মৃন্ময়ী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্প

পর্বঃ০১

মৃন্ময়ী-

পনেরো বছর বয়সী মৃত মেয়ের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট চিৎকার দিয়ে মা মালতী সাহা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। বাবা বিমল সাহা তার স্ত্রীর এমন চিৎকার শুনে দ্রুত গতিতে দৌড়ে গিয়ে দেখে মালতী মেয়ের ঘরের দরজার সামনে চেতনাহীন ভাবে পড়ে আছে। বিমল সাহা হাটু ভেঙে বসে কোনমতে স্ত্রীকে পাজকোলা করে তুলে কোলের উপর মাথা রাখে। মালতীর গাল বেয়ে সাদা সাদা ফ্যানা গড়িয়ে পড়তে থাকে।

স্ত্রীর এমন বেহাল দশা দেখে দিশেহারা অবস্থা তার। মনের এককোণে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব করে বিমল। না চায়তেও মৃত মেয়ের ঘরের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। চোখের কোণ ভিজে ওঠে বিমলের। মনের মধ্যে এক অজানা আশঙ্কায় মন অস্থির হতে থাকে। মাত্র দুইদিন হলো মেয়েকে হারিয়েছে তারা। তাও আবার তাদেরই গাফিলতির জন্য। আর এখনই যদি তার স্ত্রীকে এভাবে হারিয়ে ফেলে তাহলে সে বাঁচবে কী নিয়ে?

মনে মনে ভাবে, তবে কী তার পাপের শাস্তি শুরু হয়ে গেল! পরক্ষণে ভাবে এই মাঝরাতে মালতীকে নিয়ে সে যাবে কোথায়? এতরাতে তো কোন ডাক্তারও পাওয়া যাবেনা।

বিমল স্ত্রীর মাথা আবার মেঝেতে শুইয়ে রেখে দৌড়ে যায় পানি আনতে। ড্রইং রুম পার করে সোজা ডাইনিংয়ে আসে। জগ থেকে পানি গ্লাসভর্তি করে নিয়ে আবার ফিরে আসে। চোখে মুখে পানির ছিটে দেওয়ার সাথে সাথে চোখ কেঁপে ওঠে মালতীর। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর মালতীর জ্ঞান ফেরে। খুশিতে বিমলের চোখ চকচক করে ওঠে। সারা মুখে এক উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে পড়ে বিমলের। এ যাত্রায় হয়তো সে মালতীকে হারাবেনা।

এখনকার মত মালতীকে নিয়ে তার সমস্ত দুশ্চিন্তা কমে আসে। তবুও ঘটনা জানতে আতঙ্কিত স্বরে মালতিকে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছিল তোমার মালতী! এভাবে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালে কেন?”

মালতী তখনো ভয়ে একেবারে জবুথুবু হয়ে আছে। চোখগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হাত, পা এখনো অবশ। বিমল আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে মালতি ঘাড় ডানদিকে কাত করে মেয়ের ঘরের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়। আর সাথে সাথে আবার চিৎকার করে ওঠে। বিমল ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কী হলো মালতী, এভাবে চিৎকার করছো কেন! কী হয়েছে তোমার?”

মালতী কাঁপা কাঁপা হাতে আঙুল উঁচিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে ইশারা করে। বিমল মাথা তুলে সেদিকে তাকিয়ে কোন কিছুই দেখতে পায়না। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে মালতীকে সাবলীল ভাবে জিজ্ঞেস করে,

“তুমি কী কোনকিছু দেখে ভয় পেয়েছো মালতী?”

মালতি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

“ওখানে আমাদের মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো গো মৃন্ময়ীর বাবা!”

স্ত্রীর এমন অসংলগ্ন কথা শুনে বিমল আতঙ্কিত স্বরে বলে,

“কোথায়?”

“ওই যে ওইখানে বসে সেলাই মেশিন চালাচ্ছিল। আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মেশিনের শব্দ কানে আসতেই দাঁড়িয়ে যাই। আমি মৃন্ময়ীর ঘরের দরজা খুলি।”

“তারপর?”

মালতী কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“দরজা খুলে দেখি আমাদের মেয়ে মৃন্ময়ী সেলাই মেশিনে বসে কাপড় সেলাই করছে।”

“কী বলো এসব!”

