মধ্য রাতের ট্রেন – ভয়ানক ভৌতিক ঘটনা

মধ্য রাতের ট্রেন-

লেখকঃ খালিদ সাইফুল্লাহ

 

কিছুটা নিস্থব্দ এই স্টেশনে বসে আনিকার কথা ভাবছি। আনিকার মা আরিশা আন্টির সাথে কথোপকথন গুলোও কোন ভাবেই মাথা থেকে সরছে না।

যেন বড় কোন ঘটনা ঘটে গেল আমার জীবনে। বিয়ের সাজে একটা মেয়ে আমার পাশের সিটটায় বসে আছে।

হয়ত চোখ টিপে টিপে কান্নাও করছে। সম্ভবত বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে ৷ তার অঙ্গভঙ্গি দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। দুনিয়ার সবচেয়ে বিচিত্রময় জায়গাগুলোর মধ্যে রেলস্টেশন একটি।

নানান রকম লোকেদের মেলবন্ধনের হয় এখানে৷ কেও কাওকে চিনে না অথচ একই গন্তব্যে পারি দেয় অনেক মানুষ৷ কেও কেও আবার পথে পরিচিত হয়ে যায়। মেয়েটা এবার একটু শব্দ করেই কাঁদছে।

আশেপাশে খুব বেশি লোকজন না থাকায় হয়ত কাঁদতে সুবিধে হচ্ছে মেয়েটার৷ বুঝতে পারছি না মেয়েটার সাথে নিজে থেকে যেয়ে কথা বলা উচিত হবে কিনা৷

আমি তখনও দ্বিধায় ছিলাম হঠাৎ মেয়েটা আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করল-

ভাইয়া ট্রেন কখন আসবে বলতে পারবেন?

কোন ট্রেন? আর আপনি কাঁদছেন কেন? এখানে রিল্যাক্স হয়ে বসুন প্লিজ৷

আমার হাত থেকে পানির বোতলটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম৷

মেয়েটা এক ঢোকে অনেকটা পানি গলাধঃকরণ করল৷ এরপর মেয়েটা জিজ্ঞেস করল-

ভাইয়া ট্রেন কখন আসবে?

কোন ট্রেনের কথা বলছেন আপনি.?

আপনি কোথায় যাবেন?

নরসিংদী

হে নরসিংদীর ট্রেনটাই কখন আসবে?

এইতো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে ট্রেন

কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

হুম করুন

আপনি কি কোন ভাবে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছেন?

মেয়েটা কথা না বলে আবার কাঁদতে শুরু করল

আহা, আপনি কাদছেন কেন? কান্না থামান প্লিজ আশেপাশের মানুষ দেখলে অন্যকিছু ভাববে।

আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়েই এসেছি৷ কিন্তু যার জন্য পালিয়ে এসেছি সে ধোকা দিয়েছে । যার জন্য বাবা মায়ের মায়া ত্যাগ করলাম, বাবা-মার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলাম সে সুন্দর করে বলে দিলো আমাকে বিয়ে করা নাকি তার পক্ষে সম্ভব না।

অঝোরে কাঁদছে মেয়েটা। মেয়েটার কান্না দেখে আমি যেন আনিকাকে না পাওয়ার কষ্ট কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যাচ্ছি

কান্না থামান, কান্না করলে তো কোন সমাধান হবে না৷ আপনার বাবা-মা অবশ্যই আপনাকে অনেক ভালবাসেন। গিয়ে তাদের কাছে মাফ চেয়ে নিন৷ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আমার বাবাকে আপনি চিনেন না৷ উনি কখনোই ক্ষমা করবেন না৷ তাছাড়া এই মুখ আমি তাদের দেখাবো কি করে?

আচ্ছা, ওয়েট, একটা কথা বলেন ত আপনি কোনভাবে আত্নহত্যা করার জন্য ট্রেনের অপেক্ষা করছেন না ত?

