নীল রহস্য
নিশুতি রাত, নিস্তব্ধ পরিবেশ, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার শুধু মাঝে মধ্যে দু একটা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নির্জন রাস্তা দিয়ে হাটছি। অন্ধকারে রাস্তাটা ঠিক চেনা যাচ্ছে না। সামনে যত এগুচ্ছি অন্ধকার তত গিলে খাচ্ছে যেনো!!
মিরা……!! মিরা……!! মিরা…!!
ক্রমশ একটা মেয়েলী কণ্ঠ আমার নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে।
আমি ধীর পায়ে এগুচ্ছি!!
যতই সামনে আগাচ্ছি ডাক টা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হাটতে হাটতে রেললাইনের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এখন আর ডাক টা শুনতে পাচ্ছিনা। চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে বুঝলাম আমি ছাড়া এখানে আর একটা কাকপক্ষীও নাই। একটু ভয় লাগতে শুরু হলো।
কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর হবেনা তাই ফোনের ফ্ল্যাসলাইট জ্বালিয়ে রেললাইন ধরে হাটতে লাগলাম। জমাটবাঁধা অন্ধকারে যদিও ফ্ল্যাসলাইট এর আলোতে ততোটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে না তবুও এটাই এখন শেষ ভরসা।
ফোনের আলোতে পথ দেখে দেখে সামনে এগুচ্ছি কিছুদূর যাওয়ার পর আবারও ডাক টা শুনতে পাচ্ছি কিন্তু এখন একটা মেয়েলী হাসির শব্দের সাথে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দও যোগ হলো। আমি ঠাহর করতে পারছিনা শব্দ টা কোন দিক দিয়ে আসছে।
আমি যখন ডানে তাকাচ্ছি তখন মনে হচ্ছে বাম পাশ থেকে শব্দ আসছে, আবার যখন বামে তাকাচ্ছি মনে হচ্ছে ডান দিক থেকে শব্দ আসছে।
হঠাৎ হাসি আর কান্নার সাথে অনেক গুলো মেয়ের একসাথে ভয়ংকর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো। এতো জোরে আর এতো ভয়ানক আওয়াজ হচ্ছে যে আমি কান বন্ধ করেও শান্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে কান্নার আওয়াজ আমার মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো কে ছিড়েখুঁড়ে দিচ্ছে।।
কান বন্ধ করে চিৎকার করে বলছি;
থামো…… থামো বলছি! আমি আর নিতে পারছিনা আমার মস্তিষ্ক ছিঁড়ে যাচ্ছে থামো তোমরা।।
হঠাৎ আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। আমি কান থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। তখনই একটা হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো আমার ঘাড় বেয়ে।। ভয়ে বুকটা আবারও কেপে উঠলো,
মনে হচ্ছে আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে কেউ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। ঠান্ডা একটা বাতাস আমার ঘাড়ে আছরে পরছে। মনে সাহস সঞ্চয় করে পেছনে ঘুরে তাকালাম তবে কিছুই দেখতে পেলাম না। আবারও নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো চারিপাশ!!
হঠাৎ মাটি ক্ষনে ক্ষনে কেপে উঠতে লাগলো।। মনে হচ্ছে কেউ রেললাইন ধরে হেটে আসছে।
অন্ধকার বেশি হওয়ায় কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না, তবে মনে হচ্ছে কেউ থেমে থেমে পা ফেলছে, আর সেই পা ফেলার তালে তালে মাটি একটু একটু কাপছে। সেই আওয়াজ অনুসরণ করে আমিও এগুতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো, যেন কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
কেমন একটা ভ্যাপসা গরম অনুভব হতে লাগলো! প্রচন্ড হাসফাস লাগছে দম নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেক।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কাউকেই দেখছিনা, পরিবেশটা আরও ভারী হয়ে উঠেছে।। হঠাৎ রেললাইনের উপর চোখ পড়তেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম!!
