আত্মা বন্ধী – ভূতের গল্প

আত্মা বন্ধী

লেখক: মাহমুদ খান

 

ঝুম বৃষ্টির মধ্যে কুলে সদ্য জন্ম নেয়া এক শিশুকে নিয়ে প্রাণ পণে দৌড়াচ্ছে এক নারী।। তার শাড়ির নিচের অংশ রক্তে ভেজা। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে ঘন্টা দুয়েক আগেই বাচ্চাটিকে প্রশব করেছে।

ক্লান্ত, শ্রান্ত শরীর টেনে টেনে সামনে ছুটছে আর পেছনে বারবার তাকাচ্ছে।

পাকা রাস্তা থেকে নেমে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটা সরু রাস্তা গিয়েছে। সে ওই সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকে পরে। যে করেই হোক সেই পুড়া মন্দিরে তাকে যেতেই হবে। অনেক্ক্ষণ হাটার পর সেই মন্দিরের সামনে গিয়ে সে থামে।

সেখানে আগে থেকেই চাদরমুরি দেওয়া একটা লোক অপেক্ষা করছিলো। সে এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে বলে আমার আমানত আমি আপনার কাছে গচ্ছিত রাখলাম। বেঁচে থাকলে আমি তাকে নিতে আসবো।

আর যদি এই পৃথিবীতে আর না থাকি, তাহলে আপনি ওকে নিজের কাছে সব সময় আগলে রাখবেন কথা দেন আমাকে। লোকটা বললো কথা দিলাম, আমার জীবন দিয়েও আমি তাকে আগলে রাখবো।

সে কুলের শিশুটির কপালে গভীর একটা চুমু একে দেয়। কান্না ভেজা কন্ঠে বলে, আমার সোনা তোমাকে মা চাইলেও নিজের কাছে রাখতে পারছিনা। এই পোড়াকপালি মা কে তুমি ক্ষমা করো।

তারপর সেই লোকটার হাতে বাচ্চাটি কে দিয়ে বলে এই নিন আমার কলিজা কে আপনার হাতে তুলে দিলাম। আঁচলের নিচ থেকে একটা ডাইরি বেড় করে বলে আমার কলিজাটা যখন বড় হবে তখন তাকে এই ডাইরিটা দিবেন। লোকটা হাত বাড়িয়ে ডাইরি টা নেয়।

সে অসহায় চোখে তার সন্তানকে আরেকটি বার দেখে সেই স্থান দ্রুত ত্যাগ করে।

জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে পাকা রাস্তা দিয়ে আবারও দৌড়াচ্ছে তাকে এই জায়গা থেকে দ্রুত সরে যেতে হবে। সে ভাবছে; এতক্ষণে হয়তো সে জেনে গেছে আমি বাচ্চাটিকে নিয়ে পালিয়েছি।

সে দূর্বল শরীর নিয়ে দৌড়াচ্ছে এমন সময় একটা কালো গাড়ি দ্রুত এসে তাকে ধাক্কা দেয়। সে উড়ে গিয়ে একটা গাছের সাথে বারি খায়, ঝাপসা চোখে দেখে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে তার দিকে আসছে কেউ। লোকটা তার কাছে আসার আগেই তার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে।।

খুব ঝাক ঝমক ভাবে আমার বিয়েটা হচ্ছে। গর্জিয়াস একটা শেরওয়ানি পড়ে মুখে রুমাল গুজে বসে আছি। সানাই বাজছে, আর ডিজে গানের তালে তালে আমিও মাঝে মাঝে শরীর ঝাকানি দিচ্ছি।

কি করবো আমার আবার ধুম ধারাক্কা গান শুনলে নাচ উঠে যায়।। কিন্তু এতো এতো সুন্দরী মাইয়্যাগোর মাঝে আমার বউটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিনা। ধুরু আসছি বিয়া করতে, কই বউকে আমার পাশে বসাবে তা না করে কই যেন লুকিয়ে রাখছে।

এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পড়লো লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে হেটে আসছে আমার বউটা। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে আমার সুন্দরী বউটা। ইস এত্তো সুন্দরী মাইয়্যা আমার বউ হবে।

শালা শালিরা ঘিরে রেখেছে আমদের। এখন নাকি মালা বদল হবে। আমি আড় চোখে বউ কে দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। এখন মালা বদলের পালা। বউ প্রথমে আমার গলায় মালা পড়ালো। তারপর আমি আমার গলা থেকে একটা মালা খুলে বউকে পড়ালাম।

এই শা** উঠ!! পাগল কোথাকার তোর কি লজ্জা সরম বলতে কিছু নাই।

একি?? আমাকে কে গালি দিচ্ছে? আজ আমার বিয়ে আর কে এমন গালি দিচ্ছে রাগে গজগজ করছি।

তখনই পাছায় জোরে একটা লাত্থি খেলাম। এতো জোরে লাত্থি খেয়েছি যে ধাপ করে চোখ খুলে দেখি, বারিশ আমার দিকে রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।

একি আমি বাসায় আসলাম কবে? আমার বউ কই? আমার তো বিয়ে হচ্ছিলো।।

শা** ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিসব স্বপ্ন দেখোস?

