প্রথম পর্ব
লাল_ডাইরী –
আমার বিয়ের দিনই আমার শাশুড়ী মা মারা গেলেন।এর মত বাজে অভিজ্ঞতা যেন কারো না হয়।বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়েরই অনেক স্বপ্ন থাকে।আমার সব স্বপ্ন একদম ছাই হয়ে গেল।রাফি মানে আমার বর একদম ভেঙে পড়ল।ভাগ্যিস বিয়ের পর মা মারা গেলেন।আগে মরলে মনে হয় বিয়েটা হতোই না।
কেউ কেউ বলছিল,বউ অলখ্খী।ঘরে পা রাখতে না রাখতেই শাশুড়ীকে খেল।
আমি আবার ওসবে কান লাগাই নি।এমনিতেও এই বিয়েটা করার কোন ইচ্ছেই আমার ছিল না।বাড়ি থেকে জোড় করে দিয়েছে।আমার ইচ্ছে ছিল,বাসররাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যাব।হ্যা,একটুও মিথ্যা বলছি না।আমার এমনটাই করার ইচ্ছে ছিল।কোথায় যাব তাও ঠিক করে রেখেছিলাম।আমার কলেজ ফ্রেন্ড সিমার বাসায় উঠতাম।ওকে সব বলেও রেখেছিলাম। কিন্তু মাঝখান থেকে ঝামেলা পাকালো শ্বাশুড়ি মা।বিয়ে হওয়ার কয়েক ঘন্টার মাথায় তিনি হঠাৎ মারা গেলেন।
আমি যদি সেই রাতেই পালায়,ব্যাপারটা বড্ড বিশ্রী হয়ে যেত।তাই থেকে গেলাম।থেকে গেলাম বলতে পাকা সংসারী মেয়ে হয়ে উঠলাম।দুবছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমার কোল আলো করে করে আমাদের মেয়ে রাহা এলো।রাহাকে পেয়ে ওর বাবা রাফি যেন মাকে ফিরে পেল।আমাদের সংসার কানায় কানায় পূর্ণ হলো।
একদিন রাহাকে নিয়ে রাফি বাইরে গেছিল।বাড়িতে বাবা মানে আমার শ্বশুরও ছিলেন না।আমি একা ছিলাম।সেদিন স্টোররুমে কি যেন খুঁজতে গেছিলাম। পুরনো জিনিসপত্রগুলো সরাচ্ছিলাম।তখন একটি ছোটখাটো বাক্স দেখলাম।বাক্সটার উপরে ধূলো জমে গেছে।মনে হয়,অনেকদিন এটিতে কেউ হাত দেয়নি।আমিও এখানে এই বাক্সটি কখনো দেখেছি বলে মনে হয়না।
বাক্সটি হাতে নিয়ে মনে হলো ভেতরে কিছু আছে।আমার বেশ কৌতূহল জাগল।আমি খোলার চেষ্টা করলাম।পুরনো জিনিস বলেই মনে হয়,একটু নাড়াচাড়া করতেই বাক্সটি খুলে গেল।সেখানে দেখলাম,একটা ডাইরী।লাল রঙের ডাইরী।সাথে বেশ কয়েকটি কলম।আমার যেন তর সইছিল না।ডাইরিটি পড়ার জন্য অস্থির হয়ে গেলাম।তবে ডাইরিটি খুলতেই যা দেখলাম,তা দেখে আমার তো চোখ কপালে উঠলো।
“আমি বুঝতে পারছি,আমাকে আগামীকালই মেরে ফেলবে ওরা।ইশ ছেলের বিয়ের দিন মরব।”
{ আরো পড়ুন – মুকুন্দপুরের অভিশপ্ত পিশাচ
পর্ব ২
একমুহুর্ত আমি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।যতটা অবাক হলাম,তার থেকেও বেশি কষ্ট পেলাম।যতদূর শুনেছি,আম্মা খুব সাদামাটা মানুষ ছিলেন।কারও সাথে কখনো ঝগড়া হয়নি তার।আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না।আমার চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে লাগল।আতঙ্ক উত্তেজনায় মাথাটা ভো ভো করতে লাগল।এমন অবস্থায় শুনতে পেলাম,দরজায় কেউ নক করছে।
লাল ডাইরিটি আঁচলে গুঁজে নিলাম।আমি চাই না এটি রাফি বা বাবা দেখুন।আমি একাই এর সব রহস্য উদ্ঘাটন করতে চাই।
দরজা খুলে যা দেখলাম,তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার ওপাশে।বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল।বলে রাখি,এই মানুষটা আমি ভীষণ ভালোবাসি।কারণ আমি কখনো বাবার স্নেহ পাইনি।বিয়ের দিন আম্মা মারা গেলেন।সবাই আমাকে নিয়ে অসংখ্য কটু কথা বলেছে।কিন্তু কখনো এব্যাপারে বাবা কিছু বলেন নি।
বাবার রক্তমাখা দেহ দেখে সব ভুলে গেলাম।কোনরকমে বাবাকে সোফায় এনে বসালাম।শোবার ঘরে ফোনটা আনতে গিয়ে আবার মনে পড়ল ডাইরীর কথা।ওটা খুব যত্ন করে রেখে দিলাম আলমারিতে,আমার শাড়ির ভেতরে।ফোন করে রাফিকে বাবার কথা জানাব কি?
রাফির ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাবার গায়ে শাল জড়িয়ে হসপিটালে গেলাম।বাবা মনে হয়,ভীষণ ভয় পেয়েছেন। কথা বলার মত অবস্থায় নেই।কিন্তু কে বা কারা বাবাকে এমনভাবে জখম করেছে??
এসব ভাবতেই আমার হাতে থাকা বাবার সেলফোন কর্কশস্বরে বেজে উঠল।আমার কেমন জানি ভয় করতে লাগল।কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম।
“আলতাফ চৌধূরি,মনে করিস না, তোকে ছেড়ে দিলাম।তোকে আমি কষ্ট দিতে দিতে মারব।তাই আজ ছেড়ে দিলাম”
তৃতীয় পর্ব
আলতাফ চৌধুরী, মনে করিস না,তোকে ছেড়ে দিলাম।তোকে আমি কষ্ট দিতে দিতে মারব।”
কে বলছেন?হ্যালো,হ্যালো
ওপাশ থেকে আর কোন সাড়া পেলাম না।এমনি থেকেই আমি ভয়ের মধ্যে ছিলাম। এখন যেন সেই ভয়টা আরও বেড়ে গেল।আমি বুঝতে পারছি, আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।এসময় রাফিটাকে পাশে পেলে ভালো হতো।কিন্তু সে কোথায়?রাহাকে নিয়ে তো বেশিদূর যাবার কথা ছিল না।তবে ওদের কি কোন বিপদ হলো।
দুঃছাই!!!!আমি এসব কি ভাবছি।আমরা যখন কোন ঝামেলার মধ্যে পড়ি,তখন প্রকৃতি শুধু ঝামেলার কথই মনে করিয়ে দেয়।এটা যেন চিরন্তন একটা নিয়ম।
“মাম্মাম”
শব্দটা শুনেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল।মাথা ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম,রাফি রাহাকে কোলে নিয়ে খানিকটা দৌড়ে আসছে।
“রত্না,বাবা এখন কেমন আছে? কীভাবে এসব হলো?”
