অভিশপ্ত বাক্স – রহস্যে ঘেরা বাক্স

অভিশপ্ত বাক্স –

লেখকঃ খোন্দকার মেহেদী

 

চারকোনা বাক্সটা দেখতে অদ্ভুত, সুষম বর্গাকৃতির । পাশগুলো দেড় ফিটের মতো, উচ্চতাও প্রায় তাই। কালো রঙয়ের বাক্সটা শক্ত কোন ধাতু দিয়ে তৈরি।

বাক্সের গাঁয়ে লেগে থাকা ধূলিমাটি পরিষ্কার করার পর সেটাকে টেবিলের উপর রাখা হয়েছে।

বাক্সের চারপাশের লেখাগুলো এখন আরোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন বললেন, এর গাঁয়ের লেখাগুলো মৌর্যযুগের মাগধী প্রাকৃত ভাষার সাথে মিল আছে। তবে পুরাপুরি না। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এখানে কয়েকটা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা প্রাচীন গ্রীসে ব্যবহার করা ভাষার মতো।

সিফাত বলল, স্যার এখানে কি লেখা আছে সেটা বের করতে পেরেছেন?

প্রফেসর সাজ্জাদ মাথা ঝাঁকালেন। পুরোপুরি না। তবে অনেকটাই বুঝতে পেরেছি আর কিছুটা অনুমান করে বোঝা যায় কি লেখা সেখানে।

জামিল বলল, স্যার বাক্সটা তো আমরা নানাভাবে খোলার চেস্টা করে ব্যর্থ হলাম। আপনি কি কোন উপায় পেয়েছেন?

প্রফেসর আবারও মাথা ঝাঁকিয়ে টেবিল থেকে একটা সাদা কাগজ তুলে নিলেন, সেখানে কিছু লেখা। টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা তার পাঁচজন ছাত্র ঝুঁকে এলো। সবাই উত্তেজিত, কি লেখা বাক্সের গাঁয়ে?

প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় আর্কিওলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। তার নেতৃত্বে ছোট একটা দল মাস দুয়েক ধরে নরসিংদীর উয়েরী বটেশ্বরে প্রত্নতাত্মিক খনন কাজ করছে।

তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই তার ছাত্র। এরা ইতিমধ্যে সেখান থেকে নানা দুর্ল্ভ প্রত্নতাত্বিক জিনিস পত্র উদ্দ্বার করেছে। নানা ধরনের তৈজেস প্ত্র। যুদ্ধে ব্যবহার হওয়া সেই যুগের অস্র, মাটি আর রুপার গয়না ইত্যাদি।

দুইদিন আগে এই ছয়জন মিলে খনন কাজ করার সময় একটা ছোট গর্ত খুড়ে বাক্সটা খুঁজে পান প্রফেসর নিজেই। খুঁজে পাওয়ার পরই বাক্সটা খোলার চেষ্টা করে হয়েছিল। পারা যায় নি।

প্রফেসর বাক্সটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন। তার রুমের টেবিলের উপর সেটা এখন রাখা। গত দুইরাত তিনি বাক্সটখুড়ে বাক্সটােষ্টা করেছেন। কিছু বের করা গেছে ৷ প্রফেসর হাতের কাগজটা সবাইকে দেখালেন।

বললেন, কিছু লেখা উদ্ধার করা গেছে। বাক্সটার এক পাশে লেখা এই বাক্স প্রতাপশালী কোন রাজাকে উপহার দেয়ার জন্য তৈরি। এটা  স্বাভাবিকভাবে খোলা যাবে না।

বছরে একবার এই বাক্স একাই খুলে যাবে। সেটা সৌনাগড়ার চন্দ্র বছর অনুযায়ী বছরের প্রথমদিন খুলবে। তখন এই বাক্স থেকে বের হবে আশ্চর্য উপহার এর মালিকের জন্য।

বাক্সের অন্যপাশে লেখা, এই বাক্স শুধুমাত্র উপহারের মাধ্যমে হস্তান্তর যোগ্য। চুরি বা জোর করে কেউ এই বাক্সের মালিক হওয়ার চেষ্টা করলে  তার উপর দ্রুত নেমে আসবে ভয়ংকর মৃত্যু ।

বাক্সে আরও কিছু কথা প্রাচীন গ্রীক আর মাগধী প্রাকৃত ভাষা দিয়ে লেখা আছে। সম্ভবত কোন শ্লোক বা মন্ত্র।

প্রফেসরের কথা শেষ হলে সিফাত বলল, স্যার ভেরি ইন্টারেস্টিং জিনিস তো।

প্রফেসর সাজ্জাদ হাসলেন, হু এই বাক্সের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব আমি দেখছি লেখায় সেই সময়ের পৃথিবীর দুই প্রান্তের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

মৌর্য যুগের মাগধী প্রাকৃত এর সঙ্গে প্রাচীন গ্রিক। এর অর্থ তখন এই দুই জায়গার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।

অন্তু বলল, গ্রিসের ভুগোলবিদ টলেমি তো তার বইতে সৌনগড়া নামে এই এলাকার কথা উল্লেখ করে গেছেন, তারমানে যোগাযোগ তো ছিলোই।

কিন্তু স্যার আমার কাছে এই বাক্সের আকারটাই অদ্ভুত লাগছে। একেবারে নিখুঁত কিউব । এটা কি আসলে বাক্সই না অন্যকিছু?

