জমিদার বাড়ির অভিশপ্ত বিয়ে – ভৌতিক ঘটনা

জমিদার বাড়ির অভিশপ্ত বিয়ে –

জমিদার বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে যে মেয়ের সাথেই ঠিক হয় সেই মেয়েই মারা যায়। গত দুই মাস আগেও পাশের গ্রামের এক মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের দুইদিন আগে রাতে বেলায় বিষধর সাপের কামড়ে মেয়েটা মারা যায়।

গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৪ জন মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে কিন্তু ১৪ জন মেয়েই বিয়ের কিছুদিন আগে মারা গেছে। কেউ সাপের কামড়ে তো কেউ পানিতে ডুবে তো কেউ আগুনে পুড়ে।

তাঁর ছোট দুই ভাই দের ও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর জন্য কেউই বিয়ে করতে পারছে না।

চোখ বড় বড় করে বিস্ময়ের সাথে খালাতো বোনের বলা কথাগুলো শুনছিলো চন্দ্র।

কিন্তু বুবু তুমি কিভাবে জানো এইসব? তুমি তো শহরে থাকো। – আরে পাগলী তোর দুলাইভাই শহরে জমিদারের বড় ছেলের একটা দোকানে চাকরি করে । উনিই ওই জায়গার অন্য কর্মচারীর কাছে এইসব শুনেছে। জমিদার পরিবারের ওপরে নাকি কিসের অভিশাপ আছে।

জমিদারের আগের প্রজন্মকে কে নাকি অভিশাপ দিয়েছিলো যে পরবর্তী প্রজন্মে তাঁদের বংশ নাকি নিরবংশ হয়ে যাবে।

জানিনা খালা কি বুঝে তোর বিয়ে ওই অভিশপ্ত পরিবারে ঠিক করলো। আর তুইও কি বুঝে রাজি হয়ে গেলি। তোর নিজের জীবনের জন্য কি একটুও মায়া নাই।

বুবু আম্মা বলছে তাই রাজি হইছি। আর তুমি তো জানোই আমি আম্মারে অনেক ভালোবাসি।

শাহনাজ চন্দ্রকে খুব ভালোমতেই চেনে। সে জানে চন্দ্র তাঁর মায়ের জন্য জীবনও দিতে পারে। তাই সে যতই বলুক চন্দ্র তাঁর মায়ের কথার আবাধ্য হবে না। তাই শাহনাজ অগত্যা চন্দ্রর মাকে মানে তাঁর খালার কাছে গেল। চন্দ্র নামক মেয়েটার বয়স মাত্র বিশ বছর।

সে তার বাবা মায়ের প্রথম কন্যা। জন্মের পর নাকি তার এত সুন্দর দুধে আলতা গায়ের রং দেখে তার বাবা তার নাম চন্দ্র রেখেছিলো। জমিদারের এক সামান্য কর্মচারী জমির ব্যাপারীর ঘরে এত সুন্দর মেয়ে জন্ম নেবে তা নাকি কেউ কখনো ভাবতে পারেনি।

কারণ তার স্ত্রী রাহেলা বানু ও ছোট দুই কন্যার গায়ের রং ফর্সা হলেও চন্দ্রের রূপের সামনে তারা কিছুই না। চন্দ্র ছোটবেলা থেকেই তার বাবার খুব আদরের।

কিন্তু তার বাবা তিন বছর আগেই স্ট্রোক করে বিছানায় শয্যাশয়ী হয়েছে। তারপর থেকে জমিদার বাড়ি থেকে আসা সাহায্য দিয়েই তাঁদের সংসার চলে। কিন্তু তার মা কেন যেন তাকে সহ্য করতে পারে না।

বোঝার ক্ষমতা হওয়ার পর তার মা কোন সময় তাকে আদর করে বুকে জড়িয়ে নেই নি বা জোর হলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেই নি। সে জানে না কেন তার মা তার সাথে এমন করে।

তার ছোট বোনদের তো অনেক আদর করে। জমিদার পরিবারের বড় ছেলের হবু বৌয়েরা আগে মারা গেছে জেনেও শুধু মাত্র মায়ের কথা রাখার জন্য সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।

সে ইন্টার পর্যন্ত পড়েছে।তার ইচ্ছে ছিলো সে একটা হাঁস মুরগির ফার্ম দেবে আর একদিন সাবলম্বী হয়ে তার বাবা মা আর বোনদের খেয়াল রাখবে।

