লাশকাটা ঘর-
লেখকঃ মো: জাবের হাসান
আমার নাম মোঃ ইব্রাহিম। আমি একজন সিনিয়র মেডিকেল স্টুডেন্ট। যেহেতু আমি একজন সিনিয়র মেডিকেল স্টুডেন্ট। যার কারণে আমার মাঝেমধ্যে পোস্ট মর্টেমের কাজ করতে হতো।
আগে পরে এই বিষয়ে অনেক ভৌতিক কথা শুনতাম। কিন্তু বিশ্বাস করতাম না। তবে ওই দিনের পর থেকে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই।
বরাবরের মতো ঐ দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল আমি ল্যাবে একটা কাজের জন্য যাই। আমার কাজ শেষ কিন্তু বৃষ্টি শেষ হওয়ার কোনো নামই নাই। যার কারণে হচ্ছে আমি ঐদিন অফিস রুমে থেকে যাই।
এরপর একসময় হঠাৎ শোনা গেল এম্বুলেন্স এর আওয়াজ। আমি থাই দিয়ে দেখছিলাম যে- খুব বৃষ্টির মধ্যে লাশবাহী গাড়ি থেকে একটা লাশ নামানো হচ্ছে মর্গে।
বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর আমি থাইয়ের পর্দাটা লাগিয়ে একটু রেস্ট করছিলাম। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আমার এসিস্ট্যান্ট আমার রুমের বাইরে থেকে নক করতে থাকে।
স্যার ভিতরে আসতে পারি?
আমি বললাম, হ্যাঁ আসো।
স্যার একটা পোস্ট মর্টেম করতে হবে।
কি বলো হঠাৎ এই সময়?
স্যার থানা থেকে কল আসছে খুব নাকি ইমারজেন্সি।
ওহ্ আচ্ছা। ঠিক আছে; সবকিছু রেডি করো আমি আসতেছি।
ঐদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। যার কারণে জুনিয়ার কোন স্টুডেন্ট আসেনি। এই জন্য আমি একাই পোস্ট মর্টেমের কাজ শুরু করি। এটা বলে রাখা ভালো। আমরা যারা পোস্ট মর্টেম করি, আমরা পোস্ট মর্টেম করার আগে ধূমপান জাতীয় কিছু না করলে আমাদের কিছু সমস্যা হয়।
যার কারণে আমিও ওই দিন এ জাতীয় কিছু গ্রহণ করি। যাই হোক, কিছুক্ষণ পর আমি পোস্ট মর্টেম রুমে যাই।
আর গিয়ে দেখি সবকিছু রেডি। যার কারণে আমি আর আমার এসিস্ট্যান্ট কে ডাক দেইনি আর। আমি পোস্ট মর্টেম কাজ শুরু করি। ডেড বডিটা ছিল একটা পুরুষের। দেখে মনে হচ্ছে আ ত্ম হ ত্যা করে মারা গেছে।
তবে পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর বুঝতে পারবো কিভাবে মৃত্যু হয়েছিল। সময় যেতে যেতে আমার পোস্ট মর্টেম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এমন সময় আমি বাহির থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পাই।
আমি একটু বাহিরের দিকে তাকাই। তবে কিছুই দেখতে পেলাম না। আমি আমার হাত’টা একটু এগিয়ে সেলাই করার জন্য যন্ত্র হাতে নিচ্ছিলাম। অমনি আমার চোখ হঠাৎ লাশের মুখের দিকে পরে।
লাশটাকে দেখে মনে হচ্ছিল লাশটা আমায় কিছু একটা বলবে এমন । সাথে সাথে বাহির থেকে আবারও একটা আওয়াজ আসলো।
আমি চোখ থেকে চশমাটা খুলে দরজার দিকে যাই। হঠাৎ পিছন থেকে কে জানি বলল, “স্যার কোথায় যাচ্ছেন? আমার কাজ তো এখনো বাকি আছে!” আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি সবকিছু স্বাভাবিক।
আমি বিষয়টা মাথায় না নিয়ে সামনের দিকে আগাইতে থাকি। এমন সময় আবার শুনতে পাই। “ও স্যার কোথায় যাচ্ছেন? আমার কাজটা শেষ করুন!”
