লালবাগ কেল্লা –
লেখক: আহনাফ হোসেন মুশফিক
হাসান সাহেব পেশায় একজন চাকুরীজীবী, সম্প্রতি তাকে ঢাকার লালবাগে সিফট করা হয়েছে, ওনার বাসা থেকে অফিস অনেকটা দূরে হয়ে যায়, তাই তিনি পরিবার সহ লালবাগে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
যেমন ভাবা তেমনই কাজ, পর দিন তিনি চলে আসেন লালবাগে বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে। হাসান সাহেব মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পান, তাদেরকে মধ্যবিত্তই বলা যেতে পারে!
তিনি এসেছেন ভারা বাসা খুজতে, তার পরিবারে মোট ৪ জন মানুষ! বড় ছেলে রবিন, ছোট মেয়ে আয়েসা ও তার স্ত্রি, বাসা খুজতে খুজতে দুপুর হয়ে যায় কিন্তু হাসান সাহেব তার মনের মত কোনো বাসাই পাচ্ছিলেন না।
ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে হাসান সাহেব শেষ
মেষ লালবাগের মুঘল দূর্গে (আওরঙ্গবাদ কেল্লা) গিয়ে বসেন, হুট করেই তার চোখ কেল্লার সাথেই একটা দুইতলা বাসার দিকে পরে! বাসাটা অনেক সুন্দর খোলা মেলা, হাসান সাহেব ঢাকা শহরে এতো সুন্দর খোলা মেলা বাসা কখনো দেখেননি! তাই উনি কাছে গিয়ে বাসাটি ভালো মত দেখতে থাকেন, বাসাটা অনেক পুরনো! তাই হয়তো এতো খোলা মেলা! পুরনো হওয়ায় দেখে অনেক ময়লা মনে হচ্ছে।
তখনই একজন বয়স্ক লোক হাসান সাহেবের পাশে এসে দাঁড়ায়! উনি বলে
কি সাহেব? বাসাটি কি পছন্দ হয়েছে?
আজ্ঞে হ্যা!
তো নিয়ে নেন ভারা?
এতো সুন্দর বাসা ভারা নেওয়ার মত পর্যাপ্ত টাকা নেই আমার কাছে!
আমি এই বাসার বাড়ি ওয়ালা! কয়েকদিন পরেই আমার ছেলের সাথে কানাডায় চলে যাবো, বাসাটা আমার আব্বা বানিয়েছিলেন, উনার এরকম রাজা-বাদশাদের দূর্গ অনেক পছন্দ তাই উনি এমন জায়গায় বাসাটি বানিয়েছেন যেখান থেকে এই কেল্লাটি খুবই ভালো ভাবে দেখা যায়! কিছুদিন আগেই আমার আব্বা ই*ন্তে*কা*ল করেছেন।
আর আমিও কানাডায় কয়েক বছর থাকবো! আপনি চাইলে বাসাটি নিতে পারেন, আপনার যেই কয়দিন ইচ্ছে থাকেন, চলে যাওয়ার আগে অল্প কিছু টাকা দিয়ে গেলেই হবে।
(এতক্ষণ হাসান সাহেব সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন)
জি অবশ্যই! কিন্তু এতো সুন্দর বাসা এতো দিনে কেউ ভারা নেয়নি কেন?
অনেক পুরনো বাসাতো, তাই সবাই বলে এখানে নাকি খারাপ কিছু বসবাস করে!
ওহ আচ্ছা! অবশ্য আমার পরিবারে কেউ ই এগুলোতে ভয় পায় না।
তাহলে তো ভালোই হলো! আর বাসার ভিতরে একটু নোং*রা, অনেকদিন পরে ছিল তো তাই, আপনারা ওঠার সময় একটু পরিষ্কার করে নিয়েন।
(তিনি বাসাটি ভেতর থেকে না দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন)
আচ্ছা এটা কোনো ব্যাপার না। তাহলে আমরা কালকেই আসবো।
আচ্ছা ঠিক আছে!
