ভূতুড়ে বাংলো

ভূতুড়ে বাংলো

গোয়েন্দা অফিসার নীল, চোখ খুলেই নিজেকে জীবিত দেখতে পেল। ভাবতেই পারছিল না, কি করে ও বেঁচে আছে?! তবে এর থেকেও আশ্চর্য ব্যাপার ছিল যে,‌ আজ লাস্ট মুহূর্তে ও একটি পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু এখন কি করে গতদিনের সেই ঝরণার পানি বয়ে যাওয়া নালার মধ্যে এসে পড়লো?

ওকে কি এখানে কেউ নিয়ে আসছে? নাকি ওই মরে, ভূত হয়ে ফেরত এসেছে!

পরেরদিন সকাল দশটা সেন্ট্রাল গোয়েন্দা অফিস ঢাকা! এই রহস্যময় ভূতের বাংলো কেন্দ্র করে কনফারেন্স, যেখানে গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর সমন্বয় হচ্ছে! প্রথমে সহকারী থানা ইনচার্জ আরাফ, তারপরে সার্চ ইনচার্জ এএসপি হাসান।

অবশেষে গোয়েন্দা অফিসার নীল আসলো এক্সপ্লেন করতে? সে জানালো, কি করে মরতে মরতে বেঁচে ফিরে আসছে এবং পাহাড়ের উপর থেকে কি করে নালার কাছে পৌঁছাল?! এত কিছুর

পেছনে অবশ্যই কোন দৈব বা খারাপ আত্মার শক্তি আছে!

তবে গোয়েন্দা অফিসার লীলের বেঁচে ফিরে আসাটা সত্যিই অবাক হওয়ার মতই। কারণ ওই একা একা ওখানে যাওয়ার পরও কিভাবে এতকিছুর পরেও বেঁচে ফিরল? যেহেতু ওর বক্তৃতায় সুস্পষ্ট, বাংলোর প্রেতাত্মাদের কবলে পড়েছিল! তাহলে কেন ছেড়ে দেওয়া হল? কেন ওকে মেরে ফেলা হলো না?

যদিও নীলের ফিরে আসাতে সবাই খুশি, কিন্তু তবুও একটা প্রশ্ন থেকেই যায় “তাহলে কি প্রেতাত্মাটি?

বিগত সমস্ত ঘটনা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, এই ব্যাপারটা সরকারকে অবহিত করে  ভুতুড়ে বাংলোটি ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করার জন্য!

অন্যথায় নয়তো এখানে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন মানুষ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ ভুতুড়ে বাংলা টি অলরেডি মানুষখেকো বাংলাতে পরিণত হয়ে গেছে!

তবে এই সিদ্ধান্তে কয়েকজন অনীহা প্রকাশ করল, কেননা যেহেতু এটা খারাপ শক্তি দ্বারা হচ্ছে তাহলে বাংলোটি ভাঙার সময়ে আরো এক্সিডেন্ট বা মানুষ মরার সম্ভাবনা থেকে যায়! তাছাড়া ইহার ভিতরেও কয়েকশো কোটি টাকার অ্যান্টিক বস্তু আছে। যদি ভাঙতই হয়, তাহলে এই অ্যান্টিক বস্তুগুলোকে উদ্ধার করে তারপরে ভাঙতে হবে।

নয়তো এই বাড়িটির চারদিকে ওয়াল করে, বিপদজনক সংকেত চিহ্ন লাগিয়ে দেয়া হোক।।

অনেকেই ইহার পক্ষে সাফাই দিল, আবার বিপরীত পক্ষও নিল! তবে পক্ষের লোকের বক্তৃতা‌ই কিছুটা যুক্তিক সুস্পষ্ট ছিল, যেহেতু এটা দেশীয় সম্পদ রক্ষার্থে সাপোর্ট দিচ্ছে! শেষে অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে এটাই পাশ হলো!

তাই অ্যান্টিক সংগ্রহ করার জন্য একটা টিম গঠন করা হলো, যে টিমের পরিচালনা করবেন ডিআইজি সাহেব নিজেই। তবে ইতিপূর্বের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য, অ্যান্টিক সংগ্রহের জন্য কেউ রাজি হচ্ছে না। কে চায় স্বইচ্ছায় জীবন দিতে?

