ছদ্মবেশি_পিশাচ – ভয়ংকর পিশাচের গল্প ( পরবর্তী পর্ব )

পর্ব:-চার

ছদ্মবেশি_পিশাচ-

মারিয়া ইরফানের মামার বাড়িতে প্রায় ঘন্টাখানেক বসে থেকে গল্প করলো।মারিয়া জানতে পারলো যে ইরফানের মামার দুই ছেলে দুইজনই বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশ থাকে।উনাদের নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু এই শেষ বয়সে উনারা নিজ দেশ ছেড়ে যেতে চাইনি।মারিয়া বাসায় ফিরে আসার পর থেকে ভাবছে এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক লাগলো,,কিন্তু যখন সে একা গিয়েছিলো তখন পুরো বাড়ি অমন লাগছিলো কেন?মারিয়ার কাছে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে।এমন সময় ইরফান বলল

তোমাকে কেমন জানি চিন্তিত দেখাচ্ছে?কোন কিছু কি হয়েছে তোমার?

মারিয়া ইরফানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল

তেমন কিছু না।মা-বাবার কথা মনে পড়ছে।বিশেষ করে আমার ছেলের কথা বেশি মনে পড়ছে।

হুম মনে পড়ায় স্বাভাবিক।ভেবেছিলাম তোমার ছেলের কাছে থেকে বাবা ডাক শুনে বাবা হওয়ার স্বাদ পূরন করবো কিন্তু সেটা আর হলো না।

মারিয়া চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।ইরফান বলল

থাক মন খারাপ করো না।রাতের খাবারটা খেয়ে নিই চলো।

হুমম চলুন।

মারিয়া আর ইরফান বসে থেকে রাতের খাবার খেলো।তারপর দুইজনে রুমে এসে বসে আছে।ইরফান জানালার সামনে গিয়ে সেখান থেকে চাঁদ দেখছে।মারিয়া গিয়ে ইরফানের পাশে দাড়ালো।তখন ইরফান হালকা হেসে বলল

আজকের চাঁদ কিন্তু অনেক সুন্দর তাই না?

হুমম খুব সুন্দর।

আজ পূর্নিমার রাত।আর আজকের রাত আমার জন্য খুব উপকারি একটা রাত।

ইরফানের কথা শুনে মারিয়া অবাক হয়ে বলল

আপনার জন্য উপকারী রাত বলতে?আপনার কথাটির মানে আমি বুঝলাম না।

কিছু না।তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।

আপনি শুইবেন না?

আমি তো শুতে পারি না।

মারিয়া আর কিছু না বলে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।ইরফানের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে মারিয়ার।না জানি সে বেচারা কতদিন ধরে এভাবে বসে বসে রাত পার করে।একটু বাদে মারিয়ার চোখে ঘুম এসে গেলো।

হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজে মারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মারিয়া চোখ খুলে দেখলো চারদিকে কুটকুটে অন্ধকার।নিজের হাত-পা দেখার মতো আলো রুমের মধ্যে নেই।মাঝে মাঝে বিজলি চমকানোর আলোয় ভিতরটা আলোকিত হয়ে উঠছেন।আর বেশ জোরে জোরে বাজ পড়ছে সেই সাথে প্রচন্ড ঝড় বাতাস শুরু হয়েছে।মারিয়া ঝড় আর বজ্রপাতকে বেশ ভয় পায়।মারিয়া ইরফানকে বলল

এই যে শুনছেন,,আমার না খুব ভয় করছে?

কিন্তু মারিয়ার কথার কোন জবাব এলো না।মারিয়া ওর বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে ফ্লাশ জালিয়ে দেখলো ইরফান নেই।মারিয়া মনে মনে বলল,,এতো রাতে উনি কই গেলেন?মারিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্লাশ নিয়ে বাড়ি বাথরুমের দিকে যেতে লাগলো,,ভাবলো বাথরুমে গেছে কি না?কিন্তু বাথরুমে গিয়ে দেখলো ইরফান সেখানে নেই।এতো রাতে লোকটা গেলো কোথায়?হঠাৎ জোরে বাজ পড়লো মারিয়া চিৎকার দিয়ে দুই হাত দিয়ে কান ধরলো।মারিয়া জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।

এদিকে ইরফান নেই সেই জন্য ওর চিন্তা হচ্ছে।মারিয়া রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে কিন্তু কোথাও ইরফান নেই।হঠাৎ মারিয়া কিছু একটার আওয়াজ শুনে থেমে গেলো।আওয়াজ শুনতে অনেকটা হাড় কড়মড় করে চিবিয়ে খাওয়ার আওয়াজের মতো।মারিয়া হার্টবিট দ্রুত চলতে শুরু করেছে।তাই মারিয়া ভয় পেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো।কি যেন ভেবে সে একবার বেলকনিতে আসলো।বেলকনিতে এসে নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো

সেখানে একটা ঘোড়া দাড় করানো।মারিয়া ঘোড়া দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো,,এই ঘোড়াটি কার আর এটা এখানে কি করছে?এমন সময় আবার বাজ পড়লো।মারিয়া আবার দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরলো।তারপর আকাশের দিকে তাকাতেই যা দেখলো এতে ওর কলিজা শুকিয়ে গেলো।বাড়ির ছাদ হতে একটু উচুতে অসংখ্য কালো অশরীরী ছায়া চক্রাকারে ঘুরাঘুরি করছে।

মারিয়া এই দৃশ্য দেখে চোখ বড় বড় করে ফেললো আর এমন সময় সেই ঘোড়ার ওপর কালো কুচকুচে একটা দানব আকৃতির মানুষ এসে ঘোড়ার ওপর বসলো।মাথায় তার শিং এর মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।মারিয়া এটা দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলো।হঠাৎ ঘোড়া যেতে শুরু করলো।তারপর ঘোড়ায় থাকা লোকটি মারিয়ার দিকে তাকালো।মারিয়া লোকটির লাল চোখ বিশিষ্ট ভয়ংকর চেহারা দিকে জোরে চিৎকার করে উঠলো।এমন সময় ইরফান পিছন থেকে বলে উঠলো

কি হয়েছে?এভাবে চিৎকার করছো কেন?