“আমি সত্যি বলছি গো! মৃন্ময়ী আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে ছিল। প্রচন্ড রাগ আর ঘৃণা ফুটে ওঠেছিল ওর মুখে।”

স্ত্রীর মুখে সব শুনে বিমলের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। সে স্ত্রীকে কোনমতে বুঝিয়ে সেখান থেকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যাওয়ার সময় বিমল পেছন ঘুরে মেয়ের ঘরের দিকে আরেকবার চোখ বুলায়। কিন্তু এবারেও সে কোন কিছুই দেখতে পায়না। অথচ ঘরের ভেতর থেকে একজোড়া রক্তবর্ণ চোখ তাদের দিকে ঠিকই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

বিমল আর মালতী সেখান থেকে চলে যেতেই মৃন্ময়ীর ঘরের দরজা আপনা আপনিই ধুপ করে নিজে থেকে লেগে যায়। দরজা লাগানোর শব্দ বিমলের কানে না পৌঁছালেও মা মালতীর কান এড়ায়না। সেদিন রাতে তাদের দু’জনের কারও চোখে আর ঘুম আসেনি।

শ্রী বিমল সাহা আর শ্রী মালতী সাহা জন্মসূত্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর। হিন্দু সমাজে তাদের বেশ নামডাক আছে। তিন তিনটে স্বর্নের দোকান বিমলের। টাকা পয়সার কোন কমতি নেই তার। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে মৃন্ময়ী ছিল বড়। এবছর এস,এস,সি পরিক্ষা দিয়েছে মাত্র। এখনো রেজাল্ট আসেনি তার।

ছোট ছেলে জয় সবে ক্লাস ফাইভে উঠেছে। দুটো সন্তানই তাদের অত্যন্ত মেধাবী। গত পরশু সকালে বিমল দোকানে যাবার আগে জয়কে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে আসে। তারপর নিজে দোকানে গিয়ে বসে সে। মৃন্ময়ীর এস,এস,সি পরিক্ষা শেষ হওয়ার জন্য সে এখন বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই কাঁটায়। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। এদিকে মালতীও পূজোর ঘরে পূজোর কাজে ব্যাস্ত। হঠাৎ করে তার কানে গোঙানির কেমন যেন অদ্ভুত আওয়াজ আসতে থাকে। শব্দটা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে। মালতী দ্রুত হাতে পুজো শেষ করে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

মেয়ের ঘরের দরজার সামনে আসতেই তার হাত, পা জমতে শুরু করে। কারণ শব্দটা মৃন্ময়ীর ঘরের ভেতর থেকেই আসছিল। ততক্ষণাৎ তিনি জোরে জোরে দরজায় বাড়ি মারতে থাকে সেই সাথে মৃন্ময়ীকেও ডাকতে থাকে। কিন্তু মৃন্ময়ী ভেতর থেকে কোন সাড়া দেয়না। উল্টে গোঙানির শব্দ বাড়তে বাড়তে একসময় সব স্তব্ধ হয়ে যায়। উনি কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে দৌড়ে মেয়ের ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দাড়ায়।

দুইহাতে থাই গ্লাসের পাল্লা সরিয়ে উঁকি দিয়ে যা দেখে তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেননা। তিনি দেখেন মৃন্ময়ী ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে বিভৎস ভাবে ঝুলে আছে। এটা দেখে উনি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। জয় স্কুল থেকে ফিরে মাকে জানালার পাশে নিয়ে ওভাবে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। জানালা দিয়ে উকি মেরে নিজের দিদিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে আরও ঘাবড়ে যায়।

ছোট বাচ্চা কাঁদতে কাঁদতে পাশের বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনে। আশেপাশের সবাই দরজা ভেঙে  ভেতরে ঢুকে মৃন্ময়ীকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামিয়ে আনে। ততক্ষণে মেয়েটা না ফেরার দেশে চলে গেছে।

যে মেয়েটা সেই জন্ম থেকে নিজের মা, বাবাকে ছাড়া একটি রাতও বাইরে কাটায়নি আজ দুটো দিন সেই মেয়েটা বাড়িতেই নেই। মালতীর বুকটা হাহাকারে ভরে ওঠে।

গতকাল রাতের ঘটনার পর মালতী ও বিমল বেশ ভেঙে পড়ে। সারারাত জেগে ভোরের দিকে বিমলের চোখদুটো লেগে এসেছিল। কিন্তু মালতীর চোখে কোন ঘুম নেই।

মায়ের মনতো! সন্তানের অনুপস্থিতিতে বুকটা হাহাকারে ভরে ওঠে । একেতো শোকের বাড়ি তারউপর রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি তাই সকালে রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় চা বসিয়ে দেয়। মনের মধ্যে এক অজানা অনুভূতি হতে থাকে। মনকে কিছুতেই যখন আর শান্ত করতে পারছেনা তখন ধীরপায়ে মেয়ের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। দরজার কাছটায় এসে দরজা খুলতেই মালতী যা দেখে তা দেখার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলনা।