আমার ঠিক সামনে একটা কাটা পা দাঁড়িয়ে আছে। পা টা গোড়ালি থেকে কাটা, কাটা অংশ থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। আর সেই কাটা পা হুবহু জীবিত মানুষ যেমন দাঁড়াই থাকে তেমনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কাটা পা আর আমার দূরত্ব এক হাত সমান।।
আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না দিকবিদিক হয়ে দিলাম দৌড়।
আমি যত দৌড়াচ্ছি পা টা আরও বেশি ভয়ংকর আওয়াজ তুলে দৌড়াতে লাগলো আমার পেছনে। একেতো ঘুটঘুটে অন্ধকারে দৌড়ে কুল কিনারা পাচ্ছিনা, তারউপর ভয়ংকর আওয়াজে কাটা একটা পা আমাকে ধাওয়া করছে ভাবতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
প্রান পণে রেললাইন ধরে ছুঁটছি হঠাৎ কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। ফোনটাও হাত থেকে পড়ে গেলো।
রেললাইনের পাথরে পড়ে আমার হাটু ছিলে গেলো অনেকখানি, রক্তও বেড়ুচ্ছে। উঠার চেষ্টা করে বুঝতে পারলাম পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারছিনা।
একটু ঝুঁকে কোনো মতে ফোন হাতে নিলাম আর যেখানে পড়েছি সেখানে ফোনের আলো জ্বালিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার গা শিউরে উঠলো।
দেখলাম একটা বিভৎস কাটা মাথা,যার গালে গভীর ক্ষতের চিহ্ন!! গলার কাটা অংশ থেকে ঘড়ঘড় আওয়াজ বেড় হচ্ছে, তা থেকে টাটকা রক্ত পরে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। হঠাৎ মাথা টা চোখ মেলে আমার দিয়ে তাকিয়ে ভয়ংকর একটা হাসি দিলো আর বলতে লাগলো:
মরবি তুই মরবি!!
সব কটা মারা পরবি!! কাউকে ছাড়বে না সে সবাইকে মেরে ফেলবে।।
সে আসছে, আসছে সে!!
বলে ভয়ংকর ভাবে হাসতে লাগলো আর আমি ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালাম।
যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। মা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিরে মা তুই ঠিক আছিস তো? তোর কি হয়েছিলো? রাতে অমন করছিলি কেন? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলি?
আমি অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করলাম আমি হাসপাতালে কিভাবে আসলাম মা!?
মা যা বললো তাতে আমি আরও চমকে উঠি!!
তুই রাতে হঠাৎ চিৎকার করছিলি অনেক আর বলছিলি সে আসছে কাউকে ছাড়বে না, সবাইকে মেরে ফেলবে আসছে সে!!
আর নিজেকে নিজে আঘাত করছিলি, দেখ কি করেছিস নিজের সাথে।। তোর জ্ঞান ফিরছিলো না দেখে তোকে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসি আমি।
আমি অবাক হয়ে যাই দেখি আমার হাটুতে ব্যান্ডেজ করা।। রাতে রেললাইনে পড়ে গিয়ে হাটুতে ছিলে ছিলো কিন্তু মা বলছে আমি নিজেই নিজেকে আঘাত করেছি!? কিভাবে সম্ভব?
তাহলে কি রাতে ভয়ংকর কোনো স্বপ্ন দেখেছি!? নাকি বাস্তবে আমার সাথে হইছে?
কি হয়েছে রে মা তোর। কেন নিজেকে আঘাত করেছিস। খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছিস কি, মা কে বল সোনা!?
হ্যাঁ মা বাজে স্বপ্ন দেখেছিলাম। তুমি চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে।
মাকে স্বান্তনা দিলেও আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না যে আমার সাথে এসব কি হচ্ছে। এই নিয়ে পরপর তিনদিন আমি একি স্বপ্ন দেখলাম, প্রথম দুইদিন আমি শুধু শরীরে ব্যথা অনুভব করেছি,, কিন্তু আজ কিভাবে এতোটা আহত হলাম?
আর যদি এটা স্বপ্নই হবে তাহলে এতো বাস্তব কেন মনে হয় আর আমি ব্যথা ই কিভাবে পাই?
