ভুতুড়ে তাল গাছ – সত্যি ঘটনা

ভুতুড়ে তাল গাছ –

তখনকার রাতগুলো আজকের মতন আলো ঝলমলে হয়নি।

লাইট বাল্ব এসব দুস্পাপ্য তখন।বিজলির বাত্তির কথা লোকজন শুনেছে এবং কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারের স্থাপনায় ব্যবহার করতে দেখেছে

রাস্তায় তখনো মশাল জাতীয় আলো জ্বালানো হতো।

মোট কথা বিদ্যুৎ মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছ পর্যন্ত পৌঁছে নাই তখনকার ঘটনা

এসব ঘটনা বলার আগে পরিষ্কার করে জানাতে চাই এমন ঘটনা আজকের জনবহুল রাতজাগা ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করে কল্পনা করলে হাস্যকর লাগবেই

কিন্তু তখনকার দিনে একদমই অসম্ভব ছিলো না।অবিশ্বাস্য ছিলো না।

জ্বীন অবশ্যই আছে।আল্লাহ পাক মানুষের মতনই জ্বীন তৈরি করেছেন

এদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার উপায় নাই

এখন শহর যেভাবে জেগে উঠেছে প্রযুক্তি ঘরের কোনায় কোনায় পৌঁছে যাওয়ার কারনে এসব শুনলেই আমাদের মুখে হাসি ফুটে ওটে!

জ্বীন তখনো ছিলো এখনো আছে

একটা সময় হতেই পারে এরা আমাদের কাছাকাছি বাস করতো

খুব স্বাভাবিক এখন হয়তো এরা তাদের সুবিধা মতন জায়গায় অবস্থান করে।

যেহেতু কাছাকাছি ছিলো তাই প্রায় ভৌতিক ঘটনা তখন ছিলো নিত্যদিনের ব্যপার!!

যাইহোক মাথায় তখনকার দিনের কথা রাখলেই হয়তো ভালো লাগবে

সময়টা কত হবে সেটা যার যার অনুমানের ওপরে ছেড়ে দিয়ে শুরু করলাম!!

পুরান ঢাকার বিখ্যাত রহমতগঞ্জের ঘটনা এটি!!

আফতাবুননেসার ছোট মেয়ে স্বাভাবিক এরচে আকারে অনেক ছোট জন্ম হয়েছে।

তাকে প্রায় দিনরাতে মায়ের বুকের দুধের ওপর রাখতে বলা হয়েছে!!

আফতাবুননিসা সুযোগ পেলেই বাচ্চাটার বিশেষ যত্ন নিতেন

একদিনের কথা।

এমনিতেই গরম ছিলো আজ বড্ড গরম পড়েছে

তালপাখা পানি দিয়ে ভিজিয়ে বাচ্চাদের বাতাস করতে হচ্ছে আবার ছোট মেয়েটাকে একটু পর পর দুধ খাওয়াতে হচ্ছে!!

স্বামী চকবাজারের অতি ব্যস্ত ব্যবসায়ী।তার গভীর রাতে ছাড়া ফিরার সম্ভবনা নাই

বেশ সম্পন্ন পরিবার তাদের।

যাইহোক একটা সময় উঠানে এসে বসলেন।

রক্ষণশীল পরিবার।

বাইরের কারোর পক্ষে এখানে আসা সম্ভব নয়।আসলেও নিরাপদ দূরত্বে থেকেই আসার অনুমতি নেয়ার প্রচলন ছিলো

বাচ্চাদের বাতাস করছেন। কিছুক্ষণ পরেই ছোট মেয়েটাকে মাটিতে পাতা বিছানা থেকে বুকে তুলে নিয়ে দুধ খাওয়াতে লাগলেন!!

বাচ্চাটার ওজন মনে হয় বেড়ে গেছে??

শরীর অসম্ভব ঠান্ডা!!

আর কেমনই জানি নরম নরম শরীর হাড্ডিসার বাচ্চাটা কিন্তু হাড্ডির কোনই অস্তিত্ব পাচ্ছেন না!!

