ভয়ংকর বাসের সফর – ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা

ভয়ংকর বাসের সফর –

লেখক: Rimon Hoshen

 

নাহ্! মনে হয় আজ আর বাস পাবো না!আগে থেকে টিকিট না কেঁটে বেশ ভুল করেছি। এখন তোর আর বাড়ি ফিরাও সম্ভব নয়। মনে হয় আজ সারারাত এই বাস- টারমিনালেই  থাকতে হবে!

আমি জয়পুর হাট জেলায় আমার নিজ গ্রামে থাকি। আজ সকালে হঠাৎ আমার বোনের ফোন আসে।সে আমার যত দ্রুত সম্ভব তার কাছে যেতে বলে। আমার বোন বৃষ্টি। সে ঢাকায় থাকে। আমি আগেও বেশ কয়েকবার ঢাকায় তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। কোন বাড়ি এইরকম হ্যাপা পোয়াতে হয়নি। বুঝতে পারছি না যে, এই বাস টার্মিনালে কি শনির নজর পড়েছে নাকি!

বৃষ্টি সকালে ফোন করেছিল। সারাদিন সব ব্যবস্থা করে রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রাত ১০টা বা ১১টার বাস নিশ্চিয় পেয়ে যাবো।

জয়পুর হাট থেকে প্রথমে আমি বগুড়া আসলাম। বগুড়া টার্মিনাল থেকে বাস ধরবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় রাত ১টা বাজে। আর ঢাকার বাস তো দূরের কথা আমি এখন জয়পুর হাট যাওয়ার গাড়িও পাচ্ছি না। ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত!

আজকে কি কোন হরতাল নাকি? আমি প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছি। না কোন গাড়ির দেখা! আর না কোন মানুষের! হরতাল হলেও তো দুই একটা মানুষ দেখা যাবে! এখানে তো কোন মানুষও নেই। শুধু আমি ভূতের মত দাঁড়িয়ে আছি! পরিবেশটাও কেমন জানি ভূতুড়ে! আকাশের চাঁদ নেই।

চারপাশ অন্ধকার। দূরে একটা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে। তাও মনে হয় এখনি নিভে যাবে। হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস কানের পাশ দিয়ে বয়ে গেলো। সমস্ত গা ঝমঝম করতে লাগলো। মনে হলো

আমি বাড়ির বাহিরে বের হয়ে ভুল করেছি। মনে হয় আমার সাথে খারাপ কিছু হবে! কেমন একটা শিরশিরে আওয়াজ আসছিলো কানে। মনে হয় কেউ আমার যেন তার নজরে রেখেছে। এখুনি যেন কেউ পেছন থেকে ঝাপ দিবে আমার ঘাঁড়ে। আমি ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালাম। কোথাও কেউ নেই। ঘড়িতে দেখলাম রাত ২টা বাজে। আমার মন বলছে আমি যেন সেখান থেকে পালিয়ে যাই!

আমি পালাতে যাব এমন সময়…. এমন সময় একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। আওয়াজ কোন বাস গাড়ির। মনে হয় এদিকেই আসছে। ব্যাপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না! আমি রাস্তার দিকে তাকালাম। আর দেখলাম একটা বাস এদিকেই আসছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করার পর, বাসে দেখা পেয়ে যতটা না আনন্দ হচ্ছে! তার চেয়েও বেশি ভয় হচ্ছে!

বাসটা আমার সামনে এসে থামলো। আর বাসের ভিতর থেকে কালো মতন একজন লোক মাথা বের করে বলল,

কোথায় যাবেন?

আমি ঢাকার সাভারে যাব।

সাভারে কোথায়?

নবীনগর।

উঠে পড়ুন। আর কোন বাস পাবেন না। এই বাস নবীনগর দিয়ে যাবে।

লোকটাকে দেখতেও ভয়ঙ্কর। আর কথা বলার ধরানও ভয়ংকর! আমি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর বললাম,

না। আমি যাব না। আপনি যান।

জায়গাটা কিন্তু ভালো না। একা

আছেন। কোন বিপদ হতে পারে।

বিপদ তো সব জায়গাতেই হতে পারে!

আমি কথা বলতে বলতে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম যে, লোকটার চোখ জ্বলজ্বল করছে।

লোকটার জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখের দিকে তাকাতেই আমার মাথাটা ঘুরে উঠল। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। আমি যেন সেই অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেলাম। তারপর…।

তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর আমি চোখ খুললাম। দেখলাম যে, আমি একটা বাসের মধ্যে আছি। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?

আমি বাসে আসবো কিভাবে? আমি তো টার্মিনালে ছিলাম। আর বাসটাও মনে হচ্ছে ওই বাসটাই! বাসটা সম্পূর্ণ ফাঁকা! আর কেউ নেই! শুধু আমি।

পেছনের একটা সিটে বসে আছি। বাসের দরজা জানালা সব বন্ধ। তবুও বুঝতে পারছি বাসটা প্রচুর গতিতে চলছে।

সেই কালো চেহারার লোকটাকেও কোথাও দেখছি না। সামনের দিকে ড্রাইভার এর জায়গাও ফাঁকা! তাহলে বাস চালাচ্ছে কে?? আমি তাড়াতাড়ি সিট থেকে উঠে সামনের দিকে আসলাম। এখানে তো সত্যিই ড্রাইভার নেই!!!

