পর্ব:-এক
ছদ্মবেশি_পিশাচ-
আমি ডিভোর্সি মেয়ে বলে আমার চেয়ে দ্বিগুন বয়সী ৪০-৪৫ বছরের এক বুড়াকে বিয়ে করবো,,তাও সে আবার পায়ে হেঁটে চলতে পারে না”
মারিয়ার এই কথায় ওর মা মিলি বেগম প্রচন্ড রেগে গেলো।তারপর ওর কাছে এসে কড়া গলায় বলল
ওকে বিয়ে করবি না তো কাকে বিয়ে করবি,,তোর মতো একটা তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে এই বাচ্চাসহ কে বিয়ে করবে শুনি?
আমি কি তালাকপ্রাপ্ত ইচ্ছা করে হয়েছি নাকি এটা যদি হয়ে থাকি তো তোমাদের দোষে হয়েছি।
হারা’মজাদি কি বললি আমাদের জন্য হয়েছিস তাই না?তোকে জন্ম দেওয়ায় ভুল ছিলো আমার।
এখন তো তাই বলবে।বিয়ে দেওয়ার আগে খোঁজ নিয়ে দেখো নি ছেলে আর তার পরিবার কেমন শুধু দেখেছো ছেলে প্রতিষ্ঠিত ভালো টাকা ইনকাম করে।আর তা দেখে মাত্র ১৪ বছর বয়সে একজন ৩০-৩২ বছর বয়সী ছেলের হাতে তুলে দিয়েছো।আর তাদের কাছে আমি দিনের পর দিন অত্যা’চারিত হয়েছি।এসব তোমাদের জন্য হয়েছে।কি দরকার ছিলো তাড়াতাড়ি বিয়ের।
মারিয়া এই কথা শেষ করতে না করতে মিলি বেগম প্রচন্ড রেগে গিয়ে মারিয়ার গালে কষে থা’প্পড় মারলো।মারিয়া হাত দিয়ে ওর গাল ধরলো।মারিয়া ওর ঘরে এসে বিছানার ওপর বসে কাঁদতে লাগলো।তখন ওর চার বছর বয়সী ছেলে মেঘ এসে মারিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
আম্মু তুমি কাঁদছো কেন?নানি আবার তোমায় বকেছে।কেঁদো না আম্মু আমি যখন বড় হয়ে যাবো তখন তোমায় আর কাঁদতে দিবো না।
মারিয়া এতটুকু ছেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।মেঘ ওর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আছে।মিলি বেগম দরজার আড়াল থেকে এসব দেখে নিজেও চোখ মুছে সরে গেলো।
মারিয়া সবে একুশ বছর বয়সে পা রেখেছে।মারিয়া দেখতে বেশ সুন্দরী।যার কারনে মাত্র তেরো বছর বয়স থেকে ওর বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে।কিন্তু মারিয়ার মা-বাবার মন মতো কোন পাত্রকে পছন্দ হচ্ছিলো না।অবশেষে শিমুল নামের এক ছেলেকে ওদের পছন্দ হলো।শিমুলের বয়সটা একটু বেশি এছাড়া সে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট।
আর চৌদ্দ বছর হওয়ার আগেই মারিয়ার সাথে শিমুলের বিয়ে হয়ে যায়।মারিয়া কখনো আপত্তি করেনি।সে তার মা-বাবার সিদ্ধান্তকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছে ।বিয়ের প্রথম দেড়-দুই বছর ভালোই ছিলো মারিয়া।কিন্তু এরপর থেকে শুরু হয় মারিয়ার ওপর অত্যাচার।বিশেষ করে মারিয়ার শাশুড়ি আর ওর বড় জা বেশি জ্বালাতন করতো।তারপরেও মুখ বুঝে সে সহ্য করেছে।কারন ওর স্বামী শিমুল মারিয়াকে খুব ভালোবাসতো।
কিন্তু এক সময় শিমুলও বদলে যায় সেও ওর মা আর ভাবির কথা শুনে মারিয়ার ওপর শারিরীক আর মানষিক অত্যাচার শুরু করে।মারিয়া বেশ কয়েকবার বাসায় চলে এসেছিলো কিন্তু ওর মা-বাবা বুঝিয়ে আবার রেখে আসে।এরপর মেঘের জন্ম হয়।মেঘের যখন দেড় বছর বয়স তখন মারিয়ার শাশুড়ী আর জা মিলে কুফরি কাজের মাধ্যমে মারিয়াকে পাগলের মতো বানিয়ে দেয় আর শিমুল সব জেনে শুনেও কিছু বলে না।উল্টো আরো মারিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।তখন থেকে মারিয়ার নিজের বাসায় থাকে,,প্রতিবেশী আর নিজের আত্মীয়-স্বজনের কথা বলার শেষ নেই।এমন ভাবে কথা বলে যেন মনে হয় সব দোষ মারিয়ার।
মারিয়া ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অনেক আদর করলো।মারিয়া মেঘ কে বলল
বাবা আমি যদি কোথাও চলে যাই তাহলে কি কষ্ট পাবে তুমি?
