ভূতের ভয় – ছোট গল্প

ভূতের ভয়

লেখকঃ আরাফাতুল ইসলাম রাহাত

 

সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত। চারদিকে জমাট বাঁধা অন্ধকার। বিরাট মাঠের এক কোনায় আমারা তিনজন আড্ডা দিচ্ছি। পাশের জনের একটা লাইটার আর ঘড়ি ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। লাইটারের আলো জ্বালিয়ে ঘড়িতে দেখলাম রাত দুইটা বাজতে ১৩ মিনিট অবশিষ্ট।

তাই আর দেরি না করে বাসার দিকে অগ্ৰসর হতে লাগলাম। ফাঁকা রাস্তা। আমরা সবাই চুপচাপ। আমাদের চলার শব্দ আর দূর থেকে আসা ভোঁ ভোঁ শব্দ বাদে আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। চোখ গেল রাস্তার পাশে বড় বটগাছটির ডালে। উজ্জ্বল দুই চোখ বাদে ডালটিতে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

চোখ দুটোর দৃষ্টি যেন আমাদের লক্ষ্য করে। ভয়ে ও উৎসাহে ক্ষণিক দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তা লক্ষ্য করলাম।

আবার সবাই চুপচাপ হেটে যাচ্ছি। হেমন্তের শুরুতে হালকা কুয়াশা ধরেছে। হিম হিম বাতাসে হাঁটতে ভালোই লাগছে। পাশে ফিরে দেখলাম সাঈফ আর সাঈম আমার সাথে নেই। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম দুইজনেই হাঁ করে তাকিয়ে আছে বাঁশঝাড়ের উঁচুতে চিকন ডগায়।

কারো মুখে কোন শব্দ নেই। সাঈফ কাঁপছে। সে অদ্ভুত ভঙ্গিতে আমাকে লক্ষ্য করছে। তাদের তাকিয়ে থাকা দেখে হঠাৎ আমার শরীরটা হালকা কেঁপে উঠল। সাঈম বিড়বিড় করে দোয়া পড়া শুরু করেছে।

“বাঁশের ডগায় কী যেন নড়ছে, অনেকটা রক্তাক্ত দেহের মতো,” বলেই সাঈফ বাঁশের ডগার দিকে হাত তুলে দেখালো।

ঘন অন্ধকারে কিছুই দেখছি না। কিছুই নেই বলে মনে হলো। সাঈফ শক্ত করে আমার হাতের উষ্ণ বাহু জড়িয়ে ধরেছে। মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না।

দূর থেকে পেঁচার ডাক কানে ভেসে আসলো। দুয়েকটা জোনাকি উড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে বাঁশঝাড়ে কিছু নড়ে ওঠার শব্দ পেলাম। সাঈফ উপরের দিকে তাকিয়ে আবার মৃদু চিৎকার করে আমাকে চেপে ধরেছে।

তার ভারী নিঃশ্বাস গায়ে লাগল, শরীরটাও ঠান্ডা হয়ে এসেছে। তিনজনের মধ্যে ভয় আর ভয়। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উপরের তাকিয়ে আবার কিছুই দেখতে পাইনি। তাইলে এরা কী দেখতে পাচ্ছে? সাঈম হঠাৎ চিৎকার করে চোখ মেলে আমার দিকে চেয়ে আছে। “রক্ত।” “রক্ত। কোথায় রক্ত?”

আমার হাতটা নিয়ে তার মুখের মধ্যে লাগালো। ভেজা ভেজা স্পর্শ পেতেই শরীরটা কেপে উঠেছে। হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে বাড়ছে। কেউ কাউকে কিছু বলতে হয়নি। তিনজনেই একসাথে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছি।

সমস্ত শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

হঠাৎ থেমে সাঈফ উপরের দিকে হাত তুলে দেখালো। “রক্তাক্ত দেহটা আমাদের সাথে দৌড়াচ্ছে।” এবারও উপরে তাকিয়ে কিছু দেখতে পাইনি। দুইজনেই দেখছে, আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন? “রক্ত।

আবার হাতের ওপর রক্ত ঝরে পড়েছে।” সবাই নিরুপায়। সাঈম বললো, “নিয়ত করো আমরা তাহাজ্জুদ পড়তে যাচ্ছি। যদি মরি, কেয়ামতের দিন সব কাজের হিসাব নেয়া হবে; তখন কীভাবে মরেছি জিজ্ঞেস করলে বলবো

তাহাজ্জুদ পড়তে যাওয়ার সময় মারা গিয়েছিলাম।” যৌক্তিক মনে করে নিয়ত করে ফেললাম। কেউ আর কোন শব্দ করলাম না।

দূর থেকে কুকুরের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। হেমন্তের হালকা কুয়াশাগুলো শরীরটাকে আজ জড়িয়ে ধরেছে। একটু দূরেই একটা ঘর থেকে জানলা দিয়ে আলো বেরিয়ে আসছে।

সাঈফ আমার হাত ধরে আবার তার মুখ স্পর্শ করালো। “আবারও রক্ত?” অস্পষ্টভাবে সাঈফের মুখ থেকে কী শব্দ বেড়িয়ে আসলো আমি শুনতে পানি। একইসঙ্গে আবার তিনজন সামনের দিকে দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি।

মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না। শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। কিসের সাথে হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়েছি। এরপর…

নিজেকে পরদিন হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করলাম। ডাক্তার জানালো,” হাতের হাড় আর মাথায় কিছুটা চোট পেয়েছি। খুব শ্রীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবো।

সুস্থ হলাম তার ঠিক তিন দিন পর। সাঈফ আর সাঈম আমাকে দেখতে এসেছে। ওরা জানালো,” সেদিন রাতে বাঁশের ডগায় তারাও আমার মতো কিছু দেখেনি। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য পরিকল্পনা করে তারা বিষয়টি সাজিয়েছে।

সাঈফের মুখে পানির মতো যা রক্ত মনে করেছিলাম তা হলো সাঈফের লাগানো থুথু। যা আমি অন্ধকারে খেয়াল করিনি বলে রক্ত বলে ধোঁকা দিয়েছে এবং সম্পূর্ণ বিষয়টির জন্য ওরা অনুতপ্ত।”

সেদিন হাসপাতালে আমাকে বলা কথাগুলো আসলেই সত্যি ছিলো নাকি আমি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমার ভয় কাটাতে মিথ্যে বলেছিল, জানা নেই। তবে সেদিনের ভয় আমার ভেতর থেকে এখনো যায়নি।

 

 

{ আরো পড়ুন – রাদীন

 

( ভূতের ভয় – ছোট গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

ভূতের ভয়

” সমাপ্ত”