দ্য ডার্ক লেগ – ভূতের গল্প

দ্য ডার্ক লেগ –

 

পোড়া বাড়ির সামনে যাতে না যাই, ছোট থেকেই বাবা বলত। কেন বলত কি ছিল ঐখানে জানতাম না। আজ তাই অনেক সাহস নিয়ে যাচ্ছি সেই দিকে। যাওয়ার পথে সামনেই কালো বিড়ালের দেখা।

যদিও লোক মুখে শুনা যায় কালো বিড়াল অশুভ লক্ষণ। কিন্তু আমি তো বিজ্ঞানের ছাত্র, এইসব কেন বিশ্বাস করব কুসংস্কার? তাই আবার চলতে লাগলাম সেদিকে।

আমার ভূত, কালো জাদু এইসব নিয়ে গবেষণা করতে ভালোই লাগে। সেই উৎসাহ থেকেই পোড়া বাড়ির দিকে যাচ্ছি। বাবা যদিও সবই জানে এই পোড়া বাড়ি নিয়ে। এরপরেও ছেলে হিসেবে আমার কাছে সবটাই অজানা। শুধু মাত্র এতো টুকু জানি।

আমার যখন জন্মও হয়নি, তখন নাকি এইখানে কালো জাদু করতে আসত মানুষ জন। আর এখন তো এও শোনা যায়, এখানে নাকি জ্বিনদের আখড়া বর্তমানে। তাই লোকজন খুব কম, অবশ্য আসে না বললেই চলে।

আমি এতো সাহস নিয়ে যাচ্ছি, কারন আমার ইচ্ছাশক্তি প্রবল, ভেতরে কি আছে তা দেখার। আর তাছাড়া ছোট বেলা দাদাকেও এই পোড়া বাড়ির জন্য হারিয়েছি।

গ্রামের শেষ মাথা থেকে হাঁটতে থাকলে, বিশাল এক বাঁশ ঝার পাওয়া যায়। তার মধ্যে দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট হাঁটলেই পোড়া বাড়ি। আমার ছোটবেলা এ গ্রামে কাঁটালেও দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে শহরেই থাকি। আর ছুটিতে ঘুরতেই আমি, নিতেশ, মিনময় আর রাফি আমাদের গ্রামে এসেছি।

ওরা সবাই ঘুমাচ্ছে এখন। আর আমি এই সকাল সকাল সেই পোড়া বাড়ির দিকে যাচ্ছি। প্রথমে জঙ্গল পারি দিলাম। এর মধ্যেই কালো বিড়ালের মুখামুখি। তার উপর আমি যদিও সাহসী প্রচুর, তারপরেও যত ভেতরে যাচ্ছি গায়ের লোম সব কাঁটা দিয়ে উঠছে তত।

তারপরেও হাঁটা না থামিয়ে, পোড়া বাড়ির সামনে আসতেই, দু কানের কাছে কে জেনে বলতে থাকে, ভেতরে যাসনে, ভেতরে যাসনে।

কানের কাছে এরূপ শব্দ শুনে আমি এদিক সেদিক তাকাতে থাকি। কাউকেই দেখতে না পেয়ে আবার সামনে পা বারাতেই শুনতে পাই, কে যেন বলছে, “ভেতরে যাবি যা, কিন্তু পদ্ম লেগের দিকে আবার তাকাস না যেন।

কানে আসা দ্বিতীয় আওয়াজ’টা ছিল এমন। কিন্তু শূনে বুঝা যাচ্ছিল, যে আমাকে এ কথা বলছে। সে চায় যাতে আমি পদ্ম নামক লেগ’টার দিকে তাকাই।

এরপর আবার ভেতরে প্রবেশে পা ফেলতে যাব। ঠিক তখনি, পেছন থেকে রুস্তম, যার দায়িত্ব আমাদের খেয়াল রাখা। সে দূর থেকে আমার নাম ধরে বলে, “কাফি।

আমি আমার নাম শুনে পেছনে তাকাতেই দেখি, রুস্তম লাঠির মতো সাদা এক কাপড় হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পেছন থেকে কে যেন গানের সুর করে বলছে,

সে আমার কাছে আসিয়াও দূরে চলে গেলো,

আবার অপেক্ষা করিতে হইবে,

আবার কাছে ডাকিতে হইবে।

সে আমার কাছে আসিয়াও দূরে চলে গেলো।

পোড়া বাড়ির ভেতর থেকে এমন শব্দে আমি বুঝতে পারছিলাম। আমি কোন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি। যা রুস্তম দেখে আরো তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসে। আর দু কানে সাদা কাপড়ের কিছু অংশ গুজে দেয়। আচমকা আমি বুঝতে পারি এতক্ষণ যত সাহস আমি পাচ্ছিলাম। তা আসলে আমার না বরং আমাকে কেউ একজন নিয়ন্ত্রন করে এতো সাহস দিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