প্রফেসর বললেন, এটা বাক্সই। সেটাই লেখা। এটা খোলার নিশ্চয়ই কোন টেকনিক আছে, সেটা বের করতে হবে।

তমাল বলল, স্যার বছরে একবার খুলবে লেখা আছে, ওদের সেই চন্দ্রমাসের হিসাবটা কি?

প্রফেসর সাজ্জাদ বললেন, জানি না। সৌনগড়ার ইতিহাস নিয়ে আরাও পড়তে হবে তাহলে জানা যাবে ওদের মাস কিভাবে গোনা হতো। বছরের শুরুর দিন টা কি। তবে এই বাক্স সেটা ছাড়াই আমরা খুলতে পারব আশাকরি।

সিফাত বলল, স্যার কন্টাক্ট অনুযায়ী এই বাক্সের মালিক তো এখন আমাদের কেন্দ্রীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে কি দিয়ে দিতে হবে না এটা?

প্রফেসর মাথা ঝাঁকালেন, হ্যাঁ সেটা তো দেবই, আগে আমরা আমাদের পরীক্ষা শেষ করি।

তমাল বলল, আরে এই বাক্সের লেখা অনুযায়ী এই বাক্সের মালিক এখন স্যার। স্যার যদি কাউকে গিফট না করেন তাহলে এই বাক্স যার কাছে যাবে সে-ই বিপদে পড়বে।

সবাই তার কথার ধরনে হেসে উঠল।

প্রফেসর হেসে বললেন, প্রচীন কালে মূল্যবান জিনিসের চুরি ঠেকাতে এই ধরনের অভিশাপের কথা লেখা হতো, যাতে ভয় পেয়ে চোর আর চুরি না করে।

তারপর একটু থেমে বললেন, বাক্সটার গঠন সত্যিই অদ্ভুত। তোমরা সবাই তো এর ছবি তুলেছ। আমার রিকোয়েস্ট তোমরা নিজেরা যদি এর গাঁয়ের লেখা থেকে কিছু উদ্ধার করতে পার চেষ্টা কর।

কিন্তু আপাতত এই বাক্সের কথা শেয়ার করো না কারও সাথে। এতো প্রচীন বাক্সে গ্রীক ভাষা লেখা এই তথ্যই এটার মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে এন্টিক হান্টারদের কাছে। চুরি যাওয়াও অসম্ভব না।

আমরা গবেষণা শেষ করে এটা আমাদের দেশের যাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দিতে চাই।

সবাই মাথা ঝাঁকাল। প্রফেসর সবার মুখের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, তার ছাত্ররা সবাই তার অনুগত আর বিশ্বস্ত। নিশ্চিন্তে এদের উপর নির্ভর করা যায়।

তিনি সবাইকে বিদায় করে দিয়ে তার রুমের স্টিলের ক্যাবিনেটে তালা দিয়ে বাক্সটাকে রেখে দিলেন। একবার ইতস্তত করে ভাবলেন বাক্সটা এখানে রাখবেন না তার বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারে নিয়ে যাবেন।

তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন এখানেই থাকুক, তাছাড়া আজ রাতে তার ঢাকায় যাওয়ার কথা, তার স্ত্রী সন্তান শ্বশুড় বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে তাকেও আজ রাতে সেখানে যেতে হবে।

কাল সবাইকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেন।

সিফাতের রাতে ঘুম আসছিল না, মাথায় অদ্ভুত বাক্সটার ছবি। বাক্সটা কি সত্যি বছরে একদিন খোলে? কিভাবে? এই টেকনোলজি জানল কিভাবে হাজার বছর আগের মানুষ?