এরই মধ্যে ঘরের ভিতর থেকে বাচ্চার কান্না  শুনে নিজের বুকে জড়ানো বাচ্চাটাকে উঠানে ছুড়ে দিলেন!!

কাজটা ইচ্ছাকৃত করেন নি।তার হঠাৎই মনে হয়েছে হয়তো কোন ভিন্ন প্রানী বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে ছিলেন।

অন্ধকারের জন্য ভুল হয়েছে??

ভুতুড়ে তাল গাছ

ছুড়ে ফেলা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন।

সেটা কেমন কালো ছায়ার মতনই!!

এরইমধ্যে তার বড় মেয়ে মেজ মেয়ে তাদের ছোট বোন এবং কুপি হাতে এসে পড়েছে!

সেই কালো বিড়ালের মতন প্রানীটা বাড়ির অদূরে দোষী তালগাছ বেয়ে উঠে গেল!!

ঘটনার ব্যখা করা কঠিন।

আফতাবুন্নেসা এখানে স্তন্যদানের ব্যপার থাকায় কাউকে বলারো সাহস পাননি।

বহুদিন চলো গেল।আফতাবুন্নিসা চোখ বুজলেন।তার স্বামী ও একই পথের পথিক হলেন।ঘটনাটা একদমই অতলে গহ্বরে হারিয়েই যেত যদি একটা সম্পত্তির ব্যপারে ঝামেলা না হতো!!

পুরান ঢাকার লোকজন প্রায়ই দাবী করেন তাদের মধ্যকার একতা দেশে সবচেয়ে সেরা।কথাটা কিন্তু একদমই ভুল।

কিছু পরিবারের মধ্যে জায়গা ভাগবাটোয়ারা শুরু হতেই একতা নিমিষেই মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়।একই মায়ের পেটের ভাই একজন আরেকজনের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পারেন না সহ্য করেন না!!

এ বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটলো।পুরো বাড়িটাই নিজের ব্যবসার সুসময়ে কিনে দিয়েছিলেন আফতাবুন্নিসার স্বামী

বেচারা ছিলেন মাটির মানুষ। জায়গা নিজের উপার্জন দিয়ে কিনেও বাবার নামে দলিল করেছিলেন

তার অনুপস্থিতির সুযোগে তার আপন ভাই পুরো বাড়ি নিজের সম্পত্তি বলে দাবী করেন।কারন বড়ভাইয়ের কোনই ছেলে সন্তান নাই।

ভাগ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। মরহুম ভাইয়েরতিনটি মেয়েকে শূন্যহাতে বিদায় করতে একটু পিছপা হননি।

পুরো বাড়ি স্থানীয় কয়েকজন দাপুটে মানুষ নিয়ে দখল করে নেন

দুবোনের বিয়ে হয়ে গেলেও বিপদে পড়ে সেই ছোট মেয়েটা!!

ওইযে যাকে মনে করে তার মা অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিয়েছিলেন!!

মেয়েটার পথে আসার জোগাড় হলো!

এই বাড়ি আর চকবাজারের মার্কেটে দুটো দোকান দিয়েই মেয়েদের এবং তাদের একটি বিধবা ফুফুর,একজন খালার পরিবার চলতো।

এখন সেই মেয়েটা না হয় বোনের বাসায় গিয়ে পালাক্রমে থাকবে কিন্তু খালা এবং ফুফুর কি হবে??

তাদের ঠাঁই হয়েছিলো বড় জামাইয়ের বাসায়।

কয়েক দিন চলেও গেল।

একদিন খুব ভোরবেলা তাদের সেই চাচা তাদের কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে উপস্থিত!!

বড় বোনের নাম ধরে চেচিয়ে ডাকতে লাগলো “আনারকলি আম্মাজ্বী” কইরে কই গেলি মা আমার??

আয় তো একটু কথা আছে।চাচার চেচামেচি শুনে সবাই বেরিয়ে এলো

তাদের হাতে বাড়ির চাবিটা দিয়ে চাচা বলতে লাগলো “নে বাবা তগো চাবি!!এ বাড়িটা নিয়া আমি অন্যায় করসি আসলে কিছু শয়তানের প্ররোচনায় আমি এমন কাজ করেছি!

