তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি

তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি-

লেখক: –Sumon Al-Farabi

১ম পর্ব

রাত তখন প্রায় ২ টা। চলন্ত ট্রেনটা হঠাৎই থেমে যাওয়ায় জানালা দিয়ে চারপাশটা দেখছিলাম। এটা তো একটা পরিত্যক্ত স্টেশন মনে হচ্ছে। এখানে আবার কে নামবে!  এদিকে মারুফ একটু পরপরই জিজ্ঞেস করছে এখন কোন জায়গায় আছি। হঠাৎই চোখ পড়লো ট্রেনের মাঝে খাবার পরিবেশন করে এমন এক জনের সাথে।

ভাইয়া এটা কোন জায়গা!

এই স্টেশনের নাম তিলকপুর।

এখানে কি কেউ নামার আছে!

এটা তো অনেক দিন বন্ধ এখানে আবার কে নামবে!  সামনে থেকে একটা ট্রেন আসছে সেটা ক্রসিং করলেই এটা আবার চলা শুরু হবে।

কতক্ষণ লাগতে পারে!

তা তো প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবেই।

লোকটা চলে গেলো। আমি মারুফকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলাম আমি এখন তিলকপুর স্টেশনে আছি। ফোনটা পকেটে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।  পুরো স্টেশনে এক কোনায় একটা হলুদ বাতি জ্বলছে শুধু।  সেটার নিচে কয়েকজন আবার জুয়া খেলতে ব্যাস্ত।

একটু পরেই একজন একজন করে নামতে শুরু করলো।   তাদের নামতে দেখে আমিও নেমে পড়লাম। অনেকটা সময় বসে আছি কোমড়ে খিল ধরে গেছে।

সবাই উত্তরের দিকে যাচ্ছে দেখে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম – আংকেল সবাই এদিকে কোথায় যাচ্ছে!

দুই মিনিট হাঁটলে নাকি একটা ছোট বাজার পাওয়া যাবে। সবাই সেখানেই যাচ্ছে সেহেরি করতে। ট্রেনের খাবারের যা দাম।

লোকটা চলে গেলো। আমারও ওদিকে যাওয়া দরকার কিন্তু আমায় আগে সিগারেট ফুঁকতে হবে। সেই সন্ধ্যারাতে একটা ধরিয়েছি। আমি চারদিকে একটু ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলাম। দক্ষিণে কিছুটা দূরে নিভু নিভু বাতি দেখা যাচ্ছে মনে তো হচ্ছে একটা দোকানেই হবে।  সেখানে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে তারপর এসে কিছু খাওয়া যাবে।

তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি

দোকানে একজন বয়স্ক লোক বসে বসে ঝিমাচ্ছে।

দাদু!  দাদু কি ঘুমাচ্ছেন!

আমার ডাকে তার তন্দ্রা কেটে গেলো।

ঘুমাই নি। চোখ লেগে আসছে। কিছু নিবেন!

চা হবে!

দুধ চা হবে না।

লেবু থাকলে এক কাপ লেবু চা দেন আর সাথে একটা গোল্ডিফ দেন।

আমার হাতে গোল্ডিফ ধরিয়ে দিয়ে উনি চা বানাতে শুরু করলো। আমি সিগারেট ধরিয়ে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম – দাদু এখানে তো কোনো মানুষ নেই এতো রাতে আপনি এখনো দোকান খুলে বসে আছেন কেন?

এই যে আপনার মতো যে দুই একজন আসে তাদের জন্যই বসে থাকি।

ট্রেন তো রোজ থামে না এখানে। তাহলে আপনি কেন না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন শুধু!

দাদু চায়ের কাপটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো – আশায় বসে থাকি কেউ একজন আসবে আমার সাথে এসে গল্প করবে। টুকটাক মানুষ আসে এদিকে কেউ কেউ তো দেখেও দেখেনা এই বুড়োর দোকানটাকে। তবে একসময় খুব জনপ্রিয় ছিলো আমার দোকান অনেক লোকের সমাগম ছিলো।  এখন আর তেমন নাই।

আপনার বাসা কি কাছেই কোথাও নাকি দূরে!

দোকানের পিছনেই আমার বাসা।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটে বেজে গেছে। তাড়াহুড়ো করে চায়ের কাপটা রেখে টাকা দিচ্ছি তখন দাদু জিজ্ঞেস করলো- এতো তাড়াহুড়ো করতে হবে না ট্রেন ছাড়ার এখনো অনেক দেরি আছে।

সেহরি করতে হবে দাদু। সামনের ঐ বাজারটাতে গিয়ে খাবো। ট্রেনে তো বলে কয়ে ডাকাতি করে।

আমিও তো সেহেরি করবো। কিছু মনে না করলে আপনি আমার বাসায় সেহেরি করতে পারেন। যা ডাল ভর্তা হয়।

না দাদু। আমি বরং বাজারের দিকেই যাই। শুধু শুধু আপনার বাসার মানুষের কষ্টের কারণ কেন হতে যাবো।

কষ্ট কেন হবে!  আমরাও একটু সওয়াব কামাই করি আপনার উছিলায়। আমি দোকান বন্ধ করছি আপনি একটু অপেক্ষা করুন।

দাদুর বয়স হইছে আর এটা তেমন শহর এলাকাও না তবুও ওনার ভাষা কতো মার্জিত।

দাদু দোকান বন্ধ করতে সময় আমায় জিজ্ঞেস করলো- পড়ালেখা করেন!