বাক্সের কথা সত্যি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি,তবু বাক্সটার রহস্য জানতে ইচ্ছা করছে।  সে উঠে গিয়ে ল্যাপটপ খুলল।  আল বিরুনী হলের যে রুমে সে থাকে সেটার জানালা দিয়ে দুরের গ্রাম দেখা যায়। সিফাত তার পুরানো ল্যাপটপ নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে বসল।

সিফাত রুমে একাই আছে কয়েকদিন ধরে, তার রুমমেট বাড়িতে বেড়াতে গেছে। সে কম্পিউটারে নানাভাবে বাক্সটার ছবি এবং লেখা  বিশ্লেষন করল। অনলাইন ঘেঁটে টলেমির লেখা গ্রীক বই পড়ল,  নেটে সৌনাগড়ার ইতিহাস খুঁজল।

তেমন কোন তথ্য না পেয়ে সে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছে তখন মনে পড়ল তাদের দলটার আগে একটা দল উয়েরী বটেশ্বরিতে কাজ করেছিল।

সেখানে তারা বেশ কিছু পুরান পুঁথি খুঁজে পেয়েছিল। তাদের ডিপার্টমেন্টের নামে খোলা অনলাইন আর্কাইভে সেগুলো আছে। সে আর্কাইভে ঢুকে পুঁথিগুলোর ছবি বের করে তাতে ডুবে গেল।

অভিশপ্ত বাক্স

রাত একটার দিকে মোবাইল বেজে উঠল সিফাতের। সে তাকিয়ে দেখল অপরিচিত নম্বর থেকে হোয়াটস এপ কল।

এতো রাতে কে তাকে খুঁজছে? প্রফেসর সাজ্জাদ না তো? স্যারের এই ধরনের অভ্যাস আছে, কাজে ডুবে গেলে সময়ের হিসাব থাকে না তার, রাত বিরাত ছাত্রদের ফোন দিয়ে বসে।

হয়ত নতুন কিছু পেয়েছেন। কিন্তু নম্বরটা আন নোন, প্রফেসর কি অন্য কোন নম্বর থেকে ফোন করল, নাকি অন্য কেউ?

হ্যালো?

হ্যালো। সিফাত?

হ্যাঁ, কে বলছেন?

আমার নাম আখলাক। সাংবাদিকতা করি, সেই সঙ্গে এনসিয়ান্ট আর্কিওলজিতে আগ্রহ আছে। আপনারা উয়েরী বটেশ্বরীতে একটা মিস্ট্রেরিয়াস বাক্স পেয়েছেন শুনলাম, সত্যি?

সিফাত চুপ করে থেকে একটু ভেবে নিল। তারা কাজ করছে উয়েরী বটেশ্বরীতে এটা অনেকেই জানে, পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে।

প্রতিদিন তারা সেখানে কি পাচ্ছে সেটার একটা চার্ট করা হয়, সেটা অনেক সময় পত্রিকাওয়ালা চাইলে পাঠিয়ে দেয়া হয়, রাখ ঢাক করা হয়নি এই পর্যন্ত। এই বাক্সটাও তাদের লিস্টে লেখা হয়েছে, কিন্তু সেটা সে যতদূর জানে প্রফেসরের কাছে।

প্রফেসর অবশ্য সবাইকে মানা করেছিলেন আপাতত এই বাক্সের কথা বাইরে প্রকাশ না করতে তাতে আমাদের গবেষণার ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা প্রকাশ হয়ে গেছে। হয়ত প্রফেসরই লিস্ট দিয়ে দিয়েছেন সাংবাদিকদের।

সে বলল, একটা বাক্স পাওয়া গেছে। কিন্তু সেটা মিস্ট্রেরিয়াস কিনা জানি না।

বাক্সের গাঁয়ে মাগধি প্রাকৃত এর সঙ্গে গ্রীক লেখা?

সিফাত একটু ইতস্তত করে বলল, হ্যাঁ।

ওপাশ থেকে একটু চুপচাপ। এরপর আখলাক নামের লোকটা বলল,  বাক্সটা কোথায় আছে?

সিফাত একটু সতর্ক গলায় বলল, প্রফেসরের কাছে। কেনো?

শুনো সিফাত, এই বাক্সটার জন্য আমি তোমাদের পাঁচ কোটি টাকা দেব। আমার এক গ্রীসের বন্ধু আছে যে এই বাক্সটা নিতে আগ্রহী।

তোমার প্রফেসর যদি রাজি না হয় তাহলে তোমরা আমাকে এটা পাইয়ে দিতে পার। পাঁচ কোটি নগদ পাবে। ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হবে তারপর বাক্স হ্যান্ড ওভার করবে।

আচমকা এই প্রস্তাবে সিফাত থমকে গেল। সে বুঝে গেল এন্টিক হান্টারদের কবলে পড়েছে তারা। একটা ঠান্ডা রাগ তার ভিতর থেকে উঠে আসল।

বাক্স না দেখেই পাঁচ কোটি দিয়ে দেবেন? এই বাক্স নিয়ে কি জানেন আপনি?

