ভ্যাম্পায়ার নারী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্প

পর্ব-১

ভ্যাম্পায়ার নারী-

রাত দুইটার কাছাকাছি হবে।

অন্ধকারে কারো পায়ের শব্দ শুনে পাশের বড় বট গাছের নিচে দাঁড়ালো রিমন। চারপাশে অন্ধকার হওয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শব্দ স্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছে! কেউ এদিকেই আসছে। মনে হয় খুব জোরে জোরে আসছে অথবা দৌঁড়ে। রিমনের পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে! বেশ কিছুক্ষণ হলো দৌঁড়াচ্ছিলো সে। কিন্তু তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না!

পাশের ঝোপে হঠাৎ কিছু একটা নড়ে উঠলো। সাথে সাথে রিমনের যেন আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলো! রিমন ভয় পায় খুব। বুকের ভিতর ধুপধাপ শব্দ শুরু হলো তার। রিমন ভয়ে ভয়ে আবার পালানো শুরু করলো। ভরা বর্ষাকালে আকাশ মেঘলা। আকাশে চাঁদ নেই। তাই চারপাশ ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার! এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিলো না।

রিমন সেই অন্ধকার ভেঙে পালাতে লাগলো। হঠাৎ তার মাথার উপর দিয়ে এক ঝাঁক বাদুড় উড়ে গেলো। বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর বিশ্রী একটা আওয়াজ ভয়ঙ্কর করে তুললো চারপাশ। সাথে একটা কুকুরের ডাক কানে আসতেই রিমন সজাগ হয়ে উঠলো।

এবার তার সাথে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে সেটা সে বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কি হতে যাচ্ছে তার সাথে সেটা আগে জানা প্রয়োজন! ভাবতে ভাবতে রিমনের মাথার উপর একটা কালো ছায়া ভেসে উঠলো। ছায়াটা অস্পষ্ট। কিন্তু আন্দাজ করা যায়।

যেন অনেক বড় একটা বাদুড় তার মাথার উপর ডানা মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! রিমন পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে। তার গলা শুকিয়ে আসছে।

রিমন হোসেন একজন সরকারি কর্মচারী। বেশ কিছুদিন ধরে তার স্ত্রী জান্নাতি অসুস্থ ছিলো। কিছুতেই ভালো কোন চিকিৎসা না পেয়ে এক কবিরাজের কাছে গেলো।(গল্পটার লেখক রিমন হোসেন ধুমকেতু) কবিরাজ তাকে শর্ত দেয় যে, একটা মেয়ের লাশ প্রয়োজন। সেই লাশ থেকে প্রাপ্ত কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে কালো জাদু করা সম্ভব! কালো জাদু করে শয়তানি জগতের কাউকে বশ করতে পারলেই কাজ হবে!

রিমন আর তার বন্ধু রাশেদ একটা পুরনো গোরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গোরস্থানটা পুরনো হলেও আজ সকালেই একটা মেয়ের লাশ এখানে দাফন করা হয়েছে। মেয়েটা নাকি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো!

গোরস্থানটা খুব ভয়ংকর দেখতে। চারপাশে ঘেরা দেয়াল থাকলেও খুব সহজেই ডিঙিয়ে পার হওয়া সম্ভব!

দেয়ালের প্লাস্টার খুলে পরেছে অনেক জায়গায়। আকাশে হালকা চাঁদের আলো। তবুও বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে। রাশেদ প্রথমেই বললো,

“দেখ রিমন! ভাই বলছি এখান থেকে পালাই চল! জায়গাটা সুবিধার না!”

কিন্তু রিমন যে কোন লেভেলের জেদি সেটা তো সে জানে না। কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে থামাবে কে?

রিমন বললো,

“না। লাশ না নিয়ে যাবো না।”

“তুই কি আমাকে মারবি নাকি?”

“না। তোকে মারবো কেন! আমার কথা মতো কাজ না করলে ভিডিওটা তোর বৌয়ের সাথে শেয়ার করে দেখবো!”