হ্যাঁ।

কিসে পড়েন!

অনার্স প্রথম বর্ষ।

আমার নাতনীটাও এইবার অনার্সে উঠতো।  তা এইসব খান কেন!  জানেন না এগুলো ক্ষতি করে!

ক্ষতি জেনেও তো আমরা অনেক কিছুই করি।  আর এটা আমার নেশা না যে না খেতে পারলে খুব অসুবিধা হয়ে যাবে।  ছোটখাটো অভ্যাস বলতে পারেন বন্ধুদের সাথে থাকতে থাকতে একটু আধটু।

চলুন আমার কাজ শেষ।

একটু হাঁটতেই বাসার গেইটের সামনে চলে আসলাম।  দুই বার দরজায় নক করতেই একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খুললো। আমায় দেখা মাত্রই আমি সালাম দিলাম।

উনি ট্রেনের যাত্রী আমার দোকানে আসছে তাই নিয়ে আসলাম সেহেরি একসাথেই করি।

ভালো করছেন আজ বাসায় তরকারি ও ভালোই আছে ।

আমায় ফ্রেশ হবার জন্য নলকূপের পাশে দিয়ে আসলো।  আমি ফ্রেশ হয়ে আসার পর একটা ঘরে বসতে দিলো।  একটু পরেই একটা মেয়ে রুমে এসেই বললো- দাদু তুমি এসে আমায় ডাকোনি কেন!

এরপর হয়তো আরও কিছু বলতো কিন্তু আমায় দেখে একদম চুপসে গেলো।

সাথে মেহমান ছিলো তাই ডাকিনি।  এসো খাবো।

মেয়েটা আমার বয়সীই।  অসম্ভব সুন্দরী।  যে কোনো পুরুষ একবার দেখলেই তার জন্য উন্মাদ হয়ে যাবে।  মন চাচ্ছে তার দিকে তাকাতে কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

খাওয়া শেষ করেই আমি দাদুকে বললাম – আমি তাহলে এখন আসি!

মাত্রই তো খাওয়া শেষ হলো কিছুক্ষণ বসে রেষ্ট করেন।

ট্রেন ছেড়ে দিলে বিপাকে পড়ে যাবো।  আমি বরং ট্রেনেই বসে রেষ্ট করনো।  তবে আপনার গিন্নির রান্নার কিন্তু তুলনা হয় না।  অসাধারণ হয়েছে।

এগুলো আমার ছোট গিন্নির রান্না।

দাদুর একথা শুনতেই মেয়েটা দাদীর আড়ালে মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো।

আমি এখন বের হবো।

দাদু কখনো ঐদিকে গেলে অবশ্যই আমায় জানাবেন আমার নাম্বার দিয়ে গেলাম।

সেটার দরকার হবে না দাদু।  আমরা এই বাড়ির মাঝেই সীমাবদ্ধ।  কবে যে এই বাড়ি থেকে মুক্তি পাবো।

পৃথিবীটা দেখতে হয় ঘুরে ঘুরে।  দাদী আসবেন ঘুরতে আপনিও।  আমি এখন আসি।

দাদু ঐ মেয়েটাকে আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠালো।

দু’জনেই পাশাপাশি হাঁটছি।

আপনি কিন্তু অসম্ভব সুন্দর রান্না করেন।

একটু আগেই বলছেন।

হুম।  আপনার তো নামটাই জানা হলো না ।

হাসনাহেনা।

বাহ্। রাতের ফুল।  রাতে ফুটে সারা এলাকা সৌরভে মাতিয়ে তোলে। আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই কেন!

বেশ কিছুদিন আগে এক পরিবারের সবাইকে কয়েকজন শয়তান লোক মেরে ফেলে তারপর থেকে সবাই নাকি এদিকে ভুত দেখতে শুরু করছে তাই অনেকে বাসা সরিয়ে নিয়েছে।  তবে ঐদিকে কিছু বাড়ি আছে।  দিনের বেলা মাঝে মাঝে দুই একজন এদিকে এলেও রাতে কেউ আসতে চায় না।

লোকগুলোর শাস্তি হয়নি?

এখনো হয়নি তাদের শাস্তির আশায় তো দিন গুনে বসে থাকি।

আপনারা বাসা সরিয়ে নেন নি কেন?  আপনাদের ভুত ভয় লাগে না!

আমাদের বাসা ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো।

আচ্ছা আপনাকে আর ঐদিকে যেতে হবে না।  শুধু শুধু এতটা কষ্ট দিলাম ।  তবে আপনি কিন্তু অনেক মায়াবী।

এইজন্য বুঝি চুপি চুপি তাকাচ্ছিলেন!

দেখতে মন চাইছিলো।  আজ আসি দাদুর কাছে তো নাম্বার ছিলোই মন চাইলে কল দিয়েন।  আল্লাহ হাফিজ।

বিদায় দিয়ে কিছুটা এসে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই হয়তো চলে গেছে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে।  তাই আমি আর পিছনে না তাকিয়ে সোজা এসে আমার সিটে বসে পড়লাম।  কিন্তু এই কিছুটা সময়ের যে অনুভূতি সেটা মনের কোনে থেকেই গেলো।

 