তখন মেঘ আবার মারিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল
আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না আম্মু।
মারিয়া আবারো কাঁদতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে সে ছেলেটাকে ছেড়ে কি করে থাকবে।এমন সময় মারিয়ার মা মিলি বেগম এসে বলল
আজ বিকেলে তোকে দেখতে আসবে।আর একটা কথা ওই ছেলে মেঘকে মেনে নিয়েছে।বিয়েটা হলে তোর ভালোই হবে কারন ছেলেটাও বাবা পাবে আর তোকেও মানুষের কথা শুনতে হবেনা।হয়তো ছেলেটার বয়স বেশি আর হাঁটতে পারে না।তারপরেও মানুষের কথা শোনার চেয়ে বিয়ে করে সবার কথা বন্ধ করা ভালো।
আমি মানুষের কথার পরোয়া করিনা।
মিলি বেগম আর কিছু না বলে চলে গেলো।মারিয়া মনে মনে ভাবছে নিজের চাওয়া পাওয়া কোন কিছুর মূল্য নেই এদের কাছে।আর এখন চাইলেও সে নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করতে পারবে না এর কারন হলো তার নামের পাশে যে আজ আরেকটা নাম যুক্ত হয়েছে আর সেটা হলো ডিভোর্সী।
বিকেল বেলা ছেলে পক্ষ মারিয়াকে দেখতে এলো।মারিয়ার ভাবি ওকে একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়িয়ে দিলো।নীল শাড়ি গায়ে পড়ার পর মারিয়া আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,এই রংটা একজনে খুব প্রিয়।না জানি সে মারিয়ার বিয়ের কথা শুনলে ঠিক থাকতে পারবে কি না?
এরপর মারিয়াকে ছেলে পক্ষের সামনে আনা হলো।
মারিয়া ছেলের দিকে তাকালো।ছেলেকে দেখে বেশ স্মার্ট মনে হলো।মুখে চাপ দাড়ি পরণে স্যুট প্যান্ট।একটা হুইল চেয়ারে বসে আছে।ছেলের নাম ইরফান শিকদার।ছেলের সাথে ওর মামা আর মামি এসেছে শুধু।সে মারিয়ার দিকে কেমন করে যেন তাকালো।মারিয়ার কাছে ব্যাপারটা বিরক্তিকর লাগলো।মারিয়ার ছেলে মেঘকে ওর ভাবি অন্যরুমে নিয়ে গিয়ে বসে আছে।
অবশেষে মারিয়ার সাথে ইরফানের বিয়ে ঠিক হলো।মাত্র তিনদিন পর মারিয়ার বিয়ে।মারিয়া এসে রুমে বসে পড়লো।খুব কান্না পাচ্ছে ওর।মারিয়া ফোন হাতে নিয়ে ডাটা অন করতে সামিউলের আইডি থেকে অনেক গুলো মেসেজ দেখতে পেলো।আজ সকাল থেকে মারিয়া ফেসবুকে ঢুকেনি।আর মারিয়াকে না দেখে ছেলেটি একের পর এক মেসেজ করেছে।মারিয়া সেগুলো পড়তে লাগলো আর নিজের চোখের জল ফেলতে লাগলো।মারিয়া মেসেজ দিলো।
সামিউল তুমি আমায় ভুলে যাও।তিনদিন পর আমার বিয়ে।আমার মতো ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করে তুমি কখনো সুখী হবে না।আর আমাকে তোমার মা বাবা কখনো মেনে নিবে না।
একটু বাদে সামিউল রিপ্লাই দিলো
এসব কি বলছো মারিয়া।আমি তোমায় ভালোবাসি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
এসব ছেলে মানুষি বাদ দাও।আর আমায় ভুলে যাও।পারলে আমায় মাফ করে দিও।বাই।
মারিয়া আইডি ডিএক্টিব করে দিলো আর ফোন বন্ধ করে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।সামিউলের সাথে মারিয়ার এক বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে।এর মধ্যে একবার দুইজন সরাসরি দেখা করছিলো।সামিউলই একমাত্র মারিয়াকে বুঝতে পারতো এমনকি মারিয়াকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো আর আজ নিমেষে সব শেষ হয়ে গেলো।
মারিয়া নিজেও সামিউলের সাথে কথা বলতে বলতে একসময় তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিলো।মারিয়া জানতো যে এটা কখনো পূর্নতা পাবে না কারন সামিউল অবিবাহিত ছেলে আর দুইজনই ছিলো সমবয়সী।সামিউলের বাবা-মা কখনো মারিয়াকে মেনে নিবে না তার আরেকটা কারন সে ডিভোর্সি।একজন অবিবাহিত ছেলের সাথে ডিভোর্সি মেয়ের বিয়ে সমাজ তো ভালো চোখে দেখে না।
কিন্তু মারিয়ার খুব খারাপ লাগছে।।সহজে হয়তো মারিয়া সামিউলকে ভুলতে পারবে না।
এদিকে সামিউল মারিয়ার আইডি ডিএক্টিব দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।সামিউল আর মারিয়ার বাসার দুরত্ব খুব বেশিদুর ছিলো না।সামিউল বুঝতে পারতো এমন কিছু হতে পারে কিন্তু তারপরেও মন তো আর সেটা মানতো না।মন যে কখন কার প্রতি আকৃষ্ট হয় সেটা মন ভালো জানে না।মারিয়ার মতো সামিউলেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই।
তিন দিন পর মারিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো ইরফান শিকদারের সাথে।মারিয়ার ছেলে মারিয়ার গলা জড়িয়ে ধরেছে ওকে কোথাও যেতে দিবে না।মেঘ মারিয়ার গলা ধরে অনেক কান্না করছে।মারিয়া নিজেও খুব কান্না করছে।সবাই তাক লেগে এসব দেখছে।সন্তানকে ফেলে মা অন্যে কারো সংসারে চলে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য সন্তানের জন্য এর মতো কষ্টের কিছু হয়তো আর হয়না।