কিন্তু কিছুদিন আগেই জমিদার বাড়ির বড় মালকিন এসে বলল তারা চন্দ্রকে বৌ করে নিতে চায়। বড় মালকিন এ কথাও বলেছে চন্দ্র জমিদার বাড়ির বৌ হয়ে গেলে তারা চন্দ্রের মাকে ৩০ লক্ষ টাকা দেবে। চন্দ্রের মাও এ কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।

কিন্তু চন্দ্র যখন রাজি হতে চাইলো না তখন তার মা বললো সে রাজি না হলে নাকি তার মা বিষ খাবে।

তাই মায়ের মুখের দিকে চেয়ে সে নিজের স্বপ্নগুলোকে বাক্স বন্দি করে বিয়ের জন্য রাজি হলো। রাহেলা বানু মাটির রান্নাঘরে বসে উনুনে জাল দিচ্ছিলো। তখনি তার পাশে শাহানাজ এসে বসলো।

ও খালা তুমি কি বুঝে চন্দ্রের মতো এত সুন্দর মেয়েকে ওই পরিবারে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছো। এর আগেও তো কত ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। তখন তো বলতে ওকে ভালো ঘরে বিয়ে দিলে ওর বাকি দুই বোনেদের ও মনে রাখবে না।

ও ওদের নিচু চোখে দেখবে। তাহলে এখন জমিদার পরিবারে বিয়ে দেয়ার জন্য রাজি হয়েছো কেন?

তুই বেশি কথা কস।আমরা হেগো দয়ায় খাইয়া পইরা বাইচ্চা আছি। হেরা যদি আমগো মাইয়ারে বৌ কইরা নিতে চায় তাইলে তো আমগো সাত পুরুষের কপাল।

আর বড় মালকিন কইসে চন্দ্র হেগো বাড়ির বৌ হইলে হেই ত্রিশ লক্ষ্য টাকা দিবো। ওই টাকা দিয়া আমার বাকি দুই মাইয়ারেও ভালো জায়গায় বিয়া দিতে পারমু।

তহন চন্দ্র ওগো মনে না রাখলেও সমেস্যা নাই। -খালা তুমি কি জানো না জমিদার পরিবার যে অভিশপ্ত। জমিদারের বড় ছেলের সাথে যে মেয়েরই বিয়ে ঠিক হয় সেই মেয়েই মারা যায়।

চন্দ্রর জীবন কিভাবে তুমি এত বড় বিপদের মধ্যে ফালাইতে চাইতেসো। – হুন। হায়াৎ হইলো আল্লাহর হাতে। ওই মাইয়াগো হায়াৎ ওই পর্যন্তই ছিল তাই হেরা মরসে।

যদি চন্দ্রের হায়াৎ ও কম হয় তাইলে ওয় ও বাঁচবো না। কিন্তু ও মরার আগে তো ওর বইনের ভবিষ্যত গইরা যাইতে পারবো। শাহনাজ বুঝতে পারলো রাহেলা বানুর সাথে কথা বলাই বৃথা। এই বিয়ে এখন আর কোনোমতেই আটকানো যাবে না।

শাহনাজ মনে মনে চন্দ্রের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিধাতার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো ।

এই ছোট। একটু উপরে আয় তো। স্বর্ণের সেই চেইন টা কোথায়?আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। আপা তুমি ঐটা খুঁজে পাবে কিভাবে?ঐটা তো আমি কালই পালিশের জন্য সেকড়ার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।

ভালোই করেছিস। বধুবরণের সময় ওই চেইন দিয়েই বরণ করে বউকে ঘরে তুলতে হবে। -কিন্তু আপা এবার বৌ বরণ করে ঘরে তুলতে পারবো তো। গত কয়েক বছর ধরে তো সব ঠিক হয়েও শেষ মুহূর্তে এসে সব শেষ হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে ওই ১৪ টা মেয়ের কথা মনে পড়লে মনে হয় আমাদের পরিবারের জন্যই তারা তাঁদের জীবন হারিয়েছে।

অতি ভয়ের সাথে আমেনা বেগম তার বড় যা শিরিন বেগমকে কথাগুলো বললো। আমেনা বেগমের কথা শুনে শিরিন বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, – কি করবো তুই ই বল।

প্ৰত্যেক বারই মনে হয় আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। কিন্তু প্ৰত্যেকবারই আশাহত হয়। আমারো অনেক মায়া লাগে ওই মেয়ে গুলোর জন্য কিন্তু কি করবো বল আমিও যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আমি আম্মাকে কথা দিয়েছিলাম যে এই চৌধুরী বংশকে আমি কখনোই ধ্বংস হতে দিবো না।

