আবারো রবিবার!! – ছোট গল্প

আবারো রবিবার!!

আরিফা রৌদ্র

০৫.০২.২০২৩

সেই শীতের সকালে ছাঁদে গেছিলাম রোদ পোহাতে। হঠাৎ দেখি ছাদের কোণে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার নাম ইরা (পরে জানতে পেরেছি) তারা আজই তিন তলায় উঠেছে। ইরাকে দেখে আমার মনে হলো আগে কোথাও যেনো তাকে দেখেছি।

তার সাথে সেদিন ছাঁদে অনেক গল্প হলো। জানতে পারলাম, তার বাসাও নাকি নেত্রকোনায়। তাইতো ইরাকে দেখে চেনা মনে হচ্ছিলো। সে যাইহোক, মেয়েটা অনেক মিশুক। সময় পেলে আমার বাসায় আসতে বলে, ছাঁদ থেকে আমি চলে আসি।

বাসায় আাসার পর শরীরে জ্বর অনুভব করলাম। তাই অফিসে যাবো না বলে ঠিক করি। অফিসের কাজে ল্যাপটপ নিয়ে বসে যাই। হঠাৎ মনে হলো পিছন দিয়ে কেউ গেলো। তাকিয়ে কিছু দেখতে  পেলাম না। তবে আমি ছাড়াও রুমে অন্য কারোর উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতে হাত থেকে কলমটা পড়ে বিছানার নিচে চলে গেলো। হাতে নিতে গিয়ে যখন খাটের নিচে তাকালাম, একটা কালো কুচকুচে বিড়াল আমাকে খামচি দিয়ে জানালা দিয়ে দৌড়ে পালালো।

একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম। লক্ষ্য করলাম বারান্দায় কেউ দাড়িয়ে আছে।

– কে ওখানে ?

কোনো সাড়া নেই। যেয়ে দেখি কেউ নেই সেখানে। হয়তো মনের ভুল। এদিকে শরীরের জ্বরটা বেড়েই চলছে। একটু ঘুমিয়ে নিলে ভালো হবে, শুয়ে পড়লাম।

কলিং বেলে শব্দে ঘুম ভাঙে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রাত দশটা বেজে বায়ান্ন মিনিট। অদ্ভুত! এতোক্ষণ ঘুমালাম টের-ই পেলাম না। দরজা খুলে দেখি ইরা। এতো রাতে ইরাকে দেখে কিছুটা অবাক হই।  তবে ভালোই হয়েছে ও এসেছে।

আমি আর ইরা কিছুক্ষণ গল্প গুজব করলাম, এর মাঝে ওয়াশরুম থেকে কান্নার আওয়াজ শুনছিলাম। এটা ইরাকে বলার পর ইরা কিছু শুনতে পাচ্ছে না বলে জানায়। রুমে আমরা দুজন থাকা সত্বেও প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলাম। ইরাকে বললাম তুমি একটু বসো, আমার চোখে মুখে পানি ছিটানো দরকার। চোখে মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিলে দেখি, আমার বাম পাশে    সাদা জামা পড়া একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর গলা কিছুটা বাকানো। হাতের বড় বড় নখ গুলো থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে আর চোখ  দুটো সাদা, মণি নেই।

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি বাইরে বের হতে চাইলে মেয়েটা আমার গলা চেপে  ধরে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছিলাম নাহ। হঠাৎ খেয়াল করলাম কেউ নেই, আমি নিজেই আমার গলা ধরে আছি। আমি কি তাহলে ঘোরে ছিলাম?

 

{ আরো পড়ুন – জ্বীনের কবল থেকে আমিনুলের বেরিয়ে আসার সত্যি ঘটনা

 

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি আমার বিছানার উপর কালো বিড়ালটা বসে আছে। আমি ওটাকে তাড়িয়ে জানালা বন্ধ করতে যেয়ে দেখি সাদা জামা পড়া মেয়েটা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। ভয়ে জানালা থেকে দূরে চলে আসি। সহস করে আবার গিয়ে দেখি, কোথাও কেউ নেই। জানালাটা বন্ধ করে বিছানায় বসি। ইরাকে ডাকলাম কোনো সাড়া না পেয়ে, বারান্দায় দেখতে পাই, ইরা দাড়িয়ে আছে। ওকে ডাক দিতে যাবো তখনই কলিং বেল চাপার শব্দ।

এতো রাতে আবার কে এলো ভাবতে ভাবতে যখন দরজা খুলি, আমার চোখদুটো যেন কোটর ঠেলে বেড়িয়ে আসার জন্যে ছটফট করতে লাগলো।

দরজার বাইরে  ইরা দাঁড়িয়ে.. আমার দিকে তাকিয়ে  হাসছে।  সে বিদায় নিতে এসেছিলো। এতো রাতে সে কোথায় যাবে, আমাকে কেনো বলতে এসেছে এগুলো কিছু আমি জিগ্যেস করলাম  না।  বার বার ভাবছিলাম আগে তাহলে কাকে দরজা খুলে দিলাম!  কার সাথে এতোক্ষণ  কথা বললাম তাহলে বারান্দায় কে দাড়িয়ে ছিলে! আমার স্পষ্ট মনে আছে দু’বারই আমি ইরার জন্যে দরজা খুলতে গেছিলাম।

দরজা লক করে বিছানায় ধপ করে বসলাম। ভাবছিলাম কি হচ্ছে আমার সাথে! কেনো হচ্ছে?সত্যিই কি আমি ঘোরে ছিলাম? সিসিটিভি চেক করতে হবে তাহলেই বুঝা যাবে।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১২ :১৫

সকালে সিসিটিভি চেক করার জন্যে বাড়িওয়ালাকে কল দিলাম। তিনি বললেন এক-দু দিন পর যেতে। দু’দিন পর গেলাম, বাড়িওয়ালাকে সবটা ঘটনা বলার পর উনি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে রাজি হলেন না এ ঘটনা। এরপর বাড়িওয়ালা আন্টি আমাকে যা বলেন সেটার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

তিনতলায় নাকি দেড় বছর ধরে কেউ থাকেই না। ওখানে তালা ঝুলানো। আমার রিকোয়েস্টে উনি সিসিটিভি চেক করে বলেন, ”রবিবার তোমার ফ্ল্যাটে কেউ যায় নি, তুমি নিজেই দুবার করিডর ধরে হেঁটে গিয়েছিলে”

উনার কোনো কথার আওয়াজ আমি পাচ্ছিলাম না তখন। কানে শুধু একটা শব্দই বাজছিলো,  ‘রবিবার!’

২০১৫ এর দিকে স্বপ্নে দেখেছিলাম কেউ একজন আমাকে বলেছিলো ৪ বছর পর পর কোন একটা রবিবার আমার সাথে বাজে কিছু ঘটতে থাকবে। তাই খুব সাবধান!

১৯ সালের ঘটনাটা খুঁজতে গিয়ে দেখি সেটাও ঘটেছিলো রবিবার রাতে। সেদিন রাতে আমি যেই বডিটা দেখেছিলাম আর ওয়াশরুমে যে মেয়েটা আমার গলা চেপে ধরে ছিলো, সেটা আর কেউ না সেটা ইরা নিজেই যা ইরাকে দেখে “চেনা চেনা” লাগার কারণ।

 

 

( আবারো রবিবার!! – ছোট গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

 

আবারো রবিবার!!

” সমাপ্ত”