কিন্তু এক সময় মেঘ কে ছাড়তে হলো মারিয়ার।মিলি বেগম মেঘ কে কোলে তুলে নিলো।মারিয়া কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে গাড়িতে বসলো।মেঘ কাঁদতে কাঁদতে আম্মু আম্মু বলে ডাকছে,,মারিয়ার বুক যেন কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।গাড়ি ছেড়ে দিলো।এখনো মারিয়ার কানে নিজের ছেলের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।মারিয়া গাড়ির জানালা দিয়ে আরেকটা জিনিস দেখলো যা দেখে ওর কষ্ট আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।রাস্তার ধারে সামিউল দাড়িয়ে আছে মুখ মলিন করে।ঘন্টা দুয়েক পর একটা বাংলো বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।
এমন সময় কয়েকজন মেয়ে ছেলে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে গেটের সামনে আসলো।গাড়ি থেকে নামার পর সবাই এসে মারিয়াকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো।বাড়িটা বিশাল বড় চারদিক দেয়ালের প্রাচীর তোলা।অনেক গাছও আছে।রাতের অন্ধকারে দেখা গেলো না সেগুলো আসলে কি গাছ।
মারিয়াকে একটা ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।অনেকে মেয়ে ওকে ঘিরে বসে আছে।তারা নানারকম গল্প গুজব করছে।মারিয়ার বার বার মেঘের কথা মনে পড়ছে।না জানি ছেলেটার কান্না থামলো কি না?মারিয়াকে ছাড়া সে এক মুহুর্ত থাকতে পারে না।মারিয়ার সাথে বসে থাকা বেশির ভাগ মেয়ে ওর সমবয়সী।
একটু বাদে কিছু মেয়ে মারিয়াকে একটা রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে গেলো।রুমটা ওর অনেক পরিচিত।কেননা আগেও মারিয়া এই দিনটার সাথে পরিচিত হয়েছে।ফুলে ফুলে সাজানো বিছানার চারপাশ।মারিয়া শুধু চোখ থেকে পানি ফেলছে।একটু বাদে ইরফান শিকদার হুইল চেয়ারে করে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।দরজা বন্ধ করায় মারিয়ার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো।ইরফান চেয়ার নিয়ে এগিয়ে এসে মারিয়ার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।মারিয়া একটু নড়েচড়ে বসলো।ইরফান বলল
আমি জানি যে তোমার আমাকে মেনে নিতে অনেক কষ্ট হবে।আর নিজের ছেলের জন্যও তোমার বেশ কষ্ট হবে।এবার বাড়ি থেকে আসার সময় তোমার ছেলেকে নিয়ে এসো।তাকে আমি নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসবো।আর এমনিতে আমি কখনো বাবা হতে পারবো না।তাই না হয় তোমার ছেলেকে দিয়ে নিজের পিতৃত্বের স্বাদ পূরন করে নিবো।
মারিয়া ইরফানের কথা শুনে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।মনে মনে ভাবতে লাগলো লোকটা আসলেই অনেক ভালো মনে হয়।ভালো না হলে অন্য কারো সন্তানকে মেনে নিবে কেন?যতই সে বাবা হতে পারুক আর না পারুক।আবার হতে পারে বাবা হতে পারবে না বলে হয়তো মারিয়ার ছেলেকে মেনে নিতে কোন আপত্তি করছে না।মারিয়া বলল
আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
হ্যাঁ করো।
আপনি কি জন্ম থেকে এমন নাকি আগে ভালো ছিলেন হয়তো কোন দূর্ঘটনায় এমন হয়েছে?
ইরফান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
আমি এমন ছিলাম না।আর পাঁচটা ছেলের মতোই আমি ছিলাম।কিন্তু হঠাৎ একটা এক্সিডেন্টে এমন হয়ে গেলাম।আমার ভালোবাসার মানুষটিও আমায় ছেড়ে চলে গেলো।জানো আমার মনে হয় না যে আমার কোন পা আছে।আমার দুই পায়ে কোন বোধ নেই।এটাতে আঘাত করলেও বুঝতে পারিনা।
কথাটা শুনে মারিয়ার বেশ খারাপ লাগলো।তবে লোকটার চেহারা দেখে বোঝা যায় সে ভালো থাকতে নিশ্চয় অনেক স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম ছিলো।লোকটি আনমনে বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে।মারিয়া বলল
আপনার ভালোবাসার মানুষটি কি আপনার ওয়াইফ ছিলো নাকি প্রেমিকা?
দুটোই ছিলো।প্রেমের বিয়ে ছিলো আমাদের।যখন সে জানতে পারলো আমি আর হাঁটতে পারবো না তখন সে চলে গেলো।
বুঝলাম।
আর বিয়ের ইচ্ছা ছিলো না আমার কিন্তু নিজেও আর ঠিক ভাবে চলতে পারি না।কাজের লোক ছিলো সে আমার অনেক কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে।তাই বাধ্য হয়ে মামা-মামি বিয়ে করালো।
হুমম।
মারিয়া মনে মনে বলল,,,চাকরানি হিসেবে বিয়ে করে আনছে বুড়া বেটা।’
মারিয়াকে চুপ থাকতে দেখে বলল
তুমি শুয়ে পড়ো।মনটা হয়তো তোমার অনেক খারাপ।ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে আর নিজের ছেলেকে নিয়ে টেনশন করো না ওর পুরো দায়িত্ব আমি নিলাম।
আপনি ঘুমাবেন না?
আমি চেয়ারে বসে ঘুমাই প্রতিদিন।
মারিয়া আর কিছু বললো না।মাথাটা বেশ ব্যথা করছিলো তাই শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়লো।পরেরদিন সকালে সূর্যের আলো মারিয়ার মুখে পড়ায় ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মারিয়া উঠে দেখলো ইরফান রুমের ভিতর নেই।রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো পুরো বাড়ি একদম ফাঁকা একটা মানুষ নেই।বিষয়টা বেশ অবাক লাগলো মারিয়ার।কাল তো অনেকে ছিলো সকাল হতে না হতে সবাই চলে গেলো কেন?
এমন সময় ইরফান এসে পিছন থেকে বলল
উঠে পড়েছো?
হুমম।কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?
এই তো বাইরে বাগানে।
ও আচ্ছা।বাড়ির লোকজন কই সব?
