হঠাৎ জ্বীন – ভয়ানক জিনের গল্প

হঠাৎ জ্বীন

লেখকঃ গালিব আবরার

 

একটা বাচ্চা মেয়েকে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে জঙ্গলেের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একজন লোক। লোকটার মাথায় একটা শীতের টুপি। আর গায়ে একটা ময়লা জীর্ণ শীর্ণ চাদর পেঁচানো। অথচ এখন গ্রীষ্মের তীব্র গরমে মানুষ পাগল প্রায়।

বাচ্চা মেয়েটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার সাথে হেঁটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো মেয়েটাকে কিছু একটা বশ করে রেখেছে। মেয়েটার বয়স আনুমানিক ৭-৮ বছর হবে।

হাঁটতে হাঁটতে লোকটা মেয়েটাকে নিয়ে জঙ্গলের অনেক গভীরে একটা পরিত্যক্ত গ্রামের মাঝে চলে আসলো। এখানকার বাড়িঘর গুলো ছনের তৈরি অনেক পুরনো। মানুষগুলোও খুব অদ্ভুত এবং ভয়ংকর।

সবার চেহারার মাঝে একটা হিংস্র মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে গ্রামে কোনো বাচ্চা নেই। সবার বয়স-ই ষাটোর্ধ।

ঐ লোকটা বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে গ্রামে আসার পর সবাই বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর ভাবে হাসছে। শিকারী যেমন শিকার সামনে দেখে খুশি হয় তেমন-ই এই গ্রামের মানুষ গুলোর চেহারায় এক অতৃপ্ত পিপাসা জেগে উঠেছে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে।

এক এক করে সবাই ঐ লোকটা আর মেয়েটার পিছনে হাঁটতে লাগলো আর সবাই একসাথে অদ্ভুত একটা মন্ত্র পড়তে লাগলো গুনগুন করে।

তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে। তারা সবাই একটা জায়গায় গিয়ে সমবেত হলো। চারদিকে আগুনের মশাল জ্বালানো। গ্রামের সব মানুষ সেখানে গিয়ে গোলাকার হয়ে বসে পড়লো।

বাচ্চা মেয়েটা নিজে নিজেই গিয়ে তাদের ঠিক মাঝখানে শুয়ে পড়লো।

শীতের টুপি পড়া লোকটা মেয়েটার মাথার কাছে বসে হাতে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে সেটাতে চুমু খেলো। তারপর অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে কিছু মন্ত্র পড়তে লাগলো। গ্রামের সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে বাচ্চা মেয়েটার দিকে।

ঐ লোকটা মন্ত্র পড়া শেষে মেয়েটার চোখ থেকে কালো কাপড়টা খুলে দিলো। এবার মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে চিৎকার করে সেখান থেকে উঠে যেতে চাইলো। কিন্তু চারজন এসে মেয়েটাকে শক্ত করে ধরে আবার সেখানে শুইয়ে দিলো।

মেয়েটা কান্না করতে করতে বললো ” আমি আমার মায়ের কাছে যাবো। আমার খুব ভয় করছে। আপনারা কারা!

সেখানে থাকা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। মেয়েটার কাকুতিমিনতি যেনো তাদেরকে এক পৈশাচিক আনন্দ দিচ্ছে। হঠাৎ ঐ লোকটা ছুরি দিয়ে মেয়েটার গলা কেঁটে ফেললো।

সাথে সাথে সবাই চুপ হয়ে গেলো। মেয়েটার কাকুতিমিনতিও বন্ধ হয়ে গেলো এক নিমিষেই। একটা বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এসে হাত পাতলো সামনে।

শীতের টুপি পড়া লোকটা মেয়েটার দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে বৃদ্ধ লোকটার হাতে তুলে দিলো। বৃদ্ধ কাঁটা মাথা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা পরিত্যক্ত কুঁড়েঘরের সামনে নিয়ে রাখলো।

কিছুক্ষণ পর আচমকা এক ভয়ংকর রূপি বৃদ্ধা মহিলা কুঁড়েঘর থেকে বের হয়ে মাথাটা নিয়ে আবার ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলো!

একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। স্বপ্নটা ছিলো একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে বাঁচার জন্য আকুতি করছে। আমি তাকে বাঁচানোর আগেই পিছন থেকে একটা হাত এসে বাচ্চটাকে টান দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।

আর আমার ঘুম ভেঙে যায় তখন। উঠে দেখি আমি আমার রুমে। চারদিক টা কেমন এক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে। পাশের রুম থেকে মায়ের কোরআন পড়ার শব্দ আসছে।

মা সূরা জ্বীন তেলওয়াত করছে। কিন্তু এতো সকালে মা সূরা জ্বীন কেন তেলওয়াত করছে। বিষয় টা বুঝার জন্য আমি ধীরে ধীরে উঠে মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।

হঠাৎ জ্বীন

হঠাৎ করেই কোরআন তেলওয়াজন্য আমি গেলো। আমি মায়ের রুমে গিয়ে দেখলাম মা এখনো ঘুমিয়ে আছে। তাহলে এতক্ষণ কোরআন তেলওয়াত করছিলো কে।

বিষয়টাকে মনের ভুল ভেবে আমি উল্টো ঘুরে যখন মায়ের রুম থেকে বের হতেই যাবো তখন-ই বিভৎস চেহারার এক বৃদ্ধা মহিলা এসে আমার মুখ চেপে ধরলো সামনে থেকে।

আমি আবার ঘুম থেকে উঠে গেলাম। মানে আমি স্বপ্নের মাঝেই ঘুম থেকে উঠে আবার স্বপ্ন দেখেছি। এবার আমি সত্যিই ঘুম থেকে উঠেছি কি না সেটা চেক করার জন্য নিজের গালে জোরে একটা থাপ্পড় দিলাম।

অনেক ব্যাথা পেয়ে বুঝলাম সত্যিই এবার ঘুম ভেঙেছে আমার।

আবার আমার কানে ভেসে আসলো মায়ের কন্ঠে কোরআন তেলওয়াত। কিন্তু এবার মা সূরা ইয়াসিন তেলওয়াত করছিলো। আমার মায়ের কোরআন তেলওয়াত ছিলো খুব-ই সুন্দর এবং শ্রুতিমধুর।

মায়ের বাবা মানে আমার নানা ছিলো বড় একজন আলেম। আমার নানার কাছ থেকেই মা এতো সুন্দর করে তেলওয়াত শিখেছে।

আমি উঠে ধীর পায়ে মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। এটাও কি আমার স্বপ্ন নাকি সত্যি। গিয়ে দেখলাম মা জানালার পাশে বসে কোরআন তেলওয়াত করছে এক মনে। এবার একটু শান্ত হয়ে আমি চুপ করে গিয়ে মায়ের পাশে বসলাম।

মা আমাকে দেখে তেলওয়াত শেষ করে কোরআন মাজীদ বন্ধ করে তাতে চুমু খেয়ে তাকের ওপর রেখে বললো ” কি ব্যাপার মহারাণী। আজকে এতো সকালে চাঁদ মুখখানার দর্শন পেলাম যে!

আমি বললাম ” আমি আবার সেই স্বপ্নটা দেখেছি মা। একটা বাচ্চা। একটা ভয়ংকর দেখতে বৃদ্ধা মহিলা!

মা এটা শুনে একটু চিন্তিত হয়ে বললো ” ওসব কিছু না। স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়। বাস্তব দুনিয়ার সাথে স্বপ্নের দুনিয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। এসব নিয়ে চিন্তা করিস না!

আমি বললাম ” কিন্তু মা ছোটবেলা থেকে এই একই স্বপ্ন বারবার দেখা কোনো স্বাভাবিক বিষয় না। আমার কেন জানি মনে হয় তুমি আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে রেখেছো। কিছু তো গোপন করছো যেটা আমাকে ভাবতে বাধ্য করে!

মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো ” মানুষের মাথার মস্তিষ্কের ওজন মাত্র ১৪ গ্রাম হয়ে থাকে। এই ১৪ গ্রামের মস্তিষ্ক প্রতিদিন ৬ হাজার চিন্তাধারা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে।

তার মাঝে সেভ করে রাখতে পারে মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ চিন্তা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যায় মস্তিষ্ক থেকে। আর ঐ সেভ করে রাখা ১০ শতাংশ চিন্তাই মানুষকে ভালো থাকতে দেয় না।

কিন্তু মানুষ চাইলে ঐ ১০ শতাংশ চিন্তা নিজে থেকেই ডিলিট করতে পারে হাসিখুশি থাকার মাধ্যমে। সেটা সবাই পারে না। আমি চাই তুই এসব চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ।

যখন-ই কোনো খারাপ চিন্তা তোর মাথায় ঝেকে বসবে তুই ভাববি এখনো তোর মা বেঁচে আছে। আর তোর মা বেঁচে থাকতে তোর কোনো ক্ষতি সে হতে দিবে না!

এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে মা কিচেনে চলে গেলো নাস্তা বানাতে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতি মেয়ে। কারণ এমন একজন মা পেয়েছি আমি।

আমার নাম হিশমা। আমি জার্নালিজম বা সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমার অনেক ইচ্ছে সাংবাদিক হয়ে মানুষের সামনে সমাজের কালো সত্যগুলো তুলে ধরা।

আমাদের এই বাইরের চোখে দেখা সুন্দর সমাজের মুখোশের আড়ালে এমন কিছু সত্য ধামাচাপা পড়ে যায় যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। আমি সেই নির্মম সত্যগুলো মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো!

আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের সাথে মারিয়াম নামের একটা মেয়ে পড়তো। মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা ছিলো। মারিয়ামের মা বাসায় বাসায় কাজ করতো কারণ মারিয়ামের বয়স যখন ৫ বছর তখন তার বাবা হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়।

তাকে আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি। সেই থেকেই মারিয়াম একটু অন্যরকম স্বভাবের হয়ে গিয়েছে। কারো সাথে মিশে না। সবসময় একা একা থাকে। আমরা সবাই ওকে ভূত বলে খেপাতাম।

কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই নবনির্মিত একটা ভবনে মারিয়ামের নগ্ন মৃতদেহ পাওয়া যায়। পোস্ট মর্টেমে জানা যায় প্রথমে ধর্ষন তারপর খুন করা হয়েছে মারিয়ামকে।

সবাই জানতো এটা কে করেছে কিন্তু এমপির ভয়ে সেদিন কেউ মুখ খুলে নি। এমপির বখাটে ছেলে বাবলু মারিয়ামের পিছনে অনেকদিন থেকেই ছিলো। মারিয়ামরা গরীব হওয়ায় সেদিন এর বিচার পায় নি।

পুলিশ এবং মিডিয়াকে টাকা দিয়ে সেদিন চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেদিন থেকেই আমি শপথ করেছিলাম সাংবাদিক হয়ে এসব ভালো মানুষের মুখোশ পড়া অমানুষ গুলোর আসল চেহারা ফাঁস করে দিবো আমি!

মা ডাক দিয়ে বললো ” হিশমা তুই এখনো রেডি হস নাই কেন। আজকে না তোর পরীক্ষা আছে একটা। টেবিলে নাস্তা রাখা আছে। খেয়ে নে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকছি!

মায়ের ডাক শুনে আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। সোজা চলে গেলাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হাদিদ-দের বাসায়। হাদিদও আমার সাথে জার্নালিজম নিয়ে পড়ছে। আমাদের আরেকজন বেস্টফ্রেন্ড আছে যার নাম রাহা।

রাহা একটু আগে কল করে বলেছে ও ভার্সিটিতে পৌঁছে গেছে। আমি হাদিদকে নেয়ার জন্য ওর বাসায় এসেছি।কলিং বেল চাপতেই হাদিদের আম্মু দরজা খুলে আমাকে দেখে এক গাল হেসে বললো ” হিশমা আয় মা। দেখতো কতক্ষণ ধরে হাদিদকে ডাকছি। এখনো উঠছে না ঘুম থেকে। এখন তুই-ই পারবি ওকে জাগাতে!

আমি হেসে বললাম ঠিক আছ আন্টি আমি দেখছি। এই বলে বাসায় ঢুকে হাদিদকে কল দিলাম আন্টির সামনে। হাদিদ ঘুম ঘুম চোখে কল উঠিয়ে বললো ” হ্যাঁ হিশমা আমি পথেই আছি। ৫ মিনিটের মাঝে আসছি!

আমি বললাম ” হারামি আমি তোর বাসায়। আর তুই এখন কম্বলের নিচ থেকে ফোন উঠিয়ে বলতাছোস তুই পথে আছিস!

আন্টিও হেসে দিলো তার ছেলের এমন ডাহা মিথ্যা কথা শুনে!

