বহুরূপী – ছোট গল্প

বহুরূপী

লেখকঃ মোঃ আবু নাইম

 

বেশ অনেক বছর আগে আমার নানার সঙ্গে ঘটেছিল এই বীভৎস ঘটনাটা। আমার নানা আমাদের প্রায়ই নানার সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটা শুনান। নানা একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি অনেক কিছুই জানেন; আমল করেন।

নানার সাথে এরকম বহুবার এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি সেদিনের মতো আর কোনোদিন এমন ঘাবড়ে যাননি। যেমন নানার থেকে জানতে পারি, তিনি যখন মধ্য রাতে ইবাদত করেন, তখন নাকি বাসার ছাঁদে অনেকের হাটাহাটির শব্দ শুনতে পান, ভিন্ন কিছু উপলব্ধি করেন। তো মূল ঘটনায় আসা যাক।

নানা একদিন কোন প্রয়োজনে তার শায়েখের বাসায় যাচ্ছিলেন (শায়েখ মানে উস্তাত বা হুজুর)। আমার নানার বাসা থেকে তার শায়েখের বাসায় যেতে কয়েকটা গ্রাম পার হতে হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, নানা যে শায়েখের বাসায় যাবেন সেই গ্রামে এখনো মাটির কাঁচা রাস্তা, ধানের জমি বা মাঠের মধ্য দিয়ে অনেক নিরিবিলি জায়গাটা। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে আবার অনেক উঁচু উঁচু গাছ আছে। যানবাহন চলে না বললেই চলে।

ওদিকে দিনের বেলাতেও একটা গা ছম ছমে ভাব বিরাজ করে। আর সেখানের একেকটা গ্রাম অনেক দূরে দূরে। এক গ্রাম পার হয়ে আরেক গ্রামে হেঁটে যেতে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।

যাহোক; তিনি প্রথম দুইটা গ্রাম ভালো ভাবে পার হয়ে এসেছেন। বলে রাখা ভালো, এই গ্রাম দুটোর চলার রাস্তায় কিছু ঘর বাড়ি ছিল। তবে ৩য় গ্রাম থেকে যে গ্রামে শায়েখ এর বাসা (৪র্থ গ্রাম) সে গ্রামের রাস্তার দূরত্ব আরো কিছুটা বেশি আর এটা একটু নিরিবিলিও বটে।

নানা তখন নিজের মতো একের পর এক গ্রাম পায়ে হেটে চলতে থাকেন। এভাবে একসময় সামনে আসে একটা বড় ব্রিজ; ব্রিজটা এতোটাই বড় যে তার এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে কে আছে, তাও দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। ব্রিজের আগে হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে নানা সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও আবার তিনি ঠিক সে জায়গাতেই থেমে যান।

তিনি সামনে আর এগুলেন না। কারণ তিনি সামনে কিছু অপ্রত্যাশিত জিনিসই দেখছিলেন, যা অন্য কেউ দেখলে হয়তো ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন।

তিনি দেখেন সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছেন, লোক বললে ভুল হবে। ওটা কোন স্বাভাবিক মানুষ না। তবে দেখতে একদম বুড়ো মানুষের মতো আকৃতি। তার গায়ে পাটের আশের ছালা বা চটের বস্তার মতো কিছু পরিহিত ছিল। উচ্চতায় খাটো, মাথাটা একদিকে বাকানো, পিঠ কুজো মানুষের মতো, চোখ গুলো বড় বড় ও ফ্যাকাসে, মুখমন্ডলের চামড়া গুলো ঝুলে গেছে আর নাক সাধারন মানুষের থেকে অনেক বড়।

লোকটা কোন এক ভিন্ন ভাষায় বিড়বিড় করে কিছু বলে যাচ্ছিলেন। তখন নানা বেশ ঘাবড়ে যান এটা দেখে। কারন তিনি আগে অনেক কিছু দেখলেও এতো কাছে থেকে এমন কিছু এর আগে কখনো দেখেন নি। ঐ অদ্ভুত লোকটা ব্রিজের বাম দিকে ছিলো। তো তখন নানা চারদিকে লক্ষ্য রেখে খুব সতর্কভাবে ডান দিক দিয়ে সামনে এগোতে লাগলেন। তারপর একসময় তিনি সেই অদ্ভুত লোকটাকে পাশ কাটিয়ে ব্রিজ পার হয়ে যান।

তিনি তখন নিজের সর্বোচ্চ গতি দিয়ে হেঁটে কোনভাবে রাস্তা কভার করার চেষ্টা করছিলেন।

এভাবে প্রায় ২০ মিনিট দূরত্বের পথ হাঁটার পর নানা তার সেই কাঙ্খিত গ্রামে পৌছেছিলেন। সেখানে নানা তাঁর শায়েখকে সব ঘটনা খুলে বললে সেই শায়েখ বলেন, ওই রাস্তাটা ভালো না। আর নানা যা দেখেছেন, সেটা একটা জ্বিন ছিলো।

আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এই পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল দিনের বেলায়, সকাল ১০- ১১ টার মধ্যে।

 

( বহুরূপী – ছোট গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

বহুরূপী

” সমাপ্ত”