ওদের কাজ শেষ তাই ওরা চলে গেছে।
এমন সময় মারিয়ার ফোন বেজে উঠলো।মারিয়া ফোন রিসিভ করলো আর তখন কেউ একজন বলল
তোমার মা-বাবা ছেলে সহ সবাই মা*রা গেছে।
কথাটি শোনা মাত্রই মারিয়ার হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।
{ আরো পড়ুন – আত্মার চিৎকার – এক ভয়ঙ্কর আত্মার গল্প
ছদ্মবেশি_পিশাচ
পর্বঃ২
মারিয়ার মা-বাবা সহ সবার মৃ’ত্যুর খবর শোনা মাত্রই ওর হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।মারিয়া যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,,,সে কি শুনছে এসব?মারিয়ার হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে দেখে ইরফান ওকে জিজ্ঞেস করলো
কি হলো তোমার?
মারিয়া কোন কথা বলছে না।একদম নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে সে।হঠাৎ মারিয়া জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো তারপর বলল
আমার মা-বাবাসহ সবাই নাকি মারা গেছে?
হোয়াট?এটা কি করে সম্ভব?
জানি না।
মারিয়া এসে ইরফানের পায়ের কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো
আপনি দয়া করে আমায় বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন?আমি আপনার দুটো পায়ে ধরি।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো শুধু যেতে দিন।
ইরফান মারিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল
এভাবে বলছো কেন?চলো আমিও যাবো।
ইরফান ফোন করে ওর ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললো।তারপর দুইজন মিলে মারিয়ার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।মারিয়া সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে গেলো।মারিয়া গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো বাড়ি উঠানে পাঁচটি লাশ রাখা।মারিয়া কান্না জড়িত চোখে ধীর পায়ে লাশ গুলোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
প্রতিটি লাশ মারিয়া দেখছে আর চিৎকার করে কাঁদছে।সব শেষে নিজের ছেলে মেঘের লাশের পাশে গিয়ে বসে পড়লো।ছেলের চেহারার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।কি নিষ্পাপ লাগছে মারিয়ার কলিজার টুকরোটাকে।হঠাৎ মারিয়া মেঘকে ওই অবস্থায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।আর বলতে লাগলো
ময়না আমার তুই আমায় একা করে দিয়ে কেন চলে গেলি?তুই না সব সময় বলতে বড় হয়ে নাকি আমায় আর কখনো কাঁদতে দিবি না তাহলে আজ আমায় কেন এভাবে কাঁদিয়ে চলে গেলি।
মারিয়ার কান্না যেন কিছুতে থামছে না।কয়েকজন মহিলা এসে মারিয়ার কোল থেকে ওর ছেলেকে ছাড়িয়ে নিলো।মারিয়া ওভাবে ওখানে বসে থেকে কাঁদছে।ইরফান হুইল চেয়ারে বসে মারিয়াকে নানারকম কথা বলে বুঝাতে লাগলো।এভাবে সবার হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় পুলিশ এসেছে তদন্তের জন্য।প্রত্যেকে লাশ গুলো পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।আশেপাশের মহিলারা বলাবলি করছে,,এমন এক অপয়া মেয়েকে জন্ম দিয়েছে,,যার প্রথম স্বামীর ভাত হয়নি,,আবার দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে যেতে না যেতেই পুরো বাড়ির মানুষদের খেলো।ওরও মরা উচিত।”
সেখানে সামিউল উপস্থিত ছিলো।সে ওই মহিলাদের কথায় রেগে গিয়ে বলে উঠলো
আজব মানুষ তো আপনারা।একজন তার পরিবারের সকল সদস্যদের হারিয়েছে।আপনারা কি আরো এই দুঃসময়ে তার পাশে দাড়াবেন তা না করে আগে বলছেন সে খেয়েছে।আরে মৃত্যু কখন কার কিভাবে হবে সেটা কেউ বলতে পারে না আল্লাহ ছাড়া।যত্তসব মূর্খের দল।নিজেদের সাথে এমন না পর্যন্ত কেউ বুঝবেন না।
সামিউলের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো।সামিউলের এক বন্ধু মারিয়াদের পাড়ায় থাকে সে তার মাধ্যমে মারিয়ার মা-বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেখতে চলে আসে।মারিয়াকে ওর পাশের বাড়ির আন্টি বাড়িতে নিয়ে গেলো।ইরফানও সাথে গেলো।মারিয়াকে দেখে সামিউলে অনেক খারাপ লাগছে।সে কাছে থেকেও মারিয়ার এই দুঃসময়ের সঙ্গী হতে পারলো না।এমন সময় সামিউলের সেই বন্ধু ইসতিয়াক এসে বলল
কি রে মন খারাপ করে আছিস কেন?
এমনি রে।বুঝতেই তো পারছিস।কাল মেয়েটার বিয়ে হলো আর আজ মা-বাবাকে হারিয়ে ফেললো।কতটা কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার।কিন্তু আপসোস ওর এই মুহুর্তে আমি পাশে থাকতে পারলাম না।
মন খারাপ করিস না।ওর পাশে এখন ওর হাসবেন্ড আছে।আর ওকে হয়তো তোর ফ্যামিলি মানতোও না।তাই এটা নিয়ে ভেবে লাভ নাই।
সামিউল কিছু বললো না।তখন ইসতিয়াক বলল
একটা বিষয় খেয়াল করেছিস তুই?
কি?