এই বলে বৃদ্ধ লোকটি বিদায় নেয়। সন্ধা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে! গার্ড রা সবাইকে কেল্লা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বলছে, হাসান সাহেব বেরহয়ে দ্রুত বাসার দিকে রওনা দেন, ওনাদের বর্তমান বাসা ঢাকার শাহজাহানপুর এ। তিনি বাসায় পৌঁছানো মাত্রই তার স্ত্রি তাকে জিজ্ঞেস করেন,
কোনো বাসা পেলেন?
তোমাদের কল্পনাকে হার মানাবে এমন বাসা পেয়েছি!
আচ্ছা! তাই নাকি?
হ্যা! ডুপ্লেক্স বাড়ি
এতো টাকা পেলেন কোথায়?
তা পেয়েছি কোনো ভাবে।
এরপর হাসান সাহেব সব কিছু খুলে বলেন। এরই মাঝে রবিন তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরেছে! ও কলেজ এ পড়ে, খুবই শান্ত ও নম্র-ভদ্র একটা ছেলে রবিন!
এতো দেরি করে ফিরলি কেন?
আজকে এক বন্ধুর বার্থডে ছিল! ওর বাসায় গিয়েছিলাম।
ওহ আচ্ছা! যাইহোক কাপর গুছিয়ে নে।
কেন?
কালকে আমরা নতুন বাসায় শিফট হবো!
কোথায় নিয়েছো বাসা?
কালকেই দেখবিনে, তোর খুবই পছন্দ হবে যায়গাটা।
আচ্ছা ঠিক আছে!
এই বলে রবিন তার রুমে চলে যায়। আসলে রবিন রাজা-বাদসাদের প্রাসাদ ও রহস্য রোমাঞ্চ, অনেক পছন্দ করে, আর ওদের নতুন বাসাটাও কেল্লার একদম সাথেই!
পরদিন সকাল বেলা তারা সব কিছু গুছিয়ে নতুন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পৌঁছানোর পর হাসান সাহেব এর স্ত্রি বাসাটি দেখে একটু ভয় পায়!
কি গো? এটা কেমন বাসা দেখলে?
কেন পছন্দ হয়নি?
না মানে, কেমন জেন ভুতুরে ভুতুরে লাগছে!
আমরা একটু পরিষ্কার করে নিলেই সুন্দর লাগবে দেখতে।
আচ্ছা!
পরে হাসান সাহেব রবিন কে ওর রুম ঠিক করে দেয়! রবিন রুম এ ঢুকে একটু অবাক হয় এতো বড় রুম দেখে! কিন্তু তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে বারান্দার দরজা খোলার পর, ও দেখে ওর বারান্দা থেকে সম্পূর্ণ কেল্লাটি দেখা যাচ্ছে! ও ওর বাবাকে ধন্যবাদ যানায় এমন যায়গায় বাসা নেওয়ার জন্য।
বিকেল বেলা রবিন ও তার ছোট বোন আয়েসা বের হয় কেল্লাটি ঘুরে দেখার জন্য! ওরা পুরো কেল্লা টি ভালো করে ঘুরে দেখে! তখনই রবিন এর নজর কোণায় একটা বন্ধ করা গেইট এর উপর পরে।
ও ওই গেইট এর কাছে যায়, গেইট টার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে ও! আর কিছুক্ষন পরই ও গভির কোনো এক চিন্তায় আচ্ছন্য হয়ে যায়, হটাৎ করেই কেউ একজন রবিনকে পেছন থেকে ডাক দেয়!
রবিন পেছনে ফিরে দেখে ওর বয়সি একটি ছেলে, কিন্তু ওকে দেখতে বিদেশিদের মত লাগছিল! তখন ওই ছেলেটি বলে,
মনে হচ্ছে অধীর আগ্রহে দেখছো?
হ্যা! আসলে এটার ভিতরে কি আছে তা বোঝার চেষ্টা করছি!
ওহ! তাহলে আমি ই বলে দেই,
এরপর ওই ছেলেটি এটার সম্বন্ধে বলতে শুরু করে, আগের দিনের রাজা বাদশাহ রা তাদের প্রাশাদ এ কিছু সুরঙ্গ বানিয়ে রাখতেন। যাতে করে তাদের পরাজয় এর সময় তারা এই সুরঙ্গ গুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। এই গেইটের ভেতরও এরকম অনেক গুলো সুরঙ্গ আছে!
