ভয়ংকরী_নারী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্প

ভয়ংকরী_নারী –

আমি গ্রামের ছেলে।মফঃস্বল

শহরে একটা কলেজে পড়ার জন্য গ্রাম ছেড়ে

মফঃস্বলে চলে আসি।এখানে আমার এক কাকার বাসায় থাকতাম।যাই হোক,ছুটি ফাটা

বা বৃহস্পতিবার কলেজ শেষে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতাম।একদিন থেকে পরের দিন সকালে চলে আসতাম ক্লাস ধরার জন্য।তেমনি করে এক বৃহস্পতিবার আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই।কলেজে ব্যাবহারিক ক্লাসের কিছু কাজ থাকায় বের হতে একটু দেরি হয়ে যায়।ঠিক ৫টার দিকে বাসে উঠি আমি।বাড়ি ১ ঘণ্টার

রাস্তা।অর্থাৎ, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আমি ৬ টার দিকেই গ্রামের রাস্তায় পৌঁছে যাবো।বলে রাখা দরকার,তখন শীতকাল ছিল।

যারা গ্রামে থাকেন তারা জানেন যে,শীতকালে গ্রামে-হাটে যাত্রাপালা,নাটক ফাটক বেশি হয়।আমি যখন গিয়ে বাস থেকে নামি তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।রাতের আলোতে দেখলাম গ্রামের বাজারে শহর থেকে একদল নাট্যকর্মী গেছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতি ছোট বেলা থেকেই আমার বেজায় ঝোঁক।অনুষ্ঠান

দেখলাম প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

রাত তখন সাড়ে ৮টা বাজে প্রায়।আর দেরি করলে মা চিন্তা করবে।এখানে বলে রাখা ভালো,তখনো আমার গ্রামে মোবাইল এতো একটা জনপ্রিয় ছিল না।তাই চাইলেও আমি মাকে ফোন করে জানাতে পারছিলাম না।

অগত্যা বাড়ির দিকে রওনা হই।বাজারের সব মানুষই তখন নাটক দেখতে ব্যাস্ত।পথে চলতে চলতে লক্ষ্য করলাম,প্রায় সব দোকানই বন্ধ করে দোকানিরা গেছে নাটক দেখতে।

এমনকি হাঁটার পথে কারো সাথে যাবো এমন মানুষও দেখলাম না।মাথার উপর বিরাট থালা আকৃতির চাঁদ।বিসমিল্লাহ বলে হাঁটা দিলাম।

আমাদের বাজার থেকে বাড়ি প্রায় মাইলখানেক।হেঁটে

যেতে ২০ মিনিটের মতো লাগে।আমি নিজের মনে গুনগুন করতে করতে হাঁটতে লাগলাম।মিনিট পাঁচেক হেঁটেছি,এমন সময় রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে খসখস আওয়াজ পেলাম।

প্রথমে ভাবলাম মনের ভুল।পাত্তা না দিয়ে হেঁটে এগুতে লাগলাম।মিনিটখানেক সব চুপচাপ।এরপর আবার রাস্তার পাশে কেমন যেনও খসখস শব্দ হলো।এবার খানিকটা ভয় পেলাম।

রাতের বেলা গ্রামের পথে শেয়াল চলাচল করে।একা মানুষ পেলে নাকি মাঝে মাঝে আক্রমণ করে বসে।

শেয়াল তাড়ানোর জন্য গ্রামের মানুষ লাইট,টর্চ লাইট,নিদেনপক্ষে আগুন নিয়ে ঘুরে।আমার কাছে তার কিছুই নেই।কি করা যায় ভাবছি।এই অবস্থায় যথাসম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়।সাহস হারানো মানে ক্ষতি হবার সম্ভবনা।

মনের সব জোর একত্রে করে বলাম,হুর হুর হুস হুস!একটা-দুটো হলে হয়তো গলা শুনেই চলে যাবে।এই ভেবে এমন করা।