আমি এটা শোনার সাথে সাথেই দৌড় দিয়ে দরজা থেকে বের হতে যাই। এমন সময় দরজাটা লক হয়ে যায়। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই লাশটা উঠে বসে আছে। তখনো আমি ভাবছিলাম হয়তো আমার মানসিক অবস্থার অবনতির করার কারণে আমার এরকম লাগছে।
এবার হঠাৎ করে দেখি সেই লাশটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বলছে, “স্যার আমার কাজটা শেষ করুন।” আমি যে কাউকে ডাক দিব, এই শক্তিটাও পাচ্ছিলাম না।
এদিকে লাশটা বলে যাচ্ছে সেই একই কথা, “স্যার আমার কাজটা শেষ করুন।” আর সে নিজে নিজেই তার বুক হতে মাজা পর্যন্ত সেলাই করতে থাকে।
এবার আমি নিজেকে বুঝিয়ে একটু সাহস নিয়ে দরজার দিকে ফিরে আমার এসিস্ট্যান্টকে ডাকতে থাকি। তবে বাহির থেকে কোন শব্দ পাচ্ছিলাম না। লাশটা প্রায় তার বুক থেকে মাজা পর্যন্ত সেলাই করে আমার দিকে তাকায়।
আর আমার কাছে আসতে থাকে। আর বলতে থাকে, “স্যার আমার কাজটা শেষ করুন।” এভাবে একসময় লাশটা প্রায় আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আর আমি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাই।
কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি তাকিয়ে দেখি আমারে এসিস্ট্যান্ট আমার সামনে বসে আছে। আর আমি বেডে শুয়ে আছি। আমার এসিস্ট্যান্ট বলতে লাগলো,
স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ ঠিক আছি। চিন্তার কারণ নেই। কোথায় ছিলে তুমি?
সরি স্যার আমার চোখ’টা একটু লেগে গেছিলো।
আমায় এক গ্লাস পানি দাও তো।
তবে সেই পানি কেনো যেনো আমার গলা দিয়ে নামছিলো না। আমি বললাম, কি হয়েছিল আমার? কোথায় পেয়েছো? আমার তো কিছুই মনে নেই!
স্যার, আপনি তো ল্যাবের বাহিরে পড়ে ছিলেন।
ও আচ্ছা। তখন কয়টা বাজছিলো? দেখছিলে ঘড়ি?
হ্যাঁ স্যার। তখন প্রায় রাত ৩:৪৮ মিনিট ছিলো। এমনই হবে হয়তো স্যার।
যাক বাদ দাও। ওই লাশটা কি ফ্রিজ করেছো?
আজ্ঞে না স্যার। সরি আমি আপনার সামনে বসে ছিলাম। ভাবছিলাম যদি আপনার কাজ বাকি থাকে, এই কারণে আমি আর ফ্রিজে রাখিনি।
থানা থেকে কোনো কল আসছিলো কি?
না স্যার, কল তো আসে নাই।
কি বলো কল আসে নাই? উনারা না বললো ইমারজেন্সি! এতক্ষণে তো কল দেয়ার কথা! আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাও।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে কেনো যেনো বুকটা ছটফট করছিলো আর কানে ওই আওয়াজটা বারি খাচ্ছিলো, “স্যার আমার কাজটা শেষ করুন!” মনটাকে না মানাতে পেরে উঠে দাঁড়ালাম ল্যাব রুমে যাওয়ার জন্য। গিয়ে যা দেখলাম টা বেশ শকিং ছিলো আমার জন্য। মুহূর্তেই আমার শরীর থেকে ঘাম বের হতে থাকে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এমন’টা কিভাবে হলো।
পুরো লাশটা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। হাত একদিকে। মাথা একদিকে। বডি আরেক দিকে। পিছনে ফিরে দেখি আমার এসিস্ট্যান্ট দাড়িয়ে আছে। ওর হাত পা কেমন যেনো ফুলে যাচ্ছিল। আমি বললাম।, কি সাকিব? এগুলো কিভাবে হয়েছে? কোথায় থাকো তুমি?
আমার এসিস্ট্যান্ট এই বিষয়ে কোন উত্তরই দিতে পারলেন না।
তারপর থেকে। আমি পোস্ট মর্টেমের কাজ বন্ধ করে দেই। তবে সেই রাতের কথা আজও আমার মনে পড়ে। হয়তো আজীবন রাতটা স্বরনীয় হয়ে থাকবে আমার।
শুধু একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খায়, সেই লাশটা কিভাবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হলো?
{ আরো পড়ুন – তিলকপুরের ভূতুড়ে মিঞা বাড়ি
( লাশকাটা ঘর – ভয়ানক এক অভিজ্ঞতা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)
Leave a Reply