আত্নহত্যার সাহস আমার কোনদিনই ছিল না তবে আজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার বেচে থাকার কোন অধিকারই নেই।

মেয়েটার কথা শুনে আতকে উঠলাম আমি। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি অনেক বুঝিয়েও পেরে উঠছি না। ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায় কিন্তু জেগে ঘুমানো মানুষকে জাগানো সম্ভবপর নহে।

আত্নহত্যা মহাপাপ, এর ফলাফল সবই জানে মেয়েটা। ওর বাবা মা এতে অনেক কষ্ট পাবে তা ও বুঝতে পারছে তবুও আত্নহত্যাই এই মুহূর্তে তার একমাত্র লক্ষ্য। ট্রেনটা আসতে দেরি করছে।

কি একটা পরিস্থিতি, ট্রেনটা আসতে দেরি করছে অথচ আমি খুশি হচ্ছি। চাইছি যেন ট্রেনটা না আসুক। চোখের সামনে একজনকে ট্রেনের নিচে কাটা পরতে দেখতে অবশ্যই কারোরই ভাল লাগার কথা না।

 

{ আরো পড়ুন – ছোট গল্প

 

মেয়েটা এবার আর কোন কথাও বলছে না, কাঁদছেও না। একদম চুপ করে বসে আছে।

অপেক্ষা করছে কখন ট্রেনটা আসবে আর সে ট্রেনের সামনে ঝাপ দিবে৷ আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ৯৯৯ এ ফোন দিবো৷  ফোনটা বের করতে ডায়েল করতে যাবো ঠিক তখনই একজন এসে আমার কলার ধরে ডান গালে সজোরে থাপ্পড় মারল।

সাথে আরো কয়েকজনও আছে সবাইকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। মেয়েটা আমাকে থাপ্পড় মারা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল “ভাইয়া উনি আমার বয়ফ্রেন্ড না, উনার সাথে এখানে এসেই কথা হয়েছে, আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে একা ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছে”

যাই হোক বাচা গেল বাবা৷ বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত নাটকিয়তা শেষে মেয়েটাকে তার বাড়ির লোকজন স্টেশন থেকে নিয়ে গেল।

মাঝখান থেকে গালে সজোরে চর খেয়ে এখন তব্দা হয়ে আছি আমি। এই নাটকিয়তা শেষ হতে না হতেই

আনিকার কথা মনে পড়ছে আবার।

ওর বাবা মা মেনে নিবে কিনা, আনিকা এখন আমার সম্পর্কে কি ভাবছে আরো কত শত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা বলে শেষ করা যাবে না। অবশেষে প্রায় দেরঘন্টা লেট করে ৮.৪০ এ ট্রেনটা স্টেশনে ঢুকল।

উঠে বসলাম ট্রেনে। সিটটায় হেলান দিয়ে বসে আনিকার কথা ভাবছি। ট্রেনটা ছাড়তেও খুব বেশি দেরি করেনি। গতরাতে ঘুম হয়নি আরিশা আন্টির জন্য। আজ সারাদিন ও বেশ ধকল গিয়েছে।

প্রচন্ড আকারে ঘুম চাপছে চোখে । ভাজা চানাচুর মাখানোর ঘ্রাণ আসছে নাকে। আনিকারও অনেক পছন্দ এই খাবার টা৷ শুনতে পাচ্ছি ট্রেনের ভিতর একজন ফকির গান গেয়ে ভিক্ষা করছেন৷ গানের কলিগুলো

“যারে আপন ভাবছো তুমি

আপন সে ত নয়,

মাটি হইবে সবচেয়ে আপন

যদি মরণ হয়।

মরলে মানুষ কাঁদবে রে সব

যাবে না কেও সাথে,

রেখে আসবে বন্ধ কবরে

স্বযত্নে নিজ হাতে”

লোকটার গানের গলাও বেশ সুন্দর৷ এদের টেলেন্ট যেন দেখার কেও নেই । গানটা বেশ ভালই উপভোগ করছি। লোকটা কাছে আসলে ২০ টাকা দিবো বলে মনস্থির করলাম।

হাত ধুয়ে দেয়ার পর রমনীগণ ২০০০ টাকা দাবি করে বসল আমার কাছে। বন্ধুরা তর্কাতর্কি করে ১০০০ টাকা দিয়ে বিদায় করল তাদের। ধুম পরে গিয়েছে পুরো বাড়িতে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। কিছুক্ষণ পর বড়সর একটা কাসার প্লেট নিয়ে আসা হলো।

নানান রকম খাবার সাজানো মাঝখানে বড় একটা রান্না করা আস্তো খাসি,  পাশে হাস, মুরগি, কবুতর, বেগুন ভাজি, হরেক রকমের বরা আরো বিভিন্ন রকমের খাবার দিয়ে পুরো প্লেট সাজানো৷