এখানে একজন এক ভয়ংকর চেহারার লোক দাড়িয়ে আছে ঘোড়া নিয়ে।

আর এমন সময় কারেন্ট চলে এলো।ইরফান হুইল চেয়ার নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বলল

এখানে তো কেউ নেই।আর এতো রাতে এখানে ঘোড়া আসবে কোথায় থেকে।

আমি দেখেছি এখানে কেউ ছিলো।

কেউ নেই বিশ্বাস না হলে এসে দেখো।

মারিয়া ভয়ে ভয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো সত্যি সেখানে কেউ নেই।আর একটা জিনিস দেখে অবাক হচ্ছে হঠাৎ করে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো কি করে?মারিয়া বলল

তার ঘোড়া এখানে দাড়িয়ে ছিলো।আর সে চলে গেছে।

ইরফান হেসে উঠে বলল

আরে পাগল কিছু হয়নি সম্ভবত তুমি ভয়ানক কোন স্বপ্ন দেখেছো।

স্বপ্ন না সত্যি দেখেছিলো আমি।আর আপনি কই ছিলেন এতক্ষণ।কত খুজলাম।আপনাকে দেখতে না পেয়ে আমি উঠে পড়ছি।

আমি তো এখানে বসে ছিলাম।অনেকক্ষণ যাবৎ দেখছিলাম তোমার মুখ থেকে গোঙ্গানি বের হচ্ছে।তারপর হঠাৎ তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনির সামনে গিয়ে চিৎকার করলে।

ইরফানের কথা শুনে মারিয়া থ মেরে দাড়িয়ে আছে,,সে বেশ অবাক হয়ে ভাবছে,,ইরফান এসব কি বলছে,,সবকিছু কেমন জানি মারিয়ার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।মারিয়া বলল

এসব কি বলছেন আপনি?আমি যা দেখেছি সেটা সজাগ অবস্থায় দেখেছি।আর যখন কারেন্ট ছিলো না তখন আমি ভয়ে আপনাকে ডেকে ছিলাম কিন্তু আপনি ছিলেন না।তাই ফোনের লাইট নিয়ে আপনাকে খুজতে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনাকে কোথাও পাইনি।এই যে দেখুন  আমার হাতে ফোন আছে।

ইরফান তখন মারিয়ার কাছে এসে বলল

যখন কারেন্ট যায়নি তখন তুমি আমায় খুজবে কি করে?আর আমি তো এখানে বসে ছিলাম।কোথাও যাইনি আমি সত্যি বলছি।

কিন্তু এটা কি করতে হতে পারে।যখন আপনাকে খুজছিলাম তখন বাইরে ঝড় হচ্ছিলো।

বাইরে কোন ঝড় হয়নি বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখো।মাঝে মধ্যে আমরা যে স্বপ্নগুলো দেখি সেগুলো দেখে মনে হয় স্বপ্নের ভিতরের কাজ গুলো বাস্তবে করছি।আর আজ এটা তোমার সাথে হয়েছে।

মারিয়া আর কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।সে কি এসব আসলে স্বপ্নে দেখেছে নাকি বাস্তবে ঘটেছে।এটা ভাবতে ভাবতে মারিয়া মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো।মারিয়ার কাছে পুরো ঘটনা স্পষ্ট যে যা ঘটেছে সব সত্যি ঘটেছে কোন স্বপ্ন ছিলো না।কিন্তু ইরফান এটাকে স্বপ্ন বলে চালিয়ে দিচ্ছে?কিন্তু কেন?

সকালবেলা মারিয়া ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে সেই ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে।ইরফান একটু দুরে বসে আছে।মারিয়া ওদের বেলকনি বরাবর যে গাছগুলো রয়েছে সেখানে পানি দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসলো আর তখন দেখলো সেখানে ঘোড়ার পায়ের ছাপ।এটা দেখে মারিয়া ইরফানকে ডাকলো।

এই যে শুনছেন?এদিকে একটু আসুন।

ইরফান হুইল চেয়ার নিয়ে এগিয়ে এসে বলল

হ্যা কি হয়েছে বলো।

মারিয়া ইরফানের দিকে তাকিয়ে ওই গাছের দিকে ইশারা করে বলল

কাল বলেছিলাম না এখানে ঘোড়া ছিলো আপনি তো বললেন স্বপ্নে দেখেছি।দেখুন ঘোড়ার পায়ের ছাপ।

ইরফান সেদিকে তাকিয়ে বলল

কোথায় ঘোড়ার পায়ের ছাপ?

এই যে এখানে দেখতে পাচ্ছেন না?

পায়ের ছাপ থাকলে তো দেখবো।

মারিয়া তখন সেদিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে কোন পায়ের ছাপ নেই।মারিয়া অবাক হয়ে বলল

একি!কোথায় গেলো পায়ের ছাপ?

এখানে কোন পায়ের ছাপ ছিলো না।কাল রাতের স্বপ্নের কথা হয়তো ভুলতে পারছো না তাই এখনো জিনিসটা তোমার মাথায় ঘুরাফেরা করছে।

না আমি সত্যি বলছি।আপনি বিশ্বাস করছেন না কেন?

আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিশ্বাস করলাম।এখন চলো আমার আবার বের হতে হবে।

ইরফান আর মারিয়া ভিতরে চলে গেলো।আর সে জায়গায় ঘোড়ার পায়ের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো।ইরফান সকালের নাস্তা করে আবার বেরিয়ে পড়লো।এখন পুরো বাড়িতে মারিয়া শুধু একা।মারিয়া বার বার ভাবছে রাতে যেসব ঘটেছে সে সব কিছু ছিলো বাস্তব কিন্তু ইরফান সেটাকে স্বপ্ন বলে চালিয়ে দিলো কেন?

ইরফানকে এতদিন যেমন ভালো মানুষ মনে হয়েছে তেমনি ওকে কাল থেকে রহস্যময় মনে হচ্ছে।কিছু একটা তো রয়েছে যা সবার আড়ালে।আর রাতে মারিয়া যেসব কালো অশরীরী দেখেছে সেসব এখানে কি করছে?ছোট বেলায় মারিয়া বিভিন্ন কার্টুন মুভিতে দেখতো যে যারা যাদু বিদ্যা জানে তাদের বাড়িতে এমন অশরীরী দেখা যায়,,তাহলে কি ইরফানও কোন জাদু বিদ্যা জানে?তখন মারিয়া মনে মনে বলল,,এসব কি ভাবছি বাস্তবে এসব কখনো সম্ভব না?

এখন মারিয়ার মনে হচ্ছে কাল রাতে সে স্বপ্ন দেখেছিলো ইরফানের কথা ঠিক মনে হচ্ছে।

ইরফান চলে যাওয়ার একটু পর সেই সাদা বিড়াল আসে।এই ব্যাপারটা বেশ অবাক লাগছে।ইরফান থাকতে একবারের জন্যও তো সেই সাদা বিড়াল আসে না।মনে মনে ভাবলো ইরফান হয়তো তাড়িয়ে দেয় তাই আসে না।সেই বিড়াল সব সময় মারিয়ার সাথে বসে থাকে।মারিয়া যেখানে যায় সেই বিড়ালও ওর সাথে যায়।ইরফান আজ সন্ধ্যায় ফিরে এলো।ইরফান আসার পর পরই সেই বিড়াল উধাও।মারিয়া আজও ইরফানকে বলল

আপনি কি কোন অফিসে চাকরি করেন?

ইরফান হেসে জবাব দিলো

সেরকমই কিছু ধরে নাও।তবে সময় হলে অবশ্যই জানবে।

মারিয়া আর কিছু বলে না।এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো।মারিয়া ইরফানের ব্যাপারে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।মারিয়া মাঝে মধ্যে থানায় ফোন করে ওর পরিবারের হত্যা কারির কথা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলে,,খুব শীঘ্রই আমরা হত্যাকারিকে ধরে ফেলবো।

ইরফান মারিয়াকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বলল

এই টাকা গুলো দিয়ে তুমি তোমার পছন্দ মতো কিছু জামা কিনে নিয়ে এসো।

আমার তো জামা আছে।আবার নতুন করে কেনা কি দরকার এসব দিয়ে চলবে।

অনেক পুরোনো এগুলো।তুমি নতুন কিনে নিয়ে এসো।

মারিয়া এতে একটু খুশি হলো।পরেরদিন ইরফান কাজে যাওয়ার পর মারিয়া মার্কেটে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।মারিয়া রিকশা থেকে নেমে মার্কেটের ভিতর যাবে এমন সময় তার সামিউলের সাথে দেখা হলো।

 

{ আরো পড়ুন – অভিশপ্ত কবরস্থান – ভয়ানক অভিশপ্ত কবরস্থানের গল্প!

পর্ব:-পাঁচ

মারিয়া রিকশা থেকে নেমে মার্কেটে ঢুকবে এমন সময় সামিউলের সাথে সামনাসামনি দেখা।মারিয়া সামিউলকে দেখে বেশ চমকে উঠলো।সামিউলও তাই।মারিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

সামি তুমি এখানে কি করছো?

তুমি এখানে কি করছো?

আমার বিয়ে তো এখানে হয়েছে।কিন্তু তুমি এখানে কেন এসেছো?

আমার একটা কাজের কথা হচ্ছে এখানে তাই আর কি চলে এসেছি।

ও কি কাজ জানতে পারি?

কাজ বলতে মার্কেটে পাইকারির ব্যবসা শুরু করছি আর কি?তো ভালোই আছো তাই না?

হুম ভালো আছি।

এরপর দুইজন কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো।মারিয়া বলল

আমায় ক্ষমা করে দিও সামি।আমি বলতে গেলে ইচ্ছা করেই তোমার জীবনে আসিনি।কারন তুমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে তারা কখনো চাইবে না একজন ডিভোর্সি মেয়েকে তার ছেলের বউ করতে।

এসব এখন থাক।তুমি যে ভালো আছো,,নিজের পরিবারের শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছো এতে আমি অনেক খুশি।আর তুমি আমার কাছে কোন অপরাধ করো নি তাই ক্ষমার প্রশ্নই উঠেনা।

আসলেই খুব ভালো ছেলে তুমি।দেখো তোমার জীবনসঙ্গী অনেক ভালো হবে।

সামিউল আর কিছু বললো না।মারিয়া সামিউলকে সংক্ষেপে সামি বলে ডাকে।মারিয়া মার্কেটে ভিতরে ঢুকতে যাবে কিন্তু আবার সামিউলের কাছে এসে ওকে বলল

কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি আমি?

হ্যাঁ বলো কি কথা?

তুমি কি এখন এখানেই থাকো তাই না?

হ্যাঁ এখানেই থাকি।

আচ্ছা আমি যদি তোমায় কখনো আমার সাহায্যের জন্য ডাকি তাহলে আসতে পারবে?

হ্যাঁ অবশ্যই।তুমি ডাকলে আসবো না এটা কোন কথা হলো।কিছু হয়েছি কি?