আমি ‘মিরা’ অনার্স ৩য় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী।। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করি। পরিবার বলতে আছে শুধু মা, মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। আমি আর মা ঢাকায় থাকি।
বাবা নামক ব্যক্তিটিকে হারিয়েছি জন্মের আগে।। বাবা কে ছিলেন, কেমন ছিলেন, আমার বাবার বাড়ি কোথায় কিছুই জানিনা।
উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি বাবার রেখে যাওয়া একটা লকেট (নীল পাথরের) আর অনার চোখ!! চোখ বলছি কারণ আমি দেখতে শ্যামবর্ণের কিন্তু চোখ গুলো গাড় নীল। মা বলে আমার বাবার চোখ ও নাকি আমার মতো গাড় নীল ছিলো।
বাবা সম্পর্কে মা কে জিজ্ঞেস করলে শুধু বলে উনি খুব ভালো আর পরহেজগার ছিলেন কিন্তু এখন আমাদের মাঝে আর নেই। এর বেশি আর কিছুই আমি মার মুখ থেকে বেড় করতে পারিনি। বাবার কোনো ছবিও আজ পর্যন্ত দেখিনি।
বাবার কথা জিগ্যেস করলেই মা কেমন যেন চুপসে যান।। হয়তো আড়ালে বাবার জন্য কান্না করেন কিন্তু আমাকে বুঝতে দেন না। আমিও বেশি ঘাটাঘাটি করি না কারণ মার কষ্ট বাড়াতে চাইনা।
আঘাত বেশি গুরুতর না হওয়ায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে। ডাক্তার কিছু ওষুধ পাতি লিখে দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে বাসায় ফিরছি। বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দেই। মা কে এখনো চিন্তিত দেখাচ্ছে।।
মা আমি ঠিক আছি তুমি চিন্তা বাদ দাও তো। দেখো নিজের পায়ে হেটে বাসায় ফিরছি। আমি একদম ঠিক আছি তুমি আর চিন্তা করো না।
তুই বললেই কি আমি বিশ্বাস করবো? দেখ পায়ে কতটা চুট পেয়েছিস! আমি বললাম আজ হাসপাতালে থেকে যেতে কাল না হয় রিলিজ নিতি, কিন্তু না তুই তো আমার কথা শুনবি না।
মা তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো আমি সত্যি বলছি আমি একদম ঠিক আছি। আর হাসপাতালে কেন থাকবো আমি কি রুগী নাকি?
কতটা আঘাত পেয়েছিস!! আমিতো তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম।।
হয়েছে ভেতরে চলো বাসায় এসে পরেছি।
বাসায় ঢুকে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আর মা রান্না ঘরে।। ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছছি।। যদিও মাকে বলেছি আমি ঠিক আছি কিন্তু পায়ে অনেক ব্যথা মনে হচ্ছে ভালোই চুট পেয়েছি।
কি হচ্ছে আমার সাথে এসব, কেন হচ্ছে?? এটা কি সত্যিই কোনো দুঃস্বপ্ন নাকি অন্য কিছু!!
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ যায় আয়নায় আর দেখি আয়নায় আমার প্রতিবিম্ব টা নড়ছে না। কিন্তু আমি ঠিকই তোয়ালে হাতে নিয়ে নড়াচড়া করছি।
প্রতিবিম্বটা এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কোনো নড়াচড়া ছাড়াই স্থির হয়ে পলকবিহীন দৃষ্টিতে। আমি এক হাত উঠিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম এটাকি আমার মনে ভুল!!
আমি হাত দিয়ে আমার মুখ স্পর্শ করলাম কিন্তু একি আয়নায় কেন আমার প্রতিবিম্ব নড়ছেনা।। আমি আবারও হাত নাড়াচাড়া করলাম কিন্তু সে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার ভয় হতে লাগলো আমি ঢুক গিলে আয়নায় প্রতিবিম্বটা ছুঁয়ার জন্য হাত বাড়ালাম।
কিন্তু তখনই প্রতিবিম্বটার চোখ থেকে রক্ত বেরুতে লাগলো। আমি ভয়ে নিজের চোখে হাত দিলাম আমার চোখ থেকেও কি রক্ত বেরুচ্ছে!? কিন্তু না আমিতো ঠিক আছি।
হঠাৎ প্রতিবিম্ব টা বলে উঠলো ‘মিরা’ আমাকে সাহায্য করো।।
ক-কে কে তুমি?