-রাফি শান্ত হও।আমি কিছুই জানি না।বাবা সুস্থ হলেই আমরা সব জানতে পারব।ফোনের ব্যাপারটা তখন আর রাফিকে বললাম না।এমনি থেকেই ও ভীষণ টেনশন এর মাঝে ছিল।
পরদিন আমরা বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।বাবা এখন মোটামুটি সুস্থ। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি কোন বিষয় নিয়ে ভীষণ ভয়ে আছেন।এ অবস্থায় তাকে গতকালের ফোনকলের কথাটা বলা মনে হয় ঠিক হবে না। এমনি থেকেই বাবা হার্টের রোগী।
বাবাকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় হচ্ছিল। তাই সারাদিন তাকে চোখে চোখে রেখেছি।বিকেলে বাবাকে ওষুধ খাওয়াতে গেলাম।দেখি,বাবা ঘুমিয়ে পড়েছেন।ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছেন আর থরথর করে কাঁপছেন।তার পুরো শরীর ঘেমে গেছে।আমি বাবাকে আস্তে করে দুয়েকবার ডাকলাম,”বাবা,বাবা..
-কে?কে?
-আমি বাবা।
-ওহ বৌমা?
-হ্যা,বাবা।আপনি কি স্বপ্ন দেখছিলেন?
-হ্যা হ্যা,,মা। একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
আমি ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিলাম।বাবাকে ওষুধ খাওয়ালাম।
এরপর একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”বাবা,আপনাকে একটা কথা বলি?”
-হ্যা, মা বলো
-ইদানীং আপনাকে কেমন জানি অন্যমনস্ক, আতঙ্কিত মনে হয়।মনে হয়,সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন।
-না, না,,মা।তেমন কিছু না।বয়স হয়েছে তো।জানিসই তো হার্টের অবস্থা ভালো না।
-হুম,বাবা, সত্যি করে বলুন তো কাল আপনার সাথে কি হয়েছিলো?
-বলেছিই তো।তেমন কিছু হয়নি।একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম।
আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, বাবা মিথ্যা বলছেন।কেউ তাকে মেরেছে।শুধু মারেই নি,ভয়ও দেখিয়েছে। কিন্তু কে হতে পারে?.
চতুর্থ পর্ব
কে এই নিষাদ?
শুধু এইটুকু মনে হচ্ছে, নিষাদ নামটা কোথায় যেন শুনেছি!!তবুও কিছুতেই মনে করতে পারছি না। এদিকে আমার ব্যাস্ততা ভীষণ বেড়ে গেছে।বাবার অসুস্থতার জন্য ভাই ভাবি দুজনেই আজ আসবেন। তাদের যত্ন আত্মির কোন ত্রুটি রাখা যাবে না।রাফির আদেশ।তার ভাই ভাবী তো বাসায় থাকে না।তাই দুইভাইয়ের ভালোবাসা যেন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি।রোকন ভাইয়ারা আমাদের বিয়ের পরই ঢাকায় চলে যান।শুনেছি মায়ের মৃত্যুর পর এই বাড়িতে রোকন ভাইয়ার অস্বস্তি লাগতো।তাই ভাবিকে নিয়ে একেবারে ঢাকায় চলে গেলেন।
মায়ের মৃত্যু মনে হতেই বুকটা ধুকধুক করে উঠল।মনে পড়ল লাল ডায়েরির কথা।এই দুইদিন এত ব্যাস্ত ছিলাম,কোনভাবেই ডায়েরির কাছে যেতে পারিনি। আজকে যাব।শত ব্যাস্ততার মাঝেও যাব।মায়ের মৃত্যু রহস্য আমাকে জানতেই হবে।
বাবার অসুস্থতা যেন কমছেই না।ভাইয়া ভাবি এসেছেন।তারা আসার পর বাবা আরও অসুস্থ হয়ে গেলেন।ভাইয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। ভাবি বেশ অবাকই হলেন। বাবার মত এমন সাহসী,রাগী মানুষ খুব কমই আছেন।হঠাৎ তার এই ভেঙে পড়া ব্যাপারটা কোথায় যেন গড়বড় ঠেকছে।কোথায় যেন বিশাল একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।ভাবী আমার দেখা একজন অসাধারণ মহিলা। তিনি আমাকে বলেই ফেললেন, “বাবার কি হলো বল তো রত্না?বাবাকে তো কখনো এমন ভেঙে পড়তে দেখিনি?
আমি কি বলব সঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম।একটু ভেবে বললাম,”কি জানি ভাবি,আমিও কিছুই বুঝতে পারছি না। গত দুইদিন থেকেই বাবাকে অদ্ভুত লাগছে।”
ভাবি কিছু বললেন না।
সারাদিনের সমস্ত ব্যাস্ততা কাটিয়ে রাতে আমি ফ্রি আছি।রাফিও ঘরে নেই।ভাইয়া ভাবির সাথে ড্রয়িং রুমে গল্প করছে।আমার মেয়ে রাহা এখনো ঘুমোয়নি।ওর আবার দেরীতে ঘুমানোর অভ্যাস।ওর বাবাই এর জন্য দায়ী।রাত করে বাড়ি ফেরার অভ্যাস আছে।মেয়েটা আবার বাবার ভক্ত হয়েছে।বাবাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না।বাবা বলেন,রাহার সাথে নাকি আম্মার ভীষণ চেহারার মিল।রাফিও বলে।কিন্তু সত্যি কথা,আমি তেমন কিছুই দেখতে পাই না।
দুইবছরের বাচ্চার সাথে বড় মানুষের চেহারার মিল হয় কি করে বুঝি না।হতে পারে এটা আমারই অজ্ঞতা।রাহা আছে ভাবীর কাছে। ও ভাবীর খুব আদরের। শুধু ভাবীরই না,ভাইয়ারও।বাচ্চার প্রতি এই দম্পতির দুর্বলতা থাকা অবশ্য অস্বাভাবিক না।আটবছরের বিবাহিত জীবনে তারা মা বাবা হন নি।
ঘরের দরজা পিছন থেকে আটকে দিলাম।আলমারির ভেতর থেকে নীল শাড়িটা বের করলাম।..