শেষে ”উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে” চাপিয়ে দেওয়ার মতো করে, একটা বুদ্ধির উদয় করা হলো আর সেটা “অ্যান্টিক অ্যাসোসিয়েশন” কে দায়িত্ব দেওয়া! যেহেতু এই বিষয়টা ওদেরই হ্যান্ডেল করার কথা!

বিশেষ করে এই জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা ওরাই ফেস করে থাকে নিয়মিত! তাই ওদেরকে দায়িত্ব দিয়ে পুলিশ বাহিনী শুধু বাংলার চারদিকে নিরাপত্তা দিবে!!

অপরদিকে শয়তানি শক্তির অধিকারী গিরি শংকর বাংলাদেশে প্রবেশ করে পুরনো আস্তানায় চলে গেলো। কিন্তু আফসোস, এখানে স্মৃতি ছাড়া কিছুই বেঁচে নাই। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ভূতুড়ে বাংলোটি ওর সকল সাঙ্গ-পাঙ্গদের খেয়ে হজম করে ফেলেছে!

তাই ওই মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পাঁচ বছর আগের সেই লোমহর্ষক ঘটনার কথা অাওরাতে থাকে। এত কালোবিদ্যা জানার পরেও, সেই ঘটনাটি ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে দিল।

ভূতুড়ে বাংলো

তারপর ওই বাংলোতে ঢুকার জন্য নিজের মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে রাতের অন্ধকারে এগিয়ে চলল। তবে আজ বাংলার কাছে পৌঁছে সেই আগের দিনের মতো কোন রকম সুর, বাজনা,‌ গান শুনতে পেল না। তবে কি এই বাংলোর অলৌকিক ভূতুড়ে শক্তি এখন আর নেই, নাকি ওই আসার আগেই সমস্ত অ্যান্টিক চুরি হয়ে গেছে অথবা সরকার বাজেয়াপ্ত করে ফেলছে!

এই কথাটা মনে হতেই ওর পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি ও চলে গেল, কারণ এত বছরের সাধনা এত বছরের ত্যাগ-তিতিক্ষা সব কি বিফলে যাবে?

তারপর জ্ঞানশূন্য হয়ে দিক বেদিক দৌড়ে বাংলোর ভিতরে ঢুকে যায় এবং অন্ধকারের ভিতর চিল্লিয়ে বলতে থাকে-

এই বাংলোর ভেতর সেই অপশক্তির আত্মাগুলা কোথায়? তাড়াতাড়ি বের হয়ে আমার সামনে চলে আস!

বাংলোর ভেতরে কোন সাড়াশব্দ নেই কিন্তু গিরি শংকর বুঝতে পারে এখনো সেই আত্মাদের উপস্থিতি বিদ্যমান আছে। তবে কেন সামনে দৃশ্যমান হয়ে আসতেছে না? যেহেতু এর আগের বার আমি না চাইতে সবাই আমার সামনে সামনে উপস্থিত হয়ে গেল আর আমাকে নিয়ে টানাহেচড়া শুরু করে দিল!

আমার খেদমতে সবাই দিশেহারা হয়ে গেল! এবার তাহলে সবাই নিশ্চুপ কেন কেন আড়ালে থাকতে চাচ্ছে?

হুট করেই সমস্ত প্রেতাত্মারা গিরি শংকর এর উপর আক্রমন করে বসলো? গিরি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা, তাই ওকে ঢিল দিয়ে ওয়ালের সাথে আঁচড় মারলো। ব্যথায় ককিয়ে ওঠে শরীরটাকা তিন বাঁকা করে ফেলল। গিরি সোজা হয়ে ওঠার আগেই আবার এসে ওর উপর অ্যাটাক করলো। এবারের টা পূর্বের থেকে কিছুটা দুর্বল ছিল। ‌

তাই গিরি‌ শংকর তাল সামলিয়ে যোগাসনের বসে যায় এবং কাল বিদ্যার শিক্ষায় নিজ অবস্থানের চারদিকে শক্তিশালীকুণ্ডলী তৈরি করে ফেলে।

প্রেতাত্মারা এটা বুঝতে পারেনা, তাই তৃতীয়বারে আরো ভয়ঙ্কর ভাবে অ্যাটাক করতে যায় কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কেউ গিরির পাশেই ভিড়তে পারলো না এবং ওকে শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা!