না এমনি বললাম।আচ্ছা আসি থাকো।

এই বলে মারিয়া মার্কেটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলো।তারপর মারিয়া রিকশায় উঠে পড়লো।মারিয়া রিকশায় থাকা অবস্থায় রাস্তার ধারে এক দেয়ালের ওপর দেখলো সেই সাদা বিড়াল সেখানে বসে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মারিয়া অবাক হয়ে ভাবলো,,সেই বিড়াল তো বাসায় তাহলে এখানে আসলো কি করে বুঝতে পারলো না।

মারিয়া চিন্তিত হয়ে বাসায় আসলো।বাড়ির দরজা খুলতে দেখলো সেই বিড়াল মেঝেতে চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।মারিয়া অবাক হয়ে ভাবলো,,এই বিড়ালটি হঠাৎ এখানে আসলো কি করে,,আবার ভাবলো হয়তো এটার মতো দেখতে আরেকটাকে দেখেছে সে।তাই আর কিছু ভাবলো না।

মারিয়া পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে গেলো ঝাড়ু নিয়ে।যখন মারিয়ার হাতে কোন কাজ থাকে না বা ওর একা লাগে তখন সে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে।সব রুম পরিষ্কার হয়ে গেলে মারিয়া বাড়ির কোণার দিকে একট

 

{ আরো পড়ুন – সত্য ঘটনা

 

পর্ব:-ছয়

প্রতিদিন রাতের মতো ইরফান আজ রাতেও বেরিয়ে গেলো।মারিয়া এই সুযোগে ছিলো যে কখন ইরফান বেরিয়ে যায়।মারিয়া ইরফানের পিছে পিছে গেলো।ইরফান রুমে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দিলো।ঠিক তখনি মারিয়া দরজার কাছে গেলো।ভিতরে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য সে দরজার ফুটো খুজতে লাগলো।কিন্তু দরজায় একটা ফুটো খুজে পেলো না।হঠাৎ মারিয়ার কানে কথা বলার আওয়াজ এলো।আওয়াজটা ইরফানের।ইরফান কি সব বলছে ওর কথা একটুও বোঝা যাচ্ছে না।

ছদ্মবেশি_পিশাচ

মারিয়া খেয়াল করলো দরজার নিচে ফাঁকা জায়গা আছে।মারিয়া মেঝেতে বসে পড়লো।তারপর দরজার নিচ দিয়ে তাকিয়ে যা দেখলো এতে ওর হৃদপিন্ড বন্ধ হওয়ার উপক্রম।ইরফান আগুনের সামনে বসে আছে।ওর দুই হাতে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে আর ওকে ঘিরে কালো ছায়ার মতো কিছু অশরীরী ঘুরাঘুরি করছে।

ইরফান হুইল চেয়ার ছেড়ে নিচে বসে আছে।ইরফান চোখ বন্ধ অবস্থায় কি সব পড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ ইরফান চোখ খুললো আর তখন মারিয়া দেখলো ওর দুই চোখে আগুন জ্বলছে।মারিয়া আর এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে রুমে চলে আসলো।ভয়ে মারিয়ার গলা শুকিয়ে গেছে।টেবিলের ওপরে থাকা গ্লাসের পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললো।মনে মনে ভাবছে,,এ আমি কার সাথে আছি যে কিনা একজন সাধারন মানুষ না।মারিয়া এখন কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না,,হুট করে কিছু করতে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারে।তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে।ব্যাপারটা সামিকে জানালে মন্দ হয় না।

মারিয়া সামিউলকে ফোন দিলো কিন্তু সামিউলের ফোন বন্ধ।মারিয়ার একটু চিন্তা হলো সামিউলের কিছু হয়ে গেলো না তো?কেননা সামিউল কখনো ফোন বন্ধ করে রাখে না।মারিয়া চুপ করে শুয়ে পড়লো।একটু বাদে ইরফান রুমে আসলো।মারিয়া সেটা বুঝতে পারলো।হঠাৎ মারিয়া ওর মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো।মারিয়া পিছন ঘুরে দেখলো ইরফান মারিয়ার মাথায় হাত দিয়ে আছে।মারিয়া সবকিছু না জানার ভান করে বলল

একি!আপনি এখনো জেগে আছেন যে?

হুমম।ঘুম আসছিলো না তাই বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলাম।

কিছু হয়েছে কি?

জানোই তো তুমি সব যে একজন বাবা হওয়ার কত ইচ্ছা আমার।

ইরফানের কথা শুনে মারিয়ার কেমন জানি মায়া হলো।মনে মনে ভাবলো হয়তো সে বাবা হওয়ার জন্য এমন জাদু বিদ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।মারিয়া উঠে বসলো তারপর ইরফানকে বলল

এই জন্য তো আমি আপনাকে বললাম যে আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নিই।।

আমি কোন বাচ্চা দত্তক নিতে চাইনা।আমি যে সন্তান চাই সে যেন তোমার গর্ভ থেকে হয়।তাও এতে আমার কোন কষ্ট হবে না মনে হবে এটা তো নিজেরই সন্তান।নিজের স্ত্রীর সন্তান।

এটা আপনার সাহায্যে ছাড়া কি করে হবে?আবার আপনি পারবেনও না।তাহলে কিভাবে কি হবে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।আপনি কি বলতে চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন।

তখন ইরফান মারিয়ার দুই হাত চেপে ধরে বলল

আমি চাই তুমি অন্য কোন পুরুষের মাধ্যমে তোমার গর্ভে সন্তান ধারন করো।তোমার যদি কোন বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে তার সাহায্য নিতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না আর তাছাড়া আমি তো তোমায় শারিরীক ভাবে সুখি করতে পারছি না এতে তোমার আমার দুইজনের ইচ্ছা পূরন হবে।

ইরফানের মুখে এমন কথা শুনে মারিয়া রাগ বেড়ে গেলো।মারিয়া ইরফানের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলল

আপনি এখন যে কথা বললেন এটা যদি আপনি না হয়ে অন্য কেউ বলতো তাহলে এতক্ষণে আমি তার জিভ ছিড়ে ফেলতাম।হতে পারেন আপনি অক্ষম তাই বলে নিজের স্ত্রীকে পর পুরুষের সাথে মিশতে বাধ্য করবেন ছিঃ আপনার মন মানষিকতা এত নিচ?

