

আমার চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটা অদ্ভুত একটা হাসি দিলো।যেই হাসি আমার কানে বারবার বাজছিলো।

রিতুকে ডেকে দেখালে মেয়েটা ভয় পাবে।সেজন্য আমি তাকে ডাকলাম না।মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করার জন্য মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবার জানালাতে তাকাতেই দেখি কোনোকিছু জানালার বাইরে নেই।তাহলে এত সময় আমি কি দেখলাম?এটা কি ভ্রম ছিলো?

মোবাইলে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে জানালার বাইরে অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও দোলনা ও মেয়েটাকে পেলাম না।মনের ভুল ভেবে শুয়ে পড়লাম।অন্ধকার রুমে আমি স্পষ্ট টের পেলাম অন্য কারো উপস্থিতি এ রুমে বিদ্যমান।আমি সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ঘুমের দেশে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।

সেম স্বপ্ন,কিন্তু স্বপ্নের মাঝে মেয়েটি চিৎকার করে আমাকে বলছে।তোকে আগেই মেরে ফেলতাম,কিন্তু তোর সাথে কে যেন আছে।যে আমাকে বারবার তোকে হত্যা করতে ও পজেস্ট করতে বাঁধা দিচ্ছে।

কথাটা শুনেই আমার ঘুম ভেঙে গেল।আমি বিছানার উপরে বসে পড়লাম।রিতু এখনো বিভোরে ঘুমোচ্ছে।

সে রাতে আর ঘুম হলো না।ফজরের নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকলাম।

আমার কোনোকিছুতেই মন বসছিলো না।গার্ডের কথা সত্য হলে দোলনার সাথে আমার জীবন মৃত্যুর সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে।এর পিছনের রহস্য আমাকে বের করে জানতেই হবে। কিন্তু কিভাবে জানবো?

মাথায় বুদ্ধি আসলো,পার্কের মালিকের সাথে দেখা করলে মন্দ হয় না।

অফিসে দরখাস্ত পাঠালাম আমি অসুস্থ।ছুটি নিলাম যতদিন সুস্থ না হই।এবার অন্তত ভালোভাবে ঘটনার সূত্রপাত বের করা যাবে।

সকাল সকাল পার্কে গেলাম।যথারীতি গার্ড দোলনার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।আমাকে দেখে নিজে থেকেই এগিয়ে আসলো।

স্যার,কোনো সমস্যা?

আপনি কি জানেন,এই দোলনাটা কোথা থেকে আনা হয়েছিল?

তা তো জানিনা স্যার,,,আমাকে চাকরি দেয়াই হয়েছে পার্কটা কম্পলিট করার পর!আমি এসে দেখেছি পার্কের এই সাইডে দোলনা।

কেউ জানে,এই বিষয়ে কিছু?

স্যার,একটা লোক জানতে পারে।আমাদের বড় স্যারের ম্যানেজার।তিনিই সব কেনাকাটা করেছিল!

ম্যানেজারের নাম্বার বা বাসার ঠিকানা দিতে পারবেন?

নাম্বার তো নাই, স্যার সপ্তাহে দু একদিন আসে।ওই অফিসে যোগাযোগ করলে পাওয়া যেতে পারে।

আমাকে একটা অফিস রুমে নিয়ে গেল গার্ড।তার পিছু পিছু গিয়ে পার্কের ম্যানেজারের কাছ থেকে পার্কের মালিকের ম্যানেজারের নাম্বার নিলাম।

পার্ক থেকে বের হয়ে কিছুটা পথ চলে এসেছি,গার্ড পিছন থেকে আমাকে ডাক দিয়ে বললো

স্যার আপনার নাম্বারটা দেন তো।

আমার নাম্বার কি করবা?

কিছু জানলে আমাকে জানাবেন!আমি এই বাযে দোলনার কাছে আর থাকতে চাই না।পেটের দায়ে চাকরি করি।নাই কবে এখান থেকে চলে যেতাম!

কেন চাচা?