২য় পর্ব

বেশ কিছুদিন সেই মায়াবী মেয়ের কলের আশায় দিন কাটিয়ে দিলাম। অপরিচিত কোনো নাম্বার মোবাইলের স্কিনে ভেসে উঠলেই মনে হতো এই বুঝি হাসনাহেনা কল করছে। কিন্তু যতটা আগ্রহ নিয়ে কলটা রিসিভ করি রিসিভ করার পর আগ্রহ শূন্যে মিলিয়ে যায়।
খুব বেশি একটা সময় কাটানো হয়নি মেয়েটার সাথে কিন্তু এই ক্ষণিকের সময়টাতেই অসম্ভব এক মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি নিজেকে।
এরমাঝেই ঈদ চলে গেলো। আবার নিজের ব্যাস্ত জীবনে ফিরে আসা। রোজ ক্লাস ক্যাম্পাস বন্ধু এসবের মাঝে একধরনের ভুলতেই বসেছিলাম সেই তিলকপুরের মায়াবী মেয়েটাকে।
একদিন ক্লাস শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে গেছি। হঠাৎ আমার স্বপ্নে সেই মায়াবী মেয়ে। অদ্ভুত ভাবে আমায় তার কাছে ডাকছে। আমি ও ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিছুটা যেতেই হঠাৎ মনে হলো পড়ে গেলাম। ঠিক তখনই চমকে উঠে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুললাম চারদিকে আলো কমে এসেছে তারমানে সন্ধ্যা নেমে গেছে।
শরীরটা পুরো ঘেমে গেছে। এতক্ষণ খেয়াল করিনি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার মোবাইল ক্রমশ ভাইব্রেট করেই যাচ্ছে। চোখ মুছে মোবাইল হাতে নিলাম। অপরিচিত নাম্বার, রিসিভ করে সালাম দিলাম।
আমি তিলকপুর থেকে বলছি। আপনি কি সুমন বলছেন!
তিলকপুর নামটা শুনে শরীরে শিহরণ দিয়ে উঠলো।
হ্যাঁ, আমি সুমন। আপনার নাম!
আমি আজাদ, আপনার বাসা কোথায়!
রংপুরে। কেন!
আপনাকে কালই একবার তিলকপুরে আসতে হবে।
কেন!
আসুন তারপর বলা হবে। আপনি কাল তিলকপুর পুলিশ স্টেশনে এসে দেখে করবেন ।
আমিও আচ্ছা বলে কলটা কেটে দিলাম। কিন্তু যে জায়গার আমায় একটা পরিবার ছাড়া অন্য কেউ আমাশ চিনেই না সে জায়গার পুলিশ আমায় কেন কল দিবে! তাছাড়া সেটাও তো মধ্য রাতের ব্যাপার। কেউ তো আমায় দেখেও নি।
বিষয় টা প্রচন্ড ভাবাচ্ছে আমায়।
পরের দিন সকালের ট্রেনে রওনা দিলাম। কিন্তু বিপাকে পড়লাম তিলকপুরে ট্রেন থামে না। তাই জন্য তার আগের স্টেশনে নেমে বাকিটা পথ গাড়িতে গেলাম। মনে মনে খুশিও লাগছে হয়তো আবার সেই মায়াবী পরীকে দেখার লগ্ন এসে আমার দরজায় কড়া নাড়ছে।
সময় প্রায় ৩ টা।
আমি পুলিশ স্টেশনে বসে আছি। একটু পরেই একজন পুলিশ এসে বললো আমায় ডাকছে ভিতরে।
আসবো স্যার!
হ্যাঁ আসুন। আপনি সুমন!
হ্যাঁ স্যার।
আচ্ছা চলুন একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আমার সাথে তেমন কোনো কথা না বলেই উনি আমায় পুলিশ জিপে করে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে আসলো। আমি চারদিকটা ভালো করে দেখে নিচ্ছি।
দেখুন তো আপনি এই জায়গাটা চিনেন কি না! পুলিশের কথায় আমি আবার ওনার দিকে মনোযোগ দিলাম। কিছু বললেন আপনি! বললাম যে এই জায়গা টা কি চিনতে পারছেন! ঠিক চিনতে পারছি না স্যার। আর তাছাড়া আমার এই এলাকা চেনার কথাও না। কারণ আমি শুধু কিছু সময়ের জন্য তিলকপুর স্টেশনে নামছিলাম ট্রেন থেকে সেটাও মধ্য রাতে।
তারমানে আপনি এই এলাকায় এসেছিলেন!
হ্যাঁ।
আপনি কি এই বাসায়টায় এসেছিলেন!
অন্ধকার ছিলো তো তাই দিনের বেলা চিনতে সমস্যা হচ্ছে। বাসার ভিতরে গেলে হয়তো চিনতে পারবো।
তখনও আমার মনের মাঝে সেই মায়াবতীকে দেখার এক সমুদ্র পিপাসা। আমি শুধু সেই অপেক্ষায় আছি কখন সেই বাসায় ঢুকতে পারবো।
কিন্তু তখনও আমার মনের মাঝে এই প্রশ্ন টা একবারের জন্য ও আসেনি আমায় কেন এই জায়গায় ঠিক এই বাড়িটার সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
তাহলে চলুন ভিতরে গিয়ে দেখি আপনি চিনতে পারেন কি না! ওনার কথা বলা শেষ হতে না হতেই আমি দরজায় নক করলাম। নক করতে হবে না বাসায় কেউ নেই। আর দরজা খোলাই আছে । উনি আমায় পাশ করে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। আমিও ওনার পিছনে পিছনে বাড়ির ভিতরে আসলাম। ভালো করে দেখে বলুন তো আপনি কি এই বাড়িতে আসছিলেন!
আমি চারপাশটা ভালো করে দেখলাম – এটা তো হাসনাহেনাদের বাসা না!
আপনি নাম ও জানেন!
হ্যাঁ ।
আপনি এই বাসায় কবে এসেছিলেন?
আমার ঠিক মনে নেই তবে ২০/২১ রমজানে হবে হয়তো।
আপনি ২০/২১ রমজানে এখানে এসেছিলেন!
হ্যাঁ। আমি এ বাড়িতেই সেহেরি করেছিলাম ঐদিন। এবার আমার কথা শুনে উনি রীতিমতো হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আপনি এই বাসায় ভোর রাতে খাবার খেয়েছেন!
হ্যাঁ।
এবার ওনার মাঝে আগ্রহ বেশি দেখতে পাচ্ছি – বাসায় কে কে ছিলো ঐ দিন! একজন বৃদ্ধ তার বউ আর তার একটা নাতনি যার নাম ছিলো হাসনাহেনা। আচ্ছা কি কি হয়েছিলো ঐদিন কষ্ট করে আমায় একবার বলতে পারবেন! আমি ওনার দুচোখে এক সমুদ্র পিপাসা দেখতে পাচ্ছি।
হঠাৎ কি উদ্ভট একটা গন্ধ নাকে আসলো। স্যার কেমন একটা গন্ধ আসছে এখানে!
আচ্ছা চলেন বাইরে যাই। আপনি কি আজকেই চলে যাবেন?
হ্যাঁ। আমায় ডাকার কারণটাই তো জানতে পারলাম না।
আপনার কথা শুনে আমি কি বলবো সেটাই তো বুঝছি না। আপনি বরং আমার বাসায় থাকেন আজ। আমার আরও কিছু কাজ আছে সেটা শেষ করে আপনার সাথে কথা বলবো। আজ আমায় থাকতে হবে! চাইলে না থাকতেই পারেন। তবে না থাকলে পরে আবার আসতে হবে!
তাহলে আজকে বরং থেকেই যাই। কিন্তু এই বাসায় কেউ নেই কেন!
এটা নিয়ে আমরা রাতে কথা বলবো। এখন চলুন গন্ধটা তীব্র হচ্ছে ধীরে ধীরে। পুনরায় ওনার জিপে করে থানায় ফিরে আসলাম ।