এই আমি তোর শা** কবে থেকে হলাম? আমার কোনো বইন নাই যে তোরে শা** বানাবো।।

তা পড়ে বানাইস আগে নিজের দিকে তাকা খবিশ!!

কেন কি হয়েছে? বলে নিজের শরীরের দিকে তাকাতেই জোরে একটা চিক্কুর মেরে উঠলাম। লজ্জায় হাত দিয়ে নিজের শরীর ঢাকার চেস্টা করছি। কোনো রকমে কোলবালিশ থেকে লুঙ্গি টা ছাড়িয়ে পড়ে নিলাম। ওই শা** তুই আমার রুমে নক করে ঢুকলি না কেন? আমার ইজ্জত হরণ করার জন্য আসছিস?? বেয়াদপ কোনানের!!!

তুই যে খাটাশ তোরে যদি নক দিলে কাজ হইতো তাইলে আজ তোরে বিবস্ত্র দেখতাম বা। বলেই হাসতে লাগলো।। হাসি থামিয়ে বললো আচ্ছা এখন বল লুঙ্গি খুলে বালিশে পড়ালি কেন?? স্বপ্নে কি দেখছোস?

জানিনা ভাই কি থেকে কি হয়ে গেলো। দেখলাম বিয়ে করতে গেছি একটা সুন্দরী মাইয়্যা। বউ আমারে মালা পিন্দাই দিলো আমিও আমার গলা থেকে মালা পিন্দাই দিলাম। এতোটুকু বলে মুখ আন্ধার করে বারিশের দিকে তাকালো।

বারিশ তখনও মুখ টিপে হাসছে, হাসি কোনো রকমে থামিয়ে বললো আহা সূনা গো আমার, খুব কস্ত হইছে তাইনা?

আমি কটমট চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি এখনো।।

সে ঠোঁট আরেকটু প্রসারিত করে বললো। আমি আবার ভাবলাম তোরে ভুতে ধরলো নাকি! এসেই দেখলাম তোর লুঙ্গি গলায় পেছানো। আর তুই লুঙ্গিটাকে গলা থেকে ছাড়িয়ে কোলবালিশরে পরাইতেছিস। বলেই হেসে আবারও কুটিকুটি হচ্ছে বারিশ।

আমি বললাম বাইর হ বাইর হ আমার ঘর থাইক্ক্যা। আমার অনুমতি ছাড়া আমার ঘরে আর একদিন ঢুকছিস তো তোর খবর আছে।

আচ্ছা যাচ্ছি আমি। তুই উঠে ফ্রেশ হয়ে নে, নাস্তা খেয়ে আমারে কল করিস।

মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বুঝিয়ে উঠে পড়লাম। বারিশ ও মুচকি হেসে চলে গেলো।

আমি উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এসেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশ্য নাস্তা বললে ভুল হবে কারণ এখন বাজে দুপুর ১ টা। আর আজ ভার্সিটি অফ তাই বেলা করে ঘুমিয়েছি। তো টেবিলে পছন্দের বিরিয়ানি দেখতেই চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।

উফ প্রথম লুকমা মুখে দিতেই জিহবার সাথে দিল ও খুশ হয়ে গেলো। সেই মজা, আমার দাভাই রান্না করেছে মজা না হয়ে যাবে কই। কিন্তু দাভাই কই? অল্প খেয়ে প্লেট হাতে নিয়েই দাভাইয়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।

দাভাই তার ডাইরি খুলে কিছু একটা লিখছেন। আমি ধির পায়ে গিয়ে দাভাইয়ের পেছনে দাঁড়ালাম। আমি দাঁড়াতেই দাভাই বলে উঠলেন, দাঁড়িয়ে খেতে নেই বসে খাও।

আমি দাভাইয়ের বিছানার উপর বসে আরাম করে বিরিয়ানি খাচ্ছি। দাভাই তুমি খাবে না?

খাবো! তুমি খেয়ে বেড়িয়ে পরো বারিশ এসেছিলো বললো তোমার ফ্রেন্ডরা সবাই টুরে যাচ্ছে। তোমাকে বলায় তুমি যাবে না বলেছো। তার কারণ কি?