আর বলবেন না,,প্রায় রাতেই দোলনা থেকে একটা হাসির আওয়াজ আসে,আবার মুহুর্তের মধ্যে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।আমি তখন ওই দিকটাতে চলে যাই।আমার ভয় লাগে মাঝে মাঝে।আমি একটা মেয়ে নিয়মিত রাতে এখানে এসে দোলনায় বসে থাকে।প্রথমে মনে করেছিলাম অবৈধভাবে কেউ হয়তোবা ভিতরে প্রবেশ করে।তাকে বারণ করে দিয়ে আসি।কিন্তু মেয়েটা চোখের পলকে উধাও হয়ে যায়।

আপনি একদিন ও ধরতে পারেন নি তাকে?

না, বললাম না। চোখের পলক পড়তে যে সময় লাগে তার উধাও হতেও সে সময় লাগে না।

আমিও একটা মেয়েকে দেখি চাচা!সাদা একটা সালোয়ার পড়া থাকে,চুলগুলো সামনের দিকে দিয়ে সেও হাসে।সে এক ভয়ংকর হাসি চাচা।

হ্যাঁ, স্যার।সাদা সালোয়ার পড়া থাকে।

-চাচা,আজ আসি।ভুল করে দোলনায় বসার কারণে আমার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে।এর সমাধান আমাকে করতেই হবে।

ঠিক আছে স্যার, সাবধানে থাকবেন।

একটা কথা স্যার,আপনার ভেতরে কোনো ভালো শক্তি আছে মনে হয়,নাইলে এতদিন বেঁচে থাকলেন কিভাবে?

কি জানি চাচা!

চাচাকে বিদায় দিয়ে একটা নিরিবিলি পুকুরের ধারে গিয়ে বসলাম।উপজেলার পুকুর,অনেক বড়।চারিদিকে বসার জন্য বেঞ্চ সিস্টেম করা।আমি একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম।বসে ম্যানেজার নাম্বারে ফোন দিলাম।কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আর কি!

নাম্বার বন্ধ।

অনেক আশা নিয়ে একটা নাম্বার বের করলাম, তাও বন্ধ।তাহলে ম্যানেজারের সাথে দেখা করবো কিভাবে?

বাড়ি থেকে রিতু ফোন দিলো। তার নাকি বাড়িতে আনইজি লাগছে।

আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে যেতে বললো।বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে।

আমি বাড়িতে গিয়ে দেখি রিতু রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর সারা শরীর ঘেমে নেয়ে আছে।আমাকে দেখে দৌঁড়ে এসে বললো,

রুমের ভেতর কারা যেন হাঁটাচলা করছে।আমি ছাড়া রুমে আরো কেউ আছে।

কি বলো।

ঠিকই বলি,তুমি চলো রুমে!

রুমে গিয়ে দুজনের চোখ কপালে উঠে গেল।এ কি অবস্থা রুমের।সারা রুমের অবস্থা শোচনীয়।বিছানা বালিশ সব ফ্লোরে।

এগুলো কিভাবে হলো রিতু?

আমি তো ভয়ে বাইরে চলে গেছিলাম। কিভাবে হয়েছে জানিনা।

কিছু একটা সমস্যা তো হয়েছেই আমাদের সাথে।যা আস্তে আস্তে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে।

রিতু কিছু না বলে শুধু কান্না করতে থাকলো।

সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে ওর বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।কিন্তু সে যাবে না।পতি ভক্ত কোনো নারী স্বামীর বিপদে ঘর থেকে বের হয় না।তার জীবন চলে গেলেও না।সেও আমাকে ছেড়ে গেলো না।

দিন শেষে রাতের আধারে রিতু আমাকে নিয়ে বাইরে বসে থাকলো।সে ভয়ে রুমে যেতে চাচ্ছিলো না।