হাদিদ লাফ দিয়ে উঠে বললো ” তুই আমার বাসায় চলে এসেছিস আগে বলবি না। তুই ২ মিনিট ওয়েট কর আমি ১০ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি!

আমি হাসতে হাসতে সোফায় বসে ফেসবুকিং করতে লাগলাম। একটুপর হাদিদ রেডি হয়ে তার রুম থেকে বের হয়ে বললো ” তাড়াতাড়ি চল। তোর জন্য প্রতিদিন দেরি হয়!

আমি একটু রাগান্বিত ভঙ্গিতে বললাম ” আর একটা কথা বললে তোর মুখ ভেঙে দিবো আমি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বলা হয় আমি পথে আছি। আমার মনে হয় সাংবাদিক না হয়ে আমি পুলিশ হলে ভালো হতো। থানায় নিয়ে তোরে ডিম থেরাপি দিতে পারতাম।

হাদিদ বললো ” তুই আমারে ডিম থেরাপি দিতে আইলে আমি মনে হয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষতাম।

আমি বললাম ” তুই কি করতি!

হাদিদ বললো ” আমি দৌড় দিতাম খিচ্চা!

এবার আমি হেসে দিলাম। আন্টি বললো ” তোরা কি এখন দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি নাকি ভার্সিটি যাবি। তোদের না আজকে কি একটা প্রাক্টিকাল পরীক্ষা!

আমরা দুজনেই তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে। ভার্সিটি গিয়ে দেখি রাহা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ক্যান্টিনে।

আমরা এগিয়ে যেতেই ডজন খানেক কথা শুনিয়ে দিলো দেরি করার জন্য। আমরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর কথা শুনে শেষে বললাম ” তোর বয়ান শুনে আমার হাসি চলে আসছে দোস্ত। অনুমতি দিলে একটু হাসবো!

রাহা আরো রেগে গিয়ে বললো ” ধূর তোদের সাথে আর কথা-ই বলবো না। সব সময় ফাজলামো।

হাদিদ বললো ” আচ্ছা এখন তাড়াতাড়ি চল। স্যার আমাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে। কি একটা প্রাক্টিকালের কথা বলছিলো গতকাল!

রাহা বললো ” স্যার কখন চলে গেছে আমাকে প্রাকটিকাল বুঝিয়ে দিয়ে। এই জন্যই তো তোদের ওপর রাগ হচ্ছে অনেক। পরীক্ষা জানা সত্বেও কেউ এতো দেরি করে আসে নাকি। স্যার তো আমাদের আব্বা না যে আমাদের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করবে!

আমি আর হাদিদ দুজনেই মন খারাপ করে একটা টেবিলে বসে পড়লাম। রাহা এসে বললো ” হয়েছে এখন পেঁচার মতো মুখ করে বসে থাকলে হবে না।

স্যার বলেছে আমাদের তিনজনকে এমন একটা নিউজ কভার করে আনতে হবে যাতে সে বুঝতে পারে আমরা জার্নালিজমের জন্য সম্পুর্ন প্রস্তুত।

এটা শুনে আমরা খুশি হলেও পরে ভাবতে লাগলাম এমন কি নিউজ কভার করবো যাতে স্যার ইমপ্রেস হয়ে যাবে।

ভাবতে ভাবতে রাহা বললো ” আমি একটা নিউজ জানি। কয়েক বছর আগে জঙ্গলের ধারে রাস্তায় একটা নগ্ন মহিলাকে আধমরা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো।

মহিলাটার নাম ছিলো শিফানা। ডাক্তাররা যখন তার চিকিৎসা করছিলো তখন তার ভয়ংকর আক্রমণে একজন ডাক্তার এবং নার্স মারা গিয়েছিলো। সে স্বাভাবিক ছিলো না একদম। হিংস্র পশুর মতো ছিলো আচরণ। তাই তাকে মেন্টাল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে এখনো।

এটা দুনিয়া থেকে সম্পুর্ন ভাবে গোপন করা হয়েছে। ঐ মেন্টাল হসপিটালে আমার দুঃসম্পর্কের এক চাচা চাকরি করে। আমি তার কাছ থেকেই শুনেছিলাম এই ঘটনা।

এখন আমরা যদি শিফানা নামের ঐ হিংস্র মহিলার জবানবন্দি নিয়ে একটা নিউজ কভার করতে পারি তাহলে এটা নিশ্চয়ই স্যারকে ইমপ্রেস করবে।