ঝোপের পাশের আওয়াজ থেমে গেলো একবারে।হটাত করে চারপাশে নেমে এলো সুনসান নীরবতা।আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই ক্ষণটা।ঝোপের পাশ থেকে সাদা কাপড় পড়া একটা মহিলা মতনকে যেনও বেরহয়ে এলো।

তার উচ্চতা সাধারন মানুষের দ্বিগুণ হবেকমপক্ষে।প্রথমে ভাবলাম চোখে ভুল দেখছি।

কিন্তু চেহারার দিকে তাকাতেই মনের ভুলভেঙ্গে গেলো।চাঁদের আলোতে চারপাশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।সেই আলোয় দেখলাম,বীভৎস এক মুখ।চোখের জায়গাটা গর্ত,কিন্তু কোনও মণিনেই।

কপালের মাঝখান বরাবর এক দগদগে ঘায়ের মতো।সেখান থেকে একটি চোখ জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে আছে আমারদিকে।হাতগুলো শরীরের দিকে কেমন যেনও বাকা হয়ে আছে।অনেকটা পোলিও আক্রান্ত মানুষদের মতো।

চিকনচিকন হাত।মুখ ঘুরে আমার চোখ আসলো সেই মহিলার পায়ের দিকে।দেখলাম পায়েরপাতা পিছন দিকে বাঁকানো।

আমার আর বুঝতে অসুবিধা হল না যে আমি কিসের পাল্লায়পড়েছি।যেনওআমার মনের ভাব বুঝতে পেরেই আমার দিকে তাকিয়ে কুৎসিত একটা হাসি দিলো সেই মহিলা।

এরপর মাথাটা নিচের দিকদিয়ে পা শরীরটাকে হেঁচড়েহেঁচড়ে আসতে লাগলো আমারদিকে।আমার এদিকে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে যাবার দশা।প্রানপনে চেষ্টা করছি সুরাকালাম পড়ার।

কারণ মা বলতোএসব আসে পাশে আসলে বা উপস্থিতি টের পাওয়া গেলে সুরা পড়তে হয়।সুরা পড়লে এগুলো চলে যায়।কিন্তু বিশ্বাস করুন,অজানা একভয়ে আমার তখন বেহুশ হবার অবস্থা।

কোনও সুরা তো মনে পড়ছেই না উল্টা চিৎকার করার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলছি।নিজেকে বাঁচানোর কোনও আশা দেখছিলাম না।মহিলাটা এগিয়ে এসে এক হাতে আমাকে ধরতে নিলো।

কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে আমাকে ধরার সাথে সাথে ঘুত টাইপের একটা আওয়াজ করে ছিটকেপিছিয়ে গেলো।আমি কিছু বুঝে পেলামনা।দেখলামসেই মহিলা আতঙ্কিত হয়ে আমার গোলার কাছের আল্লাহু লেখা তাবিজটির দিকে তাকিয়ে আছে।

ঘটনা বুঝতে আমার ২সেকেন্ড সময়লাগলো।বুঝতে পারলাম,আল্লাহর নাম দেখে সে আমাকে ধরতে পারছে না।

মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দিলাম।মা বলতো ছোট বেলায় একবার আমাকে নাকি নিয়ে যাওয়ার জন্য জীন এসেছিলো।তার পর থেকে আমার গলায় এই তাবিজটা থাকতো।আমি কখনো খুলতাম না।

এই ফাঁকে হটাত দূরে কিছু মানুষের আসার আওয়াজ শোনাগেলো।তাকিয়ে দেখলাম হাতে টর্চ লাইট নিয়ে কারা যেনও আসছে।

আমি লোকগুলোর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে মহিলাটির দিকেতাকালাম।

আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে সেই মহিলা চলে গেল।এরপর আমিও চলে আসি।আর আমিও বেঁচে গেলাম।

 

 

 

( ভয়ংকরী_নারী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্প আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

ভয়ংকরী_নারী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্প

সমাপ্ত