প্রত্যেকটা লাশ দেখে মনে হচ্ছে কারো শরীরে কোন রক্ত নেই।কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
হুমম ব্যাপারটা আমারো অদ্ভুত লাগলো।পোস্টমর্টেম হলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
হুম।
মারিয়া বিছানার ওপর চুপ করে বসে আছে।ওর পাশে হুইল চেয়ারে ইরফান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।মারিয়ার সেই আন্টি বেশ কয়েকবার খাবার খাওয়াতে চাইলো কিন্তু মারিয়া খেলো না তাই তিনি খাবার টেবিলের ওপর রেখে চলে গেলো।সে মাঝে মধ্যে শুধু কেঁদে উঠছে।বিশেষ করে নিজের ছেলের কথা ভেবে মারিয়ার আরো বেশ কষ্ট হচ্ছে।ইরফান মারিয়ার সামনে এসে ওরে মুখে হাত বুলিয়ে বলল
এভাবে কান্না করলে কি তারা আর ফিরে আসবে বরং এতে তোমার শরীরের ক্ষতি হবে।তার চেয়ে দোয়া করো যেন তোমার মা-বাবা ওপারে ভালো থাকেন।এখন ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও।
ইরফান খাবারের থালা হাতে নিয়ে মারিয়াকে তুলে খাইয়ে দিতে চাইলো।মারিয়া একবার ইরফানের দিকে তাকালো তারপর খাবারটা খেলো।দুই একবার খেয়ে আর খেলো না।
মারিয়া শুয়ে পড়লো কারন কান্না করতে করতে আবার মাথা ব্যথা করছে,,চোখটাও ব্যথা করছে।মারিয়া চোখ বন্ধ করতে অনুভব করলো ওর মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মারিয়া চোখ খুলতে দেখলো সে আর কেউ না সে হলো ইরফান।মারিয়া বলল
আমার মাথা কষ্ট করে হাত বুলিয়ে দিতে হবে না আপনার আমি ঠিক আছি।
চুপ করে শুয়ে থাকো আমার মুখে মুখে তর্ক করবে না।এটা আমার একদম পছন্দ নয়।
মারিয়া আর কিছু না বলে চোখ বুজে ফেললো।মারিয়া মনে মনে ভাবছে,,লোকটা আসলেই খুব ভালো।বয়স বেশি হলেও ভিতরে কেয়ারিং ভাবটা এখনো রয়ে গেছে।
আসলে মেয়েরা তো এসবই চায় যে ওদের দুঃসময়ে কাছের মানুষটি সবসময় তার কেয়ার করুক।
এদিকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে দেখা গেলো যে রক্তশূন্যতার কারনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।শরীর থেকে এতোগুলো রক্ত কিভাবে হাওয়া হয়ে গেলো সেটা ভেবে সবাই অবাক।যারা পোস্টমর্টেম করেছে তারা এটাও জানিয়েছে যে শরীর হতে রক্ত বের করে নেওয়ার কোন চিহ্ন তারা খুজে পায়নি।কেসটা পুলিশের কাছে অনেক জটিল হয়ে গেলো।পরেরদিন সকালবেলা পাঁচজনকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।সেই সময় ও মারিয়া অনেক কান্না করলো।
এরপর মারিয়া ইরফানের সাথে বাসায় ফিরে আসলো।মারিয়া মানষিক ভাবে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।ঠিক মতো একটু খাওয়া দাওয়াও করে না।সবার কথা বার বার মারিয়ার মনে পড়ছে।বিশেষ করে মেঘের কথা বেশি মনে পড়ে।সবার মৃত্যু মারিয়ার কাছে একদম অস্বাভাবিক লাগছে।মারিয়ার কোন কিছু ভালো লাগছে না,,কোন কাজে মন নেই।ইরফান মারিয়ার যথেষ্ট কেয়ার করছে।মারিয়া ভাবলো,,নতুন একজনের জীবনে এসেছে সে এখন এসব কিছু নিয়ে না ভেবে তার সংসারে মন দেওয়াটায় বেটার হবে।মারিয়া স্বাভাবিক হতে প্রায় তিন-চার দিন সময় লাগলো।
সকাল বেলা মারিয়া ঘুম থেকে উঠার পর না দেখে ওকে খুঁজতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে সে আসলে প্রতিদিন সকালে কোথায় যায়,,আমি উঠার আগে? দেখতে হবে ব্যাপারটা।মারিয়ার শোবার ঘর দুতলায়।মারিয়া কি যেন ভেবে বেলকনিতে আসলো।বেলকনিতে আসার পর দেখলো ইরফান নিচে লাগানো গাছপালায় পানি দিচ্ছে।
মারিয়া এই বাড়িতে আসার পর নিচটা ভালো ভাবে দেখেনি।আজ দেখলো যে সেখানে নানারকম ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে।বাড়ির এক কোনায় বিশাল বড় আমগাছ।সেই গাছের নিচে একটা দোলনা বসানো।গাছে পানি পড়ায় সেগুলো বেশ সতেজ লাগছিলো।ইরফানের এই কাজে মারিয়ার বেশ ভালো লাগলো।মারিয়া নিচে আসতেই ইরফান না বুঝে জলের পাইপ মারিয়ার দিকে ধরলো।আর এতে মারিয়ার শরীর একেবারে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।মারিয়া রেগে গিয়ে ওর দুই হাত কোমড়ে রেখে বলল
এসব কি হ্যাঁ,,সকাল সকাল দিলেন তো গা ভিজিয়ে।
ওহ সরি দেখতে পারিনি।
হুম দেখতে পারেননি বলে কিছু বললাম না।
তাই?
এই বলে ইরফান আবার মারিয়ার গা ভিজে দিলো।মারিয়া রেগে গিয়ে ইরফানের থেকে পাইপ কেড়ে নিয়ে ওর গা ভিজে দিলো।তারপর হাসতে হাসতে বলল
দেখুন এবার কেমন লাগে।এই মারিয়ার সাথে লাগতে আসলে এমনই হবে।
তবে রে।
এই বলে ইরফান হুইল চেয়ারে করে মারিয়ার দিকে যেতে লাগলো।মারিয়া তখন দৌড়ে পালাতে লাগলো আর মাঝে মাঝে ইরফানের গায়ে পানি মারলো।সকালবেলাটা বেশ ভালোই কাটলো।মারিয়া ইরফানকে গোসল সেরে কাপড় পড়তে সাহায্য করলো।তারপর নিজে গোসল সেরে সকালের নাস্তা করলো।মারিয়া বলল
যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আমি আপনার সেই গাছগুলোতে সকালে পানি দিতে পারি?