অনেক গুলো সুরঙ্গ বানাতে হতো কেন?
যাতে শ*ত্রু*রা বুঝতে না পারেন যে রাজা কোনটি দিয়ে পালিয়েছেন!
তাহলে এখানে তালা মারা কেন?
এরপর ছেলেটি বিস্তারিত বলতে শুরু করে। প্রচলিত আছে এইখানে এমন একটা সুরঙ্গ আছে যেটার ভেতরে কেউ একবার গেলে সে আর কখনো ফিরে আসে না। এমন কি বিজ্ঞানীরা এই সুরঙ্গের ভিতরে দুইটি কুকুর পাঠিয়েছিল!
কিন্তু সেই কুকুরগুলো ও কখনো ফিরে আসেনি, এরপরে তারা আবার দুইটি কুকুরকে চেইন দিয়ে বেঁ*ধে পাঠিয়েছিল, কিন্তু তারা সেই চেইন ধরে টান দিলে শুধু চেইন ফিরে আসে কুকুরগুলো ফেরেনি। এরজন্য বিজ্ঞানীরা মনে করত এই সুরঙ্গের ভিতরে কোনো ধরনের গ্যা*স আছে যা কোন জীবজ*ন্তুকে গ*লি*য়ে দেয়, তাই সরকার এই জায়গাটাকে নিষিদ্ধ করেছে।
আর আজও এই সুরঙ্গটি এক ঝাঁক রহস্য নিয়ে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
এইসব শুনে রবিনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়, সে মনে মনে ভাবে যেভাবেই হোক আমার এই সুরঙ্গের ভেতর যেতে হবে আগেই বলেছিলাম রবিন কিন্তু প্রচুর রহস্য প্রেমী।
তাদের এই কথোপকথনের মাঝেই গার্ডরা সবাইকে কেল্লা থেকে বেরিয়ে যেতে বলতে থাকে! তখন সেই ছেলেটি রবিন এর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়, কিন্তু রবিন আরও মনোযোগ দিয়ে সুরঙ্গের গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিল! তখন তার বোন আয়েসা তাকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য ডাকে, এরপর রবিন আয়েসা কে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
কিন্তু ও ওর মাথা থেকে কোনোভাবেই সেই সুরঙ্গের রহস্যের কথা সরাতে পারছেনা!
মাগরিবের নামায পরেই ও ওর ল্যাপটপ টা নিয়ে বসে পরে, ও ইন্টারনেট এ অনেক্ষন যাবৎ ঘাটা ঘাটি করে এই কেল্লার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পারে। এই কেল্লাটির নির্মাণ কাজ অনেক বারই ধরা হয়েছিলো কিন্তু কেউ এটির কাজ সম্পুর্ন করতে পারেনি! তাই মানুষ এই কেল্লাটিকে অশুভ ভাবে।
রবিন কেল্লা সম্পর্কে জানতে পারলেও সেই সুরঙ্গের ব্যাপারে বেশি কিছু জানতে পারেনি। তাই ও পৃথিবীতে থাকার সমস্ত প্রাসাদের সুরঙ্গ সম্বন্ধে খোজ নিতে থাকে! সেখানেও ও অল্প কিছু তথ্য পায়।
এই সুরঙ্গ গুলোর বের হওয়ার রাস্তা অনেক গুলো থাকতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে ৩ টা রাস্তা অবশ্যই থাকবে, একটি দিয়ে প্রাসাদের দেওয়াল এর বাইরে যাওয়া যায়, আর একটি দিয়ে কাছের কোনো নদির পাসে যাওয়া যায়, এবং পরের টি দিয়ে অন্যকোনো এক প্রাসাদ এ যাওয়া যায়, আর বাকি গুলো যেকোনো যায়গার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে।
এরপর ও চিন্তা করে এই তিনটা রাস্তার কথাই এই কেল্লার সাথে মিলে যায়, এই কেল্লার পাসেই রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী, তার থেকে কিছু দূরেই জিঞ্জিরা প্রাসাদ, আর দেওয়াল এর বাইরের গেইট টা যে কোনো জায়গায় থাকতে পারে!
রবিন ভাবে – যে ভাবেই হোক এখন আমার এই প্রাসাদের বাইরে থাকা গেইট টা খুজে বের করতে হবে!
