এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা

এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা-

ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

ঘটনার দিন ড্রাইভার মহিউদ্দিনের ফোনে ফোন আসে।একজন তাকে বলে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে একটা লাশ যাবে কুষ্টিয়ার পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের একটা গ্রামে।ড্রাইভার চলে গেলেন মেডিক্যালের ভিতরে তারপর লাশের আত্মীয়স্বজনের সাথে ভাড়া মিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো লাশের অপেক্ষাতে। মেডিক্যাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে গাড়ীতে লাশ তুলতে তুলতে রাত বেজে গেলো ১০ টা।

ড্রাইভার বলে লাশের সাথে কেউ যাবে না?উত্তরে লাশের আত্মীয় বলে লাশের সাথে কেউ যাবে না। আসলে তারা দূর্সম্পকের আত্মীয়।

ড্রাইভার আর এতো সাতপাঁচ না ভেবে লাশের বাড়ীর নাম্বার নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো হেল্পারকে নিয়ে।কোন সমস্যা ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পার করে যখন তারা সিরাজগঞ্জ -বোনপারা রাস্তাতে প্রবেশ করলো তখন থেকে সমস্যা শুরু।

ড্রাইভার এগুলো আমলে নেন না করণ লাশের গাড়ীতে হরহামেশা এমন হয়ে থাকে।

রাস্তা প্রায় গাড়ী শূণ্য দু একটা ট্রাক আর নাই কোচ গুলো ছাড়া তেমন কোন গাড়ী নাই। হঠ্যাৎ ড্রাইভারের মনে হলো গাড়ী খুব ভারী হয়ে গেছে। গাড়ী ৮০-৯০ কিলোমিটার স্প্রিডে চলছে কিন্তু মনে হচ্ছে যে ২০-৩০ গতিতে যাচ্ছে।হঠ্যাৎ ড্রাইভার তার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালে দেখতে পারেন বড় একটা শুকুর যার সামের দুটা দাঁত অনেক বড় আর চোখ দুটা রক্ত লাল।

এই শুকুর টার মুখ দিয়ে লালা পরছে এইটা সব চেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার।শুকুরটি গাড়ীর সাথে সাথে  দৌড়াচ্ছে এবং একসময় শুকুরটি গাড়ীটা ক্রস করে সামনে গেলো এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।

এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা

ড্রাইভার এগুলোকে চোখের ভুল মনে করতে পারছিলো না কারণ সবটা তার সামনো হচ্ছি।তিনি হেল্পার কে ডাকলেন হেল্পার তখন গভীর ঘুমে মগ্ন।

হেল্পার উঠলো আর ড্রাইভারের চাওয়াতে একটা পান বানিয়ে দিলো ড্রাইভারকে।

এখন গাড়ীর গতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে পুরটা না হঠ্যাৎ গাড়ী গো গো শব্দ শুরু করলো শব্দটা এতটা তিব্র ছিলো যে কান ফেটে যাবার অবস্থা। ড্রাইভার একটা সাইড করে গড়ী দাঁড় করালেন হেল্পার নেমে মোটামুটি সব চেক করলেন।

সব ঠিক ছিলো কিন্তু হেল্পার খেয়াল করেন যে গাড়ী থেকে রক্ত টপটপ করে রাস্তাতে পরছে।হেল্পার চাবি দিয়ে পিছের ডোর খুলে দেখলো কিন্তু লাশের বাক্স থেকে কোন রক্ত পরছে না তাহলে ঘটনাটা কি।

হেল্পার সামনে চলে আসলো এবং ড্রাইভারকে বললে বলে ও কিছু না তুই এখন আর ঘুমাস নে। ড্রাইভার গাড়ী চালু করলো কোন সমস্যা ছাড়া গাড়ী চলতে আরম্ভ করলো।এবং এখন আর কোন গো গো শব্দ নাই।মিনিট ১০শেক কর হেল্পার বলে উঠলো ওস্তাদ লাশ তো গাড়ীতে নাই পিছনের দরজা খোলা।

ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ী ব্রেক করে কেবিনের ভিতরে তাকাতে দেখে লাশের বক্স নাই। সাথেসাথে ড্রাইভার এবং হেল্পার নেমে পরলো।

