অশরীরী – ছোট গল্প

অশরীরী

লেখকঃ মাহমুদা খাতুন মৌরী

 

দিনাজপুরের কোনো এক নিরিবিলি গ্রাম। ঘটনা আজ থেকে ১৭ বছর আগের। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। সামনে ছিলো আমার ফাইনাল পরীক্ষা, তাই টেবিলে বসে পড়ছিলাম।

বলে রাখা ভালো, আমি রাত ১১ টার পর থেকে পড়াশোনা করতাম। কেননা তখন সবকিছু নিরিবিলি থাকতো। পড়াশোনা করতে তখন বেশ ভালো লাগতো।

গ্রামের বিদ্যুৎ! ঐদিনও বাসায় বিদ্যুৎ ছিলো না। গ্রামের বাড়িতে তখন খুব প্রচলিত ছিলো হারিকেন। আমি হারিকেন জ্বালিয়ে নিজের পরীক্ষার পাড়াগুলো পড়ছিলাম। রাত তখন আনুমানিক ২টা নাগাদ হঠাৎ করেই টিনের উপর একটা বিকট শব্দ হলো। মনে হচ্ছিলো যেনো কেউ টিনের উপর খুব জোরে জোরে বেশ ভারি কিছু ছুড়ছে। ভাবলাম কেউ হয়তো শয়তানি করে ঢিল ছুড়ছে। বেশ কয়েকবার এমন শব্দ হওয়ায় আমার মেজাজ একদম চরমে উঠলো।

ভাবলাম যাই একটু শাসিয়ে আসি। তাহলে যদি এই ঢিল ছুড়াটা বন্ধ হয়।

হারিকেন হাতে নিয়ে বাহিরে এসে একটু চিৎকার করলাম যেনো সে আর এই দুষ্টুমিটা না করে। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছুই নেই। চাঁদনী রাত সব কিছু খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। কোথাও কাউকে দেখতে পেলাম না। বিষয়টা এতটা পাত্তা না দিয়ে আবার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।

এক পা এগোতেই শুনতে পেলাম পেছন থেকে আমার নাম ধরে কে যেন জোরে জোরে ডাকছে। বাসার সাবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু আমি একা জেগে ছিলাম পড়াশোনার জন্য। তাহলে কে সে? একটু চমকে উঠেছি এতো রাতে কে আবার ডাকে, পিছনে ফিরে তাকালাম।

দেখি এমন একটা মানুষ, যার গলার উপরটা ফাকা। মানে কোনো মাথা নেই। তার গলা দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছিলো। কি ভয়ংকর দেখতে! মাথাবিহীন এমন অদ্ভুত কিছু দেখে কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। প্রচন্ড ভয়ে মনের মধ্যে যত সুরা মনে  পড়ছিল সব একাধারে পড়ছিলাম আর মনকে বলতেছি ভয় পেলে চলবে না। কারণ শুনেছি ভয় পেলে এসব অশরীরী আরও তেড়ে আসে।

এক সেকেন্ড এর জন্যও সুরা তেলোয়াত থামিনি তখন। নিজেকে বাঁচানোর জন্য মা-বাবাকে ডাকছিলাম কিন্তু আমার গলা দিয়ে তখন কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিলো না। এমন মনে হচ্ছে যে কেউ গলা চেপে ধরে আছে। নিজেকে তখন বেশ অসহায় লাগলো। প্রচন্ড ভয়ে নিজের মধ্যে শক্তি পাচ্ছিলাম না। হাতে হারিকেন থাকার কারণে কাছে আসতে পারছিলো না সে। শুধু দূর থেকে একটা বিকট হাসি দিয়ে বললো, “আজকে তো বেঁচে গেলি!” এরপর নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।

আমিও নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে মা-বাবাকে ডাক দিয়ে দরজার সামনেই পড়ে গেলাম। পরের দিন মসজিদের ইমাম এসে পানি পড়া আর তেল পড়া দিয়ে গিয়েছিলো। এর প্রায় এক সপ্তাহ যাবত আমি জ্বরে ভুগেছিলাম।

 

{ আরো পড়ুন – ভূতের গল্প

 

( অশরীরী – ছোট গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

 

অশরীরী

” সমাপ্ত”