আ লেডি পেইন্টার – ছোট গল্প

আ লেডি পেইন্টার

লেখকঃ তিলোত্তমা সিদ্দিকী

 

দুদিন হলো নতুন রুমমেট এসেছে। আসতে না আসতেই হাজারটা প্রশ্ন। বিরক্তিকর। বাড়তি কথা খরচ।

“আপু, তুমি পেইন্টার? অনেক সুন্দর আঁকো কিন্তু। আমার একটা স্কেচ করে দিবা?”

মেয়েটা ভারী বেয়াদব তো! পরিচিত হওয়ার আগেই ‘আপনি’র বদলে তুমি!

এতো কথায় আমার কাজের ব্যাঘাত ঘটে। আঁকাআঁকিতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। পরে মেজাজ খারাপ হয়। মেয়েটা আবার বারবার আমার পেইন্টিংয়ের জিনিসপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। বিষয়টা মানা যাচ্ছে না। এটাও আমার বিরক্তির একটা কারণ।

– আপু, তোমার কী রঙ পছন্দ?

আমি কথা বলি না। প্রয়োজন বোধ করি না তাই। আমার প্রিয় লালরঙের শিশিটা হঠাৎ মেয়েটার কোলে উল্টে পড়ে। কাঁচের শিশিটা কোল থেকে গড়িয়ে অফ হোয়াইট টাইলস এর মেঝেতে কিছুক্ষণ ঘুরপাক খায়। গড় গড় শব্দ হয়; লাল লাল, ছোপ ছোপ দাগ বসে যায় ।

মেয়েটা বেয়াদব আগেই বলেছিলাম। সরি বলে মাফ চাওয়ার বদলে উল্টো বলে

– এঁএএএ মা বিচ্ছিরি! জামা পুরো নষ্ট হয়ে গেলো। লাল রঙ দেখলেই ঘিন্না ঘিন্না লাগে। একদমই অপছন্দের!

মেয়েটা শুধু বেয়াদব না। একই সাথে বাচালও। আমার আবার এমন মানুষ পছন্দ না।

আমি তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে গাঢ় গলায় জিজ্ঞেস করি

– লাল রঙ তোমার ঘিন্না লাগে?

– হ্যাঁ, দেখলেই গা গুলোয়। রক্ত রক্ত মনে হয়। আমার আবার রক্ত দেখলে সহ্য হয় না। বমি পায়!

আমি উল্টে পড়া শিশিটা মেঝে থেকে কুঁড়িয়ে মুঠোয় তুলে নিই। বাম হাতের দুটো আঙুল ডুবিয়ে দেই তারমধ্যে। তারপর রক্তের মতোন লালে ডুবে যাওয়া আঙুলগুলো নাকের ডগায় ধরে রেখে ঘ্রাণ শুষি। আহ্ বড্ড সুন্দর গন্ধ। খুনের মতোন উটকো কোনো গন্ধ না। আতরের গন্ধ। সৌদি আরবের আতর৷ আনজুম, আমার প্রাক্তন রুমমেট, গিফট করেছিলো আমায়। ওর খালা হজ্জ্ব থেকে ফিরে আসার সময় ওর জন্য এনেছিলো। বড্ড ভালো ছিলো মেয়েটা।

ফাবিহার মতোন বাচাল আর বেয়াদব ছিলো না। নম্র, ভদ্র, শান্ত মেয়ে ছিলো। শুধু দোষ একটাই ছিলো, তারও নাকি লাল রঙ বড্ড অপ্রিয় ছিলো। একদিন বলল লাল রঙ নাকি ওর কাছে বিপদ সংকেত, বিপদ সংকেত মনে হয়। আমিও তার কথার সাথে মতান্তর করি নি। সেদিন রাতে সে ঘুমুতে গেলে আমি খুব গোপনে আমার ফল কাটার ছুরিটার সৎ ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু দুঃখ একটাই, ওকে আমি তার মৃত্যুর কারণটা জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার থেকে আর এই ভুলটা হবে না অবশ্য।

রক্তের রঙটা আমার খুবই প্রিয়,  খুবই পছন্দের।  শুধু গন্ধটাই যা সহ্য হয় না!  তাই আতর মেশাই। পবিত্র জিনিস। নির্মল গন্ধ! তখন আর বাজে গন্ধটা থাকে না। শুধু সুবাস ছড়ায়।

কাল ফাবিহার অপ্রিয়, অপছন্দের রঙেই তার একটা স্কেচ করবো। সাদা ক্যানভাসে টকটকে লাল স্কেচ! আহা ভাবতেই চোখে শান্তি লাগে…! ধীরে ধীরে অবশ্য লাল থেকে সেটা কালো খয়েরী হতে শুরু করবে। ব্যাপার না। দুটোই সুন্দর। ওই স্কেচেও আতরের শুভ্র গন্ধ থাকবে, তীব্র গন্ধ। সৌদি আতর! রুমমেট বলে কথা, শেষ ইচ্ছেটা তো পূরণ করা আমার দায়িত্ব!

– ফাবিহা, তুমি অনেক লক্ষ্মী মেয়ে। আমার ছুরিটা একটু খুঁজে দেবে?

আমার মনে অদ্ভূত এক আনন্দ। সেই আনন্দ আমার ঠোঁটে, মুখে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে!

লাল! লাল! হ্যাঁ আমার প্রিয়, খুব  প্রিয়। আর আপনার?

 

 

{ আরো পড়ুন – সত্য ঘটনা

 

( আ লেডি পেইন্টার – ছোট গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আ লেডি পেইন্টার

” সমাপ্ত”