রবিন তারাতারি করে বাসাথেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে ওর সব থেকে কাছের বন্ধু আশরাফ এর বাসায় যায়, ও গিয়েই আশরাফ কে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে!
আসলে ওরা দুই বন্ধুই রহস্য প্রেমী! আশরাফ রবিন এর কথা শুনে বলে
আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু তুই কি করে ওই গেইট খুজে বের করবি?
আগে তোর কাছে যেই ক্যামেরা ড্রোন টা আছে সেটাকে রাতের বেলা সবার চোখের আড়ালে কেল্লার ভিতরে ওই সুরঙ্গের কাছে পাঠিয়ে দেখি কি আছে ঐখানে!
আচ্ছা তাহলে এই কাজটা কালকে করতে হবে।
কিন্তু কেন?
আমার ড্রোন টা আমার এক কাজিন গ্রামে নিয়ে গিয়েছে! ও কালকে সকাল এ আসবে!
আচ্ছা ঠিক আছে! তাহলে তুই কালকে রাত ১০ টার সময় আমার বাসায় চলে আসিস,
আচ্ছা!
এই বলে রবিন তার বাসায় ফিরে যায়! ও সারা রাত ঘুমাতে পারেনা এই সুরঙ্গের কথা ভেবে।
পরদিন ঠিক রাত ১০ টার সময় আশরাফ ওর ক্যামেরা ড্রোন টা নিয়ে রবিনদের বাসায় চলে আসে।আশরাফ ও রবিন দুজনেই খুব এক্সাইটেড ওই সুরঙ্গের ভেতর কি আছে তা দেখার জন্য। অবশেষে তারা ড্রোন টাকে সুরঙ্গের কাছে পাঠাতে থাকে! ড্রোনটিকে আশরাফ রিমোটের সাহায্যে ঘরে বসে কন্ট্রোল করছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ড্রোনটি সুরঙ্গের গেইট এর সামনে চলে আসে।
তখনই আশরাফ খেয়াল করে ড্রোনের কন্ট্রোল সিগন্যাল ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে! কন্ট্রোল সিগন্যাল কমে সাধারণত দুইটি কারণে, এক হচ্ছে রেইঞ্জ এর বাইরে চলে গেলে, আর দুই হচ্ছে আশেপাশে হাই ভোল্টেজের কোন বৈদ্যুতিক লাইন থাকলে।
আশরাফের ড্রোন ১ কিলোমিটার রেঞ্জ পায়, কিন্তু রবিনদের বাসা থেকে সেই সুরঙ্গের গেইট হাফ কিলোমিটারেরও কম, আর সেখানে কোনো সাধারণ লাইন ও নেই হাইভোল্টেজ তো দূরের কথা!
দোস্ত, ড্রোনের সিগনাল আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে! ড্রোন টাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।
এতখানি এসে ও যদি না দেখতে পারি তাহলে একটা আফসোস রয়ে যাবে! তুই বরং গেইট এর ভিতর ঢুকা, যদি সিগনাল লস হয়ে যায় তাহলে আমরা দায়িত্বে থাকা গার্ডকে কিছু টাকা দিয়ে ড্রোন টাকে আবার নিয়ে আসবো নে।
আচ্ছা!
এই বলে আশরাফ ড্রোন টাকে ধীরে ধীরে গেইটের উপর দিয়ে সুরঙ্গের দিকে নিতে থাকে। জায়গাটা অনেক অন্ধকার হওয়ার কারণে ড্রোনের লাইট দিয়েও কোন কিছু ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল না!
এরপর তারা সুরঙ্গের প্রবেশদ্বার দেখতে পায়। যেটাকে মোটা লোহার খাঁচার মত দরজা দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে!
দরজা টি মাটির সাথে লাগানো! (সাধারণ দরজা যেমন খাড়া দেওয়াল এর সাথে থাকে, কিন্তু ওই দরজাটা মাটির সাথে লাগানো) ওই দর্জার ফাক দিয়ে তারা ভেতরে কি আছে তা দেখার চেষ্টা করছিল!
তখনই তারা অন্ধকারের মধ্যে হালকা হালকা দেখতে পায় কেউ একজন পুরোনো দিনের সৈনিকদের পোশাক পরিধান করে সুরঙ্গের ভেতর থেকে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে!