দেখো আমার গ্রীসের বন্ধু বলেছে এই ধরনের একটা বাক্সের কথা তাদের বহু বছরের পুরানো বইতে আছে। আমরা যে তথ্য পেয়েছি সেটা নিঃসন্দেহে এই বাক্সটাই।

সিফাত, আমাদের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। ইচ্ছা করলেই এই বাক্স আমরা নিয়ে আসতে পারি তোমাদের ওখান থেকে, কিন্তু সেটা চাচ্ছি না। বাক্স চুরি গেছে বা এই জাতীয় হৈ চৈ এর মধ্যে যাবো না আমরা।

বরং তোমরা এই বাক্সটা আমাদের হাতে তুলে দিয়ে রেকর্ড থেকে মুছে দাও, তাহলেই আর কেউ জানতে পারবে না।

আপনি আমাদের স্যারকে চেনেন না। এই ধরনের জিনিস টাকা দিয়ে কেনা যাবে না তার কাছ থেকে।

তাহলে তোমরাই স্যারকে ম্যানেজ করে এনে দাও। পাঁচজন পাঁচ কোটি। এক কোটি করে পাবে। সারা জীবন বসে খেতে পারবে।

ঠান্ডা রাগটার বিস্ফোরন হলো সিফাতের। আখলাক সাহেব। দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছেন। লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনার। আমাকে আর একবার ফোন করার চেষ্টা করলে আমি পুলিশের কাছে রিপোর্ট করব।

ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেল।

পরদিন সিফাত ডিমার্টমেন্টে পৌঁছে দেখল স্যারের রুম বন্ধ। স্যার ঢাকা থেকে এসে পৌঁছাননি। রাতের ফোনের কথাটা সে অন্যদের বলবে কিনা ভাবল কিছুক্ষণ, তারপর বাদ দিল।

স্যারের সাথে কথা না বলে কাউকে বলা ঠিক হবে না।

স্যার ফিরলেন বিকেলে। ডিপার্টমেন্টে এসেই স্যার রুমের দরজা খুললেন। সিফাতরা পাঁচজনই ছিল।

সিফাত উত্তেজিত হয়ে বলল, স্যার আমি সৌনাগড়ার চন্দ্রমাসের হিসাব বের করে ফেলেছি কাল রাতে।

স্যার বিস্মিত হয়ে বললেন, সাবাস সিফাত! আমি জানি কেউ পারলে তুমিই পারতে। ভেরি গুড। আমরা এটা নিয়ে এখন আলোচনা করব। দাড়াও বাক্সটা বের করি।

স্যার চাবি দিয়ে স্টিলের ক্যাবিনেট খুলতে গিয়ে বিস্মিত গলায় বললেন, আরে তালা তো ভাংগা দেখি।

সবাই এগিয়ে গিয়ে দেখল। স্টিলের ক্যাবিনেটের তালা ভাংগা, বাক্সটা নেই।

সিফাত তখন স্যারকে কাল রাতের ফোনের কথা বলল, দেখা গেল এই রকম ফোন অন্য চারজনও পেয়েছে। সবাই বলল তাদের কাছেও আখলাক নামে একজন ফোন করেছিল, এবং সবাই তার টাকার প্রস্তাবে না করে দিয়েছে।

তারমানে দাঁড়াচ্ছে, আখলাক নামের লোকটাই সম্ভবত এই চুরির পেছনে আছে। কিন্তু কে চুরি করল? কখন?

প্রফেসর তার অফিসের পিওন আজমলকে ডাকলেন বেল বাজিয়ে, কেউ এলো না। ইউনিভার্সিটির সব ক্লাশ শেষ হয়ে গেছে, ক্লাস রুম গুলো ফাঁকা। পিওনরাও এদিক ওদিক চলে গেছে।

প্রফেসর আজমলের মোবাইলে ফোন দিলেন, ধরল পিওনের বউ। হাউমাউ করে বলল, স্যার শীগগীর আসেন রতনের বাপে অফিস থেকে আইসা রক্ত বমি করতেছে, হেরে আপনারা বাঁচান।

পিওনের বাসা ক্যাম্পাসের ভিতরেই। তারা দ্রুত তার বাসায় গিয়ে দেখে পিওন বিছানায় শুয়ে আছে।

সারা ঘর তার রক্ত বমিতে ভেসে যাচ্ছে। পিওনের বুকের সাথে শক্ত করে ধরা তাদের বাক্সটা। তারমানে এই পিওনই বাক্সটা স্যারের লকার ভেঙ্গে চুরি করে এনেছে আজ।