আমাকে সাহায্য করো ‘মিরা’!!
কে তুমি? বলছো না কেন?
কিন্তু সে একি কথা রিপিট করছিলো “মিরা সাহায্য করো আমাকে”।।
কি হয়েছে তোমার? কে তুমি আমি কিভাবে তোমাকে সাহায্য করবো??
তখনই আয়নার প্রতিবিম্বটার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়তে লাগলো।।
আমি ভয়ে চিৎকার করতে লাগলাম আমার চিৎকার শুনে মা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।।
কি হয়েছে মিরা কি হয়েছে মা তোর,এভাবে চিৎকার করতেছিস কেন কি হয়েছে??
মা! মা! আয়নায় (আঙুল দিয়ে আয়নায় ইশারা করছিলাম)
কি? কি হয়েছে মিরা, আয়নায় কি? কিছুই তো দেখছিনা। কি হয়েছে তোর আমাকে খুলে বল।
মা আয়নায় দেখো!!
কি দেখবো কিছুই তো নেই কি হয়েছে তোর।। কাল রাতেও তুই অমন করছিলি আর এখনো এমন করছিস ভয় পেয়েছিস মা!? দেখ কিছুই নেই এইতো আমি তোর সাথে আছি।। কিছু হয়নি সব ঠিক আছে।।
নিজেকে সামলে নিয়ে আমি চোখ তুলে আয়নায় তাকালাম, কিন্তু এখন আর কিছুই দেখছিনা সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তাহলে আমি এত্তোক্ষণ যা দেখছিলাম তা ও কি আমার মনের ভুল ছিলো??
মা বললো :
চল খাবার রেডি করেছি খেতে আয় বলে চলে গেলেন আমিও মা এর পিছুপিছু খাবার খাওয়ার জন্য যেতে লাগলাম।।
অপরদিকে আমরা দেখতে পাই,
আয়নায় একটা মেয়ের বিভৎস চেহারা ভেসে ওঠে!!
মিরা এই মিরা উঠ আর কতো বেলা করে ঘুমাবি? ভার্সিটি যাবিনা!!
উম্মম!! মা এতো সকাল সকাল কেন ডাকছো?
আরেকটু ঘুমাতে দাও না প্লিজ।।
সকাল!! কয়টা বাজে দেখেছিস?? ১০ টা বেজে গেছে উঠ জলদি আজ না তোর ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে বলছিলি!?
কিহ!! ১০ টা বেজে গেছে এই রে আজও লেইট হয়ে গেলো উঠছি উঠছি।।
তারাতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি নাস্তা রেডি করছি।।
ফ্রেশ হয়ে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।। পায়ের ব্যথা টা অনেকটা কমে গেছে দেখছি,, যাক বাবা বাঁচা গেলো! বেশি ব্যথা হলে তো আজ ভার্সিটি ই যেতে পারতাম না। আর না গেলে কিভাবে হবে!! আমার কালাচাঁদ কে না দেখলে যে আমার দিনটাই মাটি হয়ে যেতো!!
তারাহুরো করে রুম থেকে বেরুলাম।।
মা ডাকছে মিরা নাস্তা টেবিলে দিয়েছি নাস্তা করে যা।।
মা এমনিতেই লেইট হয়ে গেছে বাইরে কিছু কিনে খেয়ে নিবো, এখন যাই।।
কোনো কথা না চুপচাপ বসে নাস্তা করবি,, নিজের শরীরের কি অবস্থা করছিস দিনদিন তোর সেইদিকে খেয়াল আছে??
আরে মা বকছো কেন? ঠিক আছে বলে, একটা পাউরুটি আর কলা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
পেছন থেকে মা ডেকেই যাচ্ছে এই মিরা এতোটুকুতে কি হয়, ভালো করে নাস্তা করে যা।।
বাসা থেকে বেড়িয়ে একটা রিকশা নিয়ে নিলাম, রিকশায় বসে বসে পাউরুটি আর কলা খাচ্ছি তখন পেছন থেকে একটা ছেলে কন্ঠ ‘মিরা ‘মিরা, এই ‘মিরা বলে চেচিয়ে ডাকছে। আমি পেছনে না তাকিয়েই বুঝে নিয়েছি কে সে তাই রিকশা মামা কে বললাম,
মামা রিকশা জোরে চালান, এমন জোরে চালান যাতে পেছনের ওই হাতির বাচ্চাটা রিকশার নাগাল না পায়।
মামা একটু ভিত চোখে পেছনে তাকালেন আর বললেন,
আফা কই হাতির বাচ্চা?? আমিতো কোনো হাতির বাচ্চা দেহি না!!