আমি প্লেট থেকে হাত গুটিয়ে দাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম। এমনি দাভাই, আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা।

তুমি জানো আমি মিথ্যা কথা একদম পছন্দ করিনা তারপর ও মিথ্যা বলছো!!

আমি চুপ করে রইলাম। কারণ আমি কিছু না বললেও দাভাই কেমন করে যেন আমার মনের খবর ঠিক ই বুঝে জান।

টাকা আমি তোমার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে এসেছি। খাবার খেয়ে রেডি হয়ে নাও। সেখানে ৪/৫ দিন থাকবে তাই প্রয়োজনীয় সব কিছু সময় থাকতে গোছগাছ করে নাও। বারিশ বলেছে বিকেল ৪ টায় ট্রেন আছে।

দাভাই তুমি টাকা কোথায় পেলে?

সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। আমি ব্যবস্থা করেছি, তুমি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাও। ছোট বেলা থেকে তোমার অনেক ইচ্ছা আমি সাধ্যের বাইরে গিয়েও পূরণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তুমি তবুও আমার কাছে টুরে যাওয়ার কথা টা বলো নি।

তুমি কি মনে করেছো এই সামান্য টাকা আমি তোমাকে জোগাড় করে দিতে পারবো না? তোমার এই বুড়ো দাভাই যতদিন জীবিত আছি ততদিন তোমাকে টাকার চিন্তা করতে হবেনা।

আমি উঠে গিয়ে দাভাই কে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বললাম ; আমি জানি তুমি যত দিন আছো আমার কোনো কিছুর চিন্তা করতে হবেনা। তুমি আমার বেস্ট দাভাই।

এতক্ষণে দাভাইয়ের গম্ভীর মুখশ্রীতে হাসির ঝলক দেখলাম।

বাকি বিরিয়ানি টুকু সাবাড় করে, কাপড় গোছগাছ করতে চলে গেলাম।

আমি নাজির, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। এই পৃথিবীতে আপন বলতে শুধু আমার দাভাই আছেন। বাবা মা কে হারিয়েছি ছোট বেলায়। কিন্তু দাভাই কখনো বাবা মায়ের অভাব ফিল করতে দেননি আমাকে।

আর বারিশ হলো আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বন্ধু বললে ভুল হবে, সে আমার ভাই। এতক্ষণ দাভাইয়ের সাথে ফ্রেন্ডদের সাথে টুরে যাওয়ার ব্যপারে কথা হচ্ছিলো। আমার ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করেছে এবার সিলেটের শ্রীমঙ্গল ঘুরতে যাবে। আমাকে অনেক জোরাজুরি করার পরেও আমি রাজি হচ্ছিলাম না।

কারণ আমি স্টুডেন্ট আর বেকার, দাভাই ছোট একটা লাইব্রেরি খুলেছেন। সেটাই আমাদের একমাত্র আয়ের উৎশ। সেই সামান্য টাকায় আমাদের দুইজনের সংসার প্লাস আমার পড়ালেখার খরচ চলে। তাই বন্ধুরা জোর করলেও আমি রাজি হচ্ছিলাম না।

আত্মা বন্ধী

কিন্তু বারিশ আমারে রেখে কখনোই যাবেনা, তাই সে দাভাই কে এসে বলেছে এসব। আর দাভাই ও কিভাবে যেন টাকা জোগাড় করে নিয়েছেন।।

রুমে এসে ড্রয়ার খুলতেই দেখলাম একটা খামের ভেতরে বেশ কিছু টাকা। সেটা সযত্নে স্কুল ব্যাগে তুলে রাখলাম। তারপর অল্প কিছু কাপড় গোছগাছ করে আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে ভরে নিলাম। বারিশ কে কল করে বেড়িয়ে পড়লাম।

দাভাই তাহলে আমি যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রেখো। আমি তারাতাড়ি চলে আসবো।

ঠিক আছে সাবধানে যেও। পৌছে ফোন দিও আমাকে।

ঠিক আছে বলে বেড়িয়ে পরেছি। এখন বাজে ৩:২৫ বারিশের বাসা আমাদেরই গলিতে। দুই বিল্ডিং পেরুলেই তার বাসা। বারিশের বাসার নিচে গিয়ে তাকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ পর বারিশ স্কুল ব্যাগ কাধে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে বললো।

চল মামা তানিম আর তৃষাণ অলরেডি স্টেশনের পথে রওয়ানা হয়ে গেছে। বারিশ আর আমিও একটা রিকশা করে কমলাপুর স্টেশনের দিকে গেলাম।