।এই শাড়ির ভেতরেই লাল ডায়েরীটি রেখেছিলাম।হুম যেমন রেখেছিলাম তেমনই আছে।ডায়রিটি হাতে নিলাম।ডায়েরিটি বেশ চমৎকার। মলাটে জড়ানো।বেশ যত্ন নিয়ে খুললাম।মনে হয় ডায়েরিটি মায়ের খুব প্রিয় ছিল।প্রথম পৃষ্ঠাই বড় বড় বর্ণে লেখা,”ঝরাপাতা,জীবনের ঝরাপাতা। এরপর মা লিখতে শুরু করেছেন মনে হয়।কিন্তু অবাক হলাম,ডায়েরিটির প্রায় সমস্ত পৃষ্ঠা ফাঁকা। মাঝখানের দিকের অনেকগুলো পৃষ্ঠা ছেঁড়া। এর মানে কি-আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি।
আমি প্রথম যেদিন ডায়েরিটি দেখি,সেদিন আমার প্রথমেই চোখ পড়ে মুড়ে রাখা একটি পৃষ্ঠায়,যে পৃষ্ঠা থেকে আবিষ্কার করলাম,আমার শাশুড়ি কারো হাতে খুন হয়েছেন।ওনি আগে থেকেই জানতেন,ওনাকে হত্যা করা হবে।তাই ব্যাক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু ওনি কিছু করেন নি কেন?মৃত্যুর কথা জেনেও কেন চুপ ছিলেন?তাকে কি বাধ্য করা হয়েছিলো?এ ব্যাপারে কি পরিবারের কেউ কিছু জানতেন না?এসব ভাবতে ভাবতে আমি প্রায় ক্লান্ত।
তখনই চোখে পড়ল ডায়েরির কিছু কিছু পৃষ্ঠায় লিখা আছে।আমি ভালোভাবে ডায়েরির প্রতিটি পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম।কিছু পৃষ্ঠা পরই একটা লিখা দেখে আমার চোখজোড়া যেন আটকে গেল।
“আজ আমি জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ করলাম।জানি না এ পাপের শাস্তি কি?”
তাং০৯/০৩/৯৮
ব্যাস,এতটকুই। পুরো পাতাজুড়ে আর কোন লিখা নেই।কি এমন বাজে কাজ করেছিলেন মা।তাও আবার পঁচিশ বছর আগে।আমি আবার হন্নে হয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে শুরু করলাম।কয়েক মুহূর্তের মধ্যে রাফিটা দরজায় নক করল।তবুও দরজা খুললাম না।আরও খুঁজলাম।কিন্তু কিছুই পাচ্ছিলাম না।অন্যদিকে রাফিও রুমে ঢোকার জন্য বারবার ডাকছিলো।ডায়েরিটি ভালোমত রেখে দিলাম।এরপর দরজা খুললাম।
-কি রত্না,ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?
-ইয়ে মানে হ্যা,একটু ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।
-ওহ।কিন্তু দরজা দিয়েছো কেন?
আমি একটু অস্বস্তি বোধ করলাম।কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না।রাফিই বলল,আচ্ছা, ঘুমিয়ে পড়।
আমার কি আর ঘুম আসবে আজ রাতে?এতগুলো প্রশ্ন মাথায় কি ঘুমানো যায়?
তবুও শুয়ে পড়লাম।মাথায় শুধু ওসবই ঘুরছিল।
রাফিও এখনো ঘুমোয়নি। বুঝতে পারছি। রাহা ঘুমিয়েছে।অনেক সুইট লাগছে বাবা মেয়েকে।রাফির হাতের আঙুল ধরে আছে রাহা।
আচ্ছা রাফি?
হ্যা, বলুব ম্যাডাম
-তোমার আজ মন ভালো আছে তো?
-কেন?মন কি খারাপ থাকার কথা ছিল।
-না,ঠিক তানা।তবে কয়েকদিন ধরে যা হচ্ছে
-হুম।ঠিকই বলেছো.
আচ্ছা, একটা কথা বলব। সঠিক উত্তর দিবে তো?
-কি প্রশ্ন বল?
-আরে তেমন কোন প্রশ্ন না। আমার আসলে একটা বিষয় জানার ছিল।
-কি এমন বিষয়?যা জানার জন্য আমার বউ ঘুমোতে পারছে না?
-রাফি, কাল তোমার আর বাবার কথাগুলো আমার কানে এসেছে।নিষাদ কে?
-ওহ এই কথা।তুমি ভুলে গেছো নিষাদ কে?ঐ যে ভাবির বান্ধবী লতার ক্রাশ ছিল। একদিন আমাদের বাসায় এসে বেশ গল্প জমিয়েছিল
-হ্যা,মনে পড়েছে।পরে যেন কি হলো
– কি আর হবে?ভাবীর ঐ বান্ধবী মারা গেলো।
-সেকি কথা!!আমি ভাবির মুখে অসংখ্যবার লতার কথা শুনেছি।কিন্তু লতা মারা গেছে,তেমন কিছু তো বলেনি ভাবি
-হুম,ভাবী কখনো লতার মৃত্যুর কথা কাউকে বলে না……..
-কেন?কিভাবে লতা মারা গেছিল?
-সে অনেক কথা।যখন ভাবীর মন ভালো থাকবে,তখন শুনে নিও
-না,তুমি এখনই বলো
-উহু,ওত বিশাল কাহিনী আমি এখন তোমাকে শোনাতে পারব না।
উহু রাফি শোনাও। রাফি, রাফি…..ঘুমিয়ে পড়েছে।
{ আরো পড়ুন – ভূতের গল্প
পঞ্চম পর্ব
মা কি এমন কাজ করেছিলেন? যার জন্য ডায়েরীতে ওভাবে লিখে রেখেছেন। নিষাদ, লতা,বাবার আহত হওয়া সবকিছু ছাপিয়ে এই ভাবনাটায় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি শুধু অপেক্ষা করছি একটু অবসরের।ঐ লাল ডায়েরী পুরোটা না দেখাঁ অবধি কোন শান্তি পাচ্ছি না।আজ বাবার কিছু চেকআপ করাতে হবে।
এজন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন।রাফি তো সকাল বেলায় অফিসে গেছে।বাসায় ছিল ভাইয়া,ভাবি,বাবা আর আমি।ভাইয়া ভাবিকে বলে কয়ে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলাম।ব্যাস,বাসায় শুধু আমি আর ছোট্ট রাহা।ব্যাস,এইতো সুবর্ণ সুযোগ। আমায় আর থামায় কে?