রাহা’র কথা শুনে আমরাও রাজি হয়ে যাই। সত্যিই যদি কোনোভাবে শিফানা নামের ঐ মহিলার জবানবন্দি নিতে পারি তাহলে এটা হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেস্ট নিউজ কভার।

আমরা ঠিক করলাম আগামীকাল সেই মেন্টাল হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। হসপিটাল টা শহর থেকে অনেক দূরে একটা শুনশান গ্রামে অবস্থিত।

সেই গ্রামের নাম সৈয়দপুর। বাসে করে খুব সহজেই সেখানে যাওয়া যায়। তাই আমরা আগামীকাল সৈয়দপুর যাওয়ার জন্য তিনটা টিকেট কেটে নিলাম।

রাহা বললো ” এই নিউজটা কভার করা আমাদের জন্য মোটেও সহজ হবে না। যেহেতু তারা শিফানাকে দুনিয়া থেকে আড়াল করে রেখেছে তাই আমাদেরকেও দেখা করতে দিবে না।

আমি বললাম ” তাহলে তো এটা অনেক রিস্ক হয়ে যাবে আমাদের জন্য!

হাদিদ বললো ” আরে এসব রিস্ক না নিলে সাংবাদিক হওয়া যায় না। আর দেখ না আমি ডায়রিয়া হওয়া সত্ত্বেও এখানে বসে কয়েকবার গ্যাস বিস্ফোরণ করলাম।

তোরা কেউ বুঝতেও পারলি না। ডয়ারিয়া অবস্থায় গ্যাস বিস্ফোরণ করার চেয়ে বড় রিস্ক আর কি হতে পারে!

রাহা বললো ” ইইই খচ্চর যা এখান থেকে। মুখে কিছু আটকায় না তোর!

আমি বললাম ” ওর মুখে আটকাবে কেমনে। ও তো প্রতিদিন কোলগেট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে। তাই যা খুশি তা বলে দেয় হারামজাদা। দুইটা মেয়ের সামনে এসব বলতে লজ্জা করে না তোর!

হাদিদ বললো ” তোরা কি মেয়ে নাকি। মেয়েদের মতো দেখতে এক ধরনের বিরল প্রজাতির প্রাণী তোরা। তোরাও একদিন ডায়নাচোর-এর মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবি দেখিস!

রাহা বললো ” যা ভাগ এখান থেকে।

হাদিদ বললো ” আচ্ছা তোরা খাবার অর্ডার কর। আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি!

এই বলে হাদিদ চলে গেলে রাহা আমাকে বললো ” হিশমা চল আজকে হাদিদের সাথে একটা প্রাঙ্ক করি।

আমি বললাম ” কি রকম প্রাঙ্ক?

রাহা বললো ” হাদিদ তো ভীতুর ডিম। ভূতের কথা শুনলে কান চেপে ধরে। আজকে ওকে ভূতের সামনা সামনি করবো!

আমি বললাম ” আইডিয়া টা ভালো কিন্তু এই দিন দুপুরে  ভূত কোথায় পাবো?

রাহা নিজের চুলগুলো এলোমেলো করে ঠোটে লাল লিপস্টিক দিয়ে মেকআপ করে পুরো চেহারা সাদা করে একদম ইংলিশ হরর মুভির ভূতের মতো সাজলো। আমি তো দেখে পুরাই অবাক। রাহা’কে সত্যি সত্যি অতৃপ্ত আত্মার মতো লাগছে।

রাহা বললো ” হাদিদ এখনো ওয়াশরুমে। চল ওকে ভূতের দর্শন করিয়ে আসি!

এদিকে দেখা গেলো হাদিদ এখনো ওয়াশরুমে যায় নি। পিছনে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে হিশমা আর রাহা’র পুরো প্ল্যান শুনে হাসতে হাসতে বললো ” আয় আমাকে ভয় দেখাতে। আজকে ভূত কে আমি পানি তে চুবিয়ে মারবো!