তার জন্যই তো এবার কোনো উপায় না পেয়ে নিজেদের টাকা আর ক্ষমতা ব্যবহার করলাম। যদিও টাকার বিষয়টা সম্পর্কে আমার ছেলে কিছু জানে না।ও জানলে কোনোমতেই এ বিয়ে ও করবে না।

নিজের বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করার টাকা রাহেলা বানুকে দেবো। কারণ পারিবারিক একাউন্ট থেকে টাকা নিলেই ও জিজ্ঞেস করবে। যদিও এই রাহেলা বানুকে আমার একটুও পছন্দ হয় নি।

কিন্তু কি আর করার এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। – তবে যাই বলো আপা চন্দ্র মেয়েটা কিন্তু ভারী মিষ্টি। কি সুন্দর টানা টানা চোখ, সরু নাক, গোলাপের পাঁপড়ির মতো ঠোঁট।

 জমিদার বাড়ির অভিশপ্ত বিয়ে

ওর নামের মতোই ওর রূপ। -সেটা ঠিক বলেছিস। আমার জীবনে আমি এত সুন্দর মেয়ে মানুষ দেখিনি। যেন স্বর্গের অপ্সরী। এখন শুধু একটি কামনা এই মেয়েটা যেন তার নামের মতোই আলো দিয়ে আমার ছেলের জীবন আর এই জমিদার বাড়িকে আলোকিত করে দেয়।

নিস্তব্ধ এক নদীর পারে সাদা পাঞ্জাবি পড়া এক শ্যামবর্ণ পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। কপালে তার চিন্তার রেখা। বেশ কিছু দূরেই তার জিপটা দাঁড়িয়ে। হঠাৎই অন্ধকারে তার পিছনে এসে কেউ দাঁড়ালো।

তুই এসে পড়েছিস। ঐদিকের ব্যবস্থা কি হলো। -অবস্থা বেশি ভালো না। মারতে মারতে রক্ত বের করে ফেলেছি কিন্তু কিছুই বলছে না। কোনো মোটেই মুখ খুলছে না যে কে তাকে পাঠিয়েছে।

আর যেখানে লোক পাঠাতে বলেছি ঐখানে? – জি লোক পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় ১০ জনের মতো। কারো বোঝার সাধ্য নেই যে ওরা আপনার লোক।

ঠিক আছে। গিয়ে জিপ স্টার্ট কর। বাড়িতে যাবো। শ্যামবর্ণের পুরুষের কোথায় সায় জানিয়ে ইমন নামক যুবকটি চলে গেলো। সে যেতেই হাঁটা শুরু করলো সাফোয়ান চৌধুরী নামক শ্যামবর্ণের পুরুষটি।

উজানপুর নামক এই গ্রামটির পাশ থেকেই বয়ে গেছে চন্দ্রকলা নামক নদীটি।

আর চৌধুরী পরিবার হচ্ছে এই গ্রামের জমিদারদের বংশ। জমিদারি প্রথা অনেক আগে শেষ হলেও চৌধুরী পরিবারের প্রভাব প্রতিপত্তি এখনো কমে নি।

এই জন্য এখনো চৌধুরী পরিবারকেই এই গ্রামের হর্তাকর্তা ভাবা হয়। চৌধুরী পরিবারের বড় ছেলে হচ্ছে সাফোয়ান চৌধুরী।

ত্রিশ বছর বয়সের এক বলিষ্ঠবান পুরুষ। সূর্যের মতো কঠোর তার ব্যাক্তিত্ব। চৌধুরী পরিবারের আরো দুইজন ছেলে রয়েছে। যদিও তারা উজানপুরে থাকে না।

বিশ বছর বয়সেই বাবা আর চাচাকে হারিয়ে চৌধুরী পরিবারের হাল ধরেছে। তাই এত দায়িত্বের চাপে দিন দিন যেন সে আরো রুক্ষ আর কঠোর হয়ে উঠেছে।

চন্দ্রকে একটা লালপেড়ে হলুদ শাড়ী পড়ানো হয়েছে। সাথে নিজেদের বাগানের গাঁদাফুল…

 

লেখক: লামিয়া ইসলাম

{ আরো পড়ুন –মরা বাড়ি গেলেই বিপদ!

( জমিদার বাড়ির অভিশপ্ত বিয়ে গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)