ভূতের গল্প – সত্য ঘটনা অবলম্বনে

ভূতের গল্প –

 

আমি রায়হান আমার  জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা যেটা কিনা আমার জীবনকে বদলে দিছে।আমার বাসা ভোলা কিন্তু আমি পড়া লেখার কারণে বরিশালে থাকা হয়।আমি সবেমাত্র এইচ এসসি ১ম বর্ষের ছাত্র।

ঘটনাটি ঘটে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে।হঠাৎ জরুরি কোন একটা কাজে বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন হয়।

আমার বাসা ভোলার কোন একটি গ্রামে (জায়গাটির নাম সংগতি কারনে বলা যাবে না) বরিশাল থেকে আমার বাসা ভোলা যেতে প্রায় ৫ঘন্টা লাগে।ওইদিন বরিশাল থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৭:৩০ পৌছে যায়।আর বরিশাল থেকে ভোলার শেষ লঞ্চ ৫:৩০।তাই যথারীতি গাড়িতে যাবো বলে ভাবলাম।

বরিশাল থেকে ভোলা যেতে ভেংগে যেতে হয় যারা গেছেন তারা অবশ্যই জানবেন।যাইহোক শেষ গাড়ি ছিলো ৭:২০ এ কিন্তু আমি বাসা থেকে বের হয়েছি ৭:৩০।আমি ভাবলাম অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে যাবো।

বাসে যেতে গেলে লাহার হাট যেতে হয় এবং লাহার হাট থেকে ফেরিতে প্রায় আড়াইঘন্টা সময় লেগে যায় এবং লাহারহাটের বাস বরিশালের নদীর ওপার থেকে ছাড়ে।ঘটনা এইখান থেকে শুরু নদী পাড় হতে আমি নৌকায় উঠলাম (বলে রাখা ভালো নদী পাড় হতে ৩টাকা ভাড়া লাগে)যথারীতি পকেট থেকে ৫টাকা ভাড়া বের করে দিলাম।

কিন্তু নৌকার মাঝি বললো বাবা তোমার নৌকার ভাড়া লাগবে না।আমি অবাক হয়ে বললাম কেন চাচা সবার কাছ থেকে ভাড়া রাখছেন আমার কাছ থেকে রাখবেন না কেন.?তিনি উত্তরে বললো বাবা আগেরদিন তুমি আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলা আজ তার প্রতিদান দিচ্ছি।

আমি অনেক জোড়াজুড়ি করতেও সে নিলো না।আমি ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলাম যাইহোক নৌকা নদীর ওপারে চলে আসলো।

আমি নৌকার পিছনে ছিলাম তাই সবার শেষে নৌকা থেকে নেমেছিলাম।যেই নামতে যাবো ঠিক তখনি মাঝি ডাক দিলো রায়হান বাবা সাবধানে যেও সবসময় আল্লাহকে স্মরণ কইরো বাবা সাবধানে যেয়ো সাবধান।

এমন ভাবে বলতে রইলো যেন সামনে আমার জন্য ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো মাঝি আমার নামটা জানলো কিভাবে যাইহোক আমি ভাবতে ভাবতে নৌকা থেকে নামলাম।

ঘাট থেকে বাসস্ট্যান্ড মাত্র আধামিনিট। আমি যখন বাসস্ট্যান্ডে গেলাম তখন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম রাত তখন ৮টা।বাসস্ট্যান্ডে বাস আছে ছাড়াবে ০৮:৩০।

যথারীতি গাড়িতে উঠলাম গাড়িতে যাত্রী ছিলো ১৫জন।রাতের গাড়ি এজন্য হয়তো যাত্রী কম মনে মনে ভাবতে রইলাম।সামনের দিকে ড্রাইভারের ঠিক পিছনেই বসার পর মনে হলো আমি নৌকায় ছোট একটা ব্যাগ ফেলে রেখে আসছি তাতে আম্মুর অনেক মূল্যবান ঔষধ আছে।

আমি ঘড়িতে দেখলাম ০৮:১৫বাজে।গাড়ি ছাড়তে আরও ১৫ মিনিট।আমি আর দেরি না করে সোজা নৌকার উদ্দেশ্যে ঘাটে চলে গেলাম ব্যাগের সন্ধানে।অনেক খোজাখুজি করার পরও মাঝিকে পেলাম না।

ঘাড়ির দিকে তাকালাম ০৮:২৮বেজে গেছে।আর ২মিনিটের মধ্যেই গাড়ি ছেড়ে দিবে যার কারণে ব্যাগের আশা ছেড়ে দিয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে চলে আসলাম।আমি আগেই গাড়ির সিটে যেয়ে তাকাতেই দেখতে পেলাম সেই ব্যাগটি আমার সিটের উপর রাখা।আমি একটু অবাক হলাম এটা কিভাবে সম্ভব যে ব্যাগ আমি ৩০মিনিট আগে নৈকায় ফেলে আসলাম সেটা এখানে কিভাবে আসলো এর উত্তর আমার এখনও অজানা রয়ে গেলো।