এটা তাঁরা কিছুই বুঝতে পারছিল না, পুনরায় আবার অ্যাটাক করলো কিন্তু না, এভাবে কয়েকবার অ্যাটাক করেও ওরা ফেল হয়ে গেল!‌ তখন আত্মাগুলো ভয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো!

ঠিক তখনই ওরা বুঝতে পারল, আজ থেকে 5 বছর আগের আর এই মানুষটি একী‌ এবং ওদের মনের ধারণাটাও! হয়তোবা এতদিনে আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হয়ে ফিরে এসেছে! প্রেতাত্মাদের মালিক ফিরে এসেছে, এটা ভেবেই ওদের চোখ মুখ কেমন একটা রঙ বদলে গেল মুহূর্তে!

গিরি শংকর বুঝতে পারল, প্রেতাত্মা গুলো এতক্ষণে ওর শক্তি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারছে! তাই গিরি হুংকার ছাড়ে এবং সকল প্রেতাত্মাদের শাসিয়ে বলে–

কেউ যদি আমার সাথে, পরবর্তীতে কোনরকম খারাপ কিছু করার চেষ্টা করিস তাহলে তোদের সকলকে আমি বোতলে বন্দি করে সমুদ্রের তলদেশে পুঁতে রাখব!

তখন এক এক করে সমস্ত আত্মারা, গিরি শংকর এর সামনে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে লাগলো এবং সমস্বরে বলতে লাগলো–

হে পৃথিবীর বাদশা, আমাদের ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন! আর কখনো ওই নারীর কথায় আপনাকে ভুল বুঝবোনা এবং আপনারা আদেশের বাহিরে কোন কাজ করবো না!

এসমস্ত আত্মাদের কথা শুনে গিরি শংকর বুঝতে পারল, এখানে ওর প্রতিদ্বন্দ্বী করার মত আরেকটা প্রাণি বিদ্যমান আছেন এবং সে অবশ্যই নারী! কিন্তু অবাক হওয়ার মত ব্যাপার, পাঁচ বছর আগে এই নারী কোথায় ছিল আর হুট করেইবা কোথা থেকে এই নারীর উদয় হলো??

প্রশ্নোত্তর জানতে হলে আগে প্রেতাত্মাদের সাথে কথা বলতে হবে! কিন্তু ওদের সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। নয়তো ওরা আমাকে যেটা ভেবে এত পূজা করতেছে, সেখান থেকে কিছুটা ডাইভার্ট হয়ে যেতে পারে!

এতদিন সাধনা করে গিরি-শংকর এটা বুঝতে পারছে, গত 5 বছর আগে গিরি শংকরের সাথে যা ঘটেছিল তার পেছনে অনেক বড় একটা ধামাকা আছে! সেই ধামাকা টাই গিরিকে হিরো বানিয়ে দেয়‌ এই বাংলোর প্রেতাত্মাদের কাছে! কিন্তু এখন যদি গিরি উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে, তাহলে প্রেতাত্মারা আবার খেপে যেয়ে ওর ক্ষতি করে ফেলতে পার।

শুধু এই মেয়েটিকে ছাড়াও‌ এই বাংলাকে ঘিরে, গিরির মনেও হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিয়ে বেড়ায়! সেদিনের সেই বিছানায় ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং প্রতিটা নারীর বুক সমান কেন?

আর কেনইবা সমস্ত মানুষজনকে মেরে ওদের কলিজা, পুরুষাঙ্গ এবং মাথার মগজ বের করা হয়? অতঃপর সে লাশগুলোকে কেন ঐ বটগাছে এভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়??

তাছাড়া চারদিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখল, এই বাংলোর সমস্ত‌ অ্যান্টিক ধাতব বস্তু গুলো আগের মতই আছে! তাই তাড়াহুড়া না করে ঘাপটি মেরে বসে, কিছুদিন এই প্রেতাত্মাদের দিয়ে গান-বাজনা, আনন্দ উল্লাস ও নিজের সেবা করিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো!!