নীল শাড়িটার মধ্যে গুজে রাখা ডায়েরীটা বের করলাম।উল্টাতে শুরু করলাম একের পর এক পৃষ্ঠা। উন্মাদের মত আমি খুঁজে চলেছি।পুরো ডায়েরি প্রায় ফাঁকা। পাপের কথাটা লিখার পর অনেকগুলো পৃষ্ঠা ছেঁড়া। হয়তো এইপৃষ্ঠাগুলো এত্ত এত্ত প্রশ্নের সমাধান দিতে পারতো।ডায়েরীর ঠিক মাঝে কিছু পৃষ্ঠায় লিখা দেখলাম,
“আলফাজকে মনে পড়ে।খুব মনে পড়ে।মানুষটা মনে হয় সত্যি আমাকে খুব ভালোবাসত।আমি কি ওর সাথে অন্যায় করেছি?না,করিনি।আমি ওর সাথে কোন অন্যায় করিনি।”
আলফাজ আবার কে?এই লোক কি মার বন্ধু ছিলেন নাকি?
হঠাৎ দরজায় শব্দ। আমি কেমন জানি ভয় পেয়ে গেলাম। সাথে সাথে লুকিয়ে ফেললাম লাল ডায়েরী। নিজেকে একটু শান্ত করানোর চেষ্টা করলাম।এখনো শব্দ হচ্ছে। কাঁপা পায়ে এগুলাম দরজার দিকে।
ওমা!!! রাফি
কিন্তু এই সময়ে তো রাফির আসার কথা না।তাও আবার এমন হয়ে।দেখে মনে হচ্ছে কোন যুদ্ধ করে এলো।(প্রিয় পাঠক গল্প লেখিকা মেহজাবিন হক,
তার গল্প কেমন লাগে অবশ্যই জানাবেন।)
কি হয়েছে রাফি?তোমাকে এমন লাগছে কেন?
র,র,রত্না,বাবা
হ্যা,বাবার কি হয়েছে?
বাবাকে কে যেন গুলি করেছে
কি!!!কি বলছো এসব?
হুম,যা বলছি সব সত্যি……..
বাবা… এরপর যা কিছু হলো,তা আমাদের ছোট্ট পৃথিবীটা ওলট-পালট করার জন্য যথেষ্ট। দুইদিন আইসিইউ এ লড়াই করে তিনদিনের মাথায় বাবা চলে গেলেন।আমার মনে হয় এতে সব থেকে বেশি ভেঙে পড়ি আমি।সবকিছু ভুলে যাই।বাড়িটা কেমন জানি ফাঁকা হয়ে যায়।রোকন ভাইয়া, ভাবিও কিছুদিন পর ঢাকায় চলে যায়।
নিষাদ নামে লোকটাকে গ্রেফতার করা হয়।বর্তমানে সে জেলে রয়েছে।কিন্তু আমি এখনও জানি না নিষাদ কেন বাবাকে গুলি করেছে?নিষাদই যে বাবাকে গুলি করেছে এরও কোন ভালো এভিডেন্স পাওয়া যায়নি।আমার জীবনটা কেমন জানি থমকে গেছে।কোনদিকে কোন খেয়াল নেই।তবুও আজ মনটা খচখচ করছিল।আজ দিনটা ছিল অনেক সুন্দর। হালকা বৃষ্টি হয়েছে।বিকেলবেলা আমি,রাহা আর রাফি ছাদে আছি।
রাফি মেয়েকে নিয়ে বেশ ব্যাস্ত ছিল।ইদানীং রাফিই রাহার বেশি খেয়াল রাখে।আমি তো নিজেরই খেয়াল রাখতে পারিনা।
-রাফি,আজ একটা কথা বলো,এরআগে কখনো শুনতে চাইনি।
-কি কথা?
-রাফি,নিষাদ বাবাকে কেন মারল?কি লাভ ওর?
-সে অনেক কথা।তুমি নিজের দিকে নজর দাও।আমাদের একটা বাচ্চা আছে।বাবার বয়স হয়েছিলো,চলে গেলেন।হ্যা,আমি জানি, তুমি বাবাকে অনেক ভালোবাসতে।আমিও বাসতাম।কিন্তু কিছু তো করার নেই।বাবা ওপারে চলে গেছে।
-রাফি,এসব কথা আমি জানি।আর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করার যথেষ্ট চেষ্টা করি।তুমি আমাকে নিষাদের বিষয় ক্লিয়ার কর।
-নিষাদের কথা বলতে গেলে প্রথমে লতার কথা বলতে হবে।লতা ছিল ভাবীর ফ্রেন্ড, একদম বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা বোনের মত ছিল।
-হুম শুনেছি তো এসব। ভাবীই বলেছে।
-ওহ আচ্ছা। তারপরেও অনেক কথা আছে।সেসব শোনো।
ভাবীর বিয়ে হয়ে গেল ইউনিভারসিটিতে গ্রাজুয়েট করার সময়।সেসময় আমরা ফুল ফ্যামিলি ঢাকায় থাকতাম।আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য ভাবী যুক্ত হলো।ভাবীর বেস্ট ফ্রেন্ড লতা আবার গ্রামের মেয়ে ছিল।ওর মা বাবা ছিল না।ভাবীর মা বাবা মানে আংকেল আন্টিই লতার দেখাশোনা করত।তো ভাবী আর লতা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিল।একসাথে মেসে থাকত।কিন্তু বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তো ভাবী আমাদের বাসায় চলে আসল
-হুম আসল। তারপর…..
-কিছুদিন পর ভাবী লতাকে বাসায় আনল।লতা আপু প্রায়ই আমাদের বাসায় আসত।মেয়েটা খুব সুইট ছিল।ওর সাথে আবার বাবার অনেক মিল ছিল।জানোই তো বাবার কেমন মেয়ের শখ ছিল। বাবাকে বহুবার মাকে বলতে শুনেছি,”রাবেয়া,আমার ঢ়দি একটা মেয়ে থাকতো!”বাবা একেবারে ওকে নিজের মেয়ে বানিয়ে ফেলল।এরপর লতা আপু আমাদের বাসায় থাকত।বাবা মা বা আমরা সবাই ওকে খুব ভালোবাসতাম।ও একদম আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গেল।খুব মিষ্টি মেয়ে ছিল।ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল নিষাদ।
-কি হলো?থামলে কেন?বল
-হুম বলছি।নিষাদ ছেলেটাকে বাবা একদমই দেখতে পারতেন না।আমাদের বাসায় এসেছিলো অনেকবার।একদিন শুনলাম নিষাদ ভাইয়ের সাথে লতা আপুর কি নিয়ে যেন কথা কাটাকাটি হয়েছে।ব্যাপারটা বেশ স্বাভাবিকই ছিলো।কিন্তু
-কিন্তু, কিন্তু কি রাফি?
-পরেরদিন আমাদের বাসা থেকে উদ্ধার হলো লতা আপুর ডেডবডি।মেয়েটা সুইসাইড করেছিল
-কি বলছো?