এই বলে হাদিদ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গিয়ে রাহা আর হিশমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। হাদিদ বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো আর ভাবছিলো কিভাবে রাহা’কে ধরে উদুম কেলানো যায়।

তখনই আয়নার ভেতর থেকে টুক টুক করে শব্দ হলো দুইবার। হাদিদ একটু চমকে গিয়ে আয়নার দিকে তাকালো কিন্তু শব্দের উৎস খুঁজে পেলো না।

এরপর হঠাৎ করেই ওয়াশরুমের লাইটগুলো জ্বলতে নিভতে শুরু করলো। হাদিদ ভাবলো এগুলো নিশ্চয়ই হিশমা আর রাহা করছে তাকে ভয় দেখানোর জন্যই।

তাই হাদিদ একটু হেঁটে সামনে চলে গেলো কিন্তু দেখা গেলো আয়নার ভিতর থেকে হাদিদের প্রতিবিম্ব এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এটা হাদিদ খেয়াল করলো না।

হাদিদ একটু হেসে বললো ” রাহা আমি জানি এটা তুই করতাছোস। ভয় দেখানো বাদ দিয়ে আমার সামনে আয়!

হঠাৎ হাদিদের পিছনে একটা হাসপাতালের সাদা পোশাক পড়া মহিলা এলোমেলো চুলে এসে দাঁড়ালো। চুল দিয়ে তার মুখ ঢাকা৷

হাদিদ বুঝতে পারলো পিছনে কেউ আছে। সাথে সাথে তাকিয়ে দেখলো কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। হাদিদ ভাবলো এটা হয়তো রাহা। কিন্তু রাহা ভিতরে আসলো কখন। হাদিদ তো ওয়াশরুমের দরজার দিকে নজর রেখেছিলো।

তবুও হাদিদ বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে বললো ” রাহা আমি জানি এটা তুই। আর এটা ছেলেদের ওয়াশরুম। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।

এটা শুনে মহিলাটা কেমন যেনো গোঙানির মতো শব্দ করতে লাগলো।

হাদিদ বললো ” কি হইছে। খাবার হজম হয় নি। দেখ তোরা যে আমাকে ভয় দেখানোর প্ল্যান করছিস সেটা আমি জানি। এখন তোর এই বিচ্ছিরি মেকআপ ধুয়ে বাইরে আয়। আমি যাচ্ছি। কাল আমাদের সৈয়দপুর যেতে হবে। কেউ দেখার আগেই চলে আয়।

এই বলে হাদিদ বের হয়ে গেলো ওয়াশরুম থেকে। মহিলাটা ধীরে ধীরে ধোঁয়ার মতো হয়ে আয়নার মাঝে ঢুকে গেলো।

হাদিদ ক্যান্টিনে ফিরে এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। অবাক হয়ে দেখলো রাহা আর হিশমা ক্যান্টিনে বসে আছে এখনো। রাহা আজব রকম মেকআপ করে আছে। কিন্তু আমি তো রাহা’কে ওয়াশরুমে দেখে এলাম। ও এখানে আসলো কিভাবে!

হাদিদ ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বললো ” রাহা তুই তো আমাকে ভয় দেখানোর জন্য ওয়াশরুমে গিয়েছিলি। তাহলে এখানে কিভাবে আসলি!

রাহা এবং আমি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বললাম ” তোকে ভয় দেখানোর জন্য প্ল্যান করছিলাম কিন্তু যাওয়ার সময় রাহা’র জামা চেয়ারের আঁটকে অনেকটা ছিঁড়ে যাওয়াতে আমরা যাই নি। তুই কিভাবে জানলি আমরা তোকে ভয় দেখানোর জন্য যাচ্ছিলাম…!

হাদিদ বললো ” দেখ মজা করিস না। আমি এই মাত্র দেখে আসলাম রাহা ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানে এসে দেখি তোরা এখানে। কিভাবে করলি এটা!

রাহা এবং আমি দুজনেই হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললাম ” আজকে তাহলে মহারাজ সত্যি সত্যি ভূত দেখেছে। হবে হয়তো তোর কোনো এক্স। তাকে ধোকা দিয়েছিস তারপর সে আত্মহত্যা করেছে। এখন তার আত্মা তোকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে!

এই বলে আমরা দুজন হাসতে লাগলাম।

হাদিদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো ” দেখ ভাই আমি মজা করছি না একদম। সত্যি সেখানে তুই ছিলি। আমি দেখেছি তোকে। এখনো দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বাস না হলে চল আমার সাথে!

আমি বললাম ” চল রাহা। তাহলে আমরাও দেখে আসি হাদিদের কতো নাম্বার এক্সের আত্মা হাদিদকে ভয় দেখালো!