পিওনের বউ বলল, স্যার আজ দুপুর বেলা রতনের বাপে এই বাক্সটা নিয়ে আইসা কইল রতনের মা খাবার দাও, আমরা বড়লোক হয়ে যাব। আমি কইলাম কেন গুপ্তধন পাইছেন নি? সে কয় গুপ্তধনই।

খাবার দাও। আমি খাবার আইনা দেখি সে রক্ত বমি কইরা ঘর ভাসাইছে। স্যার হেরে বাঁচান।

প্রফেসর এম্বুলেন্স আসতে বলে বাক্সটা তুলে নিলেন। সবাই বিস্মিত, হতভম্ব। এম্বুলেন্স এসে মুমুর্ষ পিওনকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। তারা ডিপার্টমেন্টে ফিরে এলেন।

তমাল বলল, কি ব্যাপার বুঝলাম না।পিওন আজমল  এতো পুরান আর ভালো মানুষ, সে-ই স্যারের ড্রয়ার চুরি করল।

প্রফেসর বললেন, লোভ সামলতে পারে নি।

সিফাত বলল, কিন্তু রক্তবমি হচ্ছিল কেন? বাক্সে লেখা অভিশাপ ফলে গেল নাকি?

সবাই মৃদু হাসল ওর কথার ভঙ্গিতে। অন্তু বলল, অভিশাপ অনুযায়ী মরে যাওয়ার কথা। মারা যায় নি সে। ফুড পয়জনিং সম্ভবত। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, সুস্থ হয়ে যাবে।

সন্ধায় তারা স্যারের রুমে বাক্সটা ঘিরে বসেছিল। তখন খবর এলো মারা গেছে পিওন আজমল। খবর পেয়ে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য।

তাহলে? বাক্সটার কি সত্যিই অভিশাপ বলে কিছু আছে?

আজমল বাক্সটা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল বাসায়। বোঝাই যাচ্ছে তাকে কেউ চুরি করতে বলেছিল। সিফাত ভাবছিল এর পেছনে ওই আখলাক নামের লোকটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

যে লোক এই বাক্সের জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চায় সে কি পরিমাণ বেপরোয়া হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

রাতে সিফাত  আল বেরুনী হলে রুমে আধশোয়া হয়ে বসে ভাবছিল। স্যার বাক্সটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে গেছেন। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এই বাক্স আবার চুরি বা  ছিনতাই হতে পারে।

সেই জন্য স্যার একটা অদ্ভুত কাজ করেছেন। সবাই চলে আসার পর স্যার বাক্সটা সিফাতের কাছে দিয়ে দিয়েছেন।

লজিক পরিষ্কার। যারা বাক্স খুঁজবে তাদের নজর থাকবে স্যারের উপর। সবাই ভাববে স্যারের বাসায়ই পাওয়া যাবে বাক্সটা। স্যার সেজন্য বাক্সটা সিফাতের কাছে দিয়ে দিয়েছেন।

সিফাত তার ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছে। তার রুমমেট বাড়ি থেকে এখনোও ফেরে নি কাজেই তার রুম নিরাপদ।

সিফাত বাক্সটা বের করে দেখছিল। কিউবটা অদ্ভুত, কি দিয়ে তৈরি সেটাই বোঝা মুষ্কিল। সে সৌনাগড়ার চন্দ্রমাসের হিসাব বের করে ফেলেছে।

উয়েরী বটেশ্বরে পাওয়া পুরান পুঁথির হিসাব অনুযায়ী  তাদের চন্দ্রবছর শুরু হবে জানুয়ারীর ২০ তারিখে।

মাত্র বারো দিন পর। আচ্ছা এই বাক্সকি সত্যিই ওই দিন একা একা খুলে যাবে? কি উপহার বের হবে বাক্স থেকে?

সিফাতের ধারণা এই বাক্স খুলবে না। সেই সময় হয়ত কোন টেকনোলজি দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এটা খোলার ব্যবস্থা করেছিল এটা যে তৈরি করেছিল সে, কিন্তু হাজার বছর পর সেই টেকনোলজি আর কাজ করবে না সেটা শিওর।

সিফাতের রুমের দরজায় নক হলো। সিফাত তাড়াতাড়ি বাক্সটা তার পড়ার টেবিলে বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে ফেলল।

কে?

আমি আর অন্তু।

তমালের গলা পেল সিফাত। সে ঘড়ি দেখল। রাত এগারোটা। তমাল আর অন্তু সালাম বরকত হলে থাকে। ওরা এসেছে এতো রাতে, তারমানে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছা।

এমনও হয় তারা মাঝে মাঝে কারও রুমে সারা রাত আড্ডা দিয়ে বা কার্ড খেলে কাটিয়ে দেয়।

অন্তু আর তমাল ঢুকে বলল, কিরে তুই বলে একা রুমে?