হ্যাঁ নিশ্চয়।এখন এসব তো তোমারই।
মারিয়া হেসে জবাব দিলো
ধন্যবাদ।
আর একটা কথা আমি একটু কাজে বাইরে যাবো তুমি সাবধানে বাসায় থেকো।
আচ্ছা।কখন আসবেন?
জানি না।বিকেলও হতে পারে আবার রাতও হতে পারে ঠিক নাই।
আচ্ছা সাবধানে থাকবেন।
ইরফান খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।মারিয়া পুরো বাড়িতে এখন একা।মারিয়া মাত্র কয়েকদিনে এই বুড়ো লোকটার মায়ায় পড়ে গেছে।
বাড়িতে মারিয়ার বেশ একা লাগছিলো আর বার বার ওর পরিবারের কথা মনে পড়ছিলো।মনে মনে ভাবছে আর কেউ ওকে এখন আর আম্মু আম্মু বলে ডাকবে না।এটা ভাবতে চোখের কোণে জল চলে এলো।মারিয়া নিজের ফোন হাতে নিয়ে ভাবলো একবার সামিউলকে ফোন দিই।তারপর ভাবলো থাক কি দরকার ফোন দিয়ে ছেলেটার কষ্ট বাড়ানোর ।তার চেয়ে বরং সে তার মতো থাকুক আমি আমার মতো।
মারিয়া ফোন বিছানার ওপর রেখে নিচে চলে এলো।নিচে এসে দোলনায় বসে আনমনে দোল খেতে লাগলো।কিন্তু এমন সময় মারিয়ার মনে হচ্ছিলো যে কেউ তাকে দেখছে।সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।হঠাৎ মারিয়ার চোখ গেলো ওর রুমের বেলকনির দিকে সেখানে দরজার সাথে হেলান কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।
তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।মাথা পর্যন্ত কালো পোশাকে ঢাকা।মারিয়া ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।মনে মনে ভাবছে এই বাড়িতে তো সে ছাড়া কেউ নেই তাহলে এই লোকটি কে?মারিয়া ভাবলো আবার চোর টোর নয়তো?এটা দেখার জন্য সে বাড়ির ভিতর গেলো।দরজার কাছে বেশ কয়েকটা রড রাখা ছিলো।মারিয়া একটা রড হাতে নিয়ে ভিতরে গেলো
ছদ্মবেশি_পিশাচ
পর্ব:-তিন
মারিয়া রড হাতে ধীর পায়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।তারপর আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে উপরে উঠে গেলো।মারিয়ার একটু একটু ভয় করছে,,কিন্তু তারপরেও শক্ত করে রড হাতে নিয়ে ওর রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখলো কালো কাপড়ে জড়ানো লোকটি আগের মতোই একই ভাবে দাড়িয়ে আছে।মারিয়া ভিতরে ঢুকে পিছন থেকে বলল
কে আপনি?আর এই বাড়ির ভিতরে আপনার ঢোকার সাহস হলো কি করে?
মারিয়ার কথার কোন জবাব এলো না।তাই মারিয়া একটু রেগে গিয়ে আবার বলল
কি হলো আমার কথা কি আপনার কানে যাচ্ছে না।বয়রা নাকি আপনি যে কানে শুনতে পান না?
মারিয়া এবার বিরক্ত হয়ে ওর এক হাতে লোকটির কাধে হাত দেওয়া মাত্র সে মাটিতে পড়ে গেলো।মারিয়া তখন পড়ে যাওয়া লোকটির জায়গায় কালো কাপড়ের মধ্যে থাকা একটা কঙ্কাল দেখে রড ফেলে দিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো।
ভয়ে মারিয়ার হাত পা থরথর করে কাঁপছে।এটা কি দেখছে সে?মারিয়া কাঁপতে কাঁপতে আবার সেটির দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে আর কিছু নেই।মারিয়া অবাক হয়ে গেলো এমন কান্ড দেখে।এখনি সে যে জিনিসটা দেখে ভয়ে চিৎকার করলো হঠাৎ করে সেই জিনিসটা কোথায় গায়েব হয়ে গেলো।সেই কঙ্কালকে দেখতে না পেরে মারিয়ার ভয় কিছুটা দুর হয়ে গেলো।মারিয়া বেলকনিতে এসে দেখতে লাগলো যে সেটি আসলে কোথায় গেলো।কিন্তু কোন কিছু মারিয়ার নজরে আসলো না।
মারিয়ার কেমন জানি ভিতরটা ভয় ভয় করছে।এমন সময় বাইরে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হয়ে উঠলো।মারিয়া আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি রড হাতে নিচে গিয়ে দেখলো ধবধবে একটা সাদা বিড়াল রান্না ঘর হতে পাতিল ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালালো।মারিয়া রড দরজার কাছে রেখে রুমে এসে টিভি চালু করে বসে থেকে দেখছে।
মারিয়া টিভি দেখছিলো তখন ওর মনে হলো যে আবার কেউ ওকে আড়াল থেকে দেখছে।মারিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।মনে মনে ভাবলো বাড়িতে একা আছে বলে হয়তো এমন মনে হচ্ছে।আবার সে টিভি দেখায় মনযোগ দিলো।মারিয়ার চোখ হঠাৎ দরজার দিকে যেতে দেখলো ছায়ার মতো কিছু একটা সরে গেলো।যা দেখে মারিয়ার বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠলো।মারিয়া সেখানে বসা থেকে বলে উঠলো
কে ওখানে?