কেমন যেন একটা গুমোট পরিবেশ।মনে হচ্ছিলো প্রকৃতি একটা শোকে পড়ে গেছে।

রাত ১০টার দিকে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন ঘরের পিছনের বাগানের দিক থেকে একটা শব্দ আসতে লাগলো।হ্যাঁ, ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ।এটা দোলনা দোলার শব্দ।আমি উঠতে গেলে রিতু আমাকে ধরে রাখে, যেতে দিবে না।কিন্তু শব্দের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে লাগলো।

যত দোয়া পারতাম, ভালো করে পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে রিতুকে সাথে নিয়েই বাগানের দিকে গেলাম।বাগান থেকে রজনীগন্ধার তীব্র একটা গন্ধ নাকে আসছে।নতুন ফুলের সুবাস সেটা।সাথে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ পরিবেশটাকে আরো ভারী করে তুলেছে।

আরেকটু সামনে যেতেই সেই পরিচিত দৃশ্য।যেটা মাত্র কয়েকদিনে আমার চোখের সামনের দৃশ্য হয়ে গেছে।কিন্তু এবার মেয়েটা দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো।আমাদের দুজনের দিকে ঘুরে তাকাতেই কোথা থেকে যেন একটা ছায়া এসে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।সাথে সাথে ছায়াটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।বাতাস থেকে একটা শব্দ আমার কানে ভেসে আসলো,

সেটা হলো।

আমি থাকতে তোর কিছুই হবে না। আমি তোর পাশেই আছি।

রিতু এসব দেখে সেন্সলেস হয়ে গেল।ফোন করে শাকিলকে ডেকে আনলাম।এত রাতে ওই পারে আমাকে সাহায্য করতে।

সেই রাতটা কোনোমতে পার করলাম।রাতে ঘুম হয়নি।কানে শুধু একটা আওয়াজ বেঁজেছে।সেটা হলো,

আমি থাকতে তোর কিছুই হবে না।আমি তোর পাশেই আছি।

কে এই অদৃশ্য শব্দের কথক?

একটা স্যালাইন দেয়ার ব্যবস্থা করলাম রিতুর জন্য।তার শরীর যথেষ্ঠ খারাপের দিকে।তাকে স্যালাইন দিয়ে আমি পাশের রুমে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

হঠাৎ শাকিলের ধাক্কায় আমার ঘুম ভাঙলো।

কিরে রাশেদ,কার সাথে এভাবে কথা বলছিলি?

কই,না তো!

আমি স্পষ্ট শুনেছি, তুই ঘুমের মধ্যে কারো সাথে কথা বলেছিস।

না, হয়তোবা টেনশন বেশি হচ্ছে তাই।

আচ্ছা,ফ্রেশ হয়ে নে।তোর ফোনে কে যেন ফোন দিচ্ছে,ধর কথা বল।

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে অসংখ্য কল এসেছে।ফোন ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,

স্যার,আসসালামু আলাইকুম।

ওয়া আলাইকুম আসসালাম।কে?

স্যার,আমি পার্কের গার্ড।

ও কি হয়েছে?

স্যার,আপনার মতোই ভুল করে একজন দোলনায় ভুল করে বসেছিল।আমি তাকে সাবধান করে দিয়েছি।কিন্তু তবুও আমি আজ তাকে ফলো করে দেখতে চাই সে কি করে।

আচ্ছা,আমি আসছি।

বাড়িতে কোনোমতে ম্যানেজ করে গার্ডের সাথে দেখা করতে গেলাম।গার্ডকে সাথে নিয়ে অপরিচিত লোকটার বাসার দিকে হাঁটা দিলাম।

আপনি লোকটাকে চিনলেন কি করে?

স্যার, আমাদের পার্কে তো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।ওখান থেকে ছবি নিয়েছি একটা।আর লোকটাকে সতর্ক করার সময় ঠিকানা শুনে নিয়েছি।২ ঘন্টার পথ,যেতে রাত হতে পারে।

কিন্তু, রিতু বাড়িতে একা।আচ্ছা,চলেন।

গার্ডকে সাথে করে নিয়ে চলে গেলাম উক্ত ঠিকানায়।

রাত তখন ৯ টা।একটা লোককে ছবি দেখাতেই ঠিকানা দেখিয়ে দিল।

আমরা সেই বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতেই দুজনে যা দেখলাম,সেটা দেখার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।

তাদের বাড়ির পাশের আম গাছটাই একটা লাশ ঝুলছে।

ওহ মাই গড গার্ড চাচা।ইনি সেই লোকটা না?

