মেডিকেল কলেজ এর ভৌতিক ঘটনা

মেডিকেল কলেজ এর ভৌতিক ঘটনা-

মেডিকেল লাইফে অনেকেই লাশ, মর্গ, হসপিটাল ইত্যাদি নিয়ে অনেক প্যারানরমাল ইনসিডেন্টের সম্মুখীন হয়ে থাকে। কিন্ত আমার সাথে যা ঘটেছিলো, তা একটু অন্যরকম ছিলো। সেটাই শেয়ার করছি।

২০১৩ সালের জানুয়ারী মাস।

মেডিকেল কলেজ জীবনের সূচনার উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা দেই আব্বু আর আমি। পথে আম্মুর ফোন আসে, একটা দুঃসংবাদ। মেডিকেলের আমার ইমিডিয়েট সিনিয়র এক আপুর মৃত্যুসংবাদ। ট্রেনে ধাক্কা লেগে খুব সম্ভবত মৃত্যু হয়েছিলো ওনার। তবে এক্সিডেন্টালি নাকি মার্ডার,তা সিওর না। শুরুতেই এমন একটা খারাপ সংবাদে আমাদের সবার মন খারাপ ছিলো।

ওরিয়েন্টেশনও ক্যান্সেল করে দেয়া হয়। তো ক্লাস শুরু হলো, আস্তে আস্তে সব নরমাল হয়ে কয়েক মাস পার হয়েও গেলো।

আমরা তখন কলেজের মেইন হোস্টেলে থাকতাম না, কারন ফার্স্ট ইয়ারের জন্য আলাদা হোস্টেল দেয়া হয়। হোস্টেলটা তখন ছিলো উত্তরা ৩নং সেক্টরে(এখন পরিবর্তন করা হইছে)। আমাদের এই হোস্টেলটাও হন্টেড ছিলো। আমরা অনেকেই ফেইস করছিলাম অনেক কিছু। ওই ঘটনাগুলো পরে শেয়ার করবো।

তো সে বার কিসের ছুটি ছিলো মনে নেই,, হোস্টেল পুরা ফাঁকা হয়ে গেছিলো। আমাদের ফ্লোরে আমি সহ মোট চারজন ছিলাম। রাতে আমার রুমে আমরা ৩জন ফ্রেন্ড ঘুমাতে আসি, আর একজন তার রুমে চলে যায়। অনেক আড্ডা হাসাহাসির পর আমার দুই ফ্রেন্ড ঘুমাবে বলে লাইট অফ করে দিতে বলে আমাকে।

লাইটের সুইচ আমার পা বরাবর ঠিক উপরেই। তো আমি মোটামুটি লম্বা হওয়ায় পা দিয়েই সুইচ অফ করে দেই।

হঠাত লাইট অফ হওয়াতে ওরা বলে- “তুই কেমনে এতো তাড়াতাড়ি লাইট অফ করলি??” আমি ফাইজলামি করে বল্লাম- “জেসি(ছদ্মনাম, যে আপু মারা গিয়েছিলেন। আমার নামের সাথে আপুর নামের অনেকটা মিলও ছিলো) লাইট অফ করে দিয়ে গেছে,,হু হা হা…”

মৃত মানুষ নিয়ে ফাইজলামি করতে হয়না, সেটাই মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। তো শুয়ে পড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ঘুমায় পরি।

মাঝরাতে ৩টা কি ৩.৩০ হবে, হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বলে রাখি, আমার বামে দেয়াল, পা বরাবর দেয়াল, মাথার কাছের দিকে দরজা আর ডানে একটু স্পেস রেখে পাশের বেড, যেখানে আমার দুই ফ্রেন্ড ঘুমাচ্ছিলো।

তো ঘুম ভাঙ্গার পর আমি ডানে তাকাতেই দেখি স্পেসে ফ্লোরে সাদা আলো, একটা সাদা ড্রেস আর সাদা হিজাব পরা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটার ভিতর থেকে যেন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে! সে বসে আছে আমার পা বরবার দেয়ালের দিকে মুখ করে। তাই আমি তার ব্যাক সাইড দেখতে পাচ্ছি শুধু, মুখ দেখা যাচ্ছিলো না।

মেডিকেল কলেজ

মেয়েটা মাথা নিচু করে বসা অবস্হায় চুপচাপ সামনে পিছনে দুলতেছে অনবরত। মনে হচ্ছে যেন কুরআন শরীফ পড়তেছে। পাশের বেডে যে দুইজন ফ্রেন্ড ঘুমাচ্ছিলো, তাদের মধ্যে একজন হিজাবী ছিলো। তো আমি ফার্স্টে ভাবলাম এটা ওই ফ্রেন্ডটাই। আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম- “ইশা(ছদ্মনাম), কি করতেছিস তুই??” কোনো সাড়া পেলাম না। আমি এবার একটু জোড়েই ডাকলাম। কোন সারাই নেই! হঠাৎ যার নাম ধরে ডাকতেছিলাম এতোক্ষন, সে পাশের খাট থেকে কথা বলে উঠলো। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

বুঝতে আর বাকি রইলো না যে ফ্লোরে বসে থাকা মেয়েটা অন্যকেউ। কোন সেন্স কাজ করছিলো না তখন। ১৫/২০সেকেন্ড পর হুশ আসলে  চিৎকার শুরু করে দি।

ফ্লোরে কে??ফ্লোরে কে??????