এত বড় প্লেট আমি আমার বাপের জন্মে দেখেছি কিনা সন্দেহ আছে। “বিয়া যে কত্ত মজা,  খালি খাওন আর খাওন” এই কথাটা বার বারই দোলা দিচ্ছে মনে।  আমি আর খাচ্ছি কই,  লজ্জা লাগছে প্রচুর।

দুলাভাই আর বন্ধুবান্ধবেরাই সব খেয়ে সাভার করে দিচ্ছে। আনিকার সাথে ধুমধাম করে বিয়ে হচ্ছে আমার।

আনিকাকে দেখার অপেক্ষা আর সইতে পারছি না৷ পুরো জীবনের জন্য নিজের করে পাচ্ছি সেই খুশিতে, আনন্দে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। খাওয়া দাওয়া শেষ হলো এবার বিয়ে পড়ানো হবে।

কাজী সাহেব আমার থেকে রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর নিলেন এবং মুখে তিনবার কবুল বলিয়ে নিলেন।

এবার রওনা হলেন আনিকার উদ্দেশ্যে। লক্ষ করলাম ইতিমধ্যে আমার জুতা জোড়া চুরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ বন্ধু আসিফ জুতা জোড়া লুকিয়ে রেখেছিল তবে লুকানো জায়গা থেকেই হয়ত আমার শালা শালিরা তা চুরি করেছে।

হয়ত আগে থেকেই খেয়াল রেখেছিল জুতা কোথায় রাখা হচ্ছে। আসিফ ও কম কিসে। ও আমার জন্য আরেক জোড়া ব্যাকাপ জুতা নিয়ে এসেছিল বেগে করে।

ও সেগুলো বের করতে চাইলে আমি মানা করি। মানা করার কারণ হচ্ছে শালা শালিদের অনন্দ টা নষ্ট হয়ে যাক তা চাচ্ছিলাম না।

কাজী সাহেব এই আঙিনা ত্যাগ করেছেন অনেক পূর্বেই। এতক্ষণে আনিকার কবুল বলা হয়ে যাওয়ার কথা তবে এখনো বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার খবর আসছে না। এত সময় ত লাগার কথা না।

বন্ধু আসিফকে বললাম একটু খোঁজ নিয়ে আসতে। আসিফ ফিরে আসার পর এমন খবর আমাকে দিবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।

আসিফ বলল আনিকা নাকি তার রুমে নেই। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। মাথায় আকাশ ভেঙে পরল আমার। এমনটা ত কোনভাবেই হওয়ার কথা ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই খবর বাতাসে ছড়িয়ে পরল।  লোকজন বিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া শুরু করছে।

আনিকার বাবা আবরার সাহেব দ্বিতীয়বারের মতো তার মান সম্মান সব হারাবেন। লক্ষ করলাম বাড়ির গেইটটায় ঘন কালো কুচকুচে শাড়ি পড়া একজন মহিলা নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে দেয়ালে কিছু একটা লিখছে। কি লিখছে তা দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ।

উনি এসব অদ্ভুত কর্মকান্ড করলেও এতে আশেপাশের লোকজনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন তারা কিছু দেখছেই না। এদিকটায় ফিরলে উনার মুখটা দেখতে পারতাম।

ধারণা করছি এটা আরিশা আন্টি ছাড়া কেও না। আনিকার হঠাৎ পালিয়ে যাওয়া বা উধাও হওয়ার রহস্য টা হয়ত উনি জনেন।

তার কাছে যেতে লাগলাম আমি ধারণা করছি কালো কুচকুচে শাড়ি পড়া মহিলা আরিশা আন্টিই হবেন। কারণ হাত কেটে রক্ত দিয়ে দেয়ালে অক্ষর লিখার কাজ আরিশা আন্টি ছাড়া আর কারোর হবে না।

মধ্য রাতের ট্রেন

কালো আমার প্রিয় রং।  পেছন থেকে দেখতে খারাপ লাগছে না।  মাথা ভর্তি এত দুশ্চিন্তার মাঝেও কালো যে আমার প্রিয় রং তা ভুলিনি। আমি তার সাথে কথা বলার জন্য সামনে এগোতে লাগলাম।

যত সামনে এগোচ্ছি মনে হচ্ছে আনিকার বিয়ের আসর থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার রহস্যের কাছাকাছি যাচ্ছি।

উনার কিছুটা কাছাকাছি যেতেই উনি উল্টোদিকে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। ভয়ে গা শিওরে উঠল আমার।