স্টেশন পৌছে তানিম আর তৃষাণ কে দেখলাম এক পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। আমি আর বারিশ ও গিয়ে তাদের সাথে যোগ হলাম। ট্রেন আসতে আরও ১৫ মিনিট বাকি। একটা টং দোকান থেকে ৪ টা চা অর্ডার করলাম।

তানিম বললো যাক শেষমেষ তুই তাহলে এলি? আমরা তো মনে করেছি তুই এবারো যাবিনা।

আমি মুচকি হাসলাম। বারিশ বললো ও না গেলে কেমনে হবে। ওর ই তো দরকার বেশি সেখানে। বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো।

তৃষাণ বললো  তা কতদূর এগোলো!? সামনে বিয়ে টিয়ে খেতে পারবো নাকি আজীবন আফসোস করেই যেতে হবে!?

আমি বললাম তোরা এতো কথা কেমনে বলোস ভাই। আমার তো বেশি কথা শুনলেও মাথা ঝিমঝিম করে। তোদের কি মুখ ব্যথা করেনা।

তিনজনই এক সাথে বলে উঠলো উচিৎ কথা বললেই তোর মাথা ঝিমঝিম করে। তুই কিন্তু এইবার শ্রীমঙ্গল গিয়ে আমাদের ভরপেট খাওয়াবি। আমাদের কিন্তু ট্রিট চাই মামা এবার আর কোনো বাহানা চলবে না।

ততক্ষণে ট্রেন এসে পরেছে। হাতে চায়ের কাপ গুলো নিয়ে চারজনই ট্রেনের বগিতে উঠে গেলাম। মুখোমুখি চারটি সিট আমাদেরই বুকিং দেওয়া। চারজন বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে লাগলাম। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, শহর ছাড়িয়ে, গ্রাম ছাড়িয়ে, গাছ পালা সব পেছনে ফেলে ট্রেন ছুটে চলেছে তার আপন মনে। আমরা প্রকৃতির অপরুপ রুপ দেখে দেখে আড্ডা আর গানে আমাদের ট্রেন যাত্রা সম্পন্ন করলাম।

ট্রেন শ্রীমঙ্গল এসে থামলো রাত প্রায় ১০ টার দিকে।।

আমরা চার বন্ধু ট্রেন থেকে নেমে একটা সিএনজি বুক করলাম। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে নেমে ভাত আর গরুর মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে থাকার জন্য একটা হোটেল খুঁজতে গেলাম।

চাবাগান সংলগ্ন একটা হোটেলে দুইরুম বুক করলাম। কারণ হোটেলের রুম গুলো ছোট আর এক রুমে দুইজন করে থাকার ব্যবস্থা। রাতে যেহেতু বাইরেই খেয়ে এসেছি তাই আর দেরি না করে যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

কারণ লম্বা জার্নির কারণে আমরা সবাই-ই খুব ক্লান্ত ছিলাম। আর ভাত খাওয়ার পর এমনিতেই ক্লান্তি আরও বেড়ে যায়। আমি আর বারিশ এক রুমে আর তানিম আর তৃষাণ এক রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুমের মধ্যে অনুভব করলাম কেউ রুমের ভেতরে পায়চারি করছে। আর ঘটঘট আওয়াজ হচ্ছে, যেমন খড়ম পায়ে দিলে হয় ঠিক তেমন। অনেক চেষ্টা করেও সেই আওয়াজ উপেক্ষা করে কিছুতেই ঘুম কন্টিনিউ করতে পারলাম না।

উঠে গেলাম, চোখ খুলে দেখলাম রুমটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। কেমন একটা ভ্যাপসা গরম হাওয়া লাগছে গায়। কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম ঘাম ফুটা ফুটা হয়ে জমে আছে। হাত হাতড়ে ফোন জ্বালালাম। দেখলাম হোটেলের রুমে অসংখ্য কাঠপুতলি রাখা।

বেডে বারিশ কে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম সে নেই আমি একাই এই রুমে। আর আমার রুমের ভেতরে চারপাশে শুধু কাঠপুতলিতে ভরা। আমি উঠে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালালাম তারপর কাঠপুতলি গুলো হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে কোনো জীবন্ত মানুষ কে পুতুল বানিয়ে রাখা হয়েছে। আমি সেগুলো যখন নেড়েচেড়ে দেখছিলাম তখন একটা কাঠপুতলি দেখে আমার চোখ চড়কগাছ হয়ে গেলো। এটা তো সেই মেয়ের মতো দেখতে হুবহু।

আমি সেই কাঠপুতলি টা হাতে নিলাম। কিন্তু তখনই সেখানে লোডশেডিং হয়ে গেলো। আমি হাত হাতড়ে হাতড়ে বেডের পাশে আবার আসলাম, ফোনটা হাতে নিলাম ফ্লাস অন করার জন্য।