হ্যাঁ

গার্ড চাচা চেঁচিয়ে উঠলো। গার্ডের চেঁচানোর শব্দ শুনে লোকটার বাড়ি থেকে তার বউ ও ছেলেমেয়েরা ছুটে আসলো।ঘটনার আকস্মিকতা তারা কেউ বুঝতে পারছিলো না।সবাই শকড হয়ে গেছে।

কিভাবে এটা হলো?আব্বু এখানে কেন?

লোকটার ছেলে বলে উঠলো।

আমরা তো জানিনা বাবা,আমরা দেখে এখানে আসলাম।

ওনি আত্মহত্যা করলো কেন?

জানিনা,,,ও একটু আগে বললো বাইরে দোলনার শব্দ হচ্ছে।আমি দেখে আসি।এটা বলে ঘর থেকে বের হয়েছে।কিন্তু আমার কি হয়ে গেলো।

লোকটার স্ত্রী এভাবে বিলাপ করতে থাকলো।

গার্ড চাচাকে সাথে নিয়ে জায়গাটা থেকে দ্রুত প্রস্থান করলাম।

চাচা,এইভাবে লোক মারা যাওয়ার কারণ কি আমরা কোনোদিন বের করতে পারবো না?

ধৈর্য ধরেন স্যার।

আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়?আপনাদের ম্যানেজারের বাড়িতে চলে গেলে কেমন হয়?

স্যার,বড় স্যার শুনলে রাগ করবে!

আরে টের পাবে না,আপনি বাইরে থাকবেন।

আচ্ছা,চলেন।স্যারের বাসা শহরের শেষ প্রান্তে।

৩ ঘণ্টার পথ বাড়ি দিয়ে ম্যানেজারের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১ টা বেঁজে গেলো।নিরিবিলি বাড়ি,আশেপাশে কারো বাড়ি নেই।আমরা গেটের সামনে গিয়ে দেখলাম গেটে তালা ঝুঁলছে।তারমানে কি কেউ নেই ভেতরে?

দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে যখন ফেরত আসছি,হঠাৎই বাড়ির ভেতর থেকে দুমদাম আওয়াজ ভেসে আসলো।দুজনেই থমকে দাঁড়ালাম।বাড়ির গেট লক করা,ভেতর থেকে আওয়াজ আসে কেন?

চাচা,ভেতর থেকে শব্দ আসছে মনে হলো।

ও কিছু না,চলেন।

আবারো সেই শব্দ,এবার সাথে সেই পরিচিত হাসি।গার্ড চাচা কাচুমাচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

বাড়িতে আমার একটা ছোট মাইয়া আছে।আমার জন্য প্রতি রাতে অপেক্ষা করে।দেরী করে বাড়ি ফিরলে ওর মায়ের সাথে ঝগড়া করে ঘুমিয়ে পড়ে।আমি চলে যাচ্ছি।

অভিশপ্ত দোলনা

বুঝলাম চাচা ভয়ে যেতে চাচ্ছে না।কিন্তু আমাকে পিঁছু হটলে হবে না।আমার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি।হয়তোবা আজকে কোনো ক্লু পেতে পারি আমি।

গার্ড চাচাকে বিদায় করে দিলাম।

চাচা,তাইলে যান।আমি ভেতর থেকে ঘুরে আসি।

না, রাত অনেক হয়েছে।চলেন স্যার বাসায় ফিরে যাই।আপনার বউও তো একা বাসায়?