তরা গিয়া উঠ তো মা ওই বাসায়।এখানে দোকান আর চাবির গোছা আছে বুঝে নে আমারে মাফ কর।আমি এই এলাকায় আর থাকবো না!!

মেয়েরা বোকার মতন তাকিয়ে রইলো!

এলাকায় ফিরে এসে তারা যা শুনলো…

মনু মিয়া বাড়িটা নেয়া মাত্র চিন্তা করে পুরো বাড়ি ভেঙে দোতলা পাকা বাড়ি করবে।এর জন্যই আগে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেয়।

পেয়ারা গাছ,পেঁপে গাছ,সুপারি গাছ,বড়ই গাছ,নীম গাছে ভর্তি ছিলো বাড়ি!

বাড়ির সবচেয়ে আলোচিত গাছটি ছিলো তালগাছ!

এ গাছে জ্বীন থাকে সেটা পুরো এলাকার লোকজন জানতেন!

মনু মিয়া সেই গাছটাই আগে কাটার সিদ্ধান্ত নেয়।গাছটাকে কাটার লোক পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেল।দোষী গাছ কেউই কাটার সাহস করলো না।

একদিন সন্ধ্যার দিকে মনু মিয়া নিজেই গাছটা কাটার সিদ্ধান্ত নিলো

যেই একটা কোপ বসাতে গেল পুরো গাছটাই নাকি ঝাড়া দিয়ে উঠলো!!

গাছের ওপর থেকে একটা বাজখাঁই গলায় কেউ একজন বলে উঠলো ” খবরদার মইন্নুদিন”এ গাছ কাটার কথা মাথায় আনিস না”দেখলাম তুই এ বাড়িটা দখল করেছিস??তুই জানোস না এ বাড়ি আমার মায়ের?? আমার বাবার??কোন সাহসে তুই একাজ করলি??

মনু মিয়া ভয় তখনো পায়নি।সে তার লোকজন ডেকে নিয়ে এলো। সে নিশ্চিত গাছে বসেই কেউ একজন তাকে ভয় দেখাতে পারে!

লোকজন আসার পর সব চুপচাপ হয়ে গেল।

গাছে কিন্তু কাউকেই পাওয়া গেল না।

এবার সাথে লোকজন থাকায় আবারে গাছ কাটার কাজ শুরু করলো এবার সবার সামনেই গাছ থেকে আবারো বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো “কিরে তুই তর জুলুম বন্ধ করবি না??তরে না বললাম এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে??এটা আমার মায়ের বাড়ি, বাবার বাড়ি তুই চলে যা না হলে এমন ক্ষতি করবো মৃত্যুর আগে তওবার সুযোগ পাবি না”

সবাই জন্মের মতন ভয় পেল।সবচেয়ে সাহসী ছিলো মনুমিয়ার মেজ ছেলে সে বললো “বাবা তোমার বাবা মায়ের বাড়ি কি করে হয়??তুমি তো মানুষই না??তখন গাছ থেকে জানালো ” এ আমার দুধ মায়ের বাড়ি,আফতাবুন্নিসার দুধ খেয়ে একদিন আমার জীবন বেঁচে গিয়েছিল।

আমার কাছে সেটা আমার আপন মায়ের চেয়ে কম নয়।তোরা এ তান্ডব বন্ধ করে চলে যা। বাড়িটা তার আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দে না আমি গাছ থেকে নেমে তোদের সামনে হাজির হবো!!

আমার সাথে লড়াই তো দূরে থাক দেখে জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে পারবি কি না সন্দেহ!

এরপরই চাচা জায়গা ছেড়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।

বহুদিন সেই তালগাছ টিকে ছিলো।সময়ে সাথে সাথে সেটা একদিন ঝড়ের আঘাতে নিজেই পড়ে যায়।

 

 

{ আরো পড়ুন – রুম নম্বর_১০১

 

( ভুতুড়ে তাল গাছ গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

ভুতুড়ে তাল গাছ

সমাপ্ত