এমন বিশ্রি আর ভয়ংকর চেহারা বোধহয় এর পূর্বে দেখিনি আমি। ভয়ে ধারাবাহিক ভাবে ঢোক গিলতে লাগলাম আমি। চেহারা টা চিনতে পারছি না।  চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

যেন এখনই হয় আমার ঘার মটকাবে না হয় কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।  চেহারা চিহ্নিত করতে না পারলেও এটা নিশ্চিত উনি আরিশা আন্টি না। লক্ষ করলাম উনি উল্টো ঘুরে আমার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই হঠাৎ আকাশে প্রচন্ড মেঘের আবির্ভাব হয়েছে।

চারদিক প্রচুর অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। যেন এখনই অন্ধকার নামবে। হালকা হিম শীতল বাতাস বইছে।

এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন এর আগে হইনি আমি। প্রথমত ভয়ংকর চেহারাযুক্ত অজ্ঞাত অশরীরীর রাগান্বিত চাহনি তার উপর আবার ঠান্ডা বাতাস।

যেন আমি এমন কোন জগৎে হাড়িয়ে গিয়েছি যেখানে শুধু ভয় আর ভয়। উনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে উনার কাছে ডাকলেন আমাকে। পেছনে ঘুরে ভোঁ দৌড় দিবো সেই সাহসটাও হয়ে উঠছে না।

ভয়ে ভয়ে গুটি গুটি পায়ে উনার দিকে এগোতে লাগলাম আমি। কাছে যাওয়ার পর এবার চেহারাটা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে তবে ভয়ংকর ভাবটা চেহারা থেকে কাটছে না।

কোন হরর মুভিতেও এত ভয়ংকর চেহারা দেখেছি কিনা মনে পরছে না ।চেহারাটা এবার আমার কাছে স্পষ্ট।

আমি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। স্টেশনে যেই মেয়েটার সাথে কথা হয়েছিল অর্থাৎ যেই মেয়েটা বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে স্টেশনে এসেছিল আত্নহত্যা করার জন্য সেই মেয়েটা।

মেয়েটা তার রাগান্বিত চাহনি সরিয়ে নিয়েছে। অঝোরে পানি ঝরছে মেয়েটার চোখ থেকে।

ভয়ংকর শব্দ করে কান্না করছে মেয়েটা। ঠিক যেমনটা হরর মুভিতে দেখা যায়। বুঝতে পারছি মেয়েটা কান্না থামিয়ে অনেক কিছু বলবে হয়ত আমাকে।

অপেক্ষা করতে থাকলাম তার কান্না থামার যেমনটা অপেক্ষা করেছিলাম স্টেশনে৷ ততক্ষণে আমার চিন্তা ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে আনিকা আর আরিশা আন্টি।

ভাবছি এই মেয়ের সাথে আনিকার গায়েব হয়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে কিনা।

মেয়েটা কান্না থামিয়েছে। ভাব ভঙ্গিমায় বোঝা যাচ্ছে এবার কথা বলা শুরু করবে মেয়েটা।

-টিকিট, টিকিট, ভাই টিকিট টা দেখান,  এই যে ভাই টিকিট টা দেখান।  হ্যালো ভাইয়া,  টিকিট হয়েছে?

এমন কিছু আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। চোখ খুললাম। ট্রেনের টিটি টিকিট চাচ্ছে আমার কাছে। পকেট থেকে টিকিট টা বের করে দেখিয়ে দিলাম। উনি ধন্যবাদ বলে চলে গেলেন।

তার মানে, এতক্ষণ যা দেখেছি সব স্বপ্ন ছিল? আমার বিয়ে, স্টেশনের সেই মেয়ের ভয়ংকর চেহারা সবই স্বপ্ন.?  কতক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি?

ঘড়িতে তাকাতেই চমকে উঠলাম। অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে৷ পাশের যাত্রীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আমি আমার গন্তব্য ছাড়িয়ে আরো দুইটি স্টেশন পার করে ফেলেছি।

অবশ্য এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক না দুই রাত ধরে ঘুম নেই।  এমন কড়া ঘুম হওয়ারই কথা। তবে স্বপ্নটা ভাবাচ্ছে খুব৷ কি দেখলাম এসব.?