গোয়েন্দা বিভাগের কাছ থেকে এই বাংলোর সমস্ত তথ্য ও বিভিন্ন অ্যান্টিকের ছবিসহ “অ্যান্টিক অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশকে” পাঠানো হল। ওরা এই সম্পদকে উদ্ধার করার জন্য 12 সদস্যের একটা টিম গঠন করল।

এই দলের দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার হিসাবে থাকলো “শিখা খন্দকার”। যার নামের সাথে কাজের অনেকটাই মিল। দুর্দান্ত সাহসিকতার সহিত পেশাগত দায়িত্ব পালন করে থাকে।

ইতিপূর্বেও কয়েকটা “অপারেশনাল অ্যান্টিক উদ্ধার” কাজে নিয়োজিত ছিল! বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া, হাজার বছরের পুরনো জাহাজ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের অ্যান্টিক উদ্ধার করছে। সেখানে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল 99 পার্সেন্ট! সেই গল্পটা আপনাদের পরে কোনএক সময় বলব। আজকে ভূতুড়ে বাংলোর অপারেশন…..!!

সকাল দশটাঃ ভূতুড়ে বাংলোর চারো পাশে পুলিশ স্কট অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিখা এবং তার দল, অ্যাসোসিয়েশনের ক্যামেরাম্যান নিয়ে বাংলোর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দরজার পাশে দাঁড়ালো। তারপর ধীরে সুস্থে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল কিন্তু কেউই বুঝতে পারল না “অ্যান্টিক টিমের 12 জন ও ক্যামেরাম্যান” ভিতরে প্রবেশ করতেই, অটোমেটিক দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল।

এখন সময় দুপুর বারোটাঃ শিখার দল ভিতরে যাওয়ার সময় পুলিশ স্কট টিমের সিনিয়র অফিসারের লিমন, উনাকে একটি ওয়াকি টকি সেট দিয়ে দেয়।‌ বিশেষ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যোগাযোগ করার জন্য অথবা ভিতরের কি হয় না হয় সেটার আপডেট জানানোর জন্য!

কিন্তু গত দুই ঘন্টাতে একটিবারের জন্য ভিতর থেকে কোনোরকম কাজের আপডেট, সাহায্য চাওয়া বা এই জাতীয় কিছুই পাইনি।

শেষে বাধ্য হয়ে বাহির থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো কিন্তু না,‌ কোনরকম যোগাযোগ করতে পারেনি। তাই পুলিশ অফিসার লিমন খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল এবং অফিশিয়াল ভাবে তথ্যটা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালো।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আদেশ দেওয়া হলো, স্কট টিম যেন ভিতরে যেয়ে দেখে কি চলছে?

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পুলিশ কোন সদস্য ভিতরে যাওয়ার সাহস দেখালো না। ইতিমধ্যে সবার জানা গেছে এই বাংলোটির ভয়াবহতা। যখন থেকে ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেছে না তখন থেকে বুঝে নিয়েছে ভুতুড়ে বাংলো ওদেরকে হজম করে ফেলেছে।

এসব চিন্তা করে ওরা সিদ্ধান্ত নিল, 13 সদস্যের টিম বাংলোর ভিতরে ঢুকাতে অলরেডি খেয়ে ফেলেছে আর পুলিশ সদস্যদের খাবে না সেটার সিউরিটি কে দেবে!?‌ অতএব সংখ্যাটা 13 তেই সীমাবদ্ধ থাক, পুলিশ খাওইয়ে বাড়ানোর দরকার নাই!

আর সরকারকে অবগত করবে যে, বাড়িটির ভিতরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওই অ্যান্টিক টিম ও ক্যামেরাম্যানকে খুঁজে পায়নি।

গিরি-শংকর গত 5 বছরের সাধনা চলাকালে অমরত্ব হওয়ার চাবিকাঠি পেয়েছিল। তবে সেটা আয়ত্ত করার মত সময় ও যোগান কোনটাই তখন ওর সাধ্যমত ছিল না। ওর গুরু অমর হওয়ার কিছু সাধনা শিখিয়ে দেয়,‌‌ যা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য ও ভয়ঙ্কর নিয়ম কানুন!

বাদ্যযন্ত্রের বাজনার সাথে তালে তাল মিলিয়ে, একজন অবিবাহিত ভার্জিন সুন্দরী নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় নাচতে হবে! সেই সাথে পরপর সাতদিন,‌ 7 জন যুবককে হত্যা কর; তাদের রক্ত পান ও গোসল করতে হবে! তারপর অষ্টমদিন সেই সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে ফুলশয্যা সাজাতে হবে এবং পরদিন সকালেই‌ মেয়েটিকে‌ শক্তিশালী দেবতার সামনে বলি দিতে হবে!