আপনি যান।রিতুকে দেখার লোক আছে।

আমি গেলাম।

ম্যানেজার বাড়ির উঁচু দেয়াল টপকে ভেতরে যেতে একটু বেগ পেতেই হলো।পড়ে গিয়ে হাত পা ছিলে গেলো।

তখনো বাড়ির ভেতর থেকে দুমদাম আওয়াজ আসছেই।আমি কয়েক কদম এগোতেই পেছন থেকে কিছু হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।ঘুরে দেখতে গিয়ে দেখি কিছুই নেই।

আবারো সামনে হাঁটা ধরলাম,কিন্তু এবার শুকনো পাতার উপর দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে যেভাবে মড়মড় শব্দ হয় সেটা হতে লাগলো।

আয়তুল কুরসী পড়ে বুঁকে ফুঁ দিতে থাকলাম।কিন্তু শব্দ ও অন্যান্য জিনিস বেড়ে যেতেই থাকলো।আরো কিছুদূর এগোতেই বামে একটা দোলনা নজরে আসলো।যেটা থেকে শব্দ আসছিলো।ভালো করে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটা।

ওহ মাই গড,এতটা বীভৎস রূপে আমি তাকে কখনো দেখিনি।মুখটা থেতলানো,দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।একবার কল্পনা করুন,কতটা বীভৎস রুপ।তাকে না দেখার ভান করে আমি ম্যানেজারে দরজায় টোকা দিলাম।ভেতর থেকে উত্তর আসার বদলে মেয়েটার কণ্ঠে উত্তর আসলো আমার পিছন থেকে।

বাঁচার খুব শখ!কিন্তু আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।কেউ না,

তোকে অনেকদিন সময় রেখে দেয়া হয়েছে।আজ আর না।মরার জন্য প্রস্তুত হ!

আমি দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলাম।ঘরে ঢুকতেই মনে হলো আমি কোনো ভাগারে এসেছি।যা ইচ্ছে অবস্থা রুমের।চারিদিকে শুধু নোংরা আর নোংরা।

কোনোমতে হাতরে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রুমের লাইট জ্বালালাম।

যা ভেবেছিলাম না, তাই দেখলাম।একটা লোকের রক্তাক্ত দেহ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কিন্তু মেয়েটা এখানে কেন?এই ম্যানেজারের সাথে কি তার কোনো সম্পর্ক আছে?

মাথায় থাকা প্রশ্ন নিয়েই রক্তাক্ত লোকটির কাছে গিয়ে বললাম,

কে আপনি?

আমি শুভ।

আপনি কি ইভানা পার্কের মালিকের ম্যানেজার?

হ্যাঁ, আমাকে বাঁচান ভাই।আমি বাঁচতে চাই।

তার আগে আমাকে বলুন,কেন ওই দোলনায় যে বসে সে মারা যায়?

ভাই আমি সব বলবো,প্লিজ আমাকে বাঁচান।

লোকটার আকুতি আমার সহ্য হচ্ছিলো না।তাকে কোনোমতে কোলে তুলে বাইরে আসার জন্য রেডি হলাম।দরজার সামনে আসতেই খুব জোরে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

লোকটাকে সাইডে নামিয়ে দরজা কোনো মতেই খুলতে পারলাম না।

কাঁচের জানালার একটা কাঁচ চেয়ার দিয়ে ভেঙে ম্যানেজারকে নিয়ে বের হয়ে হাসপাতালে যেতে চাইলাম।কিন্তু হঠাৎ মেয়েটার অবয়ব এসে আমাকে গলা টিপে ধরলো।আমি দুই হাত দিয়ে শুভকে ধরে আছি।আর এদিকে ছায়াটা আমার গলা টিপে ধরে আছে।

শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়ার শুভকে নামিয়ে হাতটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু কোনোমতেই পারছিলাম না।চোখের সামনে সমস্ত কিছু ভেসে উঠছিলো।বিশেষ করে রিতুকে ভীষণ মনে পড়ছিলো।

কিন্তু হঠাৎ করে আরেকটা ছায়া এসে মেয়েটার ছায়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।ছিটকে পড়ে গেল মেয়েটা।

গলা ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে আমার কাশির পরিমাণ বেড়ে গেল।

তুই চলে যা রাশেদ।তোরা এখান থেকে যা।আমি দেখছি।

এই কথাগুলো ওই অবয়ব থেকে ভেসে আসলো।কণ্ঠটা অতি পরিচিত আমার কাছে।

তাহলে কি সেই আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করছে?

কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। একটা মৃত মানুষ, এত বছর পর এসে আমাকে এভাবে বাঁচাবে কেন?

লোকটাকে সাথে নিয়ে তার গেট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমি চারিদিকে খোঁজ করতে লাগলাম।

বেশি সময় আমার প্রশ্নটাকে মুখের ভেতরে চাপিয়ে রাখতে পারলাম না।

ভাই, বলেন না প্লিজ।এই দোলনার সাথে আপনার আর ওই মেয়ের সম্পর্ক কি?

লোকটা কোনো কথা বলতে পারছিলো না।শুধু গলা দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করলো।যেটা শুনতে অনেকটা ‘বিক্রম’ শব্দটার মত শোনালো।

কথাটি বলার পরে লোকটির চোখ বড় বড় হয়ে গেল।মূহুর্তের মধ্যে তার নাক,মুখ ও চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেলো।ছটফটানি করতে করতে ম্যানেজারের দেহ থেকে প্রাণটা বেড়িয়ে গেল।

সেই মূহুর্তে আমার কি করা উচিত আমি তা বুঝতে পারছিলাম না।আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যে, এক রাতের মধ্যে কিভাবে আমার জীবনে এত কিছু ঘটে গেল।কিন্তু আরো কিছু যে বাকি ছিল,তা আমি কস্মিনকালেও ভাবতে পারিনি।

মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে মাটির দিকে ধরতেই একটা অদ্ভুত জিনিস আমার চোখে বাধলো।মনে হচ্ছিলো ম্যানেজার মারা যাওয়ার আগে হাত দিয়ে একটা সাইন আকার চেষ্টা করেছে।সাইনটা অনেকটা V এর মতো।হ্যাঁ , এটা পরিষ্কার V।

কিন্তু এর মানে কি?

আমি ওখানে আর এক মূহুর্তও থাকলাম না।ম্যানেজারের লাশটাকে ভীতুর মতো ফেলে রেখে আমি আমার পথে পা বাড়ালাম।

এক পা, দু পা করে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পিছন থেকে রিতুর কণ্ঠে একটা ডাক ভেসে আসলো।

এখানে রিতু আসবে কিভাবে?

রাশেদ,আমাকে বাঁচাও।আমি আর পারছি না।

হ্যোয়াট!

আমি ভুল ক্রমে পিছনে তাকালাম।যেটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল।

রাস্তার মাঝখানে একটা দোলনা।সেই দোলনার উপরে সেই মেয়েটি বসে আছে।আমি পিছন ফিরে তাকানোর সাথে সাথে এবার কান্না করা শুরু করলো।

আমি একটুও দাঁড়ালাম না।উলটো পথে দৌঁড় দিলাম।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমি একটা বাড়ির সামনে এসে পড়লাম।মনে হচ্ছে কেউ এখানে থাকে না।আমার পিছন থেকে তখনো সেই কান্না,হাসি এসব আসছেই।

আল্লাহর উপর ভরসা করে আমি সেই বাড়িতে ঢুকে গেলাম।মোবাইলের আলোতে লক্ষ্য করলাম বাড়ির ভেতরে একটা কবর।

আমি জানতাম কবরস্থান একটা পবিত্র জায়গা।তাই কোনো চিন্তাভাবনা না করেই আমি সেই কবরের প্রাচীরের মধ্যে ঢুকে গেলাম।এখন শুধু চারপাশ দিয়ে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি,সেখানে কিছুই হচ্ছে না।

আমার হুশ ফিরলো সূর্যের আলো চোখে লাগার পরে।আমি তখনো ওই কবরের মধ্যে।

 

লেখক: রাশেদ হাসান

 

{ আরো পড়ুন – হোস্টেলের আত্মা

( অভিশপ্ত দোলনা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)