পিছনের ডোরটা খোলা, কিন্তু ডোর খোলার কোন সম্ভাবনা নাই তার থেকে বড় কথা লাশ যদি পরে যেতো তাহলে তো শব্দ হতো। দুজন এবার লাশ খুঁজতে থাকে। আপনারা সবাই জানেন সিরাজগঞ্জ-বোনপারা হাইওয়েতে রাস্তার দুই পাশে চলনবিল।

তো তারা কি করে দুজনের একজন রাস্তার এ পাশে আর অন্যজন রাস্তার অন্যপাশ নেমে পরলো তখন জমি শুকনো ছিলো।দুজন ঘাবড়ে গেছিলো যেহেতু লাশের ব্যাপার ঠিকঠাক না পৌছে দিতে পারলে বড় বিপদ।

দুজন মিনিমাম ২০ মিনিট এদিক ওদিকে খোঁজে। হেল্পার আগে আসছিলো গাড়ীর কাছে এসে যে দৃর্শ্য দেখে তা দেখে ভয়ে ওস্তাদ ওস্তাদ বলে চিল্লাতে থাকে। ড্রাইভার এসে বলে কি রে কি হয়ছে লাশ পাইছিস।

হেল্পার হন্তদন্ত হয়ে বলে ওস্তাদ লাশ গাড়ীতেই আছে।ড্রাইভার এসে দেখে একই অবস্থা। এ কি করে সম্ভব দুজনের তো চোখের ভুল হতে পারে না।

তারা খেয়াল করে বক্সের উপরের ঢাকনাটা খোলা যদিও তা পেরেক দিয়ে আটকানো ছিলো।তারা বক্সের ভিতরে লাইট মারলা, নাহ লাশ ঠিক আছে।

গাড়ীতে থাকা হাতুড়ী দিয়ে আবার পেরেক মেরে গাড়ীর ভিতরে দোয়াদরুদের অডিও চালু করে তারা আল্লাহর নাম নিতে নিতে চলতে থাকে।হেল্পার প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলো আর বারবার পিছনে তাকাচ্ছিলো। একবার বলে ওস্তাদ লাশ বসে আছে, একবার বলে ওস্তাদ লাশ নিচে পরে আছে আবার বলে ওস্তাদ বক্সটি নাই।

কিন্তু ড্রাইভার বুঝতে পারে এগুলো সবই মায়াজাল। ভয় পেলে চলবে না যা হয় হোক লাশ তার বাড়ীতে পৌছে দিতেই হবে।

তাই ড্রাইভার হেল্পারকে পিছনে তাকাতে মানা করে দেন আর  একটা কাপড় দেন যাতে পিছনে দেখার গ্লাসটা ঢেকে দিতে পারে।এভাবে তারা ৪ টার দিকে বাবুপাড়ার রাস্তাতে প্রবেশ করলেন তখন ফোন বের করে লাশের বাড়ীর ফোন নাম্বারে ফোন করলেন কিন্তু ফোন কেটে কেটে যাচ্ছিলো।

তারা তো আর বাড়ী চিনে না। একটু খেয়াল করলে দেখেন একটু দূরে একটা গাছের নিচে একজন লোক দাঁড়ানো একটা লাল লাইটের নিচে।

ড্রাইভার ভাবছেন হয়তো নামাজে যাবেন যেহেতু ভোর হয়ে যাচ্ছে।তো ড্রাইভার গাড়ী নিয়েই ওনার কাছে গেলেন গাড়ী থামিয়ে সালাম দিলেন লোকটাও সালাম নিলেন, ড্রাইভার দেখলেন লোকটার বয়স আনুমানিক ৬০-৬৫ বছর মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি আছে।

লোকটি সালামের উত্তর নিলেন। ড্রাইভার লাশের ঠিকানা বললে লোকটি বললেন এখন থেকে ২০ মিনিট সোজা গাড়ী চালালে একটা ওয়ার্কশপ পাবেন সেই ওয়ার্কশপের পিছনের বাড়ীটাই হলো লাশের বাড়ী।

লোকটি ড্রাইভারকে আরো বলেন বাবা যা হয় হোক গাড়ী থামাবা না। লোকটি এসব কথা বলার সময় লোকটির চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিলো।

ড্রাইভার কিছু না বলে আবার গাড়ী চালাতে লাগলেন মনে করেছিলো হয়তো পরিচিত ছিলো লাশের। একটু গিয়ে যখন পিছনে তাকালেন ড্রাইভার দেখলো লোকটি আর নেই।