কোন সাড়াশব্দ এলো না।তাই মারিয়া উঠে গিয়ে দেখলো সেই সাদা বিড়াল একটা ইদুর ধরে সেটাকে খাচ্ছে।সেটা দেখে মারিয়া হেসে উঠে বলল
ওরে বিল্লি তুই?আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি?যাই হোক একটা ইদুর ধরে ভালো করেছিস।আজ এর জন্য তোকে দুপুরে একটা মাছ খাওয়াবো।
মারিয়া টিভি দেখতে দেখতে সোফার ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।
হঠাৎ মারিয়ার কানের কাছে কেউ মুখ এনে বলল
মরবি,,তুই ও মরবি।তোর মৃত্যু খুব নিকটে।বাঁচতে চাইলে আমার ইচ্ছা পূরন কর।
আর তখনি মারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মারিয়া ভয়ে একদম ঘামছে।মারিয়া তাকিয়ে দেখলো ওর সমনে মেঝেতে সেই বিড়াল বসে ওর দিকে তাকিয়ে ম্যাও বলে উঠলো।মারিয়াকে কে বললো কথাটা?।মারিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।তাহলে এমন কথা কে বলল?আর কিসের ইচ্ছা পূরন করার কথা বললো যেটা না করলে ওর মরতে হবে?
মারিয়া বেশ ভয় লাগছে।সকাল থেকে এসব কি হচ্ছে ওর সাথে।মারিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুপুর দুইটা বাজে।প্রায় দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে সে।মনে মনে ভাবলো স্বপ্নে হয়তো এসব দেখেছে।কিছু কিছু স্বপ্ন বাস্তবের মতো মনে হয়।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দুপুরের খাবার খেলো।খেতে খেতে ইরফানের কথা মনে হতে ফোন বের করে নিয়ে আসলো ওকে কল করার জন্য।কিন্তু মারিয়া দেখলো একটু নেটওয়ার্ক নেই।
হঠাৎ নেটওয়ার্ক নেই দেখে একটু অবাকই হলো।যেকদিন ধরে এই বাড়িতে এসেছে সেকদিন ফোনে একদম ফুল নেটওয়ার্ক দেখেছে আজ হঠাৎ কি হলো?মারিয়া আর না ভেবে ফোন ওর পাশে টেবিলে রেখে বসে থেকে খাবার খেলো।
তারপর মারিয়া ভাবলো এবার একটু ইরফানের মামার বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক।মারিয়া দরজা বন্ধ করে বাইরে এসে দেখলো আশেপাশে খুব একটা বাড়িঘর নেই।বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে সেই বাড়ি গুলোতে অনেকদিন কেউ থাকে না।ইরফানের বাড়ির থেকে ওর মামার বাড়ি দুরুত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ।
মারিয়া হেঁটে হেঁটে সেই বাড়ির দিকে গেলো।মারিয়া বাড়ি আগে কখনো দেখেনি।ইরফান বলেছিলো বাড়িটার গেটের সামনে একটা বড় বটগাছ আছে আর সেটা আন্দাজ করে মারিয়া গেলো।একটু দুর যেতে আবার একটা বাংলো বাড়ি দেখতে পেলো।যে বাড়ির ভিতর একটা বিশাল বড় বটগাছ।মারিয়া মনে মনে বলল নিশ্চয় এই বাড়িটায় হবে।মারিয়া সেই বাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
বাড়ির সামনে বিশাল বড় ফাঁকা জায়গা সেখানে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে।কিন্তু গাছের গোড়ায় অসংখ্য আগাছা জন্মে আছে।এমনকি বাড়ির উঠানে অনেক পাতা পড়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে কেউ পরিষ্কার করে না।দরজাটাও কেমন মরিচা ধরা।বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না এখানে কেউ থাকে।আর পুরো বাড়িটার পরিবেশ একদম নিস্তব্ধ।(নতুন পর্ব সহজে পেতে পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন)
মারিয়া বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে মামিকে ডাকল
মামি বাসায় আছেন?
কিন্তু ভিতর থেকে কোন আওয়াজ এলো না।মারিয়া দরজায় হালকা টোকা দিতে দরজা একটা আওয়াজ করে খুলে গেলো।মারিয়া ধীর পায়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই ভ্যাপসা একটা গন্ধ নাকে এসে লাগলো।মারিয়া ভিতরটা দেখে একদম অবাক হয়ে গেলো।বাড়ির ভিতর ধুলো বালি জমে একাকার।বাড়ির প্রতিটা জিনিসের ওপর সাদা কাপড় বিছানো।সেই কাপড়ের ওপর ধুলো জমেছে সেটা দেখায় যাচ্ছে।
মারিয়া ভাবতে লাগলো,,এই বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ কেউ থাকে না,,,তাহলে ওর মামা মামিরা এখানে থাকে সেই কথাটি কি মিথ্যা?ইরফান মারিয়াকে মিথ্যা কেনই বা বলবে।এমন সময় ছোট বাচ্চার খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ পেলো।মারিয়া পিছনে তাকিয়ে যা দেখলো এতে ওর পুরো শরীর হীম হয়ে গেলো।মারিয়ার ছেলে মেঘ ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে। ছেলেকে দেখে মারিয়ার চোখে পানি চলে আসলো।মারিয়া কিছু বলার আগে মেঘ বলল
আম্মু তুমি আমায় দেখতে এসেছো।আমার আম্মু অনেক ভালো আমায় ছাড়া থাকতেই পারে না।
মারিয়া এগিয়ে গিয়ে ছেলের সামনে হাঁটু গেরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল
সত্যি সোনা পাখি আমি তোকে ছাড়া একটু থাকতে পারি না।তুই এখানে কি করছিস বাবা?
আমি তো এখানেই থাকি।তুমি কাঁদছো কেন?জানো না তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়?