৩য় পর্ব

থানায় বসে বসে ঝিমাচ্ছি। জার্নি করে আসার পর থেকে এখনো একটু শান্তি করে কোথাও বসে জিরিয়ে নিতে পারিনি।  কিছুক্ষণের মাঝেই তন্দ্রার অতল গভীরে হারিয়ে গেলাম।

আপনি কি ঘুমাচ্ছেন!

কারো কথার শব্দে তন্দ্রা কেটে গেলো।

ঐ একটু তন্দ্রা চলে আসছে। আসলেতটা পথ জার্নি করে আসছি তো তাতেই এখনো রেষ্ট করা হয়নি।

থানার সামনের দোকানটায় গিয়ে চা খান আমি একটু কাজ শেষ করে আসছি।

থানার ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম।

মামা মালাই চা হবে!

না মামা এখন মালাই চা হইবো না।

ওহ। তাহলে আর কি করবেন!  একটা নরমাল দুধ চা দেন আর একটা গোল্ডিফ দেন। মাথাটা প্রচন্ড ধরছে ।

মামা এখানে থানায় কি কোনো কাজ আছে!  থাকলে আমারে কন আমার চেনাজানা লোক আছে। কিছুক্ষণের মাঝেই আপনার কাজ হয়ে যাবে।

আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দোকানদার মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম এরপর জিজ্ঞেস করলাম – আপনি কতদূর পড়ালেখা করছেন মামা!

আমি ছোট বেলায় খুব শয়তান আছিলাম। তিন ক্লাস পড়ার পর আর স্কুলের বারান্দায় পা দেওয়া হয় নি।

ক্লাস থ্রি পড়া একজন লোক যে কি না বলছে থানায় কোনো কাজ থাকলে তাকে বলতে সে কিছু সময়ের মাঝেই কাজ করে দিবে।

আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে পাশে থেকে একটা মেয়েলী কন্ঠে ভেসে আসলো- মামা চিপস দেন একটা।

কন্ঠটা অনেকটা চেনা চেনা লাগছে জন্য মেয়েটির দিকে ফিরে তাকালাম। বোরখা দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর কভার করা একজন। আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি।

কারণ ঠিক এমনই একজনকে আমি অনেকটা সময় ধরে আমায় ফলো করতে দেখেছি। যখন পুলিশ স্টেশনে আসলাম তখন তাকে এই দোকানের সামনে দেখেছিলাম একটা বাচ্চার সাথে দুষ্টুমি করতে।

নেহাতই বাচ্চার দিকে তাকাতে গিয়ে ওনার দিকে চোখ পড়ে যায়। এরপর ঐ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরও ওনাকে দেখেছিলাম।

ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মুখ থেকে বেড়িয়ে গেলো- আপনি কি আমায় ফলো করছেন!

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি চিপসের টাকা দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।  পিছনে থেকে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু একবার ও পিছনে ফিরে তাকালো না।

মামা আপনার চা আর সিগারেট।

মামা আপনি ওনাকে চেনেন!

না মামা। আজকের আগে কখনো আমার দোকানে আসছে বলে মনে পড়ে না।

হঠাৎ আমার কাঁদে কারো হাত। পিছনে তাকালাম।

স্যার আপনি!

কাকে চেনার কথা বলছেন!