যখনই ফ্লাস অন করেছি দেখি একটা কুচকুচে কালো মুখ আমার মুখের সামনে। আমি চিতকার দিতেই আমার ঘুম ভেঙে যায় উঠে দেখি আমি বেডে শুয়ে আছি কিন্তু বারিশ আমার পাশে নেই।

আমি উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম কিন্তু না, সেখানে কেউ নেই। ওয়াশরুমের দরজা খুলতে গিয়ে টের পেলাম সেটা ভেতর থেকে বন্ধ। ভাবলাম বারিশ হয়তো উঠে ওয়াশরুমে গেছে, তাই আমি আবার বিছানায় বসে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

কিন্তু অনেক্ক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও সে ওয়াশরুম থেকে বেড় না হওয়ায় আমি একটু চিন্তিত হয়ে তাকে ডাকতে গেলাম।

দরজায় টুকা দিলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। কয়েকবার নাম ধরে ডাকলাম কিন্তু নাহ কোনো আওয়াজ আসছেনা। এবার দরজার হাতলে ধরতেই দরজা খুলে গেলো। আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম কিন্তু আশ্চর্য সেখানে বারিশ নেই। আমি ওয়াশরুম ভালো করে দেখলাম কিন্তু নাহ কেউ নেই। তাহলে দরজা এতোক্ষণ কে আটকে রেখেছিলো!?

ভাবনার মধ্যেই আয়নায় তাকালাম। আয়নায় বারিশের ক্ষতবিক্ষত মুখ দেখে ভয়ে জোরে চিতকার দিয়ে উঠলাম।

এই নাজির কি হয়েছে? উঠ কি হয়েছে? কোনো বাজে স্বপ্ন দেখেছিস?

চোখ খুলে দেখলাম বারিশ আমার পাশে বসে আমাকে ডাকছে। আমি উঠে বললাম তুই কোথায় ছিলি?

আরে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস। কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু তুই উঠলি না তাই বাইরে গিয়ে নাস্তার জন্য এই পাউরুটি আর কলা নিয়ে আসছি। এগুলো আপাতত খেয়ে আমরা বাইরে বেরুবো। তারপর অন্য চিন্তা….

এখন বল কি হয়েছে তুই এভাবে ঘুমের মধ্যে চিতকার করছিলি কেন?

আমি একটু দম নিয়ে বললাম। না একটা খারাপ স্বপ্ন ছিলো, আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুই নাস্তা কর। বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম রুমে তানিম আর তৃষাণ ও চলে এসেছে। চার বন্ধু মিলে পাউরুটি আর কলা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম “চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল” এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

হোটেল থেকে বেড়িয়ে একটা রিকশা নিলাম, চার বন্ধু রিকশায় চেপে আজ শ্রীমঙ্গল দর্শন করবো।

হই হুল্লোড় করে রিকশায় ঘুরে শ্রীমঙ্গলের রাস্তায় ঘুরছি। এখনো ঠিক হয়নি প্রথমে কোন জায়গায় যাবো।।

তৃষাণ বললো,

মামা এখানে তো এসে পরেছি কিন্তু কোথায় কোথায় ঘুরবো তা তো এখনো ঠিক হলো না। আর তাছাড়া এখানকার এরিয়া সম্পর্কে তেমন ধারণা ও নাই।

বারিশ বললো,

এখানে আমার এক দূরসম্পর্কের মামার গ্রামের বাড়ি আছে। যদিও মামাকে বলে আসি নি। তবুও একবার কল করে দেখতে পারি, হয়তো উনি আমাদেরকে গাইড কর‍তে পারেন।

তানিম বললো,

তাহলে কল কর এক্ষুনি স্থানীয় একজন লোক সাথে থাকলে ভালোই হবে।

আমিও বললাম হ্যাঁ বারিশ তোর মামাকে একবার কল করে দেখ।।

বারিশ ফোন বেড় করে তার মামাকে কল করলো। হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম মামা।

জ্বি মামা আমি বারিশ বলছি। হয়েছে কি………..!