তবে বলি দেওয়ার পূর্বে একটা পূজা সম্পন্ন করতে হবে। আর এজন্য দরকার একজন পুরোহিত। তাহলেই কার্য সম্পন্ন শেষ এবং ওই অমরত্ব লাভ করবে।

সেই সময় ওর হত্যা করার মত মানুষ এবং উলঙ্গ করে‌ নাচানো, বিয়ে করার মতো সুন্দরী কোনটাই সহজলভ্য ছিল না! তাছাড়া শুরু থেকেই গিরি শংকর কয়েকশো কোটি টাকা এন্টিকের জন্য পাগল হয়ে ছিলো, অমরত্বের জন্য নয়!

তাই মাথা থেকে এই বিষয়টা ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিল, কিন্তু আজ এতো সহজেই এরকম করে একটা সুন্দরী মেয়ে শিখা খন্দকার ও তার দলবল পেয়ে যাবে ভাবতে পারেনি!

এত কিছুর জন্য, গিরি শংকর এই ভূতুড়ে বাংলোর কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে কুর্নিশ জানাল। এই বাংলো, ওরে জান-মাল দিলো, সাথে আরাম-আয়েশের খোরাকও দিলো! এত খুশিতে যেন পাগল হয়ে যাবে, তাই আজ গান বাজনা ও নাচের আয়োজন করল!

শিখা ও তার দলের সমস্ত লোককে এই ভূতুরে বাংলোর আন্ডারগ্রাউন্ডের সেই হল রুম বা জেলখানাতে বন্দি করে রেখেছিল! সেই বন্দিশালা থেকে একজন তাগড়া যুবককে উলঙ্গ করে, সমস্ত শরীরে রঙ মাখিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসা হলো!

যেখানে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে গিরি শঙ্করের সাঙ্গ-পাঙ্গদের হত্যা করা হয়েছিল। যুবকটি হাউমাউ করে কাঁদতে ছিল আর ভয়ানক ভাবে চিৎকার করে আমাকে মেরো না, আমাকে মেরো না বলতেছিল!

তবে ওর কান্না ও আত্মচিৎকার শোনার মত কোন মনুষ্যজাতি ছিল না, যা ছিল তা কেবলই প্রেতাত্মা ও শয়তানি শক্তির অধিকারী গিরি শংকর! যাদের মনে কোন মায়া ভালবাসা কিছু ছিল না, শুধুই মানুষের রক্ত নিয়ে হলি খেলার নেশায় মত্ত ছিল! শেষে কলিজা, মগজ ও………ভুনা!!

সবই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু বিপত্তি হয়ে গেল শিখাকে নিয়ে কারণ সে উলঙ্গ হয়ে নাচতে নারাজ।

বিশেষ করে শিখা এর আগেও ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবেলা করে বিভিন্ন অপারেশন সাকসেস হয়েছে। তাই ও ঠাণ্ডা মাথায় এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছিল আর ওদের কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিয়ে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।

যদি ও নিজে নিজেই উদ্ধার হতে পারল, তাহলে তো ভালোই আর যদি না পারে তাহলে বাকিটা!

এটুকু ভাবতেই ওর মনের ভিতর সেই মানুষটির নাম চলে আসলো আর এজন্য ওর চোখে মুখে একটা হাসির রেখা ফুটলো!

এই মানুষটি সেই মানুষ, যার নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা শিখার অন্তরের মধ্যে কারণ ও যেখানেই বিপদে পড়ুক না কেন; ঐ মানুষটি ফেরেশতাদের মত এসে হাজির হয়ে যায়!

শিখা নিজেকে অনেক চেষ্টা করেও উলঙ্গ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেনি কিন্তু নাচের ব্যাপারটা অবশ্যই ভাগড়া দেওয়ার চেষ্টাতে আছে।‌ যেহেতু শিখা এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেনি, কোন পরিস্থিতির মধ্যে আছে কারণ এখানে একটু ভূতুড়ে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, যা ইতিপূর্বে কখনো ফেস করে নাই! তাই সময় নিয়ে জানার ও বোঝার চেষ্টা করছে।

তাছাড়া শিখাকে অনেক প্রকার ভয় দেখানো হচ্ছে প্রেতাত্মাদের দিয়ে কিন্তু ও নিজের জায়গায় অটল! ওকে শেষ পর্যন্ত দেখতেই হবে ঘটনাটা কতদূর যায় আর এখানে কি চলছে, এগুলোর পিছনে কি কি আছে?!