হু রুমমেট আসে নাই। বস গল্প করি।

তমাল বলল, দোস্ত যা-ই বলিস আজমল মারা যাবে ভাবতেই পারছি না।

সিফাত বলল, হু সেটাই।

অন্তু বলল, কিন্তু ওই বাক্সর অভিশাপের কথাটা আবার বিশ্বাস করে বসিস না প্লীজ। এইটা একটা কাকতালীয় ঘটনা।

সিফাত বলল, আমারও তাই ধারণা। এইসব অভিশাপ হচ্ছে একটা সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট ফেলানো ছাড়া আর কিছু না।

তমাল বলল, অভিশাপের কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা থাকতেও পারে। হয়ত আমরা এখনও জানি না।

ভাবে দেখ মিশরে মমি বের করার সময় কিন্তু এই ধরনের অভিশাপে বহু লোক মারা গেছে।

অন্তু উড়িয়ে দিয়ে বলল, ধুর ফালতু। অভিশাপ বলে কিছু বিজ্ঞানে প্রমাণ নেই। বুজরুকি। তবে সিফাত এই বাক্স আমার মতে স্যারের কাছে রাখা ঠিক হচ্ছে না, সেটা এখন মিউজিয়ামের হাতে দিয়ে দেয়া উচিৎ।

এর দাম ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি উঠে গেছে, এতো মূল্যবান জিনিসের কিন্তু নিরাপত্তা নেই।

সিফাত বলল, আমিও তাই ভাবছি।

তমাল বলল, আমাদের কালই স্যারকে বলা দরকার। এতো দামী জিনিস আর নিজেদের রিস্কে রাখা ঠিক হচ্ছে না। আবার কোন অঘটন ঘটে যায় কে জানে।

অন্তু বলল, অঘটন বলতে অভিশাপ টাপ কিছু না তবে আখলাক নামের লোকটা দলবল নিয়ে এসে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।

সিফাত কিছু বলল না। তারও মনে হচ্ছে এতো দামী জিনিস আর নিজেদের কাছে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ঠিক হচ্ছে না।

যদিও কেউই জানে না বাক্সটা এখন স্যারের কাছে নেই, তবু এটা বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যাবে না। নিশ্চয়ই আখলাকের দলবল আরোও লোককে টাকা দিয়ে কিনে ফেলবে।

অন্তু বলল, সিফাত তুই না বলছিলি সৌনাগড়ের চন্দ্রবছরের হিসাব বের করে ফেলেছিস? কবে তাদের বছরের প্রথমদিন?

এই বছরের ২০ জানুয়ারী।

অন্তু শীষ দিয়ে উঠল। তারমানে আর মাত্র বারো দিন আছে। উঁহু ভাই আমি বলব ২০ তারিখ পর্যন্ত বাক্সটা স্যারের কাছেই থাক। দেখি কিছু হয় কি না ওইদিন। বাক্স খুলে কি উপহার বের হয়।

তমাল বলল, ধুর এইসব বাদ দে। আজ যা ধকল গেল। চল কার্ড খেলি।

সিফাতের কার্ড খেলতে ইচ্ছে করছিল না। বলল, তিনজনে কি খেলব?

অন্তু বলল, তোর পাশের রুমে সিরাজ থাকে না? ওকে ডাক।

সিফাত উঠে সিরাজকে ডেকে নিয়ে এলো। তারা সারারাত কার্ড খেলে ভোরের দিকে ঘুমাতে গেল। ক্লান্ত চারজনই এই রুমে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

সিফাতের ঘুম ভাঙ্গল পরদিন সকাল দশটায়। সে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ক্লাশে যাওয়ার জন্য রেডি হলো।

ব্যাগ গুছিয়ে তার টেবিলের বইখাতের পেছনে বাক্সটা নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেখল নেই সেটা। তার স্পষ্ট মনে আছে সে বাক্সটা টেবিলে বইখাতার আড়ালে রেখেছিল।

বন্ধুদের সামনে সেটা আর সরাতে পারেনি। তবু সে তার রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজল। কোথাও নেই বাক্সটা।

অবিশ্বাস্য লাগছে। এরমধ্যে তার তিন বন্ধু ছাড়া আর কেউই আসে নি রুমে, তারমানে এই তিন বন্ধুর কেউ একজন সরিয়েছে বাক্সটা।

সে দ্রুত ফোন করে স্যারকে জানালো ঘটনাটা। ভীষণ লজ্জা লাগছে। স্যার তাকে দায়িত্ববান মনে করে বাক্সটা রাখতে দিয়েছিলেন। কি ভীষণ অবহেলা সে করেছে!