এখন হয়তো তোমার মধ্যে কোন চাহিদা নেই তবে যখন তৈরি হবে তখন আমার কথা কাজে লাগবে।ঘুমিয়ে পড়ো।

ইরফান মারিয়ার সামনে থেকে সরে গেলো।মারিয়া ভাবছে,,বিয়ে হয়ে সে নিজের মতো করে বাঁচতে পারলো না।একের পর এক অশান্তি এসেছে ওর জীবনে।মারিয়া মা-বাবা জেনে শুনে এমন একজনে ঘাড়ে ওকে চাপিয়ে দিয়েছে।মারিয়া ভাবছে সে যে কোথাও চলে যাবে এমন কোন জায়গা নেই।আর গেলেও সে কি করে বাঁচবে।কোন কাজও করতে পারবে না।পড়ালেখা মাত্র ক্লাস নাইন পর্যন্ত।মারিয়া আবার কেমন যেন ডিপ্রেশনে পড়ে গেলো।

মারিয়া আবার ভাবছে ইরফান আবার ওকে পরিক্ষা করছে না তো?সে পরিক্ষা হোক আর যাই হোক সে কখনো এমন কাজ করবে না।

পরেরদিন সকালে মারিয়াকে ইরফান বলল

তো রাতে কি ভাবলে?

আমি কখনো এমন খারাপ কাজ করবো না।দরকার পড়ে মরে যাবো তবু এসব করবো না।

আচ্ছা আমি তো শুধু একটা বাচ্চা চাইছি আর কিছু তো না।তুমি শুধু আমায় একটা বাচ্চা দাও তারপর তুমি যা চাইবে তাই দিবো।

আচ্ছা আপনার আমার থেকে এভাবে বাচ্চা নেওয়ার পিছনে নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য রয়েছে?

হুম সেরকমটায়।

কি সেই উদ্দেশ্য বলুন আমায়।আর আপনি কে আজ সব সত্যি বলবেন।আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি আর সেদিন রাতে আমি মোটেও স্বপ্ন দেখিনি সব সত্যি ঘটেছে আমার সাথে কিন্তু আপনি সেটাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিয়েছেন তাই তো?

সব যখন জেনেছো তাহলে আর গোপন করে লাভ নাই।

কে আপনি?

আমি এমন একজন মানুষ যার মধ্যে দুই স্বত্বা রয়েছে।এক মানুষ স্বত্বা দুই পিশাচ স্বত্বা।আমরা এমন এক পিশাচ জাতি যারা শয়তানের পূজো করে।আর শয়তানের কাছে কোন বিষয় বৈধ না যা আছে সব অবৈধ।এমনকি আমার জন্ম হয়েছে অবৈধ ভাবে।আমার মা পিশাচ আর বাবা সাধারন একজন মানুষ।আর আমার বাবার সাথে মায়ের কোন এক ভাবে নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় আর কোন এক পূর্ণিমার রাতের বিয়ে ছাড়া দুইজনের মিলন হয় আর সেই মিলনের ফলে আমার জন্ম হয়।

কিন্তু জন্মের পর আমাকে সেই এতিম খানায় রেখে আসে।যেটা বর্তমানে আমি পরিচালনা করি।আমার জন্ম পিশাচের গর্ভে হলেও আমি একজন পিশাচের মতো শক্তিশালী ছিলাম না।কারন আমার বাবা যদি পিশাচ হতো তাহলে আমি পূর্ন পিশাচ শক্তি লাভ করতাম।কিন্তু আমার মা পিশাচ হওয়ায় আমি পূর্ন শক্তি পাইনি।কিন্তু যখন আমি আস্তে আস্তে বড় হলাম তখনও জানতাম না আমার মধ্যে পিশাচ স্বত্বা আছে।

এভাবে যখন আমার বয়স ১০ বছর তখন প্রতিদিন রাতে দেখতাম অসংখ্য কালো ছায়া আমায় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে তখন প্রচন্ড ভয় পেতাম আমি।কিন্তু সেই স্বপ্নের মধ্যে একজন ছিলো যে সবসময় আমার ক্ষমতার কথা বলতো।আর মাঝে মধ্যে দুই একটা ক্ষমতা আমায় দিতো।আমি স্বপ্নের মধ্যে অনেক ক্ষমতা লাভ করেছিলাম যার সাহায্যে আমি রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাই।তারপর আমি নির্জন জায়গা খুজে শয়তানের পূজা শুরু করি।

আর আমার শক্তির মাধ্যমে রক্তহরন কারী আত্মাদের দিয়ে শত শত মানুষের রক্ত শুষে নিয়ে মেরে ফেলি শুধুমাত্র শয়তানকে তুষ্ট করে নিজের আসল শক্তি লাভ করার জন্য।

প্রায় ছয় যাবৎ আমি এই কাজ করতে থাকি।একসময় শয়তান আমার ডাকে সাড়া দেয়।তখন আমি আমার ক্ষমতা লাভ করার কথা বলি সে সাথে আমি অমরত্ব লাভ করার কথা বলি তখন সে বলে,,আমায় এমন একটা সন্তানের বলি দিতে হবে যে বিয়ে ছাড়ায় অবৈধ মিলনের মাধ্যমে জন্ম হবে।আর এর মাধ্যমে আমি সারা দুনিয়াতে রাজ করতে পারবো।এটা আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়েছিলো কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করে এমন একটা বাচ্চাকে খুজেও পেলাম না।

তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই নিজে কারো সাথে রিলেশনে জড়াবো,,তারপর নিজে এমন সন্তানের জন্ম দিবো।আর সহজে আমি মিহি নামের একজনের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে যায়।

তাকে অনেক বার রাজি করানোর চেষ্টা করেছি শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য কিন্তু সে কিছুতে রাজি হতো না।শুধু বিয়ের কথা বলতো বাধ্য হয়ে আমি ওকে সব সত্যি বলে দিই।তখন সে বলে আমি এমন একজন বাচ্চাকে জানি সে অবৈধ।তখন মিহি আমায় সেই বাচ্চাকে দেখিয়ে দেয়।তখন আমি খুশি হয়ে সেই বাচ্চাকে পূর্ণিমার রাতে শয়তানের সামনে বলি দিই কিন্তু মিহি আমায় মিথ্যা বলেছিলো সেই ছেলে অবৈধ ছিলো না।

সে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এক দম্পত্তির সন্তান ছিলো।আর এটাই সফল না হওয়ায় শয়তানের অভিশাপে আমি এমন পঙ্গু হয়ে যাই।আর তারপর থেকে সেই শয়তান আর আসে না।তারপর আবার রক্তের দ্বারা শয়তানকে তুষ্ট করে ওকে হাজির।এখন যদি আমি আবার এমন সন্তানকে বলি দিতে পারি তবে আমি আমার কাজে সফল হবো আর এই পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি পাবো।

মারিয়া এসব শুনে একদম বাক রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।মারিয়া তখন বলল

শয়তানকে ডাকার জন্য যে রক্ত প্রয়োজন হয়েছিলো সেটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?

তোমার মা-বাবা সহ পুরো ফ্যামিলির থেকে।

এই কথা শুনে মারিয়া একেবারে চমকে গেলো।মারিয়ার মাথায় রক্ত উঠে গেলো।মারিয়া রেগে গিয়ে বলল

আপণি তাহলে আমার মা-বাবার খুনি।আপনাকে তো আমি মেরে ফেলবো।

এই বলে মারিয়ার ইরফানের দিকে তেড়ে গেলো আর ঠিক তখন সেই সাদা বিড়াল লাফ দিয়ে এসে মারিয়ার গলায় আচর মারলো।মারিয়া মেঝের ওপর পড়ে গেলো।তখন সেই বিড়াল রুপ বদলাতে শুরু করলো।সে বিড়াল থেকে ভয়ংকর কুচকুচে এক মানুষে পরিণত হলো।ইরফান হেসে বলল

ছদ্মবেশি_পিশাচ

আমায় মারা চেষ্টা করলে তোমার ভালোবাসার মানুষ সামিউল আর তার পুরো ফ্যামিলি শেষ।আর সত্যি বলতে কি যাকে আমার মামা-মামী হিসেবে জানো ওরাও এই বিড়ালের মতোই পিশাচ।

না আপনি ওদের কিছু করবেন না।

ঠিক আছে করবো না যদি আমার শর্তে রাজি হও।আর আমি ক্ষমতা লাভ করার পর তুমি আমার পাশে রানী হিসেবে বসতে পারো আবার তোমার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে চলে যেতে পারো।

আমি আপনার সব শর্তে রাজি কিন্তু আপনি সামির কোন ক্ষতি করবেন না।

কিছু করবো না তোমাদের।বিশ বছর যাবৎ হাঁটতে পারিনা।সেখানে না হয় আর এক বছর অপেক্ষা করবো সমস্যা নেই।

ইরফান সামিউলকে আটকে রেখেছিলো।মারিয়া মনে মনে ভাবছে আমি এই কাজ জীবনেও করবো না আর তোকেও সফল হতে দিবো না।আমার মা-বাবা আর সন্তানকে হত্যার শাস্তি পাবি তুই।

 

ছদ্মবেশি_পিশাচ

শেষ পর্ব

মারিয়া রুমে চুপ করে বসে আছে।সে বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত।এই মুহুর্তে ওর পাশে দাড়ানোর মতো এখন আর কেউ নেই।বার বার ইচ্ছা হচ্ছে সে নিজে নিজেকে শেষ করে দিবে।কিন্তু সেটাও সে করতে পারছে না।ইরফান বাইরে কোথায় যেন গেছে।মারিয়ার সামনে বিড়াল রুপি পিশাচটা বসে আছে।

সামিউলকে নিয়ে মারিয়ার বেশ চিন্তা হচ্ছে না জানি ছেলেটা এখন কোথায় আর কোন অবস্থায় রয়েছে।নিজে হাতে সে ছেলেটাকে বিপদের হাতে ঠেলে দিয়েছে।এখন যে করে হোক সামিউলকে বাঁচাতে হবে সেই সাথে এই খারাপ কাজের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।এমন সময় ইরফান ভিতরে এলো।মারিয়া বলল

সামি কোথায়?আপনি ওর সাথে খারাপ কিছু করেননি তো?

আপাতত কিছু করিনি।তবে যদি রাজি না হয় তাহলে সে আমার পিশাচের হাতে চলে যাবে।আর তখন কি হবে আমি বলতে পারবো না।

না এমন করবেন না আপনি।সামিকে আপনি পেলেন কিভাবে?