“তোর সাথে শর্ত কি ছিলো যে, তোর কথা শুনলে ভিডিওটা ডিলিট করে দিবি!”

“সেটা কথা শোনার পর!”

রাশেদ এক প্রকার চাপে পড়ে রিমনের সাথে এখানে এসেছে। কারণ রাশেদ যখন তার প্রেমিকা রশ্মির সাথে এক খাটের উপর ছিলো সেই মুহূর্তের একটা ভিডিও রিমনের কাছে আছে।

রিমন আগে গোরস্থানে পা রাখলো। আর সাথে সাথে যেন পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো রিমনের। এই গোরস্থানটা হয়তো সত্যিই খুব একটা ভালো জায়গা নয়! অভিশপ্ত হতে পারে!

রিমনের পিছনে পিছনে রাশেদ। রাশেদের হাতে একটা টর্চ রয়েছে। আর রিমনের হাতে কোদাল!

নতুন ঐ কবরের সামনে গিয়ে রাশেদ থরথর করে কেঁপে উঠলো। কোথায় থেকে যেন একটা ঠান্ডা বাতাস আসছে। পুরো শরীর কাঁপিয়ে তুলছে সেই বাতাস! যেন এখুনি জমিয়ে দিবে!

রিমনও অনেকক্ষণ ধরে একটা ঠান্ডা অনুভুতি অনুভব করছে। ঠান্ডা একটা নিঃশ্বাস যেন তার ঘাড়ের উপর ফেলছে! সেই ঠান্ডা বাতাস পুরো মেরুদন্ড পর্যন্ত হিম করে তুলছে। ভাবতে না ভাবতেই রিমনের পুরো শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিলো।

রিমন কোদাল উঁচুতে তুলে কবরের উপর আঘাত করতে যাবে তখন রাশেদ বললো,

“রিমন, আমি আবার নিষেধ করছি!”

“রাখ তোর নিষেধ।”

রিমন কবরের উপর আঘাত করে। আর সাথে সাথে কট করে একটা আওয়াজ হলো। যেন একটা হাড়ে লেগে হাড়টা ভেঙে গেলো! কিন্তু কিভাবে সম্ভব? এই কবরটা তো নতুন। এখানে হাড় আসবে কোথায় থেকে?

রিমন আবার কোদাল তুলে আঘাত করে। আর কবরের উপর থেকে মাটি সরায়। ভিতরে সব ঠিকঠাক আছে। শব্দটা বাঁশে লেগে হয়েছে! রিমন কবরে নামে লাশটা তোলার জন্য। কিন্তু সে লাশটা তুলতে পারে না। খুব ভারি ছিলো।

রাশেদ বললো,

“কি হয়েছে?”

“লাশটা তো উঠছে না।”

“উঠছে না মানে! তুই উঠ। আমি দেখছি।”

রিমন কবর থেকে উঠে পরলো। আর রাশেদ নামলো। রাশেদ লাশের উপর হাত রাখার সাথে সাথে রিমন শুনতে পেলো পাশের তিন চারটা কবর পেরিয়ে একটা পুরনো কবর থেকে তাকে কেউ ডাকছে! রিমন গলাটা স্পষ্ট শুনেছে। এই গলাটা তো জান্নাতির। কিন্তু সেটা কিভাবে হয়?

রিমন এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো। রাশেদ লাশটা তোলার চেষ্টা করতেই লাশের হাত খপ করে রাশেদের হাত চেপে ধরে! রাশেদ চিৎকার করে রিমনকে ডাক দেয়। কিন্তু রিমন শুনতে পায় না। লাশটা রাশেদের হাত খুব শক্ত করে ধরেছে। রাশেদের হাতের শিরা উপশিরাগুলো যেন এখুনি ফেটে বেরিয়ে আসবে!

রাশেদ জোরে একটা চিৎকার করে। লাশের দিকে তাকিয়ে রাশেদের কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে! লাশটা বড়ডর চোখ করে রাশেদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাশেদ রিমনকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু রিমন রাশেদের ডাক শুনলো না।

 

(ভ্যাম্পায়ার নারী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)