আরে মামা ওইযে চেচাচ্ছে শুনতে পাচ্ছেন না!? ওর কথাই বলছি।। এখন কথা না বাড়িয়ে ফুল স্পিডে রিকশা চালান আপনাকে ১০ টাকা বেশি দিবো।।
মামা মনে মনে হয়তো ভাবছে আমি পাগল, তাতে আমার কি আমি তো একটু মজা নিচ্ছি আমার এলিফ্যান্ট চাইল্ড বন্ধুর সাথে।।
কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলাম না এর আগেই নিহান রিকশার নাগাল পেয়ে গেলো,
মামাকে রিকশা থামাতে বললাম আর নিহান কে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বলছি,
কিরে নিহান তুই কই থেকে আসলি আর এমন দৌড়াচ্ছিস কেন??
কুত্তি, পেত্নি, শাকচুন্নি তুই ইচ্ছা করে আমাকে দৌড়াচ্ছিলি, এখন আবার অবাক হওয়ার ভান করছিস মজা নেস আমার সাথে??
আরে আরে রেগে যাচ্ছিস কেন আমিকি জানি তুই পেছনে দৌড়াচ্ছিস আমি দেখলে তো কখনই রিকশা থামাতে বলতাম।।
হইছে আর নাটক করবি না, তুই কি কালা? কানে শুনিস না সেই কখন থেকে চিল্লিয়ে চিল্লেয়ে ডাকছি তোকে।। আমি সিউর আমার এমন চিল্লানিতে মৃত লাশ ও জেগে উঠার কথা কিন্তু তুই শুনিস নি তাই না??
আচ্ছা ঠিক আছে আর রাগ করিস না “আমার বুল হইছে আমাকে খ্যামা দেন পিলিজ!
তোর উপর রাগ করতে পারলে তো ভালোই হতো কিন্তু আফসোস সেটা আমার ধারা হয় না!!
কিরে কি বিড়বিড় করছিস!! আমাকেও বল আমিও শুনি মেয়ে বশ করার কোনো জাদু মন্ত্র শিখেছিস নাকি?? আমাকেও শিখা ভাই আমিও দেখবো কাউকে বশ করতে পারি কিনা!!
হ্যাঁ শিখছি আর সেই জাদু মন্ত্র দিয়ে আগে তোকে বশ করবো,, তারপর তকে দিয়ে আমার ঘরের সব কাজ কাম করাবো,, থালা বাসন ধোয়াব,, কাপড় কাচাবো,
হয়েছে কি কাজের বোয়াদের অনেক হেডাম বুঝছিস তাই ঠিক করেছি, তোকে বশ করে ফিরি ফিরি কাজ করিয়ে নিবো। কেমন আইডিয়া ভালো নাহ?
আমি রেগে নিহান কে কিল ঘুসি মারতে লাগলাম। আমাকে দিয়ে বোয়ার কাজ করাবি তবে রে আজ তোর হাড্ডি গুড়ো করবো দাঁড়া!!
নিহান হাসতে হাসতে বলছে,
এই কি করছিস রাস্তায় এমন ভাবে মারছিস,আমার হবু শাশুড়ী দেখলে আমার কাছে তার মেয়েকে আর বিয়ে দিবেনা।।
রিকশা মামা বিরক্ত হয়ে বলছে,
আফা আমনেরা কি এহানেই নাইম্মা যাইবেন অইলে আমার ভাড়া মিটাই দেন।১০ টাকা বাড়াই দিবেন বলছিলেন হেইডাও দিয়েন।।
নিহান বললো, ওয়েট ওয়েট ১০ টাকা কেন বাড়িয়ে দিবে??
