সত্য ঘটনা-
আমি ফরহাদ
১৯৯৭ সালের ঘটনা
তখন আমি কানাডায় থাকতাম
আমার একটা ভুলের কারণে আমার জীবন থেকে দু দুটো মানুষের জীবন চলে গেল অন্তত আমি এটা মনে করি
বারবারই মনে হয় যদি সেদিন এ ভুলটা না করতাম, তাহলে হয়তো আজকে আমার সংসার টা অনেক সুন্দর হতো
কানাডায় তখন একটা ছোটখাটো জব করছিলাম মাত্র কানাডায় শিফট হয়েছি
ভালো একটা জব পাইনি আমি
তখন তার উপরে আবার রেন্ট এ থাকতে হচ্ছে পুরো মাসের খরচ সাথে এক বছরের একটা বাচ্চা।
তিন জনের সংসারে কোনোমতে চলে যাচ্ছিল
বাবা হিসেবে বারবারই মনে হতো আমার মেয়েটিকে যদি এত এত খেলনা কিনে দিতে পারতাম।
কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না, আমার একার ইনকামে সংসার চলত, প্রতিদিন বাসায় ফিরে মেয়েটি আমার বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে
তখনই বুকটা খুব ছটফট করে ওঠে ওই মায়া ভরা মুখটা দেখে আহা আমি যদি প্রতিদিন ওর জন্য কিছু খেলনা নিয়ে আসতে পারতাম,
এই ভেবে নিজের চোখে জল চলে আসতো,, আজও মাসের শেষ দিন, ঘরের কিছু জরুরী জিনিস কেনার পরে
খুব ইচ্ছে হচ্ছিল মেয়ের জন্য একটা খেলনা কিনবো কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মাত্র এক ডলার বাকি
কিন্তু মনকে মানাতেই পারছি না, তাই ভেবে একটা খেলনার দোকানে চলে গেলাম, কিন্তু খেলনা গুলো বেশ দামি ছিল।
একজন অসহায় বাবা হিসেবে ফেরত চলে এলাম দোকান থেকে বের হয়ে নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবতে লাগলাম,
মেয়েটির আজ এক বছর পূর্ণ হল,, মন খারাপ করেই দোকান থেকে বের হয়ে পাশের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম।
হঠাৎ রাস্তার অপর পাশে আমার চোখে পড়ল এক বৃদ্ধা মহিলা ভ্যানে কিছু খেলনা বিক্রি করছে।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চিন্তা করলাম এখানে এভাবে তো কোন ভ্যানে খেলনা বা অন্য কিছু বিক্রি করে না
তবে আজ এই প্রশ্ন ভাবতে ভাবতেই অন্যমনস্কভাবে হাঁটতে শুরু করলাম সেই ভ্যানের দিকে।
ভ্যানের সামনে যেতেই অন্য খেলা দেখব তার আগেই বৃদ্ধা মহিলাটি আমাকে এক অদ্ভুত সুন্দর পুতুল হাতে ধরিয়ে দিল,
এবং বলল এটার দাম মাত্র এক ডলার তোমার মেয়ের খুব ভালো লাগবে এটা নিয়ে যাও, এই
নিয়ে যাওয়া শব্দটা যেন আমার কানের কাছে বেজেই যাচ্ছিল
না আমি অন্য কোন খেলনা দেখলাম,,না আমি অন্য কোন কিছুই ঐ মহিলাকে বললাম এটা জানতে চাইলাম না আপনি আমার মেয়ের বয়স জানেন কিভাবে তাছাড়া আমার যে মেয়ে আছে সেটাই বা জানলেন কিভাবে কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না।
এক প্রকার মন্ত্র মুগ্ধের মত আমি এক ডলার দিয়ে পুতুলটা কিনে নিয়ে চলে এলাম,
সামান্য পুরনো মনে হলেও তবে পুতুলটা দেখতে খুব সুন্দর।
শুধু এই আনন্দই ঘুরছে মনের ভিতরে আজ
আমার মেয়ে মহুয়া খুব খুশি হয়ে যাবে কিন্তু আমার জানা ছিল না আমার সংসারের সুখের শেষ এ জায়গা থেকে শুরু।
সেদিন থেকে আমার প্রতিনিয়ত মনে হতো আমার আশেপাশে কেউ আছে বাসায় থাকলেও একই রকম অফিসে গেলেও একই রকম,
এর মধ্যে দুদিন গেল আমার স্ত্রী আমাকে একদিন রাতে বলল জানো আজ দুপুরে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে আমি জিজ্ঞেস করাতে সে বলতে লাগলো
দুপুরের সময় আমি রান্না করছিলাম, তখন মহুয়া ঘুমোচ্ছিল হঠাৎ আমি শুনতে পেলাম একটি পুরুষের কন্ঠ
যেন মহুয়াকে ডাকছে
কিন্তু বুঝতে পারলাম ওটা তুমি ছিলে না তাই আমি রান্নাঘর থেকে মহুয়ার রুমের দিকে গেলাম,,,গিয়ে দেখি পুতুলটা মহুয়ার খাটের পাশে।
আমি বললাম এতে অদ্ভুত কি,, তোমার হয়তো ভুল হতেও পারে।