ওই যে সে কাল আমার পিছু নিয়েছিলো তখনই রাস্তার মধ্যে ওরে ধরে ফেলি।এখন তুমি পারো ওকে বাঁচাতে।এখন কি করবে সিদ্ধান্ত তোমার।

আমি রাজি তো আছি।আপনি ওকে ছেড়ে দিন।

ঠিক আছে আমার সাথে এসো তোমায় কিছু দেখায়।

ইরফান মারিয়াকে নিয়ে সেই বন্ধ রুমের দরজার কাছে আসলো।ইরফান চাবি দিয়ে দরজা খুলে মারিয়াকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।মারিয়া ভিতরে ঢুকতে দেখলো সেখানে বেশ কয়েকটা মানুষের মাথার খুলি পড়ে আছে।আরো রয়েছে কয়েকটা বাটি সেগুলো কেমন যেন লাল রংয়ের মতো।আর ওর সামনে বিশাল বড় একটা সিংহাসন যেটার ওপর একটা শিং ওয়ালা মূর্তি বসানো।মারিয়া বলল

আমায় এখানে নিয়ে আসলেন কেন?

এখানে তো তোমার সামিউল রয়েছে।

কোথায় সে?

তখন ইরফান গুলো ডান দিকে আঙ্গুল ইশারা করলো আর তখন সেখানকার দরজা খুলে গেলো।মারিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সামিউলকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে।ওর নিচে বিশাল বড় বড় সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে।মারিয়া চোখ বড় বড় করে বলল

ওকে এভাবে রেখেছেন কেন?একটু হলেই তো ওই সাপ গুলো ওকে কামড় দিবে।

ভয় নেই আমি ইশারা না করা পর্যন্ত ওই সাপগুলো কিছু করবে না।

দয়া করে ওকে ছেড়ে দেন।

রাজি হলেই ছেড়ে দিবো।

এই বলে ইরফান ওই দরজার সামনে গিয়ে সামিউলকে বলল

আমি তোমায় যেটা বলেছিলাম সে কাজ করবে কি না বলো?

আমি এই কাজ কখনো করবো না কারন মারিয়া এখন অন্য কারো স্ত্রী।আর তাকে আমি বিয়ে ছাড়া কখনো স্পর্শ করতাম না।

তখন ইরফান মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

তুমি বুঝাও ওকে একটু।

তখন মারিয়া সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল

সামি এই ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই তুমি দয়া করে বুঝার চেষ্টা করো।তুমি রাজি হয়ে যাও।আমায় তো বুঝতে পারো।

মারিয়ার কথা শুনে সামিউল ভাবতে লাগলো,,মারিয়া তো সহজে কোন কিছুতে হ্যাঁ বলে না।নিশ্চয় তার পিছনে কোন কারন থাকে।এখনও হয়তো এমন কোন কারন আছে।কারনটা কি সেটা জানার জন্য সামিউলকে মারিয়ার সাথে আলাদা কথা বলা জরুরি।আর কথা বলার সুযোগ পাওয়ার জন্য রাজি হতে হবে ইরফানের শর্তে।সামিউল বলল

আমি আপনার শর্তে রাজি।

আর তখন ইরফান হাতের ইশারা করলো সাপগুলো সরে গেলো।সামিউল তখন মাটিতে পড়ে গেলো।মারিয়া দৌড়ে সামিউলের কাছে গেলো।মারিয়া সামিউলকে ধরে তুললো তারপর বলল

তুমি ঠিক আছো তো?

হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।

তখন ইরফান হাসতে হাসতে বলল

তোমাদের দুই জনের মধ্যে তো ভালোবাসা অনেক।ভালোবাসা বেশি হলে কিন্তু তাদের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান খুব পরিপুষ্ট হয়।যাই হোক তুমি ওকে নিজের রুমে নিয়ে যাও।

মারিয়া সামিউলকে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।মারিয়া দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলো।ইরফান সেটা দেখে হাসলো।মারিয়া সামিউলকে বলল

তোমার ওপর খুব বেশি অত্যাচার করেনি তো?

না আমি একদম ঠিক আছি।তুমি এসব করতে রাজি হলে কেন?আমি তোমার সাথে বিবাহ ব্যতিত একদম এমন কাজ করতে পারবো না।

হুম জানি আর আমিও করবো না।শোনো আমি রাজি হয়েছি কারন এছাড়া তোমাকে বাচানোর কোন উপায় ছিলো না আর ইরফান তোমার মা-বাবাকেও আমার পরিবারের মতো মেরে ফেলতো।

মানে তোমার পরিবারের সদস্যদের ইরফান মেরেছে?

হ্যাঁ।ওই শয়তানটা আমার কলিজার টুকরোটাকেও ছাড়ে নি।

কষ্ট পেও না মারিয়া।ওই শয়তান ওর শাস্তি পাবে।

তো এখন কি করবে বলো?

শোনো ইরফান প্রতিরাতে শয়তানের পুজো করে আর আজ যখন এটা করতে যাবে তখন আমরা এখান থেকে চলে যাবো এটাই একমাত্র পথ আমাদের বাঁচার।

ও কিছু বুঝতে পারবে না তো?

না।ওই ভাববে এই রাতের আধারে আমরা মিলনে ব্যস্ত রয়েছি তাই সে কিছু করবে বলে মনে হয় না।

ঠিক।এখন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

যখন রাত হয়ে গেলো তখন প্রতিদিনের মতো ইরফান সেই পুজোর রুমে গেলো।আজ ইরফান অনেক খুশি কারন ওর অনেক দিনের সাধনা খুব শীঘ্রই পূরন হতে চলেছে।আর এই সুযোগে মারিয়া আর সামিউল বাড়ির থেকে বের হয়ে গেলো।বাইরে এসে দুইজনে চমকে উঠলো কারন ওদের সামনে অনেক নারী-পূরুষ দাড়িয়ে আছে।