জ্বি জ্বি আমরা এখন শ্রীমঙ্গল এর বাজার সংলগ্ন এরিয়ায় আছি। জ্বি জ্বি আপনি আসুন মামা।

বারিশ ফোন রেখে বললো মামা শ্রীমঙ্গল বাজারেই আছেন তিনি আসতেছে বলছে। তাকে না বলে আসায় রাগ করতেছে। আর বলছে হোটেলে কেন উঠছি উনার বাড়ি কেন যাই নাই।

আমি বললাম ঠিক আছে আমরা ওই সামনের টং দোকান থেকে চা খেয়ে নেই। সকালে চা না খাওয়ায় মাথাটা এখনো ভার হয়ে রয়েছে।

তানিম রিকশা মামাকে বললো মামা সামনের টং দোকানে নামিয়ে দেন।

রিকশা থেকে নেমে তৃষাণ চারটি চা অর্ডার করলো।

চা খেতে খেতেই সেখানে মধ্যবয়েসী একজন লোক এসে দাঁড়ালেন। হাতে তার বিশাল বড় দুইটা ব্যাগ। ব্যাগ ভর্তি মাছ মাংস আর কিছু ফলমূল। বারিশ চায়ের কাপ বেঞ্চে রেখে উঠে গিয়ে জরিয়ে ধরে বললো।

কেমন আছো মামা?

এতোদিনে মামার কথা মনে পড়েছে? এখানে আসলি আমাকে আগে বললি না কেন? আমি তোদেরকে স্টেশন থেকেই বাড়ি নিয়ে যেতাম।

আসলে মামা হঠাৎ করে ফ্রেন্ডদের সাথে টুরের প্লান হইছে তো তাই তোমাকে জানানোর কথা ভুলে গেছি।

ঠিক আছে চল বাড়ি চল।

মামা এদের সাথে পরিচিত হও, এই হলো নাজির আমার বেস্ট বন্ধু আর এরা দুইটা আমার চামচা তানিম আর তৃষাণ বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।

তানিম আর তৃষাণ কটমট চোখে বারিশের দিকে তাকালো।

আমি সালাম দিয়ে মামার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। তানিম আর তৃষাণ ও মামার সাথে পরিচিত হলো।

মামা বললেন চল বাড়ি চল।

ইতা হোটেল মোটেলও থাকতে কেনে আমার কিতা বাড়ি ঘর নাই নি??

আমি তানিম আর তৃষাণ ভ্রু কোচকে মামার দিকে তাকিয়ে আছি। বারিশ হেসে বললো এটা সিলেটি ভাষা তাইনা মামা?

মামা হেসে বললেন হ্যাঁ সিলেটে আসছো সিলেটি মাত কথাও শোনো কিছু। যে কয়দিন থাকবা একটু একটু সিলেটি ভাষা শিকিয়া যাইবায়।।

আমি বললাম ঠিক বলেছেন মামা সিলেটে আসছি অবশ্যই সিলেটের কিছু আঞ্চলিক ভাষা শিখেই যাবো।।

চা শেষ করে মামার সাথে উনার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা আসছি শুনেই তিনি বাজার সদাই করে নিয়েছেন। উনি বললেন আমরা যতদিন এখানে আছি আমাদের উনার বাড়িতেই থাকতে হবে।

আমরা আপত্তি করলেও তিনি মানলেন না। তাই আমরাও রাজি হয়ে গেলাম। মামা এখন উনার বাড়ি গিয়ে বাজারের জিনিসপত্র গুলো রেখে তারপর আমাদের নিয়ে চা-বাগান ঘুরতে যাবেন। দুপুরে আবার উনার বাড়ি গিয়ে খাবার খেয়ে, বিকেলে “নীলকন্ঠ” ঘুরতে নিয়ে যাবেন।

আর রাতে ফেরার সময় হোটেল থেকে আমাদের ব্যাগপত্র নিয়ে উনার বাড়ি উঠতে বললেন। মামা রাস্তায় হেটে হেটে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গার বিবরণ দিলেন।

পাহাড়ি সরু রাস্তা দিয়ে হেটেই উনার বাড়ি যাচ্ছি কারণ এই এলাকাতেই মামা থাকেন। গ্রামটা একটু ভেতরে হওয়ায় এদিকে তেমন গাড়ি ঘোড়া চলে না।

২০ মিনিট হাটার পর আমরা মামার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। বাড়িটা বিষন সুন্দর, পাহাড়ি এলাকার ভেতরে আধাপাকা একটা ঘর। ঘরের সামনে উঠানে মাঁচা বেধে সেখানে লাউ, সিম আরও বিভিন্ন সবজি ফলানো।

ঘরের ঠিক সামনে কয়েক ধরনের ফুলের গাছ লাগনো। আমরা দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমাদের মাথার উপর দিয়ে বাশের বেড়ার একটা গেইট। আর এই গেইট বেয়ে বেড়ে উঠেছে একটা বাগান বিলাস ফুলের লতা।

ঘরের পেছনে বিশাল শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা কৃষ্ণচুরা ফুলের গাছ। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাড়িটার সৌন্দর্য দেখে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মামার ডাকে হুশ ফিরলো।

ভেতরে আসো বাবা। গরীবের ভাঙা বাড়ি অতটাও ভালো নয়। তোমরা শহর থেকে এসেছো, তোমাদের হয়তো….