এরই সাথে সাথে ড্রোনের সিগনাল রেঞ্জ একদম কমে যায়! আশরাফ অটো রিটার্ন বাটন বার বার চাপছে! কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না! ড্রোনের সিগনাল হারালে কন্ট্রোল ও ভিডিও ফুটেজ পাঠানো বন্ধ করে দেয়! কিন্তু আশরাফের ড্রোন ভিডিও ফুটেজ পাঠাচ্ছে কিন্তু কন্ট্রোল হচ্ছেনা!
তারা ওই নিচে থেকে উঠে আসা মানুষ টাকে দেখে ভয় পাচ্ছিলো! ওই মানুষটা ড্রোনের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে ও ওই ড্রোনের ভেতর থেকে আশরাফ ও রবিনকে দেখতে পাচ্ছে!
লোকটা সেই লোহার খাঁচার মতো দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাগ্যিস তখনই ড্রোনের অটো রিটার্ন টা কাজ করে ও ড্রোন ফিরে আসতে থাকে।
এই অটো রিটার্ন এর কাজ হচ্ছে! এটা একটা বাটন যা রিমোটের সাথে থাকে! এই বাটনে ক্লিক করলে ড্রোনটি যে স্থান থেকে উড়েছে আপনা আপনি আবার সেই স্থানে ফিরে আসে।
ড্রোনটি ফিরে আসছে! তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু তখনও তাদের মধ্যে আতঙ্ক! সুরঙ্গের ভিতর দেখা সেই মানুষটি কে ছিল? সেকি সাধারণ কোন মানুষ যে সেই সুরঙ্গের ভেতর ফেঁসে গেছে এবং সে আমাদের কাছে সাহায্য চাচ্ছে? নাকি এটা অন্যকিছু?
আশরাফ চেক করে দেখে ড্রোনের থাকা ম্যামোরি কার্ড এ কোনো কিছু রেকর্ড হয়নি! আসলে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ও রেকর্ডার অন করতে ভুলে গিয়েছিলো।
তাদের এই কাজ করতে করতে রাত ১১ টা বেজে যায়। তখন আশরাফ বলে!
ভাই তাইলে আজকে আমি গেলাম! অনেক রাত হয়ে গেছে, আর দেরি করলে আমাদের বাসার গেইট লাগায় দিবে।
আচ্ছা ঠিক আছে! যা তাহলে।
আল্লাহ হাফিজ, আর তুই নিজের একটু খেয়াল রাখিস!
এই বলে আশরাফ চলে যায়, রবিন ও খেয়ে দেয়ে শুয়েপরে, ও শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে থাকে ওই জিনিস টা কি ছিলো? ওই টা যদি কোনো সাধারণ মানুষ হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ওনাকে সাহায্য করতেই হবে। – নাহ! এভাবে পারা যাচ্ছেনা! আমার যেভাবেই হোক দেওয়ালের বাইরে থাকা সুরঙ্গের দরজাটা খুজে বের করতেই হবে।
এই ভাবতে ভাবতে ও ঘুমিয়ে যায়।
রাত ঠিক ২ টার সময় কোনো এক গানের সুরে ওর ঘুম ভেঙে যায়। ও উঠে বসে,
আরে ধুর! এতো রাতে কে এই গান শুনছে?
এই বলে ও বারান্দায় যায়, কিন্তু ও কাওকেই দেখতে পায়না তখনই ওদের বাসার কলিংবেল বেজে উঠে!
কিরে! এতো রাতের বেলা কে আসলো?
ওর বাবা-মা আর ছোটো বোন ঘুমিয়ে রয়েছে! ও কাউকে ডাক দেয়না, একাই ও দর্জা খুলতে এগিয়ে যায়! দর্জাখুলে দেখে সামনে আশরাফ!
বন্ধু তুই? তুই বাড়ি যাছ নাই?
আশরাফ হাপাচ্ছে! মনে হচ্ছে কেও ওকে এতক্ষন তারা করেছে!