আমার চিৎকার শুনে আমার দুই ফ্রেন্ডের মাথা খারাপ হওয়া অবস্থা। ওরা বলতেছিল বারবার-” তুই কার কথা বলিস?? কোথায় কে??? অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা! ” কিন্তু আমি স্পষ্ট মেয়েটিকে দেখতে পেলাম, আশ্চ!  আমাদের চিৎকার একটুও প্রভাব ফেল্লো না তার উপর।

আমি সমানে চিৎকার করেই যাচ্ছি আর কাঁদতেছি। ওরা বেড থেকে নিচে নেমে যে লাইট জ্বালাবে তার সাহস পাচ্ছিলো না কারন আমি বারবার বলতেছিলাম ফ্লোরে কেউ বসে আছে। আর লাইটের সুইচ অন করার মতো অবস্থাও আমার ছিলনা। ওরা নিরুপায় হয়ে জোরে জোরে সুরা-কালাম পড়া শুরু করলো কিন্তু কি আশ্চর্য!কেউই কোনো সূরা পুরাপুরি পরে শেষ করতে পারলো না, অর্ধেক পর্যন্ত এসেই ভুলে যাচ্ছিলো। কতক্ষন এভাবে কেটেছে জানিনা।

হঠাৎ আমার কি যেন হলো!  আমি চুপ হয়ে গেলাম, মনে হলো মেয়েটা যদি তার মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায়,তখন কি হবে! আমি তো মরে যাবো নির্ঘাত। আমার মনে হলো যে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে! মেয়েটা মুখ ফিরে তাকানোর আগেই লাইট জ্বালাতে হবে,যে করেই হোক!

আমি আর কিছু না ভেবে আল্লাহর নাম নিয়ে ঝাপায় পড়ি লাইটের উপর। লাইট জ্বালানোর পর দেখি ফ্লোরে কেউ নেই। আমার ফ্রেন্ড ২টা ভয়ে জড়াজড়ি করে বসে আছে,ওদেরও চোখে পানি।

এই ঘটনার পরে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরি কিছুটা, সামান্য ব্যাপারেই সবকিছুতেই ভয় পেতে থাকি,,মিলামেশা কথাবার্তা কমায় দি সবার সাথে। কিছু আমল করি ভয় কাটানোর জন্য এবং কয়েকদিন পরে স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরে আসি। ঘটনা শুনার পর হোস্টেল ছেড়ে চলে যায় দুই তিনজন। সবার মতে স্ট্রেসের কারনে দুঃস্বপ্ন / হ্যালুসিনেশন হাবিজাবি ছিলো এগুলো।

আর যেহেতু ওই আপু কখনো ওই হোস্টেলে ছিলোই না,তাই প্রশ্নই আসে না তার আত্মা ঘটিত কিছু হওয়ার। প্রথমে অনেক তর্কে জড়াতাম সবার সাথে এসব নিয়ে,কারন আমার মতে ওটা হ্যালুসিনেশন হতেই পারে না। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে একসময় আমিও এগুলা মেনে নিয়ে সবভুলে যেতে থাকি।

তবে ঘটনার মেইন জিনিস তখনো অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য। ঘটনার ২/৩মাস পর একদিন টিউটোরিয়াল ক্লাসে হঠাৎ ম্যাডাম সেই আপুকে নিয়ে গল্প করা শুরু করে। যেদিন আপু মারা যায়,সেদিন হোস্টেল থেকে বের হওয়ার সময় ম্যামের সাথে দেখা হয় আপুর। আপুকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছিলো সেদিন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো আপুর পরনে ছিলো ধবধবে সাদা ড্রেস আর সাদা হিজাব, ঠিক যেমনটা আমি সেই রাতের মেয়ের পরনে দেখছিলাম।

এর আগে আমাদের কারোরই কোনো আইডিয়া ছিলোনা আপু সম্পর্কে,,ইভেন তিনি যে হিজাবী ছিলেন সেটাও জানতাম না, তাহলে হয়তো মানা যেতো যে আমার সাব-কনসাশ মাইন্ডে উনার ইমেজ ক্রিয়েট হইছে মনে যেটা আমি সেই রাতে দেখছিলাম। অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা পাইনি আজও,কিছু প্রশ্ন থেকেই গেছে।

 

 

 

( মেডিকেল কলেজ এর ভৌতিক ঘটনা আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

মেডিকেল কলেজ এর ভৌতিক ঘটনা

সমাপ্ত