আমার বাড়িটা স্টেশনের খুব কাছেই তাই পরের স্টেশনে নেমে আরেকটা ট্রেনে উল্টোদিকে বাড়ি ফিরলাম। এবার আর ঘুমাইনি কারণ আর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে চাই না আমি।

দুপুরের কনকনে রোদে উঠোনে মাটির চুলায় কিছু একটা রান্না হচ্ছে। ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।

সম্ভবত ঢাকাগামী মেইল ট্রেনটা আপন মনে হর্ণ বাজাচ্ছে। ট্রেনের আওয়াজ কানে আসলেই ঐ রাতের কথা মনে পরে। রাতটা কি ভয়ঙ্করই না ছিল।

বারান্দা থেকে একটা চেয়ার নিয়ে উনুনের কাছে গিয়ে বাসলাম। লক্ষ করলাম নুডলস রান্না করছে আম্মু।

বেশ সুন্দর ঘ্রান ছড়াচ্ছে। ঘ্রানেই বুঝা যাচ্ছে বেশ সুস্বাদু হবে৷ নুডলস দেখে অনিকার কথা মনে পরে গেল। মেয়েটা মাঝে মাঝেই নুডলস রান্না করে নিয়ে আসতো আমার জন্য।

ওর হাতের রান্নারও যেন কোন জবাব নেই। ভাবছি যা যা ঘটেছে সব আম্মুর সাথে শেয়ার করি আবার মনে হচ্ছে কি দরকার খামাখা টেনশন দিয়ে।

নুডলস সত্যিই খুব সুস্বাদু হয়েছে। আমার বন্ধুরাও আম্মুর রান্নার প্রশংশায় পঞ্চমুখ হয়েছে বেশ কয়েকবার৷ নুডলস খাচ্ছি আর আম্মুর সাথে কথা হচ্ছে-

কিরে বাপ! তোর পড়ালেহা কি আর শেষ অইবো না?

হবে ত।এইতো আর কিছুদিন৷

হ তাড়াতাড়ি পড়ালেহা শেষ কর। লাল টুকটুকা বউ দেইখা বিয়া করামু তরে।

বিয়া!

কে বাপ?  চমকাইলি কে? বিয়া করবি না?  নাকি পছন্দ আছে?

না, আম্মা!  কি যে কও না। তোমরা যা ঠিক করবা তাই।

হ তাইলে ত অইলই। রাসেইল্লারে হের বাপ কত টেকা খরচ কইরা শহরে দিল পড়ালেহার লাইগা।

পুলায়নাকি মাইয়া লয়া ভাইগা আইছে। মাইয়ারও চেহারা সুরত কিছু নাই। মাইয়ার বাপ আবার নাকি মামলাও করছে। পুলিশ, মামলা আরো কত হয়রানি৷ তুই বাজান এমন কিছু করিস না জানি।

না আম্মা। তোমগর পছন্দ করা মেয়েই বিয়া করুম। চিন্তা কইরো না।

মনে মনে ভাবছি আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। আরিশা আন্টির সাথে দেখা না হলে কত বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আনিকা কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করলে আমার অবস্থাও বন্ধু রাসেলের মতোই হতো।

আম্মু এমনিতেই হার্টের রোগী হয়ত সহ্যই করতে পারতেন না। আনিকাকে না পাওয়ার ব্যাথা থাকলেও এসব চিন্তা করলে মনের মাঝে অন্যরকম শান্তি অনুভব করি।

এভাবেই সময় পার হচ্ছে কোনরকম। তবে এদিন রাতেই আবার এক অদ্ভুত কান্ড ঘটে আসার সাথে।

রাতে ঘুমের মধ্যে আবার ঐ কালো শাড়ি পড়া ভয়ংকর চেহারার মেয়েটাকে স্বপ্ন দেখলাম। তবে খুব অল্প সময়ের জন্য। দেখলাম মেয়েটা আগের স্বপ্নের মতোই কিছু একটা বলছে।

কিন্তু আমি কথা বুঝতে পারছি না। ট্রেনের আওয়াজ কানে আসছে। আচমকাই ঘুম ভাঙলে বুঝতে পারলাম ট্রেন যাচ্ছে। ঘড়িতে তখন রাত ১২.৩৪। মধ্য রাতের ট্রেন।

মধ্য রাতের ট্রেন

সেই ট্রেনটা যেই ট্রেনে আরিশা আন্টির সাথে দেখা হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে একই ঘটনা ঘটল৷ একই স্বপ্ন দেখতে থাকি যখন ঘুম ভাঙে বুঝতে পারি ট্রেনটা স্টেশন ত্যাগ করছে। এর মাঝে আনিকার সাথে কোন কথা হয়নি।

একবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু ফোন বন্ধ পাই।  আর জানি না ঠিক কোন কারণে ও সব জায়গা থেকে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। আনিকা এমনটা করার কথা না।

ওর জন্য দুশ্চিন্তা হয়, খারাপ লাগে কিন্তু কিছু করার থাকে না। প্রতি মধ্যরাতে ট্রেনের উপস্থিতিতে এই একই অদ্ভুত স্বপ্ন আমাকে ভাবিয়ে তুলছে।

এই স্বপ্নের শুরু থেকে আবার একটু চিন্তা করতে লাগলাম। এই স্বপ্নটা যখন দেখেছিলাম তখন ট্রেনে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম তাও আবার রাতের বেলায়।

হঠাৎ মাথায় চিন্তা আসলো যদি এই ট্রেনটায় উঠে ঘুম দিতে পারি তাহলে হয়ত কালো শাড়ি পড়া সেই মেয়ের কথাগুলো শুনতে পারবো আর রহস্য টাও উদঘাটন করতে পারবো।

সেই সুযোগে শহরে গিয়ে আনিকারও একটু খোঁজ নিয়ে আসা যাবে। যেই কথা সেই কাজ।

সিদ্ধান্ত নিলাম পরের দিন মধ্যরাতে এই ট্রেনে যাত্রা করবো। উদ্দেশ্য স্বপ্নের রহস্য আর আনিকার সাথে দেখা করা।

ঘড়িতে সময় ১২.৪৫। স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছি। যে দেয়ালটায় আরিশা আন্টি রক্ত দিয়ে হাত কেটে অক্ষর লিখেছিল দেয়ালটা একম পরিস্কার লক্ষ করলাম। আজ মধ্য রাতের ট্রেন আসতে বেশ লেট করছে। আমার চোখে ঘুম চাপছে বেশ।

যেন ট্রেনে উঠে বসলেই ঘুমিয়ে যাবো। অবশ্য আজ আমার ঘুমই দরকার। ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাচ্ছি। স্টেশনে ট্রেনটা ঢুকছে আর আমার মনে উত্তেজনা কাজ করছে।

কতদিন পর আনিকার সাথে দেখা হবে৷ সেই সাথে স্বপ্নের রহস্য ভেদ করতে পারবো৷ মধ্য রাতের ট্রেন স্টেশনে থামল। উঠে বসলাম ট্রেনে। পুরো ট্রেন প্রায় খালিই বলা চলে।

এতটা খালি থাকার কথা না। আমার তাতে তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ নাই। একটা আরামদায়ক সিট দেখে হেলান দিয়ে বসলাম। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে আর আমি ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করছি।

তবে ঐ ভয়ংকর চেহারার কথা ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। তবুও ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।

ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়ল আরিশা আন্টির করুন চেহারা৷ চোহারায় কোন ভয়ংকর ছাপ নেই৷ চোখ ভর্তি অসহায় চাহনিতে একটা লোহার খাঁচায় বন্দী অবস্থায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে৷

আমি কাছে গিয়ে কিছুটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম “আপনি এখানে বন্দী কেন.?  আর আনিকাই বা কোথায়? তার কোন খোঁজ খবর জানেন আপনি?

না, তিনি কোন কথা বলছেন না৷ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। বড় এবং মৃদু আলো সম্পন্ন একটা রুমের ঠিক মাঝখানটায় একটা খাঁচায় বন্দী আছেন উনি।

রুমটার কোন দরজা দেখতে পাচ্ছি না৷  স্বপ্নের মধ্যে হঠাৎ ই আবির্ভাব হয়েছি রুমটায়৷ আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি যে স্বপ্নের মধ্যে আছি তা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম।

বার বার উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছিলাম। পুরো রুমে একদম পিনপতন নিরবতা বিরাজমান, তবে টিক টিক একটা আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।

অনেকটা দেয়াল ঘড়ির কাটার আওয়াজের মতো। আমার অনুমানই সঠিক। লক্ষ করলাম রুমটার এক কর্ণারে বড় আকারের একটা দেয়াল ঘড়ি টানানো আছে।