মামাকে থামিয়ে বললাম এমন সুন্দর বাড়ি আমি আগে কখনো দেখিনি। অনেক ভালো লাগছে আমার।

মামা লাজুক হেসে বললেন ভেতরে আসো, হালকা নাস্তা করে তারপর তোমাদের চা-বাগানে ঘুরতে নিয়ে যাবো।

বাড়ির উঠানে ঢুকতেই বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ এক নিঃশ্বাসে বুক ভরে শুষে নিলাম। বারিশ এগিয়ে এসে বললো কিরে অমন করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন চল ভেতরে চল। বারিশের পিছু পিছু মামার দেখানো একটা রুমে গিয়ে বসলাম আমরা। মামা ততক্ষনে বাজারের জিনিসপত্র রান্না ঘরে দিয়ে এসেছেন, হয়তো উনার মেয়ে অথবা স্ত্রীর হাতে।

মামা আমাদের রুমে রেখে আবারও রান্নাঘরের দিকে চলে গেছেন। আমরা যে রুমে বসেছি এখানে একটা বিছানা, ছোট ওয়ারড্রব, একটা ড্রেসিং টেবিল আর এক সেট কাঠের সোফা বিছানো।। মেঝে টা মাটির কিন্তু ঘরের ওয়াল পাকা করে তোলা।

আর মাথার উপরের ছাউনিটা টিন দিয়ে বানানো। দেয়ালে বিভিন্ন পেইন্টিং আর হাতের তৈরি ঘর সাজানোর ওয়ালমেট বাধানো।। সব কিছু চুপচাপ অবলোকন করে যাচ্ছি। হঠাৎ বারিশের কথায় তার দিকে ঘুরে তাকালাম।

মামা এখানে তো এসে পরেছি হাতে মাত্র ৪/৫ দিন সময় আছে। এর ভেতরেই তোর সেই ডানাকাটা পরী কে খুঁজতে হবে। তানিম আর তৃষাণ ও এগিয়ে এসে বললো হ মামা বারিশ ঠিক বলছে।

কিন্তু আমিতো তার ঠিকানা জানিনা। তার থেকে শুধু একটা কথাই জানতে পারছিলাম যে সে শ্রীমঙ্গলে থাকে।।

তৃষাণ বললো: কি বা** পেম করো মিয়া। সে কই থাকে তার কোনো ঠিকানাই জানো না।।

আমি বললাম দূর শা** প্রেম কবে করলাম আমি তাকে দেখেছি দুই দিন মাত্র প্রথম দিন হালকা একটু কথা হইছিলো। আর দ্বিতীয় দিন বললো সে শ্রীমঙ্গল চলে যাবে তার বাবা নাকি অসুস্থ।

বারিশ বললো হইছে নিজেদের মাঝে ঝগড়া বাদ দে। শ্রীমঙ্গল যখন এসেই পরেছি তাহলে তাকে না খুঁজে আমরা যাবো না।

আমি বারিশের দিকে তাকালাম সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আশ্বস্থ করলো। তখনই সেখানে উপস্থিত হলেন মামা ট্রে ভর্তি ফলমূল আর শরবত নিয়ে। মামা এসেই বললেন।

তোমাদের অনেক অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি এখন এগুলো খাও তারপর আমরা বেরুবো।। হঠাৎ একটা নারী কন্ঠ রিনরিনে গলায় বলে উঠলো বাবা ট্রে টা নাও। আমরা চকিতে দরজায় তাকালাম কিন্তু দরজার পর্দার জন্য তার মুখ দেখতে পেলাম না।

শুধু বুঝতে পারলাম একটা নারী অবয়ব পর্দার আড়ালে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মামা খুব সন্তপর্ণে পর্দা হালকা ফাক করে ট্রেটা হাতে নিয়ে নিলেন। ট্রে তে নুডলস আর কয়েক প্রকারের হাতের তৈরি পিঠা আর সন্দেশ।

মামা সেগুলো আমাদের সামনে রাখা একটা টি টেবিলে রাখলেন। আর বললেন নাও শুরু করো তোমরা বলে তিনিও আমাদের পাশে বসলেন। আমি তখনও সেই নারী মুর্তিটিকে দেখার জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে কিন্তু ততক্ষণে সে আমার চোখের আড়াল হয়ে গেছে।

বারিশ বললো মামা ওই মেয়েটা কে ছিলো?

মামা বললেন আমার মেয়ে!

তোমার মেয়েও আছে? তা আগে তো কখনো বলনি?