আমার মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমায় ফলো করছেন। কিন্তু যখনই তাকে জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিছু না বলেই হনহন করে চলে গেলো।

কোন দিকে গেলো!

চলে গেছে। বাদ দিন।

উনিও এককাপ চা নিয়ে দুজনেই বসলাম টং এ।

এই কেসটা নিয়ে প্রচুর প্যারায় আছি আর এর মাঝে সেখানে আপনার নাম্বার টা পেলাম।

আমার নাম্বার কোথায় পেলেন!

মিঞা বাড়িতে। স্মোকিং এর অভ্যাস ও আছে আপনার!

যখন প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকি তখন একটু আধটু ফুঁকি।

হারাধন আমাকেও একটা সিগারেট দাও। তো সিগারেট ধরালে কি মানসিক চাপ কমে যায়!

কিছুটা প্রশান্তি মেলে। মনে হয় সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সাথে মানসিক চাপটা উড়ে যাচ্ছে।

তুমি আমার বয়সে অনেকটা ছোট আপনি বলতে কেমন অস্বস্তি লাগছে।

তাহলে আপনি তুমি বলুন কোনো সমস্যা নেই।

তখন রাত আটটা হবে। যখন আমি আমজাদ হোসেন স্যারের বাইকে করে থানা থেকে বের হচ্ছি তখন ও সেই বোরখা পরিহিত মহিলা কে থানার সামনে দেখলাম আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।  তার চোখ যেন আমায় কিছু বলতে চাচ্ছে।  আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতেই সে হঠাৎই অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।

আমজাদ স্যারের বাসায় এসে ওনার বউ আর তিন বছরের রাসফির সাথে পরিচিত হলাম। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করে রুমে এসে শুয়েছি মাত্র তখনই রুমে রাসফির আগমন।

পিচ্চি তুমি ঘুমাবে না!

ঘুমাবো কিন্তু তোমার সাথে গল্প করতে আসলাম।

ওহ আচ্ছা। তো কি গল্প করবে তুমি শুনি!

তোমার ফোনে গেম আছে!

ওহ আচ্ছা তাহলে এই গল্প করার জন্য তুমি আমার রুমে এলে বুঝি!

আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ঠিক তখনই রাসফির আম্মু রাসফিকে ডাকলো সাথে সাথেই চলে গেলো।

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে জানায় দাঁড়ালাম বাইরের পরিবেশ দেখার জন্য। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে  কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।  আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি কে দাঁড়িয়ে আছে।  ঠিক তখনই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি আমার দিকে হাত নাড়াতে লাগলো।  আমি আরও স্পষ্ট ভাবে দেখার চেষ্টা করলাম।  তখন সে একটা কাগজে বড় বড় লেখা আমার দিকে উঁচিয়ে ধরলো।

লেখাটা বড় থাকায় স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছি সেখানে লেখা ” আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন এখানে থেকে চলে যান,  নয়তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে  ”

তাহলে ইনিই সেই যে আমায় ফলো করছে আসার পর থেকেই। আমি যেন সেই লেখা কাগজটায় হারিয়ে গেছি। কে হতে পারে!  এখানে আমার আসার কথা তো কেউ জানার কথা নয়!

হঠাৎই কাঁধে স্পর্শ পেয়ে ভয়ে চমকে উঠলাম।

এই আমি! আমি!

আমায় ভয় পেতে দেখে আমজাদ স্যার বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকি বললো- এভাবে কি দেখছো!  আর এভাবেই বা ভয় পেয়ে গেলে কেন!

স্যার ঐ মহিলা আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু পরের বার যখন আমি আবার পিছনে ফিরে তাকালাম স্যার কে দেখানোর জন্য তখন সেখানে কেউ ছিলো না আর জায়গাটাও অন্ধকারে ছেয়ে ছিলো।

স্যার ঐ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো উনি।

কি বলো এসব!  এইটা একটা লোকাল রোড এই রাস্তায় এখানে কেন আশেপাশে কোথাও ল্যাম্পপোস্ট নাই।

আমি যেন অদ্ভুত এক ঘোরের মাঝে চলে গেলাম। তাহলে কি আমি ভুল কিছু দেখলাম!  সব কি তবে আমার মনের ভুল! ভ্রম! তাহলে লেখাটা যেটা আমি দেখলাম সেটা তো মিথ্যা হবার কথা না। কিন্তু তখন তো আলো ছিলো এখন তো সেই জায়গা পুরোটা অন্ধকার।

সারাটা দিন রেষ্ট করতে পারোনি জন্য এমন হচ্ছে হয়তো। তুমি বরং ঘুমিয়ে পড় কাল সকালে নাহয় কথা বলবো আমরা।

ঠিক আছে।

আমজাদ স্যার চলে গেলো। কিন্তু আমি কি আসলেই ভুল কিছু দেখলাম!  আসলেই কি সেখানে কেউ ছিলো না!

 

৪র্থ পর্ব

ঘুমের মাঝেই মনে হচ্ছে একটা ছায়া ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে।  যখন ছায়াটা এক বারেই কাছে চলে আসছে তখন ভয় পেয়ে উঠে বসলাম।

কি হয়েছে!  এভাবে চমকে উঠলে কেন!

ওহ আপনি রুমে আসছেন!  আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা ছায়া ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে তাই ভয় পেয়ে গেছলাম।

আমি তোমায় ডাকতে আসলাম।

সকাল হয়ে গেছে!