আমি যতক্ষনে সবটা বুঝে রুস্তম চাচাকে জিজ্ঞাসা করতে যাবো কারন, সেই মুহূর্তে নিতেশের পায়ের লাতি খেয়ে আমি বুঝতে পারি, আমি এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম। কিন্তু ঘটনা’র রহস্য শুরু হয় তখন। যখন রুস্তম চাচা আমাকে একা পেয়ে বলে, “তোমাকে যেন আর পোড়া বাড়ির সেদিকে যেতে না দেখি।

আমি সাথেই সাথেই বুঝে ফেলি, এতক্ষণ যা হয়েছে আমার সাথে। তা কিছুই সপ্ন না, বরং বাস্তবেই হয়েছে। আর তখন থেকেই, মনে প্রশ্নের দানা বাধে, “এই পোড়া বাড়ি আর পদ্ম লেগের কাহিনি’টা আসলে কী?

সারাদিন গ্রামের এ পাশ ওপাশ ঘুরে, শরীর এখন বড্ড ক্লান্ত। এরপরেও নাকি রাফি আর মিন্ময়ের এনার্জি সকালের মতই। তাই সারাদিন ঘুরে ফিরে এখন সবাই মিলে বসেছি আড্ডা দিতে।

আড্ডার মধ্যে নানা ধরনের টপিক নিয়ে কথা হচ্ছিল। হুট করে আড্ডার মধ্যে নিতেশ ফিসফিস করে বলে, “আমাদের কেউ দেখছে, তোরা কি তা খেয়াল করেছিস?

নিতেশের কথায় আমি আওয়াজ করে বলতে যাব, “কি ব…”

নিতেশ আমাকে ইশারা করে বলে, “আস্তে, এতো জোড়ে আওয়াজ করলে তো লোকটা বুঝেই ফেলবে।

মিন্ময় আমাদের চারজনের মধ্যে, সবচেয়ে ভীতু ছিল। যে কারণে এ কথা শুনে মিন্ময় বলে, “চল বাড়ির ভেতরে চলে যাই সবাই। বলা তো যায় না, কি না কি করতে এসেছে আমাদের।

আমি মিন্ময়ের কথায় বলি, “দূর বেটা! কে না কে দেখছে, তার জন্য এই বসন্তের বাতাস রেখে ভেতরে চলে যাব?

দ্য ডার্ক লেগ

পাশ থেকে রাফি মজা করে বলে উঠে, “তোর ভাই প্রেমিকা আছে। তোর মনে প্রেমও আছে। বসন্তের বাতাস তোর তো ভালো লাগবেই।

আমাদের মজার করার মধ্যে, একমাত্র নিতেশই ছিল খুবই সিরিয়াস তখন। আমরা যতই মজা করছিলাম বা গল্প করছিলাম না কেনো। নিতেশ এক মনে আমার পিছনের দিকটাতেই কেমন করে যেন তাকিয়েছিল। বিষয়’টা আমি তখন অতটা সিরিয়াসভাবে নেইনি। কিন্তু মনে হয় নেওয়াটা দরকার ছিল।

আমাদের কথার মধ্যেই, রুস্তম চাচা বাড়ির ভেতর থেকে আওয়াজ দিয়ে বলে, “বেশি রাতে বাহিরে বসে আড্ডা দেওয়া ভালো না। তাই তোমরা ভেতরে আইসা প্রয়োজনে আড্ডা দাও বা গল্প কর।

আমরা রুস্তম চাচার কথায় ভেতরে চলে আসি তখন। কিন্তু নিতেশ আনমনে এক নজরে আমার পিছনের দিকটাতেই তাকিয়ে ছিল। ভেতরে এসেও জানালা দিয়ে সেখানেই কেমন পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়েছিল।

আমি, রাফি এবং মিন্ময় বিষয়টা খেয়াল করে, যতক্ষনে নিতেশকে ডাকলাম। নিতেশ ততক্ষনে শুধু বলল, “আমাদের এইখানে আসা ঠিক হয় নাইরে। ওরা আমাদের দেখতেছে এক দৃষ্টিতে।