-হ্যা,,,খুব জেদী ছিল।অল্পতেই রেগে যেত।লতা আপুর এই মৃত্যু বাবা মেনে নিতে পারেননি।কেইস করলেন নিষাদের নামে।আসলে সত্যি কথা, এই ঘটনায় নিষাদের তেমন দোষ ছিল না।কিন্তু বাবা কিছু বুঝতে চাইলেন না।খুব টাকা খরচ করে উকিলের মাধ্যমে নিষাদকে ফাসালেন।
-তারপর????
-তারপর আর কি!!যা হবার তাই হলো।নিষাদ পাঁচ বছর জেল খাটল।জেল থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠল….
এরপর তুমি সব জানো
আমার কিছু বলার ভাষা ছিল না।কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।বাবাকে এই কারণে হত্যা করা হলো?কিন্তু মাকে কেন?কে মেরেছে মাকে?আমি জানি,রাফিকে এইসব বললে বোকামি হয়ে যাবে।তাই চুপ থাকলাম।নিজেকে প্রস্তুত করলাম মায়ের খুনি বের করার জন্য।
আলফাজ,পাপ,এইসবকিছু নিয়ে মোটামুটি সারাদিন আমি ইনভেস্টিকেশন শুরু করলাম।মায়ের সমস্ত তথ্য জানা আমার জন্য বেশ জরুরি হয়ে উঠেছিলো।লাল ডায়েরির প্রতিটি পৃষ্ঠা তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম।ডায়েরির শেষ পাতার দিকে পেলাম নতুন তথ্য,,,,,
“যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসলাম,সেই আমাকে হত্যার পরিকল্পনায় ব্যাস্ত।অবশ্য
পাপ কখনো কাউকে ছাড়ে না।আমাকেও ছাড়বে না প্রকৃতি প্রতিশোধ নিবেই।আমি বুঝতে পেরেছি,আমার সেইদিন খুব কাছে চলে এসেছে”
ষষ্ঠ পর্ব
আজ আমি খিদিরপুর এসেছি।গ্রামটা বেশ সুন্দর। গ্রামের পাশ দিয়ে নদী বয়ে গেছে। এই প্রথম আমি গ্রামটিতে আসলাম। রাফি একমাসের বিজনেস প্রজেক্টে শহরের বাইরে গেছে।এটাই একমাত্র সুযোগ। রহস্যের গন্ধ শুকতে শুকতে রাহাকে নিয়ে আমি রাফির নানিবাড়ি চলে আসলাম।
রাফির মুখে কয়েকবার এই গ্রামের নাম শুনেছি।ও নাকি ছোটবেলায় প্রায়ই এখানে মায়ের সাথে আসতো।গ্রামে ঢুকে এক মহিলাকে দেখলাম,আমার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মহিলা মধ্যবয়স্ক।কোলে একটা বাচ্চা। কিন্তু বাচ্চাটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই ছেলে না মেয়ে। চুলগুলো বড় বড় অথচ ছেলের পোশাক পরা।আমি ভদ্রমহিলার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,”এই যে চাচি,জমিদার বাড়িটা কি একটু দেখিয়ে দিবেন?
-তুমি এহানে নতুন আইসো?
-ইয়ে,,জ্বি চাচি।আমি এর আগে এখানে আসিনি।
-তো জমিদার বাড়ি যাইবা ক্যান?
-একটু দরকার ছিল। তাছাড়া জমিদার বাড়ির মেজো মেয়ে রাবেয়ার ছেলের বউ আমি।
-ও তাই বেড়াতে আইছো?
-হ্যা,চাচি।আপনি আমাকে একটু সাহায্য করুন।
-হ,করমু।চলো আমার লগে।আমি তোমারে জমিদার বাড়ি নিয়া যাইতাছি।
আমি চাচিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার পিছুপিছু হাঁটতে লাগলাম।
-রোকেয়ার ছেলেডা কি তোমাগো লগেই থাকে?
-ইয়ে মানে,চাচি, আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
-ক্যান?কি যেন পোলাডার নাম?হ,মনে পড়ছে।রোকন
ও কোনখানে থাকে?
-রোকন ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে ঢাকায় থাকে।কিন্তু আপনি তাকে রাবেয়ার ছেলে না বলে রোকেয়ার ছেলে বললেন কেন?
-ওমা,রোকেয়ার পোলারে তো রোকেয়ার পোলাই কমু।
-কি বলেন?রোকেয়া আবার কে?রোকন কি রাবেয়ার ছেলে না?
-এ মাইয়া তো দেহি কিছুই জানে না।
-ইয়ে চাচি,আমাকে এগুলো ভালো করে বললে খুব খুশি হব।
-ওহ,তার মানে তুমি এগলা বিষয়ে কিচ্ছু জানো না। শোনো,রোকেয়া হইল জমিদার বাড়ির বড় মাইয়া।রাবেয়ার বড় বোন।হের সাথে পাশের গেরামের চৌধুরী সাবের পোলা আলতাফ চৌধুরীর বিয়া হইল।তারপর তেনাগো ফুটফুটে এক পোলা হইল।কিন্তু ভাগ্য ভালা না গো
-চাচি,থামলেন কেন?বলুন,তারপর কি হলো?
-তারপর রোকেয়া হঠাৎ মরল।রোকেয়া আমার বয়সী ছিল।ছোটবেলায় একসাথে খেলছি।এহনো ওর কথা মনে পড়লে চোখে পানি আসে গো মা।
আশ্চর্য এই বিষয়গুলোর কিছুই আমি জানি না। ভারী আশ্চর্যের বিষয়।
এসব বলে ভদ্রমহিলা বড় করে একটি নিঃশ্বাস ফেললেন
তারপর আবার বলতে শুরু করলেন।
“তখন রোকেয়ার পোলাডা খুব ছোট।ওরে দেখাশোনার জন্য রাবেয়ারে আলতাফ বিয়া করল।কয়েকবছর পর রাবেয়ার আবার একখান সোনার টুকরা ছেলে হইলো।হেই তোমার স্বামী।
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।মাথা ভো ভো করছিলো।ব্যাপারটা তাহলে কি হলো?মা শুধু রাফির মা।রোকন ভাইয়ার মা না।তার মা অন্য কেউ ছিল।তিনি মারা গেছেন।
-মা,তোমার কোলে ঐডা কে?
-আমার মেয়ে চাচি,নাম রাহা।
-এক্কেবারে পরীর নাহান সুন্দরী মাইয়াডা।রাবেয়ার মত হইছে।
-হু,চাচী।রাফিও তাই বলে।
-রাফিটা কে মা?