সকাল আর ভোরের মাঝামাঝি এখন। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও বাইরে মর্নিং ওয়াকে যাবো।

আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

একটা নিরিবিলি প্রাকৃতিকর মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।

পরিবেশটা সুন্দর না!

হুম। কতদিন যে ভোরের পরিবেশ দেখা হয় না!

দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নাকি!

তেমনই কিছুটা।

তুমি কি জানো তোমায় কেন এখানে ডাকা হয়েছে!

আপনি তো কিছু বলেন নি!

তুমি যে বাসায় সে রাতে সেহেরি করছো সেইটা মিঞা বাড়ি নামে পরিচিত। তুমি যে মুরুব্বি মহিলা আর মেয়ের কথা বলছো তারা আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে মারা যায়।

আমজাদ স্যারের কথায় গায়ের লোম শিহরণ দিয়ে উঠলো। আমার পা হঠাৎই থেমে গেলো। তাহলে কি আমি ঐদিন আত্মার সাথে ছিলাম।

কি বলছেন স্যার!

শক লাগলো না!  তুমি যখন কাল আমায় বললে তুমি রমজানে ঐ বাসায় ছিলে তখন আমারও শক লেগেছিলো।

সবাই একই দিনে কি করে মারা যায়!

ঐ বাসার যে মেয়েটা ছিলো হাসনাহেনা!  এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে তাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করতো। এ নিয়ে মুরুব্বি চেয়ারম্যানকে বিষয় টা জানায়। কিন্তু ছেলে একেবারেই বখাটে পর্যায়ে চলে গেছে তাই সে বাবার কথা না শোনায় মুরুব্বি কে থানায় মামলা করতে বলে।

তারপর কি হয়েছিলো!

তারপর বিরক্তের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। যেহেতু ছেলেটা বখাটে আর নেশাখোর ছিলো তাই সবাই নিজের কথা ভেবে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে নি।  তখন আমি নতুন নতুন এখানে এসেছি মাত্র।  হাসনাহেনার দাদু থানায় বিষয়টা জানানোর পর  ঐ ছেলেকে আমরা আটক করি মাদকসহ।  কিন্তু চেয়ারম্যানের বউ এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।  সে রাতেই চেয়ারম্যানের ছেলে আর তার বন্ধুরা ঐ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে।

কিভাবে হত্যা করে!

মুরুব্বি আর তার বউকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয় কিন্তু মেয়েটাকে

এতটুকু বলেই স্যার থেমে গেলো।  এদিকে আমার চোখে পানি ছলছল করছে।

মেয়েটাকে কি স্যার!

মেয়েটাকে সংঘবদ্ধ ভাবে রেপড করা হয় তারপর তাকে… বাদ দাও।

এতক্ষণে আমার দুচোখে পানি গাড়িয়ে পড়তে শুরু করছে।  স্যার কে ও দেখলাম চোখ মুছলো।

আমার জীবনে সব থেকে নিকৃষ্টতর ঘটনা এটাই ছিলো।  কিন্তু আমার হাতে ক্ষমতা থাকা স্বত্তেও আমি কিছুই করতে পারিনি।

কেন!

সেই বাড়ির আশেপাশে হাতে গোনা দুই তিনটে বাড়ি ছিলো তাদের ভাষ্যমতে মেয়েটা খারাপ মেয়ে ছিলো ঐ বৃদ্ধ মেয়েটাকে দিয়ে ব্যবসা করতো।  প্রায় প্রতি রাতেই তাদের বাড়িতে দূর থেকে মানুষ আসতো।  তাদের মাঝেই কেউ তাদের হত্যা করে।

আপনারা কোনো তদন্ত করেননি!

তদন্ত তো দূর সেই ঘটনার কোনো কেইস ফাইল হয়নি। এমপি সাহেবের বক্তব্য সমাজের একটা নষ্ট পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে এটা সমাজের জন্য ভালোই হয়েছে এটার আবার কিসের তদন্ত।

কিছু বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলাম না।

আমায় কেন ডেকেছেন!

তাদের পরিবারের মৃত্যুর পর ঐদিকে মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে দেখা যেতো। তাই ঐদিকে কেউ যেতো না।  হঠাৎই কিছু দিন আগে থানায় অভিযোগ হয়  চেয়ারম্যানের ছেলের বন্ধুদের মাঝে কয়েকজন নিখোঁজ।

যেদিন তোমায় কল করলাম তার দুই দিন আগে সেই বাড়ির চারপাশে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে একসাথে চারজনের মৃত দেহ পাওয়া যায়।    এলাকার সবার কথা হচ্ছে ভুতে তাদের মেরেছে।

তাদের সবার পরিবার ও এটা মেনে নিয়েছে প্রায়। আসলে এইসব গ্রাম্য এলাকায় কুসংস্কারটা এখনো জীবিত আছে। কিন্তু তাদের শরীর অতিরিক্ত নেশাজাত দ্রব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেই সাথে শরীরে বিদ্যুৎ তাড়িত করার চিহ্ন।

অতিরিক্ত নেশার অস্তিত্ব এটা স্বভাবিক কিন্তু শরীরে বিদ্যুৎ তাড়িত করার বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়।  তাই আমি আবার মিঞা বাড়ি যাই।  সেখানে একটা কাগজে তোমার নাম্বার টা পাই।

চেয়ারম্যানের ছেলের মতো আমিও হাসনাহেনার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। তাই নাম্বার টা লিখে দেই যাতে সে আমার সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করার পরও কোনো কল আসেনা।

তুমি কি এইসব ভুত পেত বিশ্বাস করো!