আমার স্ত্রী আমাকে জানালো অদ্ভুত ব্যাপারটা হলো মহুয়া ঘুমানোর অনেক আগে পুতুলটা আমি আলমারিতে রেখে আলমারিতে তালা দিয়েছিলাম
এক বছরের মেয়ে তো আর আলমারির লক খুলতে পারবে না
তাহলে পুতুলটা বের হলো কিভাবে, একথা শুনে আমার একটু অবাক লাগলো, তবুও আমার স্ত্রী যাতে ভয় না পায়
ওকে বললাম এতসব ভেবোনা তো হয়তো তুমি রাখতে ভুলে গেছো
সেদিন রাতের ঘটনা এক পুরুষের বিকট চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি আমার স্ত্রীকে ডেকে দিলাম, মহুয়ার দিকে দেখলাম, আমার মেয়েটি ঘুমোচ্ছে,
আমার স্ত্রী বলল শুনেছ এ কণ্ঠটাই সেদিন আমি শুনেছিলাম
আমিও রুম থেকে বের হয়েও অন্য রুমগুলোতে দেখতে লাগলাম কিন্তু না কোনরকম কোন কিছুই বুঝলাম না দেখলাম না
কিন্তু রুমের মধ্যে এসে দুজনই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম, দেখলাম আমার বাচ্চাটি ওই পুতুলের কোলে পুতুলটি মোটামুটি লম্বাতে দু ফুট ছিল চওড়াতে চার ফুট।
আমার স্পষ্ট মনে আছে পুতুলটিকে আমি স্টোর রুমে রেখে এসেছিলাম, তবে?
আমি দৌড়ে গিয়ে পুতুলটিকে ফেলে দিলাম আমার বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলাম,
ওই রাতে রাগের মাথায় পুতুলটিকে রাস্তার মধ্যে ফেলি দিয়ে আসি, পরের দিন পুতুলটিকে আর দেখতে পাইনি, আমি জানতেও চাইনি,,এতটা ভয় পেয়েছি আমি। পুতুলটা কোথায় গেল কিভাবে গেল।
কিন্তু কোন জিনিসকে এত হালকাভাবে নেওয়াটা ঠিক নয় এটা তখন আমার জানা ছিল না,
ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবেও সূরা,নামাজ কিছুই পড়তাম না, শরীর বন্ধ করার সূরা কোন কিছুই জানতাম না, কোন হুজুরের সাথে কথা বলবো আমার ঘরে অলৌকিক এমন কিছু ঘটেছে। সেটা নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে কেউই কোন রকমের মাথা ব্যথাও ছিল না,
আমরা এটাকে স্বাভাবিক মনে করে ভুলে যেতে লাগলাম, দুদিন পরের ঘটনা ১১ ই এপ্রিল আমি অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত
হঠাৎ পুলিশের কল এলো আমার অফিসে আমার জন্য আমার ঘরে আমার স্ত্রী ও আমার বাচ্চার লাশ পাওয়া গেছে
এই খবর শোনার পরে আমার যেন বাকশক্তি কেউ কেড়ে নিয়েছে, আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছিল।
ওদের দুজনের লাশ দেখে পুরো শরীরে কোন রকমের কোন আঘাতের চিহ্ন নেই তবে কিভাবে।
আমি আমার দুজন প্রিয় মানুষকে হারালাম, আর তাদের লাশের পাশে ছিল সে অভিশপ্ত পুতুলটি, এটা দেখে আমার এত খারাপ লাগলো সাথে ভীষণ ভয়ও হচ্ছিল,
বাচ্চা ও তার মায়ের লাশ নিয়ে আমি বাংলাদেশে চলে এলাম, ওদের মৃত্যুর চার দিন পরের ঘটনা আমার আশেপাশে আবারো মনে হচ্ছিল কেউ যেন আছে,,, ভয়ে মসজিদের হুজুরের সাথে সব ঘটনা খুলে বললাম।
উনি আমাকে একজন রাখি হুজুরের কাছে নিয়ে গেলেন, এরপর জানতে পেলাম, সেদিন আমি এক দুষ্টু জিনের কবলে পড়েছিলাম।
আর তার মাধ্যমেই আমার ঘরে সে পুতুলটির আগমন আর দুষ্ট জীনটি পুতুলের মধ্যেই ছিল, হুজুরের মতে কেউ কখনোই ঐ পুতুল দিয়ে কালো জাদু করেছে
এই পুতুলটি, যে কারো হাতে যাবে যে ঘরেই যাবে, সে ঘরের অনিষ্ট হওয়া অনিবার্য,
ওই রাখি হুজুর আমাকে কিছু নিয়মকানুন শিখিয়ে দিলেন আর সেই থেকে আজ অবধি এক ওয়াক্ত নামাজ ছাড়েনি, প্রতিদিন কোরআন পড়া, কিভাবে শরীর বন্ধ করে রাখতে হয় সবকিছুই শিখে নিয়েছি মহান আল্লাহ সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন।
লেখক: নোশিন কাদের।
{ আরো পড়ুন – মৃত্যুর জঙ্গল
( হোস্টেলের আত্মা গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।)
Leave a Reply