-আমার মেয়ের বাবা
-ওহ,রাবেয়ার পোলা
-জ্বি চাচি।
এইসব খবর হঠাৎ শুনে আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না।মাথার ভিতরে ভো ভো করছিল।তারউপর সূর্যটা মনে হয়,একদম মাথার উপরে।কে জানে,কতদূর এই জমিদার বাড়ি।হাঁটছি তো হাঁটছিই।রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না।
-চাচি,আর কতদূর?
-এইতো আম্মা,চইলা আইসি।
এরআগেও ইনি কয়েকবার একই কথা বলেছেন।অর্থাৎ চইলা আইসি মানে আরও মিনিট দশেক হাঁটতে হবে।
নাহ,এবার মনে হয়,সেরকম হবে না।এইতো আমি দেখছি দোতলা দালান।এইটাই মনে হয় সেই জমিদারবাড়ি।
বাড়িতে ঢুকলাম। কয়েকজন মহিলা,বাড়ির উঠোনে বসে গল্প করছেন।আমি এদের কাউকেই চিনি না।এই ব্যাপারটাও অদ্ভুত।হ্যা,সত্যি রাফির মামাবাড়ির কাউকে আমি চিনি না।মা মারা যাওয়ার পর তারা গেছিলেন। সেই সময় আমি নববিবাহিতা বধূ।শাশুড়ীর আকস্মিক মৃত্যুতে
শক খেয়েছিলাম।তাই কারও দিকে সেভাবে লক্ষ করতে পারি নি।বাবার মৃত্যুর পর এ বাড়ি থেকে কেউ যায়নি।হয়তো কোন সমস্যা আছে।
“কিগো দুলালের মা,কারে আনছো?” ভদ্রমহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্কা বললেন।
-ক্যারে আনছি,ভালো করে দেহো দেহি?
সবাই একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলেন।কিন্তু কেউ আমাকে চিনলো বলে মনে হলো না।
-কিগো,মাইডারে কেউ চিনতাছো না?
এইবার অসাধারণ একটি ব্যাপার ঘটলো।আমার দিকে বাদ দিয়ে সবাই রাহার দিকে নজর দিল।অপলকভাবে রাহাকে দেখছে ওরা।একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। ফিসফিস করে কথা বলে।কিন্তু আমি সব কথাই শুনতে পাচ্ছি। কি আশ্চর্য, এভাবে কেউ ফিসফিস করে কথা বলে?এর থেকে স্বাভাবিকভাবে কথা বললেই ভালো হতো।
“মাইয়াডারে দেহো,রাবেয়া আপার মতো। এক্কেবারে রাবেয়া আপার মতো।”
অনেকখন পর,একজন মহিলা চেঁচিয়ে উঠলেন,ওমা,এতো রাবেয়া আপার পোলা রাফির বউ!!
যাক, আমাকে এরা চিনতে পেরেছে।আমি তো ভেবেছিলাম, চিনতেই পারবে না।দুপুরের ট্রেনেই বাড়ি ফিরতে হবে।কিন্তু না,আমাকে অবাক করে দিয়ে এরা আমাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকল।একজন রাহাকে কোলে নিলো।একজন আমাকে চেয়ার এগিয়ে দিল।একজন বাতাস করতে লাগল।বাহ!!চমৎকার তো।সত্যি, গ্রামের মানুষেরা চমৎকার।
ইনাদের কথা থেকে আমি আবিষ্কার করলাম,রাফির মোট চারজন মামা।চারজন মামার একট করে ছেলে ও একটি করে মেয়ে আছে। মজার ব্যাপার হলো,এরা সবাই একসাথে থাকে।অর্থাৎ যৌথ পরিবার।আজকাল তো এইরকম পরিবার দেখাই যায়না।কিন্তু এনাদের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতা নেই কেন?এটা ভেবে মনটা কেমন খচখচ করল।
আমি একটু অস্বস্তি বোধ করছিলাম।কিন্তু এরা সবাই ভীষণ মিশুক।কিছুখনের মধ্যেই আমাকে আপন করে নিলো।এমনভাব করতে লাগল,যেন আমি এদের বাড়ির মানুষ। বাহিরে বেড়াতে গেছিলাম, আবার ফিরে আসছি।দুপুরের দিকে খুব আদর করে আমাকে খাওয়ানো হলো।হরেক রকমের জিনিস।কোনটা রাখি,কোনটা খাই,বুঝতে পারছিলাম না।
বেশ খেলাম।আমার মনে হয়,এত খাবার আমি অনেক দিন এভাবে খাইনি।সবচেয়ে বড় কথা যত্ন।এমন যত্ন করে কেউ খাওয়ায় না।শিশুকালে বাবা মাকে হারিয়েছি।কলেজে পড়ার সময় ভাবতাম,আমার তো নতুন পরিবার হবে।সেখানে মা বাবা সবাই থাকবেন।আমাকে আদর করবেন।কিন্তু আমার ভাগ্যটা মনে হয় খারাপ। বিয়ের দিন শাশুড়ী মায়ের মৃত্যু। বিয়ের দুবছরের মাথায় বাবার মৃত্যু। বাবা মার যত্নটা কেন জানি আমার কপালে নেই।কিন্তু এখানে এসে বেশ ভালো লাগছে।
দুপুরের পর বড়মামা আর মেজোমামার সাথে দেখা হলো।তাদের বেশ বয়স হয়েছে।ধবধবে সাদা চুলদাড়ি। তবে দেখলেই বোঝা যাবে,এরা রাফির মামা।আমি বুঝতে পারলাম,এই মানুষদুটোও অসাধারণ। অমায়িক ব্যাবহার তাদের। বড়মামা তো রাহাকে কোলে নিয়ে কেঁদেই ফেললেন। কে জানে,হয়তো বোনের কথা মনে হয়েছিল!!
আমাকে বললেন, “মা তুমি এসেছো,কী যে খুশি হয়েছি আমরা।আসলে আমাদের বোনটা মরার পর ও বাড়িতে আর যাওয়ার ইচ্ছা করে না। ”
এটা কেমন কথা হলো।আমি বুঝতে পারছি ইনারা কিছু লুকাচ্ছেন।কিন্তু কি লুকাচ্ছেন?এঁদের আতিথিয়েতার কোন কমতি নেই।কাজেই কি লুকাচ্ছিলেন সঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
লাল_ডাইরী
শেষ পর্ব
যত দিন যাচ্ছে, রহস্য যেন ততই বেড়ে চলেছে।দুইদিন হলো আমাদের বিশাল বাড়িতে একজন নতুন অতিথি এসেছেন।অতিথি বলা মনে হয়,ঠিক হবে না।রাফির তার সাথে যে ভাব,তাতে পরিবারের সদস্যই বলা চলে।এমনও হতে পারে, এই লোককে রাফি এই বাসায় রেখে দিবে।সবই ভালো। তবে আমার কাছে একটা বিষয় অদ্ভুত লেগেছে।লোকটার নাম,আলফাজুল হক।তবে ইনিই কি সেই আলফাজ?যার নাম ছিল মায়ের ডায়েরিতে।
হতে পারে আবার নাও হতে পারে। রাফির সাথে এই লোকের এত ভাব কেন?এর আগে এই ভদ্রলোককে কখনো বাড়িতে আসতে দেখিনি।
আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছে। আজকাল লোকটার দিকে আমি বেশ নজর রাখি।ওনি মনে হয় তা আন্দাজ করতে পারেন।লোকটা বেশ মিশুক।রাহা তো দাদু দাদু করে অস্থির। আমার আবার ওত আদিখ্যেতা ভালো লাগে না।তবে আমি বুঝতে পারি, মানুষটা খারাপ না।আমার সাথে সহজ হয়ে উঠার বেশ চেষ্টা করেন।কিন্তু আমি কেনজানি একরোখা।লোকটির সাথে ঠিকমত কথা বলি না।
তবে কথা বলা খুব প্রয়োজন ওনার সাথে। আমাকে নিশ্চিত হতে হবে,এই লোক কি মায়ের ডায়েরির আলফাজ?