মারিয়া তখন নিজের চোখ মুছে বলল
আর কাঁদবো না ঠিক আছে।
আচ্ছা।
এবার তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো চল।
এই বলে মারিয়া মেঘকে ধরতে লাগলো কিন্তু ওর শরীর স্পর্শ করতে না পেরে মেঘের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।মেঘকে দেখে মারিয়া এতক্ষন ভুলে গিয়েছিলো যে মেঘ মারা গেছে।মারিয়া ধরতে পারলো না দেখে মেঘ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।মেঘের চেহারা কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে।পুরো চেহারা মুহুর্তে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।মারিয়ার বেশ ভয় হচ্ছে নিজের ছেলেকে দেখে।মারিয়া ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগলো।তখন মেঘ বলল
মারা যাওয়ার পর নিজের আপন মা সন্তানকে ভয় পায়।হাহাহাহাহা।
মেঘের এই কথাটি মারিয়ার বুকে তীরের মতো আঘাত করলো।মারিয়া দৌড়ে মেঘের কাছে এসে বলল
দেখ বাবা আমি তোকে একটুও ভয় পাচ্ছিনা।
মেঘ তখন চিৎকার করে বলল
তুমি চলে যাও আম্মু নয়তো ওরা তোমাকেও মেরে ফেলবে।
মারিয়া অবাক হয়ে বলল
কে মেরে ফেলবে?
ও আসছে তুমি চলে যাও।
এই বলে মেঘ দৌড়ে সিড়ি দিয়ে বাড়ির ছাদে যেতে লাগলো।মারিয়া মেঘের পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।এমন সময় কালো কিছু একটা উড়ে এসে মেঘকে সহ অদৃশ্য হয়ে গেলো।মারিয়া মেঘ বলে চিৎকার করে সেখানে বসে থেকে কাঁদতে লাগলো।
এমন সময় ওর কানে কারো গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসলো তখন মারিয়ার মেঘের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই মারিয়া আর দেরি না করে নিজের চোখ মুছে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।
মারিয়া বাসায় আসার পর ভাবতে লাগলো,,ওর পরিবারের মৃত্যুর পিছনে নিশ্চয় কোন রহস্য আছে যেটা সব কিছুর আড়ালে।মৃত্যুর কারনটা সত্যি খুব রহস্যজনক।এসব খুজে বের করতে হবে।আর একবার যদি সে হত্যাকারী খুজে পায় তো নিজ হাতে তাকে শেষ করে দিবে।
এই ভেবে মারিয়া রাগে ফুসতে লাগলো।এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হলো।মারিয়া বেলকনিতে এসে দেখলো ইরফান এসেছে।মারিয়া তাড়াতাড়ি করে বাইরে গিয়ে ইরফানকে নিয়ে ভিতরে আসলো।মারিয়া ইরফানকে বলল
কোথায় গিয়েছিলেন আপনি জানতে পারি?
ইরফান হেসে জবাব দিলো
পরে একসময় বলবো কেমন?
আপনার ইচ্ছা।
ইরফানকে পোশাক বদলাতে মারিয়া সাহায্য করলো।এরপর মারিয়া ইরফানকে নিয়ে বাইরে আসলো।মারিয়া ইরফানের থেকে এসব ঘটনা গোপন করলো কিছু বললো না।শুধু বলল
আমি আপনার মামার বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু তাদের কাউকে বাড়িতে পেলামনা তো।
ও আচ্ছা।এখন পাবে না তো।মামা আর মামি সারাদিন তাদের একটা অফিস আছে সেখানে থাকে সন্ধ্যার একটু আগে এই বাসায় আসে।
ও।
মারিয়ার কাছে ইরফানের বলা কথা গুলো কেমন জানি খোটকা লাগলো।কিন্তু কিছু বললো না।তখন ইরফান বলল
সন্ধ্যায় মামার বাসায় তোমাকে নিয়ে যাবো নি।
ঠিক আছে।
সন্ধ্যার পর ইরফান মারিয়াকে নিয়ে মামার বাড়ির দিকে গেলো।রাস্তা একদম নির্জন।আশেপাশে থাকা বাড়ি গুলো তে লাইট জ্বলছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না কোন লোকজন আছে।মারিয়া বলল
এই এলাকাটা একদম ভুতুড়ে টাইপের তাই না?
হুমম ঠিক বলেছো।এখানে মানুষজনের আনাগোনা খুব কম।তাই বাড়িটা এখানে কিনেছি।
আমার অবশ্য নির্জন জায়গা খুব ভালো লাগে।
মানুষের সাথে মেলামেশা করার চেয়ে নির্জন জায়গায় একা বসে প্রকৃতির সাথে কথা বলা ভালো।
একদম ঠিক বলেছেন।
দুর থেকে মারিয়া দেখলো ইরফানের মামার বাড়ির সামনে লাইট জ্বলছে।বাড়িটার আশপাশ বেশ আলোকিত লাগছে।মারিয়া ইরফানকে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলা।বাড়িটা দেখে মারিয়ার বেশ অবাক লাগছে।বাড়ির ভিতরে সবকিছু একদম পরিষ্কার।এমনকি দরজাটা দেখেও মনে হচ্ছে একদম নতুন।অথচ সে একা যখন এসেছিলো তখন এসব কিছু ছিলো না।
মারিয়া আর ইরফান আর গেটের সামনে দাড়ালো।ইরফান মারিয়াকে দরজায় নক করতে বললো।মারিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না।সে নিজে দেখেছে যে ভিতরে অবস্থা দেখে মনে হয় অনেকদিন কেউ থাকে না সেখানে এখন ওর মামা মামি আসবে কি করে সেটা দেখে অবাক হচ্ছে।তারপরেও সব সংকোচ দুর করে দরজায় নক করলো।
একটু বাদে ইরফানের মামি এসে দরজা খুলে দিলো।মারিয়া ইরফানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো।ভিতরটা দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু একদম নতুন।সব জিনিসপত্র কেমন যেন চকচক করছে।এটা কি করে সম্ভব সেটা ভেবে মারিয়া অবাক হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু সে কাউকে কিছু বুঝতে দিলো না।নিজেদের মতো করে গল্প করতে লাগলো।
ছদ্মবেশি_পিশাচ
পর্ব:-চার
পরবর্তী পর্ব । ধন্যবাদ।)
Leave a Reply