আশরাফ প্রচুর হাপাচ্ছে! ও কোন একটা জিনিস দেখে খুবই ভয় পেয়েছে, রবিন ওকে ওর রুমে নিয়ে জায়। একগ্লাস পানি দিয়ে বলে,
তো বল কি হইছে? এত হাঁপাচ্ছিস কেন?
(আশরাফ একটু শান্ত হয়ে বলা শুরু করে)
তোর বাসা থেকে বের হওয়ার পর, মনের আতঙ্কটাকে দূর করার জন্য আমি পাসের টং দোকানে গিয়ে একটা সি*গা*রে*ট ধরাই, এরপর একটা গলির ভিতর ঢুকি!
আজকে কেন জানি রাস্তার ধারের লাইট গুলো ও জ্বলছিল না! দূরে আমি একজন মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, আমি বেশি একটা পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকি! তার একটু কাছে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি সেই লোকটি আমার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আমার কাধে তখন ড্রোনের ব্যাগ!
আমার কেন যেন ঐ লোকটাকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল! এর জন্য আমি আর সামনে না গিয়ে সি*গা*রে*ট টা ফেলে গলি থেকে বের হয়ে যাই!
এরপর রিকশার জন্য মেইন রোডে গিয়ে দাঁড়াই, রাত গভীর হওয়ার কারণে কোন রিকশাই পাচ্ছিলাম না। তার মধ্যে রাস্তা টাও অন্ধকার! আমি একটু দূরে তাকাতেই দেখি সেই লোকটি দারিয়ে রয়েছে!
আমি ভয় পেয়ে দৌড়ানো শুরু করি! আমার মনে হচ্ছে সে হয়তো কোনো চো*র/ডা*কা*ত হবে। অনেকক্ষণ দৌড়ে শেষমেশ এক জায়গায় গিয়ে থামি! পিছনে ফিরে দেখি কেউ নেই, আমি একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলি! কিন্তু সামনে তাকাতেই দেখি ওই লোকটি আমার একদম সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে!
আমি নড়াচড়া করতে পারছিনা! তখন ঐ লোকটি আমার মুখ ধরে শুধু একটা কথাই বলে!
ওই জিনিস নিয়ে ঘাটাঘাঁটি বন্ধ কর, না হলে পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না।
এই বলে সে আমার মুখ ছেড়ে দেয়! তখনই আমি পিছনে ফিরে দৌড় দিয়ে তোর বাসায় এসে পড়ি।
এইসব শুনে রবিনের কাছে কাল্পনিক মনে হলেও একটু আগে তাদের সাথে যা ঘটেছে তার জন্য সে এটা বিশ্বাস করে নেয়।
কোনো একটা ঘাপলা তো আছেই!
হ্যা! আমারো তাই মনে হচ্ছে!
আশরাফ শোন, এখন তুই শুয়ে পর, কালকে আমরা দুজনে মিলে কেল্লার বাইরে থাকা সুরঙ্গের দরজাটি খুঁজে বের করব।
আচ্ছা তা ঠিক আছে! কিন্তু তুই কি ওই লোকটার কথার অর্থ বুঝতে পেরেছিস কিছু?
হ্যা! সেই লোকটি আমাদেরকে এই সুড়ঙ্গের ব্যাপারে ঘাটাঘাটি করতে নিষেধ করেছে। এর জন্যই তো বললাম ঘাপলা আছে!
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের এই ব্যাপার টা নিয়ে মাথা না ঘামানোই উচিৎ!
তুই এতো ভিতু? আগে জানতাম না তো? আমি যা বলছি তাই করবি।
আচ্ছা! ঠিক আছে।
এ বলে তারা দুজনে শুয়ে পড়ে! পরদিন সকালে রবিনের মা আশরাফ কে দেখে বলে।
তুমি না কালকে চলে গিয়েছিলে?
(রবিন সম্পূর্ণ ব্যাপারটা গোপন রেখে তার মাকে বলে)
কালকে রাত হয়ে যাওয়ার কারণে ও কোন রিক্সা পায়নি। তাই আবার চলে এসেছে!
ওহ! আচ্ছা ঠিক আছে!
এই বলে রবিন এর মা তাদের কে সকাল এর নাস্তা দেয়। নাস্তা খেতে খেতে আশরাফ রবিনকে বলে,
আচ্ছা তো কিভাবে ওই গেইট খুজে বের করবি?