স্যার সব শুনে তাকে ডিপার্ট্মেন্টে চলে আসতে বললেন। সে বের হওয়ার আগে ভালো করে রুমটা আবার খুঁজে দেখল। পেলো না এবারও। সকালে তার তিন বন্ধু যার যার মতো ঘুম ভেঙ্গে বের হয়ে গেছে, কে নিয়ে গেল বাক্সটা?

ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সিফাত দেখল সবাই হাজির হয়েছে সেখানে। তমাল আর অন্তুও আছে। তাদের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই কিছু। এরা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এরা এই কাজ করবে ভাবা যাচ্ছে না৷

সিফাতের মনে হচ্ছে এটা সিরাজের কাজ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হয়ত তাকে আখলাক নিয়োগ দিয়েছে সিফাতের উপর নজর রাখার জন্য, অনেক টাকার লোভ দেখালে সেটা সম্ভব।

কিন্তু সিরাজ কিভাবে জানবে বাক্সটা তার কাছে? রাতে কোনো ফাঁকে দেখে ফেলেছিল?

স্যার সবার সাথে এমনভাবে কাজ শুরু করলেন যেনো কিছুই হয় নি। কাউকে জানানো হলো না বাক্সটা আবার চুরি হয়েছে। সিফাতকে বললেন, তুমি এক কাজ করো সিফাত তোমার পাশের রুমে যে সিরাজ থাকে তাকে একটু ডেকে নিয়ে এসো।

অন্যরা বিস্মিত হলো। সিরাজ এন্থ্রোপলজির ছাত্র। তাকে কি দরকার?

সিফাত সিরাজকে ফোন দিল। তার মোবাইল বন্ধ। সে বলল, স্যার সিরাজের মোবাইল বন্ধ। আমি খুঁজে নিয়ে আসি ওকে?

স্যার মাথা নাড়লেন।

 

{ আরো পড়ুন –হঠাৎ জ্বীন

 

যাও।

সিফাত এন্থ্রোপলজি ডিপার্টমেন্টে গিয়ে শুনল সিরাজ আসেনি ক্লাশে। সে দ্রুত আল বেরুনী হলে ফেরত গেল।

সেখানে সিরাজের রুম মেট বলল সিরাজ হঠাৎ করে দেশের বাড়ি চলে গেছে, বাড়ি থেকে জরুরী খবর এসেছিল।

মন খারাপ করে সিফাত ডিপার্টমেন্টে ফিরে আসল। স্যার সব শুনে মাথা ঝাঁকালেন। মনে হচ্ছে সিরাজেরই কাজ। এনটিক হান্টারদের হাত অনেক লম্বা।

তুমি এক কাজ করো, তমালকে নিয়ে সিরাজের বাড়ির দিকে যাও। দেখো ওকে পাওয়া যায় কি না। পেয়ে গেলে আমার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেবে।

স্যার তমালকে ডেকে বললেন, সিফাতকে জরুরী কাজে সিরাজের কাছে পাঠাচ্ছি তুমি একটু তার সঙ্গে যাও।

তমাল বিস্মিত হলেও কোন প্রশ্ন করল না।

সিফাত আর তমাল বেরে হয়ে গেল। সিরাজের বাড়ি ঝিনাইদহ। অনেক দূরের পথ। তারা দুইজন যার যার রুমে ফিরে একটা করে ছোট ব্যাগে টুকিটাকি ভরে নিল। তারপর বাসে উঠল।

অভিশপ্ত বাক্স

বাস ছুটে চলছিল আরিচা রোড ধরে। তমাল সিটে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। গতকাল  রাতে তারা কেউই ঘুমায়নি।

কিন্তু সিফাতের চোখে ঘুম নেই। তার বোকামির জন্য বাক্সটা হাতছাড়া হয়ে গেল। কি লজ্জার ব্যাপার। নিজের উপর রাগও হচ্ছে ভীষণ।

এখন সিরাজকে ধরে দ্রুত বাক্সটা উদ্ধার করতে পারলেই হয়। কতক্ষণ লাগবে ঝিনাইদহ যেতে কে জানে! বাসের ড্রাইভার বাস চালাচ্ছে উল্কার গতিতে।

মনে হচ্ছে ড্রাইভার টের পেয়েছে সিফাতের খুব তাড়া আচ্ছে। সে একের পর এক বাস ট্রাক ওভারটেক করে চলছে, হেলপার আর সুপারভাইজার হৈ হৈ করে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।

একেকটা বাস ওভারটেক করছে আর তারা হাসাহাসি করছে নিজেদের মধ্যে। এই রকম একটা বড় বাস ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারালো ড্রাইভার। বাস গিয়ে উল্টে পড়ল পাশের খাদে।

সিফাত প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গিয়েছিল সিট থেকে। কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে দেখল বাস থেকে সে ছিটকে পড়ে গেছে।