এদিকে গিরি শংকর সমস্ত আয়োজন করেও শেষ পর্যন্ত মেয়েটির জন্য কার্যক্রম শুরু করতে পারতেছে না! এর জন্য গিরি শঙ্কর রাগে ফুঁসলে গড়গড় করছে আর ভাবছে-

যেহেতু জোরপূর্বক নাচানো সম্ভব হচ্ছে না আবার প্রেতাত্মাদের ভয় দেখিয়েও কাজ হচ্ছে না, সেহেতু এমন এক ধরনের ভয় দেখাতে হবে যেটা ওর ভীতকে নাড়িয়ে দেয়! ফুসফুসের বাতাস শেষ হয়ে যায়, কলিজাতে কম্পনের সৃষ্টি হয়ে যায়!

সবথেকে ভয়ঙ্কর ভয় হলো মরণ ভয়, তাহলে এই মেয়েটিকে সেই ভয় দেখাতে হবে! এইজন্য ওর দলে টোটাল 13 জন লোক, মেয়েটিকে বাদ দিয়ে 12 জন! শঙ্করের লাগবে মেয়েটিকে সহ 8 জন, অতিরিক্ত থাকলো পাঁচজন।

যেহেতু এই পাঁচ জনের কোন কাজ নেই বা ওর কোন উপকার আসতেছেনা, সেহেতু এখান থেকে একজনকে মেয়েটির সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করলেই মেয়েটি সবকিছু করতে বাধ্য হবে!

এই কু-বুদ্ধিটা গিরি শংকরের মাথায় আসতেই, একটা শয়তানি হাসি খেলে গেলো ওর চোখে মুখে!

অতঃপর গিরি শংকর, তাঁর প্রেতাত্মাদের আদেশ দিল–

এই কে কোথায় আছিস, তাড়াতাড়ি খাঁচা থেকে আরেকজন‌ বয়স্ক বন্দিকে বাহির করে নিয়ে আস

অল্প‌ কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজন বন্দি বাহির করে নিয়ে এসে মঞ্চের পাশে রাখা হলো! আগে যাকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেতো আর্তচিৎকার ও কান্না করতেই ছিল; সাথে আরো একজন যোগ হলো!

অপরদিকে শিখাতে তো আগেই উলঙ্গ করে, গলায় মৃত মানুষের হাড়ের মালা পরিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়েছিল! শিখা এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে বিবস্ত্র অবস্থাতে লজ্জা, ঘৃণায় মাথা নত করে, হাত দিয়ে বুক ও লজ্জাস্থান ঢেকে ঘাপটি মেরে বসেছিল।

এ অবস্থাতেও বুঝতে পারছিল, দ্বিতীয় বন্দিকে এখানে আনা হয়েছে কিন্তু ঠিক বুঝতে পারতেছিল না; পরের বন্দিকে কেন আনা হলো!

এবার গিরি শংকর, শিখাকে জোর করে দাঁড় করিয়ে দিল! যাতে শিখা তাঁর স্বচক্ষে এই কর্মকাণ্ড দেখতে পারে এবং গিরি শঙ্করের প্ল্যানিংটা সাকসেস হয়! অতঃপর গিরি, তাঁর লোকদের চোখের ইশারা দিলো আর শিখার চোখের সামনে—

সেই দ্বিতীয় বন্দির চোখ দুটো একেক করে উপড়ে ফেলে দেওয়া হলো! শিখা ভয়ে গুঙ্গিয়ে উঠলো! অতঃপর সেই ব্যক্তিটির বুকের মধ্যে চাকু ঢুকিয়ে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কলিজা বের করে নিয়ে আসা হলো!

সে কি বীভৎস ভয়ঙ্কর দৃশ্য, শিখা আর দেখতে পারছিল না কিন্তু অটোমেটিক সে বুঝতে পারছিল, তাঁকে বাধ্য করার জন্য এসব কিছু করা হয়েছে! তাই সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো-

এভাবে ওকে আর মেরো না! তোমরা যা বলবে আমি তাই করবো!

 

লেখাঃ মোশাররফ হোসেন নীলয়!

পরবর্তী পর্ব খুব শীগ্রই আসবে…!

 

{ আরো পড়ুন –পিশাচ জন্তু

( পিশাচ জন্তু গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)