এতো অল্প সময়ে কই যাবে।ড্রাইভার বুঝলেন এসব কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার। এবার তারা যে পথ ধরলেন।এপথের দু দিকে বড় বড় গাছ আর রাস্তা মাটির ড্রাইভার দেখলো একটু সাইডে দুজন ইয়াং বয়সের লোক মারামারি করছে কিন্তু কোন কথা বলছে না ড্রাইভার বারবার  নিজের মনকে বুঝাচ্ছিলো এগুলো সব মায়াজাল, গাড়ী থামানো যাবে না আবার একটু পর দেখে গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে পরছে কিন্তু গাড়ীতে পরছে না এমন নানা অদ্ভুত কাজ হচ্ছে তাদের সামনে।

এই অদ্ভুত কাজ কর্ম দেখে হেলপার তো ভয়ে জমে গিয়েছে।এমন এক সময় ফজরের আজান দিয়ে দিলে তখন সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।একটু পর তারা লাশ নিয়ে ঠিকানা মত পৌছে গেলো।

লাশ গাড়ী থেকে নামানো হলো ড্রাইভার আর হেল্পার চোখেমুখে পানি দিলো।হেল্পার কি মনে করে  লাশের কাছে গেলো লাশের মুখ দেখে হেল্পার আতকে উঠলো এক রকমের।

ড্রাইভারকে এসে বলে ওস্তাদ এটি তো তার লাশ যাকে একটু আগে এই বাড়ীর ঠিকানা জিজ্ঞেস করে আসলাম।ড্রাইভার গিয়েও দেখে একি অবস্থা। ড্রাইভার নিজেও ভয় পেয়ে যায়।

ড্রাইভার একজন মুরব্বী লোককে ডাকলেন যিনি লাশের ভাই হন।ওনাকে রাস্তাতে ঘটা সব ঘটনা বললে ওনি বলে-আমার ভাই একজন কবিরাজ ছিলেন ওনি প্যারানরমাল বিষয় নিয়ে কাজ করতেন ওনি যেদিন অসুস্থ হন সেদিন ও একটা এক্সোসিজম করতে গিয়ে এমন অসুস্থ হয়ে যান।

ওনি জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথা বলেন যে সবাই একটু সাবধানে থাকে যানি।

ঐদিন রাতে ভাইকে ঢাকাতে পাঠানো হয় এম্বুলেন্স যাওয়ার সময় নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটছিলো আর বাড়িতে চলছিলো তাণ্ডব।

স্বপ্নে আমি দেখি একটা আলখাল্লা পরা লোক আমাকে বলছে তোর ভাইয়কে তোরা আর পাবি না। হাসপাতালে নেওয়ার ১০ দিন পর ভাই মারা গেলো।

তাছাড়াও লাশ গোসল না করিয়ে গাড়ীতে তোলা হয়েছিলো যার জন্য এমন সমস্যা হয়েছে।

এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা

ড্রাইভার ভাড়ার টাকা নিয়ে চলে আসে।ওখান থেকে আসার পর ড্রাইভার আর হেল্পার টানা জ্বরে ভুগেন তারপর সুস্থ হয়ে যান কিন্তু ড্রাইভার একটা স্বপ্ন দেখে নিয়মিত স্বপ্নটা এই যে একটা আলখাল্লা পরা লম্বা মানুষ কবর থেকে ঐ যে পৌছে দেওয়া আসা লাশ টিকে তুলছে এবং ক্রমান্বয়ে আছাড় দিচ্ছে এমন অনেকবার করার পর আবার লাশটি কবরে রেখে মাটি দিয়ে দিচ্ছে।

এমন রোজ যখন দেখছিলো তখন ঐ লাশের বাড়ী ফোন দিয়ে বললে লাশের বাড়ীর লোক একজন হুজুরের সাথে কথা বলেন হুজুর বলেন ওনি যেহুতু ব্লাক ম্যাজিক করতো তাই হয়তো এমন সমস্যা হচ্ছে।

হয়তো কোন পীশাচ তার সাথে এমন করছে যাকে আগে ওনি কিছু না কিছু ভাবে বিরক্ত করেছিলেন।হুজুরের পরামর্শে বাড়ীতে একটা মিলাদ দেন এরপর আর এমন স্বপ্ন ড্রাইভার দেখে নি।

 

 

 

( এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

এ্যাম্বুলেন্স কেন্দ্রিক সত্য ঘটনা

সমাপ্ত