পুরান ঘর – সত্য ঘটনা

পুরান ঘর –

১ম পর্ব

উক্ত ঘটনাটি ৯০”র। রঘু নামের এক সনাতনী ধর্মের দাদা, যিনি বংশ পরম্পরায় একজন জেলে ছিলেন, মেঘনা নদীর আশে পাশে তাদের জীবন যাপন, সে জাল নিয়ে মাছ শিকার করতো মাঝ নদীতে। এমনো হয়েছে যে রাতে নৌকা নিয়ে গভীর নদীতে ভেসে যায় ফিরে ১৫-২০ দিন পর। রঘু দাদা মাছ ধরতে বেশ পারদর্শী তিনি মাছ ধরার বেশ ভাল কৌশল জানেন, এগুলো সে তার বাবা-দাদার কাছে শিখেছে।

রঘুর দলের ১৩ জন সদস্যের মাঝে রঘু সবাই কে দায়িত্ব বন্টন করে দিত আর সে অনুযায়ি সবাই কাজ করতো। মূলত মাছ ধরার জাল রঘুর নিজের, এটা অনেক পুরোনো জাল যেটা রঘুর বাবা-দাদা ব্যবহার করতো। বিপত্তি ঘটে এই জাল নিয়েই।

রঘু যতবার মাছ শিকারে যেত ততবার এই জালের কোন না কোন অংশে বিশাল ছিদ্র বা ছিড়ে যেত তাও রঘু এটাকে ফেলে নতুন জাল নিত না সে এটাকে সেলাই করে পূনরায় ব্যবহার করছে যুগের পর যুগ। তার কাছে এটা তার বাপ দাদার কাছ থেকে পাওয়া আশির্বাদ।

রঘু একদিন তার দল নিয়ে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিয়ে বের হয় তারপর তারা সারা রাত মাছ শিকার করে ভোরে পাড়ের দিকে ফিরে আসে। সেদিন অল্প কিছু মাছ শিকার হয় আর এতে মাছ আরৎ এর যিনি প্রধান তিনি ভীষন রাগারাগি করে রঘুর উপর।

মূলত এটা শুধু আজকে না, যেদিনই কম মাছ উঠে সেদিনই আরৎ এর প্রধান রঘুর উপর চড়াও হতো এমন কি কয়েকবার সে এই জাল পরিবর্তন করার কথাও বলে তবে রঘু তার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মত কাজ করে যেত।

তার পরদিন সে আবার মাছ শিকার করতে যায় তবে একই ভাবে কম মাছ শিকার করে নিয়ে আসে এমন না যে একা রঘুর জালে মাছ নেই। কম বেশি সবার জালে কম মাছ আটকা পরছে, কিন্তু এটা রঘুর প্রধান কে কে বুঝাবে। সে একটা পর্যায় রঘুর হাজিরা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, খাজনা, ইঞ্জিনের তেল, ট্রলারের মেরামত কাজ নানা অযুহাত দেখিয়ে নামমাত্র হাজিরা দেওয়া শুরু করে।

এতে রঘু ও তার পরিবার কিছুটা অভাবে পরে যায়।

রঘু অনেক চেষ্টা করেও তার হাজিরা আগের অংকে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। কিছু মাস পর আবারো তার জালে অনেক বেশি মাছ আটকা পরে এবং এই মাছ রঘু প্রথমে প্রধান কে দেখাবে না ভেবে নিলেও সে সৎ উপার্জন খাবে ভেবে সবগুলো মাছ প্রধানের হাতে তুলে দেয় আর অনেক বড় আশা নিয়ে হাসি মুখে অপেক্ষায় থাকে প্রধান আজকে হাজিরা ভাল দিবে।

কিন্তু  প্রধান আগের রূপেই কম হাজিরা দেওয়ায় রঘু চরম ক্ষেপে যায় আর চড়াও হয় প্রধানের উপর। প্রধান বলে টানা দুই তিন মাস ব্যবসা মন্দা, বাকিতে সব করছে, এখন সেই বাকি পরিশোধ করতে হবে যে বাপু।

যদিও এটি ডাহা মিথ্যা কথা ছিল।

তাদের মাঝে অনেক ঝগড়া হয় এক পর্যায় রঘু ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানের ট্রলার দিয়ে আর জাল বিছাবে না বলে সে তার জাল নিয়ে চলে যায়, আগে রঘুর এই জাল প্রধানের ট্রলারে থাকতো, কিন্তু আজকের ঘটনার পর রঘু তার জাল প্রধানের ট্রলার থেকে নিয়ে যাওয়ায় প্রধান চরম ক্ষিপ্ত হয় রঘুর উপর এবং তিনি তাকে কিছু নগন্য ভাষায় কথা বলেন।

পরে রাতের বেলা রঘু তার জাল ঘরে নিয়ে রাখলে রঘুর বউ এসে জিজ্ঞেস করতেই ক্ষিপ্ত গলায় বলে ছাইরা দিসি প্রধানের নাও, দুনিয়ায় কি নাও (নৌকা/ট্রলার) এর অভাব আছে? প্রধানের নাও এ আমি আর জাল বিছামু না। রঘুর বৌ বুঝতে পারে রঘু যে রেগে আছে।

রাতে রঘুর মাথা থান্ডা হলে রঘুর বৌ তাকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তার এমন আচরন করা ঠিক হয়নি, এরপর   রঘু যে প্রধানের সাথে খারাপ আচরন করেছে সেটা সে রাতেই ভাবছিল এবং মনে মনে পন করে সে কাল প্রধানের কাছে গিয়ে সমাধান করে নিবে এবং আবার পূনরায় প্রধানের  সাথে কাজ করবে।

সেটা আর হলো না, কে বা কারা রঘুর ঘরে থাকা জালে আগুন ধরিয়ে দেয় আর সেই আগুনে রঘু তার তিন মেয়ে, বউ, রঘুর বৃদ্ধ মা সবাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

মূলত যারা আগুন দিয়েছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু জালটা পুড়ে ফেলার কিন্তু আগুনের মাত্রা এতটাই ছিল যে তা পুরো বাড়ি পুরে ছাই করে দেয়।

তারই কিছুদিন পর থেকে নাকি জেলে পাড়ার মানুষজন সেই পোড়া বাড়ির আশপাশে কাউকে হাটতে দেখেন….

 

{ আরো পড়ুন – জ্বিনদের জানাযায়

পুরান ঘর

পরবর্তী পর্ব । ধন্যবাদ।)