বাস কয়েকবার গড়ান দিয়ে এখন রাস্তার পাশের ক্ষেতের উপর পড়েছে। তারমতো আরোও কয়েকজন বাস থেকে ছিটকে আশে পাশে পড়ে আছে।

সিফাত নিজের হাত পা পরীক্ষা করে দেখল আশ্চর্যজনক ভাবে তেমন কিছুই হয়নি তার। সে তমালের খোঁজে আশেপাশে তাকালো। দূরে একটা গাছের নীচে পড়ে আছে তমাল।

সে দ্রুত কাছে গিয়ে দেখল তমালের বুক বরাবর একটা কাঁচের টুকরা ঢুকে গেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। হায় খোদা!

তমাল বলল, সিফাত আমি মারা যাচ্ছি। বাক্সের অভিশাপ লেগেছে । আজ সকালে ঘুম ভেঙ্গে তোর ওখানে পড়ার টেবিলে বইয়ের ফাঁকে বাক্সটা চোখে পড়েছিল।

ভেবেছিলাম তুই বোধহয় চুরি করেছিস আখলাককে দিয়ে টাকা পাওয়ার জন্য। আমি লোভ সামলাতে পারিনি দোস্ত।

বাক্সটা নিয়ে এসে আখলাককে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম। আজ রাতে তাকে দিয়ে দিতাম। কিন্তু দেখ বাক্সের অভিশাপে পারলাম না। তুই আমার ব্যাগ থেকে বাক্সটা নে দোস্ত, আর স্যারকে বলিস আমাকে মাফ করে দিতে।

সিফাত বলল, শান্ত হ তমাল। বাক্সের অভিশাপ বলে কিছু নেই। আমরা একটা এক্সডিন্ট করেছি। আমি তোকে এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তোর কিছু হবে না।

তমাল কষ্টে হাসল। বলল, দোস্ত আমি চুরি করেছিলাম এইটা কি চেপে যেতে পারবি না? আমার বাবা মা শুনলে ভারী কষ্ট পাবে।

আমি তোদের সঙ্গে, স্যারের সঙ্গে বেঈমানি করেছি, আমারে মাফ কর ভাই। সারাজীবন বাবা মা সৎ পথে চলা শিখিয়েছে, আমার জন্য তারা গর্ব করে, তারা জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে।

সিফাত শান্ত গলায় বলল, কেউ কিচ্ছু জানবে না। আর তোরও কিছু  হবে না। শান্ত থাক। ভুল আমরা সবাই করি। আমরা সাধারণ মানুষ। এইগুলো নিয়ে ভাবিস না। আমি তোকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাব।

তমাল ব্যাগ থেকে বাক্সটা বের করে সিফাতের হাতে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। সিফাত বাক্সটা ব্যাগে ভরে দ্রুত সিফাতকে তুলে নিল।

রাস্তায় একটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাকে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিল। খবর পেয়ে স্যার দলবল নিয়ে চলে আসলেন।

সেদিন রাতে মারা গেল তমাল।

সিফাত আর স্যার ছাড়া কেউ জানল না তমাল বাক্সটা চুরি করেছিল। আর একজন জানত আখলাক। সে তমালের কাছ থেকে রাতেই বাক্সটা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

তমালের দাবী অনুযায়ী সে গোল্ড বার দিয়ে পেমেন্ট করার জন্য গোল্ড বার রেডি করে অপেক্ষা করছিল। একটা বাক্সের জন্য এতো টাকা তার ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না।

বাক্সটা যারা পেয়েছে তারা বিশেষ কেউ না, ওই প্রফেসর আর পাঁচ শিষ্যকে একটু ভয় দেখালেই সুরসুর করে দিয়ে দিত বাক্সটা।

কিন্তু গ্রীসের যে লোক এই বাক্স কেনার জন্য তাকে নিয়োগ দিয়েছে সে বার বার বলে দিয়েছে জোর করে বাক্স নেয়া যাবে না, কিনে বা উপহার হিসাবে নিতে হবে কারও কাছ থেকে।

এই বাক্স নাকি জাদু করা। যে জোর করে নেবে তার উপর নাকি অভিশাপ নামবে।  কি অদ্ভুত কথা। সে  সন্ধ্যার আগে খবর পেল মারা গেছে তমাল।

আখলাক একটু চমকাল খবরটা পেয়ে। এর আগে বাক্স চুরি করে মারা গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওন, তাহলে কি ওই জাদু আর অভিশাপের কথাই ঠিক?

 

 

{ আরো পড়ুন –আসমানী ও জ্বীন

( অভিশপ্ত বাক্স গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)

Lets read music blog: How Coldplay’s Debut Took Flight