যেহেতু কেল্লাটা অনেক পুরনো তাই ওই গেইট টা অনেক পুরনো কোন জায়গায় থাকবে।
কি ধরনের পুরনো জায়গা?
বাড়ি!
মানে?
এই এলাকায় এখনো অনেক পুরনো পুরনো বাড়ি আছে।
ওহ আচ্ছা! তাহলে আমাদের সর্বপ্রথমই এখানকার সবথেকে পুরনো বাড়ি খুঁজে বের করতে হবে! তাইতো নাকি?
হ্যা!
আচ্ছা ঠিক আছে!
ওরা খাওয়া শেষ করেই বের হয়ে যায় এলাকার সবথেকে পুরনো বাসা খোজার জন্য, সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকেল, কিন্তু ওরা তাও ৪০-৫০ বছরের বেশি পুরনো কোনো বাসা পায়না!
শেষ মেষ আশরাফ বলে,
ভাই কালকে রাতে এতো দৌড়াদৌড়ি করে শরিরে আর বিন্দু মাত্র শক্তি নেই! আজকে আমি যাই! কিছু পেলে জানাইস!
রবিন ও অনেক ক্লান্ত তাই ও বলে
আচ্ছা ঠিক আছে! কিছু পেলে যানাবো তোকে!
আচ্ছা! আল্লাহ হাফিজ!
আল্লাহ হাফিজ
এর পর রবিন ওর বাসার গেইট এর সামনে চলে আসে, তখন ই ও দেখে ওদের বাসার বাড়ি ওয়ালা! উনি আজকে চলে যাচ্ছে! তার জন্য হাসান সাহেব কে বলতে এসেছে! উনি চলেই যাচ্ছিল তখনই রবিন উনাকে ডাক দেয়!
আংকেল!
জি বাবা বলো!
আপনি তো এই বাড়ির বাড়িওয়ালা তাইনা?
হ্যা!
আচ্ছা এই বাড়িটা কত বছর পুরনো?
এটার নিচ তলা আমার বাবার ও জন্মের আগের! আর উপরের তলা আমি বানিয়ে ছিলাম ২০-৩০ বছর আগে!
আচ্ছা আংকেল ধন্যবাদ!
কি করবে বল্লেনা তো?
না মানে!!! বাড়ি টা দেখে অনেক পুরনো মনে হচ্ছিলো তো তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি!
ওহ! আচ্ছা ঠিক আছে! কিন্তু বাবা তুমি একটু সাবধানে থেকো!
এই কথাটা শুনে রবিন একটু অবাক হয়! কিন্তু ও বেশি পাত্তা দেয়না। কিন্তু ও মনে মনে অনেক বেশি খুশি হয়ে যায় এই ভেবে যে ও অবশেষে সবথেকে পুরনো বাড়িটা খুজে পেল!
এরপর ও ভাবে – এখন আশরাফকে কিছু জানানোর দরকার নেই! বরং আমি খুঁজে দেখি সেই সুরঙ্গের দরজাটা পাই কিনা। পেলে পরে আশরাফ কে জানাবো।
এরপর ও নিচ তলায় যায়! বাড়িটা ডুপ্লেক্স আর ওরা মাত্র চার জন, তাই নিচের বেশকয়েকটা রুম খালি ছিলো! আর একটা রুমে ওর বাবা-মা আর ছোট বোন থাকতো!
ও সব গুলো রুম চেক করে, কিন্তু ও শেষ রুমে যখন যায় তখন ই ও খুসিতে আত্মহারা হয়ে যায়, কারণ ও ওই রুমের ওপর দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছিল…
গল্প সম্পর্কিত কিছু তথ্য:
এই গল্পে মূল চরিত্র হচ্ছে রবিন, মূল ঘটনা হচ্ছে এই সুরঙ্গ কে কেন্দ্র করে, আর এই রকম কোনো বাসা এখন লালবাগে নেই! তবে আমার আব্বুর থেকে এরকম একটা বাসার কথা শুনে ছিলাম, তাও সেটা ২০-৩০ বছর আগের কথা।
{ আরো পড়ুন – দরজার ওপাশে
( লালবাগ কেল্লা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)
Leave a Reply