বেশিসময় লাগল না,আমি বুঝে গেলাম,ইনিই সেই আলফাজ? লোকটি মাঝে মধ্যে মায়ের ছবির সামনে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন।মায়ের বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখেন।
যাকে খুঁজছিলাম,তাকে বাড়িতে পেয়ে গেলাম।হয়তো রহস্য উদ্ঘাটন করা সহজ হয়ে গেল।আমি আলফাজ সাহেবের সাথে ইদানীং কথা বলি।মানুষটা বেশ ভালোই।ওনার সাথে ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করছি।একদিন কথা প্রসঙ্গে বললাম,আংকেল আপনি কি রাফির মা মানে আমার শাশুড়ী মাকে আগে থেকে চিনতেন?
প্রশ্ন শুনে মনে হয় ওনি অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন।কিছুখন ভেবে বললেন,”হ্যা,চিনতাম।”
-কীভাবে চিনতেন?
-রাবেয়া আমার কলেজ ফ্রেন্ড ছিল।
-ওহ আচ্ছা,তাই বুঝি মায়ের ছবিটা ওমন করে দেখেন।
-ভদ্রলোক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।সেই দৃষ্টিতে ছিল অনেক বিস্ময়।অনেক ভয়..
-তুমি কি বলছো,সঠিক বুঝতে পারছি না।
-ঠিক আছে আংকেল।না বুঝতে পারলে কিছু বলার নেই।
-এই তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
-ওমা? কীভাবে কথা বলছি আপনার সাথে?
-রত্না,সীমার মধ্যে থাকো।সবকিছুই সীমার মধ্যে সুন্দর।
-আপনি কে? যে আলতাফ চৌধুরীকে খু*ন করে তারই বাসায় এসে থাকছেন?
-কি কি?কি বলছো তুমি?
-কি বলছি,তা আপনি ভালো করেই জানেন।আপনি একজন খুনি।নিষাদ খু*ন করে নি।আপনি খু*ন করেছেন আমার শ্বশুরকে।
-হা হা হা।বললেই হলো।আমি কেন তোমার শ্বশুরকে খু*ন করব?আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই?
-কি কারণে মেরেছেন-তা আপনি ভালো করেই জানেন আলফাজ সাহেব।একের পর এক নাটক তৈরি করবেন আর সবাই আপনাকে ধোয়া তুলসীপাতা ভাববে?
-এই মেয়ে কী বলছো এসব?কি নাটক করলাম আমি?
-আলতাফ চৌধুরীকে খুন করে তারই বাসায় এসে ফেরেশতা সেজে আছেন।এটা কি আপনার নাটক নয়?
আলফাজ সাহেব খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছেন।তিনি ঘামছেন।
-শোনো,তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। যা জানো না,তা বলো না।
-শুনুন,আমি সব জানি।আমি খিদিরপুর গিয়েছিলাম।আপনার সম্পর্কে সব জেনে এসেছি।
-সেকি কথা!!তুমি খিদিরপুরও গিয়েছিলে?
-হ্যা,গিয়েছিলাম।আপনি এই বাড়িতে আসার আগেই আমি খিদিরপুর গিয়েছিলাম। আপনি তো খিদিরপুরের ছেলে,তাই না?
-তুমি তো দেখছি ভারী চমৎকার মেয়ে।আমার পুত্রবধূর তো এমনই হওয়া উচিত।
-কি কি বললেন আপনি?
-তুমি ভুল শোনো নি মা।যা শুনেছো,ঠিকই শুনেছো।রাফি আমারই ছেলে।
-কি আজেবাজে কথা বলছেন?
-না মা।আমি মোটেও আজেবাজে কোন কথা বলিনি।
আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না।আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।কি শুরু করেছে এরা?
এরপর লোকটি অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন।রীতিমত কাঁপতে শুরু করলেন।এরপর লোকটা বাইরে গেলেন।গেলেন তো গেলেনই।আর ফিরলেন না।এদিকে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজ হয়ে গেল।
মামাবাড়িতে রাহাকে নিয়ে আমি চারদিন ছিলাম।তবু আসার দিন ওনারা তো কোনমতেই আসতে দেয় না।কিন্তু আসতে তো হবেই।রাফিকে অবশ্য জানিয়েছিলাম। সেতো প্রথমে শুনেই অবাক হয়েছিলো।একটু রাগও করেছে বটে।কিন্তু আমি ওসবকে পাত্তা দিই না।যে উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিলাম,তা অনেকটাই সফল হয়েছে।চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।আলতাফ চৌধুরীর দুইছেলে একই মায়ের না।
এই বিরাট সত্য এই চৌধুরী পরিবার আমার থেকে গোপন রেখেছে।অথচ আমাকে এই বিষয়ে জানানো তাদের উচিত ছিল।অন্তত রাফি বলতে পারতো।যাইহোক,অনেক বড় বিষয় জানতে পারলে ছোট বিষয়গুলোর দিকে নজর থাকে না।মানুষ সবসময় বড় কিছু চায়।
আমারও এ বিষয়টা নিয়ে তেমন ভাবনা নেই।কারণ বিষয়গুলো এখন আমার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।মায়ের ডায়েরিতে পড়েছিলাম,”যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসলাম,সেই আমাকে হত্যার পরিকল্পনায় ব্যাস্ত।
অবশ্য পাপ কখনো কাউকে ছাড়ে না।আমাকেও ছাড়বে না প্রকৃতি প্রতিশোধ নিবেই।আমি বুঝতে পেরেছি,আমার সেইদিন খুব কাছে চলে এসেছে”
আবার মামারা চৌধুরী পরিবারের উপর যেকোনো কারণেই নারাজ।মায়ের মৃত্যুর পর তারা কখনো এমুখো হননি।এমনকি বাবা মারা গেলেও তারা আসেননি।এর রহস্যটা কি?