আরে মামা আফায় কইছে মামা রিকশা জোরে চালান পেছনে একটা হাতির বাচ্চা আসতেছে সে যেন রিকশার নাগাল না পায়।।
আমি কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে আছি।।
আর সে রাগে গজগজ করে বলছে আমি হাতির বাচ্চা তাইনা?? তুই না বললি তুই আমার ডাক শুনিস নাই তাইলে??
আরে রেগে যাচ্ছিস কেন আমিতো মজা নিচ্ছিলাম একটু।। আর তুই হাতির বাচ্চা হবি কেন তুই তো আমার কিউট গুলুমুলু এলিফ্যান্ট চাইল্ড।।
নিহান রাগ করার ভান করে বললো এর শুধ আমি নিবো দেখবি।। রিকশা মামা চলেন সামনে বাস স্ট্যান্ডে নামাই দিবেন।। ১০ টাকা না ২০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে চলেন।।
রিকশায় বসে নিহান মুচকি হেসে চুল ঠিক করতে লাগলো আর আমি প্রতিদিনের নেয় বকবক করেই যাচ্ছি তো করেই যাচ্ছি।। আর নিহান ভালো বাচ্চার মতো সেটা শুনে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে মাথা নাড়াচ্ছে।।
নিহান আমার ছোট বেলার বন্ধু, শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে একেবারে কলিজার বন্ধু, আমাদের পাশের গলিতেই থাকে।। ছোটবেলায় সে কিউবি টাইপের ছিলো, বেশ নাদুসনুদুস হওয়ায় তাকে আমি এলিফ্যান্ট চাইল্ড বলে খেপাতাম।
এখন অবশ্য সে বেশ হ্যান্ডসাম আর কিউট দেখতে। লম্বায় আর শরীরের কাঠামোয় সে বেশ শক্ত সামর্থ। আর বেশ গোছালো স্বভাবের।। চোখ গুলো তার সবুজাভ-নীল। ওকে খেপাতে আমার বেশ লাগে। তাইতো প্রতিদিন নিয়ম মাফিক হোমিওপ্যাথি ডোজ দেই ওকে। মানে রোজ তিন বার নিয়ম করে খেপাই।।
এদিকে আমরা দেখতে পাই.
বদ্ধ রুমের মধ্যে কালো পোশাক পরিহিতা একটা মহিলা তন্ত্র সাধনা করছে।। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে শয়তানের উপাসনা করছে।। তার ঠিক সামনে সার্কেল আঁকা, চারিদিকে মোমবাতি জ্বলছে, মানুষের কিছু হাড়গোড় আর একটা মাথার খুলি।
সার্কেলের ভেতরে একটা নবজাতক শিশু রাখা।।মহিলাটি বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করছে।।
এক সময় সে মন্ত্র পড়া থামিয়ে দিলো। ছুরি দিয়ে নিজের হাত কেটে কিছুটা রক্ত সামনে রাখা আগুন কুন্ডে আহুতি দিয়ে বললো…
হে কাল আমার ডাকে সাড়া দিন, আমি আমার নবম বলি আপনার নামে উৎসর্গ করছি,আমার বলি আপনি গ্রহণ করুন।।
তারপর সে নবজাতকের গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেয়। ফিনকি গিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে আর বাচ্চাটার গলা থেকে ঘরঘর আওয়াজ আসতে লাগলো।
মহিলাটি এবার ভয়ংকর একটা হাসি দিয়ে নবজাতকটির বুক থেকে নাভি পর্যন্ত ছিড়ে কলিজা টা বেড় করে নিলো।। রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো, সে ছোট্ট নরম তুলতুলে কলিজা টা খেতে শুরু করলো। তারপর আসতে আসতে পুরো দেহটা পরম আয়েশে ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগলো।