হাদিদ বললো ” মজা করিস না তোরা। এখন গেলেই বুঝবি আমি সত্যি বলেছি নাকি মিথ্যা।

আমরা তিনজন-ই গেলাম ওয়াশরুমে। গিয়ে দেখলাম কেউ নেই সেখানে।

হাদিদ বললো ” বিশ্বাস কর ঐ আয়নার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো সে। আমি নিজ চোখে দেখেছি!

আমরা এবারও হেসে বললাম ” হ্যাঁ বিশ্বাস করলাম ভাই। তুই তো ভাগ্যাবান ব্যাডা। ভূত দেখার সৌভাগ্য কয়জনের-ই বা হয়।

এই বলে আমরা আবার হাসতে লাগলাম ।

তখন-ই টয়লেট থেকে একটা ছেলে বের হলো প্যান্টের হুক লাগাতে লাগাতে।

বের হয়েই দুইটা মেয়ে দেখে আবার জিহবায় কামড় দিয়ে টয়লেটে ঢুকে গিয়ে ভিতর থেকে চিৎকার করে বললো ” এই আফা রা আপনারা ছেলেদের ওয়াশরুমে কি করছেন।

রাহা বললো ” ভাই আমরা ভূত দেখতে এসেছিলাম। দেখা হয়ে গেছে!

এই বলে আমরা দুজনেই হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। হাদিদ একটু চিন্তিত হয়ে আমাদের পিছন পিছন আসলো। হাদিদ কিছুই বুঝতে পারছে না এটা কি তার মনের ভুল ছিলো নাকি সত্যি।

সেদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম। মা’ কে বললাম ” আগামীকাল সকালে মেন্টাল হসপিটালে যাবো আমরা তিনজন একটা নিউজ কভার করার জন্য। এই নিউজটা কভার করতে পারলেই স্যার বুঝে নিবে আমরা সাংবাদিক হওয়ার জন্য সম্পুর্ন প্রস্তুত!

মা বললো ” নিউজ কভার করতে মেন্টাল হসপিটালে কেন। আর এই হসপিটাল টা কোথায়?

আমি বললাম ” মা রাহা এমন একজন হিংস্র পাগলের কথা জানে যাকে দুনিয়া থেকে গোপন করা হয়েছে।

আমরা তার জবানবন্দি নিতেই যাচ্ছি। আর এটা সৈয়দপুর নামে একটা গ্রামে অবস্থিত!

সৈয়দপুরের নাম শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো ” কোন সৈয়দপুর?

আমি বললাম ” শহর থেকে দূরে নাকি একটা জঙ্গল আছে। হসপিটাল টা সেই জঙ্গলের ধারেই শুনশান একটা জায়গায় অবস্থিত।

হঠাৎ জ্বীন

মা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো ” না হিশমা তুই সেখানে যাবি না। এ জায়গা টা মোটেও ভালো না।

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম ” কেন মা। তুমি কি চিনো নাকি সেই জায়গা!

মা বললো ” এতো কথা বলতে পারবো না। তোর সেখানে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তোরা অন্য কোনো নিউজ কভার কর। তবুও ঐখানে তোরা একদম যাবি না!

আমি বললাম ” মা কি হয়েছে। আমরা সকালে গিয়ে বিকেলে চলে আসবো। কিছু হবে না। আমার সাথে রাহ আর হাদিদও যাবে। আমি একা যাবো না তো।

মা আর কিছু না বলে চলে গেলো। মায়ের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আমি একটু অবাক হলাম। মা’কে এতোটা ভয় কখনও পেতে দেখি নি। সৈয়দপুরের নাম শুনে মা এমন করলো কেন। কিছুই বুঝলাম না।

আমি ব্যাগ গুছিয়ে রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মা আমার সাথে কোনো কথা বললো না। আমি কথা বললেও মা কোনো জবাব দিলো না। মায়ের এমন আচরণ মোটেও ভালো লাগছে না।

হঠাৎ মধ্যরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। মনে হচ্ছে আমার খাট যেনো কেউ নাড়াচ্ছিলো। ভূমিকম্প হয়েছে নাকি। তেমন কিছু না ভেবে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

কিন্তু আবার খাট ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। এবার আমি ভয় পেয়ে উঠে বসলাম। এবার স্পষ্ট অনুভব করেছি খাট নড়ে উঠেছে।

আমি খাট থেকে নামতে যাবো তখন-ই মনে হলো খাট আমার ফ্লোর থেকে কিছুটা ওপরে হওয়ায় ভেসে আছে। মনে হচ্ছে যেনো কেউ খাট উঁচু করে ধরে রেখেছে। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে জোরে চিৎকার করার সাথে সাথে খাট ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।

আমার চিৎকার শুনে মা দৌড়ে এলো আমার রুমে। এসে বললো ” কি হয়েছে হিশমা। চিল্লাইলি কেন!