মাঝে মাঝে করি। কিন্তু এগুলোর অস্তিত্ব যে একেবারেই নেই সেটাও তো বলা ঠিক হবে না। নয়তো সবাই ঐ বাড়ির আশেপাশে যেতে ভয় কেন পাবে!

চলো ফিরে যাই অনেকটা হেঁটেছি।

ফিরে আসার সময় অরও অনেক কিছু গল্প হলো।

তুমি তো আজকেই চলে যাবে তাই না!

হ্যাঁ। দুপুরে একটা ট্রেন আছে। ঐটাতে করে রাতে পৌঁছে যাবো।

একটা কথা তো বলাই হয়নি সেই ঘটনার পর চেয়ারম্যানের ছেলে ঢাকায় চলে যায়।  ওখানে কিছু দিন আগে বিয়েও করে।  শুনলাম গত পরশু নাকি নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসেছে ।  আমি ওর সাথে আজ দেখা করতে যাবো  দেখি এই ভুতের বিষয়ে তার কি মতামত ।

বাসায় ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু শুইলাম। তখন প্রায় ১০ টা বাজে। রাসফি এসে ডাকছে।

আংকেল!  এই আংকেল!

চোখ খুলে রাসফির দিকে তাকিয়ে রইলাম।

কি হয়েছে পিচ্চি!

আম্মু খেতে ডাকে।

আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম।

সব সময় কি এমন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা হয় নাকি!

আমাদের হোস্টেল জীবন ভাবী সকালের খাবার বলতে কিছু নেই।  আমরা একবারেই দুপুরে ব্রাঞ্চ করি।

ব্রাঞ্চ আবার কি?

ঐ ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ।

বাহ। ভালো তো।

স্যার কোথায়! দেখছি না যে।

একটা কল আসলো আর তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো।

আমার খাওয়া শেষ করে দুইটা টিশার্ট বাইরে ছিলো সেগুলো ব্যাগে নিচ্ছি।  হঠাৎ সেই সময় আমজাদ স্যার কল দিলো।

কোথায় তুমি!

বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।

তোমার আজ বাসায় যাওয়া হবে না।  তুমি বাসায় থাকো আমি আসছি।

তার ঠিক কিছুটা সময় পরেই পুলিশ জিপে করে আমজাদ স্যার আসলো।  এসে কোনো প্রকার কথা না বলেই আমার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে গাড়িতে উঠালো।

আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কি জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কিন্তু তিনি কোনো উত্তরই দিচ্ছেন না।  রাগে ফোঁসফোঁস করছেন শুধু।

 

{ আরো পড়ুন – ঢাকা শহরের ৫ টি ভয়ানক ভৌতিক স্থান

 

 

৫ম_পর্ব

এখন আমি কারাগারে বন্দী। কিন্তু আমজাদ স্যার একবারের জন্যও এদিকে আসলো না।  নিজের অপরাধ কি সেটাও এখনো আমার অজানা।

সেলের ভিতরে থেকেই শুনতে পাচ্ছি এই ছেলেই তাহলে এতোদিন মানুষ গুলো মা*রলো?  দেখে তো ভদ্রলোক মনে হয়। কিন্তু ভদ্রলোকের আড়ালে এতো ভয়ংকর রুপ এটা কখনো ভাবীনি।

তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি

কথাগুলো কে বা কারা বলছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি কথাগুলো আমাকে নিয়েই বলা হচ্ছে।

সেলের মেঝেতে বসে নির্বাক চোখে শিকগুলো গুনছি। সবাই বলে চৌদ্দ শিক। আজ সেই চৌদ্দ শিকের মাঝেই আমার অবস্থান।

সেই সময় আমজাদ স্যারের বউ এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। উনাকে দেখে আমি উঠে উনার সামনে গেলাম।

ভাবী এসব কি হচ্ছে!  স্যার হঠাৎ আমায় এভাবে নিয়ে আসলো কেন? আমি জানি এইসব হ*ত্যার জন্য উনি আমায় সন্দেহ করে এখানে ডেকে এনেছে। কিন্তু তাই বলে আমার অপরাধ না জানিয়ে এভাবে নিয়ে আসবে?

তোমার ভাইয়া থানায় নেই। কোথায় যেনো গিয়েছে। এখনই চলে আসবে। আসলেই আমি উনার সাথে কথা বলবো। তুমি চিন্তা করবে না কেমন!

ভাবী আমার সাথে কথা বলছে। আজকে রাতেই আবার একজনকে হ*ত্যা করা হয়। সেই মৃ*ত ব্যাক্তির লা*শ ও সেই মিঞা বাড়িতেই পাওয়া যায়। এই কথাগুলোই ভাবী আমাকে বলছিলো। ঠিক তখনই আমজাদ স্যার এসে উপস্থিত হলো।

উনি এসে সেলের দরজা খুলে দিয়ে উনার বউকে বললো- সুমনকে নিয়ে আমার কেবিনে আসো।

আমি বের হয়ে ভাবীর সাথে আমজাদ স্যারের কেবিনে আসলাম। উনার কেবিনে এসেই সর্ব প্রথম আমার নজর পড়লো আমার গুছিয়ে রাখা ব্যাগের উপরে।  যেটা আমি আমজাদ স্যারের বাসায় রেখে এসেছিলাম।

আমার ব্যাগ এখানে কেন!

আমজাদ স্যার বললো- আমি তোমার ভাবীকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম।

কিন্তু কেন!