যাইহোক গাড়িতে বসে এটা ওটা ভাবতে রইলাম গাড়িটি ছাড়লো ০৮:৪০ এ।সবকিছু ঠিকঠাক বরিশাল থেকে লাহারহাট যেতে ৫০মিনিট লাগে।

১০মিনিট পর কন্টাকটার যারা তারা ভাড়া কালেক্ট করা শুরু করলো এবং বাসের সামনে থেকে তারা ভাড়া কালেক্ট করা শুরু করে।

ওইদিন সবার সামনের সীটে বসার পরও ঠিক পিছনের সীট থেকে ভাড়া কালেক্ট করতে শুরু করলো।ভাবলাম হয়তো কন্টাকটারের ভুল।সব ভাড়া উঠানোর পর কন্টাকটার ড্রাইভারের পাশে এসে তারসাথে কথা বলতে রইলো।আমি ডাকলাম মামা ভাড়া নেন কন্টাকটার বললো আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবে না মামা।

আমি জানতে চাইলাম কেন সবার কাছ থেকে তো ভাড়া নিচ্ছেন তাহলে আমারটা নিবেন না কেন উত্তরে কন্টাকটার সেই মাঝির মতো  একই উত্তর দিলো তুমি একদিন আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলা আজ আমি তার শোধ দিলাম।

আমি এবার একটু ভয় পেলাম তাই কথা আর না বাড়িয়ে চুপচাপ ভাবতে রইলাম কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।

লাহারটে পৌছাতে ৯:৩০বাজলো ফেরি  ছাড়বে ১০টায়।তাকিয়ে দেখলাম ফেরি এখনও ঘাটে আসেনি।ঘাটে আসা মাত্র দেখলাম একটা চায়ের দোকান খোলা এবং আশেপাশে একটা মাত্র চায়ের দোকান।

আমি ভাবলাম হাতে এখনও সময় আছে আমি চা খেয়ে নিই।যথারীতি চায়ের দোকানে গেলাম দোকানদার অনেক বয়স্ক মানুষ  পান্জাবি পড়া মুখে সাদা লম্বা দাড়ি।আমি কাছে যেতেই বললো বাবা চা খাইবা..?

পথে কোন সমস্যা হয়নাই তো.?

আমি বিস্মিত হয়ে বললাম কোন সমস্যা হয়নি চা দেন।তিনি আমাকে নরমাল কাচের গ্লাসে চা দিলেন।আমরা জানি দোকানে সাধারণত চা কাপে দেওয়া হয় আর চায়ের কালারটা অস্বাভাবিক  যাইহোক আমি চায়ের গ্লাসটা হাতে নিয়ে দোকান থেকে কিছুটা দুরে সরে বাসায় কল করে জানিয়ে দিলাম সব।

বাসা থেকে দোয়া দুরুদ পড়তে বললো দোকানদারের চায়ের গ্লাসের কথা বলতে  চা টা খেতে বারণ করলো ফেলে দিতে বললো।

কলটা কেটে আম্মুর কথা মতো চা টা ফেলে দিয়ে দোকানদারের কাছে গেলাম।দোকানের কাছে গিয়ে যা দেখলাম সেটা তে আমার সেন্সলেস হয়ে পড়ার মতো অবস্থা।

যেয়ে দেখি ওখানে কোন চায়ের দোকানই নেই  সব কিছু উধাও।চায়ের দোকান বলতে কিছুই নেই শুধু ফাকা জায়গা।

দোকানের পাশে একটা গাছ ছিলো ওইটা ঠিকই আছে।আমি হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পারলাম গ্লাসটি হাতে ঠিকই ধরা।অনেক ভয় নিয়ে দাড়িয়ে আছি কি করবো কিছুই বুঝছি না।

এমন সময় একটা এ্যাম্বুলেন্সের শব্দের আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসতে রইলো।যাইহোক ঘাটে এসে দেখলাম একটা এ্যাম্বুলেন্স আসছে।আমি এ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে গেলাম।

এ্যাম্বুলেন্সে ড্রাইভার ও তার সহকারি রয়েছে।তাদের সাথে কথা বলে জানলাম তারা ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে আসছে এখন তারা ফিরছেন এবং তারা পাশের গ্রামেই যাবে।

আমি কিছুটা আশ্বস্ত হলাম এবং তাদের সাথে যাবো ভাবলাম কারণ রাত্রে গাড়ি পেতে ঝামেলা।যাইহোক ঘাটে ফেরি চলে আসলো।এ্যাম্বুলেন্স যথারীতি ফেরিতে উঠলো।ফেরিতে যানবাহন বলতে শুধু এ্যাম্বুলেন্স আর সাথে আমিস বাদে ৩জন যাত্রী।ফেরী ছাড়লো রাত ১০:৪০মিনিটে।

আমি এ্যাম্বুলেন্সে ব্যাগ রেখে বসলাম এবং ড্রাইভারের সাথে কথা বললাম।হঠাৎ ফেরী বন্ধ হয়ে গেলো।আমরা ভাবলাম হয়তো যান্ত্রিক কোন সমস্যা।ফেরীর কি হয়েছে জানতে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নামলাম।