প্রত্যেকের চেহারা কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো।সবার পা মাটি থেকে উপরে ভাসছে,,হাতে বিশাল বড় নখ,,চোখ থেকে যেন উপচে আগুন বেরিয়ে আসছে।হঠাৎ ওরা ওদের দুইজনের দিকে তেড়ে এলো।তখন সামিউল আর মারিয়া দৌড়াতে লাগলো কিন্তু বেশিদুর দৌড়াতে পারলো না কারন চারদিক থেকে সব পিশাচদের দল ওদের ঘিরে ধরেছে।কয়েকজন পিশাচ মিলে ওদের দুইজনকে টেনে ইরফানের কাছে নিয়ে গেলো।

দুইজনে দেখলো ইরফান মাটি থেকে শূন্য বসে আছে চোখ বন্ধ অবস্থায়।হঠাৎ ইরফান চোখ খুলে তাকালো।চোখ থেকে আগুন উপচে পড়ছে ওর।ইরফান রেগে মারিয়াকে বলল

মেয়ে মানুষের এতটা চালাকি ভালো না।বেশি চালাকি করার কারনে মিহিকে মরতে হয়েছিলো।কি ভেবেছিলে পালিয়ে যাবে তুমি কখনো তা পারবে না কারন এই এলাকায় দিনে যাদের মানুষ হিসেবে দেখো এরা আমার পালিত পিশাচ।এই এলাকার মানুষ তো সেই কবে আমার বলি হয়ে গেছে।

তোর মতো নরপিশাচ মানুষ মারা ছাড়া আর কি করতে পারে।

ঠিক বলেছো।এখন যদি তোমরা আমার ইচ্ছা পূরন না করো তাহলে দুইজনই মরবে।

তখন সামিউল বললো

এবার আমরা না তুই মরবি।

ঠিক আছে পারলে মেরে দেখা।

সামিউল ইরফানের দিকে যাবে কিন্তু দেখলো সে ওর হাত পা নাড়াতে পারছে না।ইরফান ওর পিশাচ শক্তির দ্বারা সামিউলের হাত-পা অবশ করে দিছে।মারিয়ার অবস্থাও একই রকম।মারিয়া চোখ বন্ধ করলো এমন সময় ও শুনতে পেলো

আম্মু তুমি ভয় পেও না তুমি না অনেক সাহসি।আর তোমার ছেলে তোমার সাথে আছে।ওই শয়তানের ক্ষমতার চেয়ে তোমার মনের ক্ষমতা বেশি।তোমার পায়ের নিচে শাবল আছে তুমি ওটা তুলে মেরে দাও শয়তানটার বুকে।

মারিয়া বুঝতে পারলো কথাটি তার ছেলের।সে চোখ খুলে ওই শাবল তুলে ইরফানের বুকে মেরে দিলো।ইরফান জোরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।ইরফান বলল

কাজটা ঠিক হলো না।

তোর সাথে এমনটা হওয়া উচিত।

তখন আশেপাশে থাকা পিশাচ গুলো মারিয়া আর ইরফানের ওপর হামলা করতে যাবে আর তখন সামিউল ওর সামনে থাকা তেলের বোতল আগুনে ফেলে দিলো ওমনি ইরফানের গায়ে আগুন লেগে গেলো।আর একের পর এক পিশাচ ধ্বংস হতে লাগলো।সামিউল মারিয়ার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো এমন সময় দেখলো সেখানে মেঘ দাড়িয়ে থেকে হাসছে।এটা দেখে মারিয়ার অনেক খারাপ লাগলো মারিয়া কিছু বুঝে উঠার আগে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে গেলো।

সামিউল মারিয়াকে নিয়ে বের হয়ে আসলো।সামিউল আর মারিয়া রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।রাত শেষ হয়ে সবে ভোর হতে চলেছে।মারিয়ার মন অনেকটা খারাপ নিজের ছেলের জন্য।সামিউল মারিয়াকে বলল

মন খারাপ করে আছো?

কই না তো?

আমার চোখ কে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারবে না।

আমার তো আর কেউ রইলো না।

তখন সামিউল হেসে জবাব দিলো

কে বললো তোমার কেউ নেই।তোমার সামি তো তোমার পাশে আছে।তুমি তোমার সামির মিষ্টি বউ হয়ে থাকবে।

মারিয়া মুচকি হেসে জবাব দিলো

একজন ডিভোর্সি মেয়েকে কি তোমার ফ্যামিলি মেনে নিবে।তাও একবার না দুইবার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু আমার।

ও নিয়ে ভেবো না।আমার ওপর ছেড়ে দাও।

মারিয়া আর কিছু না সামিউলের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।

এরপর সামিউল মারিয়াকে নিয়ে নিজের বাসায় যায় আর সামিউল ওর মা-বাবাকে সবকিছু বলে।প্রথমে সামিউলের বাবা-মা রাজি হয়না কিন্তু সামিউলের জোরাজোরিতে রাজি হতে বাধ্য হয়।দুইজনের বিয়ে হলেও সামিউলের মা-বাবা মারিয়ার সাথে তেমন ভালো ব্যবহার করতো না কিন্তু মারিয়া ধৈর্য ধরে নিজের ভালোবাসা দিয়ে সবার মন জয় করে।তারপর থেকে সামিউলের পরিবারের সবাই মারিয়াকে খুব ভালোবাসে।সবার ভালোবাসায় মারিয়া নিজের পরিবার হারানো কষ্ট ভুলেই গেছে।আর খুব শীঘ্রই মারিয়া আর সামিউলের জীবনে নতুন এক অতিথি আসতে চলেছে।মারিয়ার বিশ্বাস তার এই নতুন অতিথি তার হারিয়ে যাওয়া মেঘ হয়ে ফিরে আসবে।

 

লেখা : সিহাব

সমাপ্ত

 

ছদ্মবেশি_পিশাচ – আগের পর্ব গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন

(ছদ্মবেশি_পিশাচ – ভয়ংকর পিশাচের গল্প ( পরবর্তী পর্ব ) আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)