মামা একটু ইতস্তত করে বললেন  তুই কি এই গরীবের বাড়ি আর এসেছিস যে জানবি? আর মামার খুঁজ ও কি রাখতি?

বারিশ লজ্জা পেলো একটু।

হয়েছে এখন খাওয়া শুরু করো তোমরা। অনেক কথা হয়েছে বাকি কথা পরে হবে আর।

আমরা আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলাম। মামাকে পিঠা গুলোর নাম জিজ্ঞেস করাতে তিনি হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন;

ইগু নুন ওর হান্দেশ, ইগু রাব ওর হান্দেশ আর ইটা ওইলো মেরা পিঠা, ইগু রস ওর পিঠা, ইগু চিতল পিঠা, ইগু পব, ইগু ভাফা পিঠা, আর ইগু চরচরি পিঠা।

আমরা নাম গুলো শুনে মামার দিকে হাবার মতো তাকিয়ে রইলাম। মামা আবারও হেসে বললেন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নাম গুলো বললাম। নাও এখন খাও।।

আমরাও খাচ্ছি আর মামার সাথে টুকিটাকি কথা বলছি। খাওয়া শেষ করে আমরা চা-বাগানের উদ্দেশ্য বেরুলাম। উঠান পেরিয়ে যাওয়ার সময় রান্না ঘরের দরজায় তাকালাম যদি ওই নারী মুর্তির দেখা মিলে।

কিন্তু নাহ দরজায় টানানো মোটা কাপড়ের পর্দার আবরণ ভেদ করে কিছুই আমার চোখে পড়লো না। হতাশ হয়ে মামার পিছু পিছু যেতে লাগলাম।।

একটা বদ্ধ ঘরে হাতে, পায়ে, গলায় শেকল পড়ানো অবস্থায় এক নারী শুয়ে আছেন দেয়ালের ওপাশে মুখ করে। জীর্ণ শীর্ণ, শরীর নিয়ে আধ মরার মতো পরে আছে। মাঝ বয়েসী এক মহিলা কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বার্ধক্যের অন্তিম পর্যায়ে অবস্থান করছে।

তখনই সেখানে খাবারের থালা হাতে এক পুরুষের আগমন হয়। চাবি দিয়ে লোহার বেস্টনী দেওয়া দরজা খুলে সে ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে। খাবারের থালা মেঝেতে রেখে গিয়ে মহিলাটির পাশে বসে। কাধে হাত দিয়ে হালকা ঝাকানি নিয়ে বলে।

উঠো রাণী তোমার খাবারের সময় হয়েছে।

মহিলাটি পাশ ফিরতেই প্রথমেই নজরে আসে তার শুকিয়ে যাওয়া মুখ। চোখ গুলো ডেবে গিয়ে ভেতরে ঢুকে পরেছে। গালের চামড়া কোচকে গিয়েছে। কপালের বলিরেখা গুলো ফুটে আছে। আর বিশেষ ভাবে যা চোখে পরে তাহলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া এক নদীর সন্ধান মিলেছে। বুঝাই যাচ্ছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো। হালকা ফোলা চোখগুলো উঠিয়ে সেই পুরুষের দিকে তাকাতেই ঘৃণায় আবার চোখ সরিয়ে নেয় সে।

রানী অনেক হয়েছে। খাবার টা খেয়ে নাও। না খেয়ে খেয়ে শরীরের কি অবস্থা করেছো?

ভাঙা ভাঙা গলায় মহিলাটি বলে; তাতে তোমার কি? তুমিও তো এটাও চাও আমি মরে যাই।

কে বলেছে তোমাকে? তোমার মৃত্যু চাইলে কি এতো দিন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতাম? তোমাকে আজীবনের জন্য পাওয়ার জন্যই এতোকিছু করে গেছি আর সেই তুমিই আমার সাথে এমন করলে!!

মহিলাটি উঠে দাঁডায় আর তাচ্ছিল্যের সুরে বলে; আমাকে পাওয়ার জন্য? নাকি নিজের উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য??

পুরুষটি গম্ভীর মুখে বলে উঠে তুমি কি ভেবেছো আমি তাকে খুঁজে পাবো না? তারপর রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে মহিলাটির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে আমি তাকে পেয়ে গেছি রাণী! এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

ভয়ার্ত চোখে তাকায় মহিলাটি!!

হ্যাঁ যা শুনেছো তা সত্যি। আমার উদ্দেশ্য হাছিলের পথে আমি এগিয়ে যাচ্ছি রাণী। বলেই একটা সয়তানি হাসি দেয়।

 

 

{ আরো পড়ুন – দরজার ওপাশে

( আত্মা বন্ধী গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)