ফেরীর ইঞ্জিনের কাছে গেলাম দেখলাম কেউ নেই।ইন্জিন মাষ্টার বীচ এর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।আমরা সবাই জানি ফেরীর ড্রাইভারের সীট টা একটু উপরে হয়।আমি সিড়ির কাছে যেতেই ফেরী চলতে শুরু করলো এবং একদম মাঝনদীতে ফেরী।তারপরও আমি সিড়িবেয়ে উপরে উঠতে রইলাম ড্রাইভারের সাথে কথা বলবো বলে।

আমি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে কি মনে করে নিচে তাকাতেই যা দেখলাম তা ভাবতেই আমার এখনও গা শিউরে উঠে।নিচে তাকিয়ে দেখি এ্যাম্বুলেন্স নেই এবং কোন লোকও নেই পুরো ফেরী ফাকা।এটা দেখামাত্র আমি প্রচন্ড শকট খাই। কিছু না ভেবে আমি ড্রাইভারের দরজায় নক করি ড্রাইভারের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করার জন্য। দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিলো।

 

২-৩বার নক করার পরও দরজা ভিতর থেকে খুললো না।সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো ড্রাইভারের কেবিনে কোন মানুষ নাই।

ভূতের গল্প

ফেরীর স্ট্যারিং একা একা ডানে বামে ঘুরছে।এটা দেখে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না সেন্সলেস হয়ে ওখানেই পড়ে যায়।যখন সেন্স ফেরে তখন দেখি আমি আমার নিজ বাসার বিছানায় শুয়ে আছি তখন বিকাল ৪টা।

আমি এভাবে কিভাবে আসলাম জিজ্ঞেস করতে আব্বু বললো আমি আসতে দেরী করাই আব্বু রাত ১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং বাড়ি থেকে ৫কিলোমিটার দূরে বাসস্ট্যান্ডে রওনা দেয়।

দুই কিলোমিটার পর আব্বুর মোবাইল থেকে একটা কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলে কাকা আপনি কোন টেনশন নিয়েন না আপনি আলামিন মসজিদের কাছে জান ওখানে রায়হানকে পাবেন এইটুকু বলে লাইন টা কেটে দিল রিপলাই দেওয়ার কোন সুযেগ দিল না।

বলে রাখা ভালো আমার বাসা থেকে আলামিনের মসজিদের দূরত্ব ১০মিনিটের।এবং ওইটার পাশ দিয়ে একটু আগে আব্বু এসেছে তখন তিনি আমাকে ওখানে দেখেন নাই।

যাইহোক আব্বু তাড়াতাড়ি মসজিদে আসলেন এসে দেখলেন মসজিদের বাইরে জানাযার যে খাটটি রয়েছে তার পাশে আমি সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছি এবং ২টা জানাযার খাটের মধ্যে পড়ে আছে আমার ব্যাগটা।

এই অবস্থা দেখে আব্বু মসজিদের ইমাম সাহেবকে  ঘুম থেকে ডেকে তুলেন এবং আমাকে তাড়াতাড়ি করে বাসায় নিয়ে আসলেন।

৩-৪দিন পর আমি সুস্থ হয় যাইহোক ঘটনার পরদিন রাতে আমি কি মনে করে মানিব্যাগ চেক করতেই দেখতে পেলাম আমার মানিব্যাগে অতিরিক্ত ২০০টাকা আছে।আমার স্পষ্ট মনে আছে বরিশাল থেকে ভোলা রওনা দেওয়ার সময় আমার মানিব্যাগে ৭৪০টাকা ছিলো।

মানিব্যাগে এর চেয়ে বেশি একটাকা ও ছিলো না আর মানিব্যাগে ১০০টাকার কোন নোটও ছিলো না এখন দুটা ১০০টাকার নোট যেটা কিনা এখনও আমার কাছে রেখে দিয়েছি।

অবাক করার বিষয় হলো যে লোকটি আব্বুকে কল করে আমার অবস্থান জানিয়েছিলো আব্বুর রিসিভার কল লিষ্টটা চেক করে দেখলাম সেই নাম্বারটি ওখানে ছিলো না আরও একটি অবাক করার বিষয় হলো খোজ নিয়ে দেখলাম সেদিন রাতে ফেরী চলাচল নাকি বন্ধ ছিলো।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফেরী চলাচল যদি বন্ধই থাকে তাহলে আমি কিভাবে নদী পাড় হলাম,আর ফেরী থেকে আমার বাড়ি হচ্ছে ১০৯কিলোমিটার এত বড় দূরত্ব আমি কিভাবে অতিক্রমকরলাম।মাঝি,বাসের ড্রাইভার আমার ব্যাগ পাওয়া এমন হাজারও প্রশ্ন মনের ভিতর ঘুরপাক খেতে রইলো যার উত্তর আমার আজও অজানা।

ঘটনাটি পুরো সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা।

 

 

(ভূতের গল্প – সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্প আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

ভূতের গল্প – সত্য ঘটনা অবলম্বনে

সমাপ্ত