আমি আর রাফি তো নিতেশ এর এমন গুরু গম্ভীর কথা শুনে পুরাই থ! অন্যদিকে মিন্ময় ভয়ে যেখানে ছিল সেখান থেকে উঠে আমার আর রাফির পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

আমি নিতেশ’কে বললাম, “কি সব আজে বাজে বলছিস। চল খেতে চল, ক্ষুধা পেয়েছে প্রচণ্ড।

নিতেশ কে এ কথা বলে হাত ধরে টান দিতে যাবো। তখন রুস্তম চাচা ঘরে চলে আসে, আর বলে, “তাড়াতাড়ি খেতে চলে আসো। কাল আবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। না হয় কিন্তু মংলা বাগানে আর ঢুকতে পারবে না।

রুস্তম চাচা আসার পরে, নিতেশ মুহূর্তেই রূপ পাল্টে বলে, “চল চল সবাই তাড়াতাড়ি খেতে চল। কাল কি মংলা বাগানে যাবি না নাকি?”

আমরা তিনজন তো, এক দৃষ্টিতে নিতেশের দিকে চেয়ে আছি। একটু আগের নিতেশ আর এখনকার নিতেশ পুরোপুরি ভিন্ন। এরপরেও কিছু না বলে, চুপচাপ আমরা সবাই রুস্তম চাচার সাথে খাবারের টেবিলে চলে আসি।

তবে আসার সময় পেছন থেকে নিতেশ যে দিকে তাকিয়ে ছিল, সেদিকে তাকালে দেখি। বহু দূর থেকে কেউ একজন আমাদের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি লোকটাকে দেখেও কাউকে কিছু না বলে সবার সাথেই ক্ষেতে চলে আসি। তবে খাবার শেষে উপরে ঘুমাতে আসার আগে, রুস্তম চাচা’কে গিয়ে বলি, “চাচা ঐ দূর গাছের আড়াল থেকে কেউ একজন আমাদের দেখছে।

আমার কথা শেষ হতেই রুস্তম চাচার মুখে ভয়ের আভাস ফুটে উঠে। আর সবাইকে ডেকে বলে, তোমরা মনে রেখ। রাতে আমি তোমাদের কখনই বাড়ির বাহিরে নিয়ে যাব না।

সে যে প্রয়োজনই হোক না কিনা। এরপরেও আমি যদি কাউকে ডেকে আমার সাথে যেতে বলি, চার জনের কেউই আমার সাথে আসবে না।

রাফি রুস্তম চাচার কথায় বলে উঠে, “চাচা আপনিই বলছেন আমাদের কখনই ডাকবেন না। আবার আপনিই বলছেন ডাকলে যেন না আসি। কথাটা কেমন হলো?

আমি বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বলি, “আরে রাফি বাদদে। চাচা যা বলছে তা শুনলেই হবে। আমাদের ওত গবেষণা করে লাভ কী?”

রাফি সব সময়ই কথা ধরে বসে, এটা ওর অভ্যাস। মিন্ময় সেই ছোট থেকেই একটু কিছু হলেই ভয় পায়, এটা ওর স্বভাব। নিতেশ এই ভালো তো এই সিরিয়াস। আর আমার ভয় জিনিসটা নেই বললেই চলে। সবসময় সিরিয়াস না, আবার মজাও না। পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে ভালো লাগে। এই হলো আমাদের ছোট খাটো পরিচয় আর কি।

রাতে চার জন ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পরি। আর ভোর চারটা হবে আনুমানিক। রুস্তম চাচা আমাদের ডাকতে আসলে দেখি ঘরে তো চারজনের মাত্র তিন জন আছি আমরা। তাহলে আরেকজন অর্থাৎ নিতেশ গেলো কোথায়?

রুস্তম চাচা এমনটা দেখে শুধু মাত্র বলে, “চিন্তা করতে হবে না। আরেকটু সকাল হোক আমরা নিতেশ’কে পেয়ে যাবো। তবে আমরা নিতেশ কি এখন’কার ঘটনা কিছুই বুঝতে দিব না।

আমি রুস্তম চাচার কথায় কেন জিজ্ঞাসা করলে বলে, “নিতেশ আসলে নিজেরাই বুঝতে পারবে। শুধু মাত্র এতোটুকু জানো যে, নিতেশ নিতেশ না।

আমি রুস্তম চাচার কথায় বলি, নিতেশ নিতেশ না! তবে নিতেশ কে চাচা?

 

 

{ আরো পড়ুন – অভিশপ্ত বাক্স

( দ্য ডার্ক লেগ গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)