উনি উনার মোবাইলে একটা ছবি আমার দিকে তুলে ধরলো যেখানে একটা র*ক্ত মাখা টি-শার্ট ছিলো।

এটা কি তোমার চেনা চেনা লাগছে!

হ্যাঁ। এটা তো অবিকল আমার টি-শার্টের মতোই। কিন্তু স্যার এটাতে রক্ত কেন!

আজ একজনকে হত্যা করা হয়েছে।

ভাবী সেটাই বলছিলো একটু আগে। যার লা*শ মিঞা বাড়িতেই পাওয়া যায়।

হ্যাঁ। ঐ লোকটার শ্বাসরোধ করা হয় এই টি-শার্ট দিয়ে। এরপর উনার শরীরের সিরিজ দিয়ে খুব বাজে ভাবে জ*খম করা হয়।

এতক্ষণ ভাবী চুপ থাকলেও এবার উনি কথা বললো- আর তুমি সেটা দেখেই ভেবে নিলে এটা সুমন!

গতকাল ওর শরীরে ঠিক এই টি-শার্ট টাই দেখেছিলাম আমি। তাই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।

সুমন তো গতকাল আমাদের বাসাতেই ছিলো। তাছাড়া তুমি ভালো করেই জানো আমাদের বাসা থেকে বের হতে হলে কত কিছুর প্রয়োজন হয়।  দুইটা গেইটেই তো লক করা ছিলো।

আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। আমার আগে ইনসিউর হতে হতো। পরের বার থেকে এমন ভুল হবে না কথা দিচ্ছি। তুমি এখন বাসায় যাও।  সুমন আমার সাথে থাক।

ভাবী চলে যেতে না যেতেই স্যার আমায় বললো- তোমার সব কাপড় এলোমেলো করে দিয়েছি। কিছু মনে করবে না কেমন। তুমি একটু কষ্ট করে গুছিয়ে নাও। আমি চা আর সিগারেট আনতে বলছি।

আমি ব্যাগের কাপড় গুছাইতে লাগলাম। হঠাৎই ব্যাগের মাঝে একটা চিরকুট পেলাম। স্যারের অগোচরেই চিরকুট খুললাম। সেখানে লেখা ছিলো ” ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো কারো শরীরে হাত দিলে কেমন অনুভূতি হয় সেটাই আজ কোনো একজন কে বুঝিয়ে দিয়েছি।তবে আপনি চলে যান এখানে থেকে নয়তো খুবই বিপদে পড়ে যাবেন। “

স্যার, একবার এদিকে দেখবেন প্লিজ!

আমজাদ স্যার আমার কাছে আসতেই আমি উনাকে চিরকুট এগিয়ে দিলাম।

আপনি যখন ব্যাগ খুলেছিলেন তখন এটা পেয়েছিলেন!

না তো। এটা তুমি কই পেলে!

ব্যাগের মাঝেই ছিলো। তাহলে যে এটা দিয়েছে সে আপনার উপর লক্ষ রেখেছিলো এবং আপনি বের হতেই এটা রেখে গেছে।

হতে পারে। কিন্তু কে এসেছিল!

কয়েকজন দায়িত্বরত পুলিশ কে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেউ কাউকে যেতে বা আসতে দেখে নি।

চা শেষ করে আমজাদ স্যারের সাথে আমি আবার সেই মিঞা বাড়িতে আসলাম।

খু*নটা গতকাল রাতে হয়।

রাস্তায় আসার সময় স্যারের মোবাইলে মৃ*ত ব্যাক্তির লাশের ছবিগুলো আমায় দেখিয়েছে। খুবই নির্মম ভাবে হ*ত্যা করা হয়েছে।

এতো জঘন্য ভাবে কেন মা*রলো!  উনিও কি সেই চেয়ারম্যানের ছেলের বন্ধু ছিলো!

সব থেকে অবাক করা বিষয় তো সেটাই। এই ভদ্রলোক এখানে একটা ঔষধের ফার্মেসী চালায়। এলাকায় উনার অনেক সুনাম।  চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে উনার কোনো সম্পর্ক নেই।  তবুও কেন এখানে তার মৃ*ত দেহ পাওয়া গেলো!

আশেপাশের কেউ কিছু দেখেনি!  বা শুনতে পায় নি?

একজন চিৎকার শুনে এদিকে আসার জন্য বের হয়েছিল। কিন্তু তখনই নাকি সে হাসনাহেনাকে দেখতে পায়।  সাদা একটা কাপড় পড়া উষ্কখুষ্ক চুল ভয়ংকর একটা রুপ নিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো আর তাকে নাকি বললো ওদিকে না যেতে।  কেউ তার পাপের সাজা পাচ্ছে।

কি বলছেন এসব!  ঐ লোক কোথায়!

গতকাল রাতে থেকেই তার ভীষণ জ্বর। দুই তিনবার অজ্ঞান হয়ে গেছে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে।

স্যার গতকাল রাতেও আমার সাথে এই একই ভুতুড়ে কান্ড হয়েছে। তবে কি আসলেই এখানে মিঞা বাড়ির আত্মা আছে!

কি ভুতুড়ে কান্ড হলো!

ল্যাম্পপোস্ট দেখতে পাওয়া, ব্যাগের মাঝে কাগজ দেওয়া যখন কেউ কাউকে দেখেই নি। এসব কে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন!

সব কিছুই কেমন গড়মেলে মনে হচ্ছে।

 

{ আরো পড়ুন – কবরস্থানের মাঠে একরাত 

 

(তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)