অর্থাৎ বাবার প্রতি ওদের যথেষ্ট ঘৃণা ছিল।কেননা মৃত্যুর পরেও একজন মানুষকে দেখতে না আসা,তার পরিবারের পাশে না থাকা ঐ ব্যক্তির প্রতি ঘৃণাকে নির্দেশ করে।
একদিন এইব্যাপারগুলো রাফির থেকে জানতে চাইলাম।কিন্তু আগেই বলেছি।তার স্বভাব ভালো না।খুব চাপা টাইপ।মোটেও মনখুলে কথা বলতে জানে না।এজন্য মাঝে মধ্যে ওর উপর ভীষণ রাগ হয়।
তাই ওকে না জানিয়েই আমি সব সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছি।পুরো ব্যাপার থেকে যা বোঝা যাচ্ছে, তা মেনে নেওয়া খুব কষ্টের।মায়ের খুনী বাবা। হ্যা এটাই সত্য।
এই হত্যার পিছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে।এই লুকিয়ে থাকা তথ্যটা আলফাজ সাহেব দিয়ে দিলেন।সব জলের মত স্বচ্ছ হয়ে গেল।কিন্তু এর মধ্যেও একটা ব্যাপার আছে।মা কি পাপ করেছিলেন?এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলো লাল ডায়েরী।
ওখানে স্পষ্ট ভাবে লিখা আছে,”আজ আমি জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ করলাম।জানি না এ পাপের শাস্তি কি?”
তাং০৯-০৩-৯৮
এই তারিখ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করলাম।পুরনো তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করলাম।অবশেষে যা পেয়েছি,তা সত্যি খুব খারাপ বিষয়।রোকনের মা মানে রোকেয়ার আকস্মিক মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না।তাকেও হত্যা করা হয়েছিল।তাকে হ*ত্যা করেছিল আমার শাশুড়ী। হুম কথা ঠিক। কারণ এই নয়ই মার্চ, আটানব্বই শালেই জমিদার বাড়ির বড় কন্যা রোকেয়ার মৃ*ত্যু হয়েছিল।আবার এইদিনই আমার শাশুড়ী তার ডায়েরিতে ঐ মারাত্মক কথা লিখেছিলেন।
কারণ তিনি নিজেই তার বোনকে মেরে*ছিলেন।তার উদ্দেশ্য ছিল রোকনের বাবা আলতাফ চৌধুরীকে বিয়ে করা।আমার শাশুড়ী বেশ চালাক ছিলেন।ওনি জানতেন, বোনের মৃ*ত্যুর পর রোকনের জন্য হলেও চৌধুরী সাহেব তাকেই বিয়ে করবেন।
কয়েকদিন পরই তার উদ্দেশ্য সফল হয়।এদিকে খিদিরপুরে জমিদার বাড়ির লজিন মাস্টার ছিলেন আলফাজ সাহেব। তার সাথে জমিদার বাড়ির মেজো মেয়ে রাবেয়ার সখ্যতা গড়ে উঠে।শুধু সখ্যতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।আলফাজ সাহেবের মুখ দিয়ে সব কথা আমি বের করে নিয়েছি।চৌধুরী সাহেবকে বিয়ে করার আগেই তারা লুকিয়ে বিয়ে করেন।কিন্তু আমার শাশুড়ী ছিলেন খুব লোভী মহিলা।স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন।
তাই নিজের বোনকে মা*রলেন। চৌধুরী সাহেবকে বিয়ে করলেন।আলফাজ সাহেবকে ভুলতেও তার বেশি সময় লাগল না।চৌধুরী সাহেবের সাথে বিয়ের একবছরের মাথায় রাফির জন্ম হলো।আলফাজ সাহেবের মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কথা থেকে বোঝা গেল-রাফি চৌধুরী সাহেবের না,আলফাজুল হকের ছেলে।কিন্তু এই কথা চৌধুরী সাহেব জানতেন না।অনেক বছর পর চৌধুরী জানতে পারলেন,”রোকেয়াকে রাবেয়া মে*রেছে।তাও আবার চৌধুরীকে বিয়ে করার জন্য। “আলতাফ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রী রোকেয়াকে ভীষণ ভালোবাসতেন।
তাই তেইশ বছর পর তিনি রোকেয়ার হ*ত্যাকারীকে শাস্তি দিতে চাইলেন।সঙ্গে নিলেন ছেলে রোকনকে।হুম,রোকন আর আলতাফ চৌধুরী মিলে রাফির বিয়ের দিন মাকে হত্যার নকশা করলেন। মা কীভাবে যেন সব আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তাই ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। চৌধুরী বাড়িতে ছেলের বিয়ের দিন শত শত মানুষের মাঝেও তিনি ভাইদের সাথে কথা বলেছিলেন। ভাইদের বলা তার শেষ কথা ছিল,” হয়তো আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।
তোরা আর আসিস না।কখনো আসিস না এ বাড়িতে। মনে রাখবি,আলতাফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেন একটা কথাও উচ্চারিত না হয়।’সে সময় আমার শাশুড়ীর কথায় কেউ পাত্তা দেয় নি।কিন্তু সত্যি সত্যিই আমাদের বিয়ের দিন মা মারা গেলেন। মামারা বুঝে গেলেন, মায়ের কথা ঠিক ছিল।কিন্তু বোনের শেষ কথাকে মেনে নিয়ে মামারা কিছুই করলেন না।তারা চৌধুরী বাড়ির সাথে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেন।মাঝখান থেকে রাফি মাকে হারালো।সে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেল।
আমি এতদিন রাফিকে ভীতুর ডিম ভেবে এসেছি।কিন্তু আজ যখন সব সত্য জানলাম,তখন সহজেই বুঝে গেলাম।রাফি গভীর জলের মাছ।মায়ের হত্যার প্রতিশোধ সে ঠিকঠাক মতোই নিচ্ছে।আলতাফ চৌধুরীর হত্যার পেছনে নিষাদ নামে ছেলেটার কোন হাত নেই।এর মূল ছিল রাফি।
আলফাজ সাহেবের সাথে পরিচয় হওয়ার পর সে বুঝেছিল,আলতাফ চৌধুরীই তার মার হ*ত্যাকারী।তাই নিজের পিতা হিসেবে জানা লোকটিকে সে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।সাথে অবশ্য আসল বাবা আলফাজ সাহেবকেও পেয়েছিল।কে জানে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো রাফি রোকনকেও মা*রবে!!!!
( লাল_ডাইরী – এক অতৃপ্ত আত্মার রহস্য উন্মোচন গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
Leave a Reply