আমার খুব ভয় হতে লাগলো। আমার ইচ্ছে করছে চিৎকার করতে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।

হঠাৎ মনে হল কেউ যেন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। খুব বোটকা একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। যেন অনেকটা পচা-গলা মানুষের মাংসের গন্ধ! গন্ধটা মনে হয় আমার পেছন থেকে আসছে! ভয়ে বুকের ভিতর কেমন জানি কেঁপে উঠল।

পেছনে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। আবার মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে আমার ঘাড়ের উপর হাত রাখবে। আমার কপাল বেয়ে বেয়ে ঘাম ধরতে লাগলো।

আমি আস্তে আস্তে পেছনে তাকালাম। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম…. দেখলাম যে, কেউ নেই! আমি আবার ঘুরে সামনের দিকে তাকালাম। এবার দেখি যে, সামনে ড্রাইভার আছে।

আমি ধীরে ধীরে ড্রাইভারের দিকে পা বাড়ালাম। আমি ড্রাইভারের একেবারে পিছনে এসে দাঁড়ালাম। আর ড্রাইভারকে ডাকার চেষ্টা করলাম। আমি বললাম,

এই যে, শুনছেন?

ড্রাইভার কোন উত্তর দিল না। সে এক মনে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার বললাম,

এই যে, শুনছেন??

এবার ড্রাইভার আমার দিকে পেছনে তাকালো। ড্রাইভারকে দেখামাত্র আমার সমস্ত শরীরে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। এটা তো সেই কালো মতন লোকটা। কিন্তু এর চোখ কোথায়??? এর তো কোন চোখই নেই।

চোখের জায়গাতে কালো অন্ধকার গর্ত হয়ে আছে! আমি ভয় পেয়ে পেছনের দিকে সরে গেলাম। লোকটা আমার দিকে আসতে লাগলো। বাস একা একাই চলতে থাকলো আমি ভয়ে চিৎকার করতে লাগলাম।

আমি চিৎকার করতে লাগলাম। কিন্তু আমার আওয়াজ বাসের বাহিরে গেল না। লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আর আমি ভয়ে পিছু হটতে থাকি। পিছু হটতে হটতে হঠাৎ কারো সাথে আমার ধাক্কা লাগে।

আর আবার সেই বোটকা গন্ধটা আসে। মনে হয় পেছন থেকেই আসছে। কিন্তু আমি পেছনে ঘুরতে পারছি না। আমার সামনের লোকটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে আসতে লাগলো। যেন আমার গলা চেপে ধরবে।।

লোকটার হাত যখন আমার গলার কাছে আসে, আমি তখন ভয়ে জোরে চিৎকার করি। আর চোখ বন্ধ করি।

আমি ভেবেছিলাম যে, আমি ওখানেই শেষ। কিন্তু কিছুই হলো না। আমি কিছুক্ষণ পর চোখ খুললাম। দেখলাম যে, সামনে কেউ নেই! আমি সাথে সাথে পেছনে তাকালাম। দেখলাম পেছনেও কেউ নেই!

আমি জীবনে কখনো এত ভয় পাইনি। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন কোন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখছি! তারপর দেখলাম যে, বাসটা মেইন-রোড থেকে একটা জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

চারদিকে অন্ধকার বো-বো করছে! রাতের পরিবেশ! কোথাও কোন আলোর চিহ্ন নেই। আমি একইভাবে বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি নড়তেও পারছি না। যেন আমার দু পা ওখানেই জমে পাথর হয়ে গেছে। হঠাৎ সিটের নিচ থেকে কেউ আমার পা চেপে ধরে!

আমি নিচে তাকিয়ে দেখি…. দেখি যে, একটা কঙ্কালের হাত আমার পা চেপে ধরেছে। আমি আমার পা ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। কঙ্কালের হাতটা টেনে আমায় নিচে ফেলে দিল। আমি দেখলাম বাসের সিটের নিচে একটা আস্ত কঙ্কাল! কঙ্কালের সাদা খুলিটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি তাড়াতাড়ি উঠে বাসের সামনের দিকে গেলাম। বাসটা ঝড়ের বেগে ছুটছে! অন্ধকারের জন্য সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। চারপাশে ঝোপঝাড় আর গাছপালা। তার মধ্যে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে বাসটা। হঠাৎ আমি লক্ষ্য করলাম যে, পেছনে সিটে কেউ যেন বসে আছে৷ আমি তার কাছে যাওয়ার সাহস পেলাম না। দূর থেকেই বললাম,

কে…কে…কে তুমি?

সে কোন কথা বলল না। ওর মুখটাও পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছি না। তবে মনে হয় কোন মেয়ে! হঠাৎ মেয়েটা সিট থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। মেয়েটা সারা শরীর ধবধবে সাদা। মনে হয় ওর শরীর থেকে কেউ রক্ত শুষে নিয়েছে। মেয়েটা আমায় বললো,

কেন উঠেছিস এই বাসে? তোর মত আমিও এই বাসে উঠেছিলাম। আর দেখ আমার কি অবস্থা হয়েছে! এখন তোরও একই অবস্থা হবে!!

মেয়েটা কাছে আসতেই বাসের দরজা খুলে যায়। আর আমি দরজা দিয়ে বাহিরে ঝাঁপ দেই। তারপর আমার কিছু মনে নেই।

পরদিন সকালে আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি নবীনগর একটা রাস্তার উপর পড়েছিলাম।

 

 

{ আরো পড়ুন – শশ্মান ঘাট – ভয়ানক এক ভৌতিক ঘটনা

 

( ভয়ংকর বাসের সফর – ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)

 

ভয়ংকর বাসের সফর – ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা

” সমাপ্ত”