ধারণা করছি আওয়াজ টা ওখান থেকেই আসছে। কাল বিলম্ব না করে কাছে গিয়ে ঘরিটা হাতে নিলাম।

দেখলাম তিনটা কাটার বদলে দুইটি কাটা বিদ্যমান ঘড়িতে সেই সাথে ঘড়ির কাটাগুলো উল্টোদিকে ঘুরছে।

ঘড়িতে সময় কয়টা তা বুঝা যাচ্ছে না কারণ সংখ্যাগুলো গতানুগতিক সংখ্যা না। অনেকটা অক্ষরের মতো।  এর আগে কোথায় যেন এই অক্ষরগুলো দেখেছি।

ওহ হে মনে পড়েছে, আরিশা আন্টি দেয়ালে রক্ত দিয়ে যে অক্ষরগুলো লিখতেন সেইগুলো। শুধু যে কাটাগুলো উল্টোদিকে ঘুরছে তা না বরং ছোট কাটা ঘুরছে বেশি গতিতে আর বড় কাটা ঘন্টার কাটার মতো ধীরে ধীরে৷ বাস্তব ঘড়ির ঠিক উল্টো আচরণ।

ঘড়িটা হাতের নেওয়ার কিছুক্ষণ চলার পর ঘড়ির কাটাগুলো থেমে গেল। টিক টিক আওয়াজ বন্ধ।

এখন রুমে একদম পিন পতন নিরবতা। ঘড়িটাকে আরেকটু উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম।

দেখলাম ঘড়ির পেছনটায় দুটো বাটন রয়েছে। একটা কালো কালারের আরেকটা নীল। ভাবলাম এগুলো দিয়ে হয়ত ঘড়ির দুইটি কাটা চালু আর বন্ধ করা হয়।

স্বপ্নটা এখন আমার কাছে বোরিং লাগছে। এই বন্ধ রুমে তো আর রহস্য ভেদ হবে না৷

আরিশা আন্টিও কিছু বলছে না। রুমের চারপাশে দেয়ালে দেখতে লাগলাম কোন গুপ্ত দড়জা আছে কিনা কিন্তু কোন কিছুই আবিষ্কার করতে পারলাম না।

কিছুক্ষণ চেচামেচি করেও আরিশা আন্টি বা কারোরই কোন রেসপন্স পেলাম না। এবার স্বপ্ন থেকে বের হতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না। খুব করে চাইছি কেও এসে ঘুমটা ভাঙিয়ে দিক।

কিন্ত কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শেষে হাত দিয়ে দেয়ালে আঘাত করতে লাগলাম যেন ব্যাথা পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়।

কিন্তু না, তাও হচ্ছে না, দেয়ালে যত জোরেই আঘাত করি না কেন হাতে ব্যাথাও পাচ্ছি না ঘুমও ভাঙছে না।

হতাশ হয়ে বসে আছি, আর অপেক্ষা করছি কখন ঘুম ভাঙবে। মনে মনে ভাবছি সমাধান ছাড়া সমস্যার সৃষ্টি হয় না।

সমস্যায় যেহেতু পরেছি এর সমাধান অবশ্যই আছে। এই রুমে ত আমি এমনি এমনিই আসিনি৷ নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।

এখান থেকে বের হওয়ারও হয়ত কোন পথ আছে কিন্তু আমি হয়ত খুঁজে বের করতে পারছি না। তখন হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা আসল। ঘড়ির বাটন গুলো চেপে দেখলে মন্দ হয় না।

ঘড়ি চালু হলে হয়ত কিছু একটা ঘটবে। যেই ভাবনা সেই কাজ৷  আবার ঘড়িটা হাতে নিলাম।  এখন দ্বিধায় আছি কোন বাটনটা চাপবো। কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে কালো বাটনে চাপ দিলাম।

ঘড়ি চালু হয় নি।  যেমন ভাবে বন্ধ ছিল ঠিক তেমনই কিন্তু ঘটনা একটা ঘটেছে। রুমের একপাশের একটা দেয়ালে হঠাৎ দড়জার মতো কিছু একটার আবির্ভাব হয়েছে।

ঐদিকেই ছুটে গেলাম৷  লক্ষ করলাম আরিশা আন্টির মুখে হাসি ফুটেছে যদিও উনি তখনও তার মুখ থেকে একটি শব্দও বের করেননি। তবে উনার মুখের হাসি দেখে মনে হচ্ছিল আমি ঠিক পথেই এগোচ্ছি।