এদিকে সকাল থেকে এস আই হাসনাত এর মাথা গরম হয়ে আছে।। একে একে তিন তিন টা কেইস সমাধান করে সে মনে করেছিলো, কিছু দিনের জন্য ছুটি নিবে কিন্তু হাতে নতুন আরও একটা কেইস এসেছ।
সকালে এএসপি স্যার কল করে বলেছেন, শহরে বিগত একমাস ধরে এই নিয়ে ৯ টা বাচ্চা মিসিং কিন্তু কিভাবে কি হচ্ছে তার কোনো ক্লু ই মিলছে না।
এমন ঘটনায় পুরো দেশ উত্তাল, উপর মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এএসপি স্যার কেইসটা হাসনাত কে হস্তান্তর করেছেন। সেই থেকে হাসনাত মিসিং কেইসের ফাইল গুলো ঘাটাঘাটি করছে।
অন্যদিকে, কনস্টেবল আতিক মুখ ভার করে চেয়ারে বসে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে বেচারার “আসকে মন ভালো নেই।
তার অবশ্য বিশেষ একটা কারণ আছে, আর সেটা হলো কনস্টেবল আতিক কে হাসনাত বলেছিলেন চা আনতে,, তিনি চা নিয়েও গিয়েছিলেন কিন্তু স্যার কেন যেনো রেগে গিয়ে উনাকে উল্টো বকলেন।।
বেচারা আতিকের মনটা ভিষণ নরম, তাই কেউ অল্প ধমকালে বা বকলে তার মনটা ভারি হয়ে আসে। আর সেটা যদি তার প্রিয় কোনো ব্যক্তিত্ত্ব হয় তাহলে তো আর কথাই নাই।
হাসনাত স্যার তার পছন্দের একজন মানুষ সে তাকে আইডল মনে করে, যদিও স্যার অনেক গম্ভীর আর রসকষহীন একটা মানুষ, তবে তার চোখে হাসনাত একজন সেরা অফিসার। স্যারের মতো একজন বাহাদুর আর সৎ সাহসী পুলিশ অফিসার সে ও হতে চায়।
চলে যাবো ফ্লাসব্যাকে:
আতিক সাহেব মাথা টা হ্যাং হয়ে গেছে এক কাপ চায়ের ব্যবস্থা করেন তো।
ওকে স্যার আমি এখনোই নিয়ে আসছি।
কিছুক্ষণ পর:
স্যার চা নিয়ে এসেছি।
ওকে রাখুন।
কোথায় রাখবো স্যার?
আমার মাথায় রাখুন।
আতিক সত্যি সত্যি চায়ের কাপটা হাসনাত এর মাথায় রেখে দিলো।
একেতো মাথাটা হ্যাং হয়েছিলো তার উপর আতিকের এমন কান্ডে হাসনাত এর মাথা গরম হয়ে যায়, রেগে গিয়ে দেয় এক ধমক, সেই থেকে বেচারা আতিক মন খারাপ করে বসে আছে।
এতোক্ষণ ফাইলগুলো পড়ে হাসনাত বুঝলো যে, বাচ্চা গুলো নির্দিষ্ট একটা টাইমে গায়েব হচ্ছে। আর এমন না যে বাচ্চা গুলো শুধু হাসপাতাল থেকে মিসিং, বরঞ্চ কয়েকটি বাচ্চা তো নিজের ঘর থেকেই গায়েব হয়েছে।
নাহ এভাবে বসে থাকলে চলবে না, যেহেতু আমাকেই কেইসটা হেন্ডেল করতে হবে তাহলে আর দেরি না করে এখনই মিশনে নেমে পড়া উচিৎ।
হাসনাত অফিস রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো, কনস্টেবল আতিক একটা চেয়ারে মন ভার করে বসে আছে। হাসনাতের খারাপ লাগলো কেনো যে বেচারা কে এতো বকতে গেলাম।
আতিক অনেক সহজ সরল আর নরম মনের একটা মানুষ, যদিও বুদ্ধি হাটুতে কিন্তু মানুষ হিসাবে যথেষ্ট ভালো মানুষ।
আতিক সাহেব চলেন এক জায়গায় যাবো।
আতিক গোমড়া মুখে বললো কোথায় যাবো স্যার।
আমার বিয়েতে।
আতিক বিস্মিত হয়ে বলে, কি? আপনার আজ বিয়ে আর আপনি এখনো অফিসে স্যার!? আপনার তো বাসায় থাকার কথা।
হাসনাত হেসে বলে আপনি অনেক সহজ সরল আতিক সাহেব।
আতিক ভেবে পায়না স্যারের বিয়ের সাথে আতিকের সহজ সরল হওয়ার কি যোগসূত্র!
গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়ে আতিক সাহেব এবং এস আই হাসনাত বেড়িয়ে পড়েন।
আতিক ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে হাসনাত স্যারের দিকে তাকাচ্ছে। স্যারকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। আতিক জিজ্ঞেস করে,
স্যার কোন সেন্টারে যাবো?
মানে?
না মানে বিয়ে কি সেন্টারে করছেন নাকি বাসা থেকে?
কি বলছেন আতিক সাহেব?
আপনি ই তো বললেন আজকে আপনার বিয়ে।
আরে! আতিক সাহেব আপনিও না। আমি ওটা মজা করে বলেছিলাম। কারণ; আপনার মন খারাপ ছিলো, তাই হাসাতে চেয়েছিলাম।
আসলে আমি সরি আতিক সাহেব সকালে আপনাকে অযথাই বকাবকি করলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনার অটা প্রাপ্য ছিলো।।
ঠিক আছে স্যার আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু এখন আমরা যাচ্ছি কোথায়?
যাচ্ছি বাচ্চা গুলো যেই স্থান থেকে উধাও হয়েছে সেখানে। দেখি কোনো ক্লু পাওয়া যায় কি না!
তারপর এস আই হাসনাত আর আতিক সাহেব গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন।
অন্যদিকে আমরা দেখি;
মহিলা কলেজের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোক ফিসফিস করে কথা বলছে। একজন বললো ;
সোহেল গুরুমার কথা অনুযায়ী একটা যুবতী মেয়ে যেমন হোক যোগাড় করতে হবে। তা নাহলে আমাদের রক্ষে থাকবে নাহ।
তান্নী ঘুম থেকে ওঠেই জগিং এ বেড় হয়। এটা তার নিত্ত দিনের কাজ।। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। সে সকাল সকাল উঠেই জগিং এর জন্য বেড়িয়ে পড়লো।
মহিলা কলেজ টা তার বাসার থেকে কাছে আর এর পেছনে বড় একটা পার্ক বিধায় সে ওইদিক টায় ই জগিং করে।। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে সে সামনে আগাচ্ছিলো।
মহিলা কলেজের পেছনের দিক টায় আসতেই ঝোপের আড়ালে সে কারো ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পায়। আওয়াজ অনুসরণ করে সেদিকে এগিয়ে যায়।
অপরদিকে,,
লোক গুলো একটা মেয়েকে টার্গেট করে নেয়। আর তাকে উঠিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলো।
সিফাত বলে সোহেল দেখ মেয়েটা এদিকটায় ই আসছে, ও যখন ই এই ঝুপ পেরিয়ে পার্কে যাওয়ার চেষ্টা করবে তখনই তাকে আমরা টেনে ঝোপের ভেতর নিয়ে আসবো। আর গুরুমার কথা মতো তাকে ওই বিল্ডিংয়ে নিয়ে যেতে হবে যথাসময়ে।।
তখনই পিছনে তারা কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়, পিছনে ফিরে দেখে একটা মেয়ে তাদের সব কথাবার্তা শুনে ফেলেছে। তখনই তাদের মধ্যে রফিক নামে একজন বলে ওঠে আর কষ্ট করতে হবেনা।
একেই তাহলে শিকার করা যাক বলেই তান্নীর দিকে এগিয়ে আসে।।
তারা তান্নী কে ধরে ফেলে কিন্তু তান্নী মার্সাল আর্ট কিছুটা জানতো, তাই সে নিজেকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে দৌড় দেয় বাসার দিকে। লোকগুলোও তার পেছনে দৌড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তান্নীর নাগাল পায়না। তাই তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।।
লোকগুলো গিয়ে তাদের গুরুমা কে বললে সে বলে, ওই মেয়েটা কে যে করেই হোক আমার চাই!! আর তার জন্য আমাকে একজনের সাহায্য নিতে হবে।
তারপর রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলে তাকে খবর করার সময় হয়েছে, তাকে বল গুরুমা তাকে সরণ করেছে।
{ আরো পড়ুন – আত্মা বন্ধী
( নীল রহস্য গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)
Leave a Reply