আমি মা’কে সব বলার পর মা হেসে বললো ” এগুলো কিছু না। ঘুমের ঘোরে হয়তো ভুল দেখেছিস। ঘুমিয়ে যা কাল আবার সৈয়দপুর যেতে হবে তো সকালে উঠে!

আমিও মায়ের কথা মতো আবার শুয়ে থাকতে গেলে হঠাৎ আমার মনে পড়লো রুমের দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিলো তাহলে মা আমার চিৎকার শুনে রুমে আসলো কিভাবে।

এই ভেবে তাকাতেই দেখি মা নেই সেখানে। আরে এখানেই তো দাঁড়িয়ে ছিলো এইমাত্র।

আমি ভয়ে ভয়ে আবার খাট থেকে নামলে আমার চোখে গেলো জানালার দিকে। আমি সব সময় জানালা খুলেই ঘুমাই। আমার জানালার পিছনেই বড় একটা পুকুর আছে আমাদের।

আমি দেখতে পেলাম পুকুরের ঐ পারে একটা মহিলা আর একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানালার গ্রিল ধরে তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বাচ্চাটা এক হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে। মনে হচ্ছে বাচ্চাটা আমাকে কিছু বলতে চায়।

তখনই সাথে থাকা মহিলাটা এক টানে বাচ্চাটাকে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। আমি চমকে গিয়ে ভয়ে জানালা বন্ধ করে দরজা খুলে এক দৌড়ে মায়ের রুমে চলে গেলাম।

মা সবসময় দরজা খোলা রেখেই ঘুমায়। তাই দৌড়ে গিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে লাগলাম। এতদিন তো এসব স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু এখন বাস্তবেই হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আজকে অনেক ভয় পেয়েছি!

মা ঘুম থেকে উঠে বললো ” হিশমা কি হয়েছে তোর। এভাবে কাঁপছিস কেন। কি হয়েছে আমাকে বল!

আমি কোনো কথা না বলে শুধু কাঁপছিলাম আর মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছিলাম। মা আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে বললো ” থাক কিছু বলতে হবে না। হয়তো আবার সেই ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছিস। আমার সাথেই ঘুমা আজকে!

মা’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে। সকালে ঘুম ভাঙলো যথারীতি মায়ের কোরআন তেলওয়াত শুনে। আজকে অনেক স্পষ্ট ভাবে শুনছিলাম। কারণ আজতো আমি মায়ের রুমেই। রাতের ঘটনাগুলো এক এক করে মনে পড়তে লাগলো। স্বপ্ন ভেবে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম।

উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সকাল ৭ টা বাজে বাস আমাদের।

মা নাস্তা বানিয়ে এনে আমার সাথে টেবিলে বসে নাস্তা করলো। মা বললো ” আমি না করছি সেখানে যেতে। তবুও তুই যাবি সেখানে। আচ্ছা যা তবে সন্ধ্যার আগে আমি তোকে বাসায় দেখতে চাই।

আমি বললাম ” কোনো চিন্তা করবা না মা। আমি সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে আসবো। তুমি শুধু দোয়া করো নিউজটা যেনো ঠিকঠাক ভাবে কভার করতে পারি!

মা আমার কাছে এসে দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে দিলো। মায়ের চেহারায় অদ্ভুত এক চিন্তা ভর করে আছে  সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।

আমি নাস্তা শেষ করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। হাদিদ আর রাহা বাস স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছে আমাকে কল করে বললো। আমি একটা রিকশা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাস স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

তাকিয়ে দেখলাম মা দরজায় দাঁড়িয়ে আমার চলে যাওয়ার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।

আমি কি মা’কে দেয়া কথা রাখতে পারবো। সন্ধ্যার আগে কি বাসায় ফিরতে পরবো

 

 

{ আরো পড়ুন – দরজার ওপাশে

( হঠাৎ জ্বীন গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)