দড়জা দিয়ে প্রবেশ করলাম। নিস্তব্ধ পরিবেশ। কিছুটা স্টেশনের প্লাটফর্মের মতো লাগছে৷ বেশ সুন্দর স্টেশনটা।

প্লাটফর্মের মাইকের আওয়াজ শুনতে পেলাম আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এবং মাইকে বলা হচ্ছে দুই নাম্বার লাইনে দাড়িয়ে থাকা ট্রেনের ঙ বগির ৪৭ নাম্বার সিটে বসতে বলার অনুরোধ করা হচ্ছে। কথাটা দুইবার রিপিট করা হলো মাইকে।

আমার মাথায় ধরছে না কিছু সব কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। আমি তিন নাম্বার লাইনে এসে গেছি।

সিরিয়াললি ঙ বগির দিকে যাচ্ছি এর মধ্যে মাইকের আওয়াজে শুনতে পেলাম আরো কয়েকজনের নাম ঘোষনা করে বিভিন্ন বগিতে যেতে বলা হচ্ছে।

বুঝতে পারলাম হয়ত আমার মতো আরো অনেকেই রহস্য উদঘাটনের নেশায় এত দূর এসেছে।

আমি ‘ঙ’ বগির সামনে এসে উপস্থিত। ট্রেনে প্রবেশ করে ৪৭ নম্বর সিটের দিকে যেতে লাগলাম।

পুরো বগিতে আমি ছাড়া আর কেও নেই। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম প্লাটফর্মেও তেমন মানুষজন নেই। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কি ঘটবে তাও বুঝতে পারছিলাম না।

সিটে বসে গেলাম হেলান দিয়ে। এবার আমি না চাইতেও চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার। ঘুম আসতেও খুব বেশি সময় লাগেনি৷ স্বপ্নের মধ্যেই আবার স্বপ্নের রাজ্যে প্রবেশ করলাম।

বলা চলে স্বপ্নের দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করেছি। এবার পরিবেশ টা আমার খুব পরিচিত। সেই বিয়ের আসর যেখান থেকে আনিকা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আর আমার সামনে সেই কালো কুচকুচে শাড়ি পড়া অশরীরী নারী ।

তবে এবার আর তার চেহারা টা ভয়ংকর লাগছে না তবে উনি কাঁদছেন৷ উনি কথা বলা শুরু করলেন এবার।

ভাগ্য ভাল যে আপনি কালো বাটন চেপেছিলেন। কালোর জায়গায় নীল বাটনটি চাপলে আপনার স্বপ্ন সেখানেই ভেঙে যেত আর কোনদিনও আপনি আর কিছুই জানতে পারতেন না”

কালো প্রিয় রং হওয়ার গুরুত্ব টা আমি ভালভাবেই বুঝতে পারলাম। উনি কথা বলে যাচ্ছেন –

আপনার শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্য আনিকার সাথে দেখা করা থাকলেও আপনি উনার দেখা পাবেন না কারণ আনিকা এখন অদৃশ্য মায় জালে বন্দী৷

শুধু আনিকা না ওর মা আরিশা ও একই মায়া জালে বন্দী। সেজন্য আরিশা আপনার সাথে ঐ ৪৭ নাম্বার রুমে কোন কথা বলতে পারেনি৷ অবশ্য আপনি চাইলেই পারবেন তাদের দুইজন সহ আমাকে মুক্তি দিতে।”

আমি বললাম “কিন্তু আপনার এসবের সাথে সম্পর্ক টা কি? আর আপনি কি মারা গেছেন?”

এত উতলা হচ্ছেন কেন? সব কিছু আপনাকে জানানো হবে বলেই ত এত আয়োজন৷ ধীরে ধীরে সব বলছি

তাড়াতাড়ি করতে হবে ত। যদি ঘুম ভেঙে যায় আমার, তখন ত আর কিছু জানতে পারবো না

এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনার ঘুম এখন আর এত সহজে ভাঙবে না

আমার ঘুমের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে?

হে আছে।

আচ্ছা, তাহলে সব খুলে বলুন আমাকে। আনিকা আর ওর মা এবং আপনি আপনারা কি সমস্যায় আছেন?  কিভাবে সব সমাধান করতে পারি?  আর আপনাদের মধ্যে কানেকশন টা কি?

 

 

{ আরো পড়ুন – তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি

(মধ্য রাতের ট্রেন গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)