মৃন্ময়ী

মালতী দরজা খুলে দেখে, মৃন্ময়ী যে জায়গাটায় আত্মহত্যা করে ঝুলেছিল ঠিক সেই জায়গাতেই গলায় ফাঁস দিয়ে একইভাবে ঝুলে আছে। পার্থক্য একটায়, তখন মৃন্ময়ীর চোখ আধখোলা অবস্থায় ছিল আর এখন পুরোপুরি খোলা। তার থেকেও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, মৃন্ময়ী ঝুলন্ত অবস্থায় ঘাড় বেকিয়ে জিহ্বা অর্ধেক বের করে, চোখ মেলে মালতীর দিকেই তাকিয়ে আছে।

এটা দেখে মালতী আবার চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। আর এদিকে মৃত মৃন্ময়ীর মুখে ফুটে ওঠে এক অতৃপ্ত রহস্যময় হাসি।

 

পর্বঃ০২

ভর সন্ধ্যা বেলা বিমল বাবু শ্রাবণের বৃষ্টিতে কাকভেজা ভিজে বাড়ি ফিরেছেন। দোকান বন্ধ করেছিলেন অনেক আগে কিন্তু বৃষ্টির জন্য বাড়িতে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। সারা পায়ে কাঁদা মাখামাখি করে ফিরেছেন তিনি। বিমল বাবুর স্ত্রী মালতী বালতি আর মগ নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে এসেছে স্বামীর পা ধুয়ে দেবার জন্য। বাবার গলা শুনে জয় দৌড়ে ছুঁটে এসেছে।

“বাবা আমার জন্য কী এনেছো?”

কাঁধে ছাতা বাঁধিয়ে দ্রুততার সহিত পা ধুতে ধুতে বলে,

“দোকানপাট আজকে সব বন্ধ হয়ে গেছে বাবা, আজ আর কিছু কিনে আনতে পারিনি তোমার জন্য।”

জয়ের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলে বুক পকেট থেকে ভাজা বাদামের একটা প্যাকেট বের করে ছেলেকে পেছন থেকে ডাক দেয়। দুপুরে দোকানের সামনে থেকে দুই প্যাকেট বাদাম কিনেছিল। এক প্যাকেট খেয়ে অন্য প্যাকেট বুক পকেটে রেখে দিয়েছিল। সেটাই দিল জয়কে। বাদাম পেয়ে জয়ও খুশি মনে ঘরে চলে গেল।

সিঁড়ির উপর জুতা খুলে বাড়ির বারান্দায় উঠে সবে ছাতার মাথা বন্ধ করেছে। ওমনি বিমল বাবু দেখলেন, সাদা জামা পরে কোন একটা মেয়ে বাড়ির গাঁ ঘেঁষে গলির ভেতরে ঢুকে পড়ছে। পায়ের নুপুরের রিনিঝিনি ধ্বনি তখনো শোনা যাচ্ছে। শব্দটা খুব পরিচিত বিমলের। গেলো বার  জন্মদিনে বিমল মৃন্ময়ীকে যে নুপুরটা গড়িয়ে দিয়েছিল এটা তারই ধ্বনি। মৃন্ময়ী সারা বাড়িময় নুপুরের শব্দ তুলে হেঁটে বেড়াতো। বিমলের চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হয়নি। কিন্তু মৃন্ময়ীর নুপুর পরে কে হেঁটে যাচ্ছে এই ভর সন্ধ্যেবেলায়! তবে কী মৃন্ময়ীর নুপুর কেউ চুরি করে পালাচ্ছে?

চারিদিকে ততক্ষণ অন্ধকার আরও গাঁঢ় হয়েছে। বিমল ঘাড় ঘুরিয়ে স্ত্রী মালতীর দিকে তাকায়। মালতী চোখ কপালে তুলে বিমলের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। মালতী বুঝতে পেরে কিছু বলতে যায় তার আগেই বিমল তাকে থামিয়ে দিয়ে ছাতা পূর্বের ন্যায় মেলে জুতা পায়ে গলিয়ে দৌড়ে গলির মুখে গিয়ে হাজির হয়। মালতীও একবিন্দু সময় নষ্ট না করে আতঙ্কে ঘরের ভেতর গিয়ে জয়কে বুকে জড়িয়ে বসে থাকে। পুরো শরীর কাঁপছে তার। বিমল মেয়েটার পিছু নেওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু গলির মুখে এসে একটা বড়সড় ধাক্কা খায় সে। গলির ভেতর কোন মেয়ে নেই। পুরো ফাঁকা শুনশান অন্ধকার গলি। বিমল একটু চেঁচিয়ে গলা তুলে বলে,

“কে আছো গো ওখানে?”

ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ আসেনা। বিমল আবার চিৎকার করে বলে,

“কে ওখানে, কথা বলছোনা কেন?”

এবারেও কোন সাড়া আসলোনা। হঠাৎ নুপুরের শব্দ আবার ভেসে আসলো। তবে সেটা এবার গলির ভেতরে নয় বরং বাড়ির ভেতর থেকে শব্দটা আসছে। বিমল শব্দটাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতেই বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে ওঠে। কারণ শব্দটা এখন মৃন্ময়ীর ঘরের ভেতর থেকে আসছে। আর বিমল বাবু এখন মৃন্ময়ীর ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে। ভরসন্ধ্যে বেলা ঘরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হলেও বাইরের বিজলির ঝলকানিতে ঘর মাঝেমধ্যে আলোকিত হয়ে উঠছে।

আর সেই আলোয় বিমল ঘরের ভেতর দৃষ্টি দিতেই আৎকে উঠল। বিমল দেখলো, মৃন্ময়ী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ভাসমান অবস্থায় ঝুলে চোখ পাঁকিয়ে পাঁ দুলিয়ে রিনিঝিনি শব্দ তুলে মিটিমিটি হাসছে। তার চোখের রাগি দৃষ্টি সম্পূর্ণ বিমলের দিকে। এই দৃশ্য দেখার পর বিমল আর সেখানে স্থীর থাকতে পারেনা। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে মালতীকে ডেকেই ওখানে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।

জ্ঞান যখন ফেরে তখন রাত বাজে তিনটা। বিমল চোখ মেলে মালতীকে দেখে। পাশে ধীরে ধীরে চোখ ঘুরিয়ে জয়কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মনটা শান্ত হয়। বিমল যখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে তখন মালতী এসে তাকে অনেক কষ্টে ঘরে তুলে নিয়ে আসে। সেই কথা চিন্তা করলেও গাঁ শিউরে ওঠে।

“ভাত খাবা মৃন্ময়ীর বাবা?”

“না গো এত রাতে আর ভাত খাবোনা।”

“শরীরে এখন কেমন বোধ করছো?”

বিমল একটু নড়েচড়ে আড়মোড়া কেটে বলে,

“কেমন জানি গা ব্যাথা হয়ে আছে।”

মালতী একটু সতর্ক ভাবে বিমলের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

“তুমি কী কিছু দেখছিলে তখন?”

মূহুর্তে বিমলের চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে। চোখের সামনে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া মৃন্ময়ীর ঘরের দৃশ্য ভেসে ওঠে। চোখদুটো ভিজে ওঠে বিমলের। চাপা স্বরে আত্ম চিৎকার করে বলে,

“মালতী আমাদের মেয়েটা যে এবাড়িতেই আছে।”

মালতী মুখে আঁচল চাঁপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে,

“আমি তোমাকে আগেই বলেছি তুমি বিশ্বাস করোনি আমার কথা। মেয়েটা যে আমার এবাড়ি থেকে মুক্তি পায়নি। ও সবসময় আমাদের আশেপাশেই আছে। আমার সবসময় মনে হয় ও আমাদের দেখছে। কত যন্ত্রণা নিয়ে আমার মেয়েটা দেহ ত্যাগ করেছে। এত সহজে মুক্তি পাবে কী করে?”

“সব আমার জন্য হয়েছে। আমার দোষে আজ আমাদের আদরের সোনামণিটা আমাদের উপর অভিমান করে একা করে দিয়ে গেছে।”

মালতী কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। বাবা মায়ের কান্নার শব্দে জয়ের ঘুম ভেঙে যায়।

“তোমরা কাঁদছো কেন?”

মালতী দ্রুত গতিতে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“কিছুনা বাবা, তুই ঘুমা।”

“মা জানো, দিদি এসেছিল একটু আগে।”

মালতী চোখ কপালে তুলে বিমলের দিকে তাকায়। জয় বলতে থাকে,

“দিদি কত্ত সুন্দর হয়ে গেছে মা। সাদা জামা ছাড়া নাকি এখন আর অন্য কোন রঙের জামা পরেনা। আকাশে আকাশে নাকি ভেসেও বেড়াতে পারে। উড়ে উড়ে গাছের ডালেও বসে।”

“মালতী ডুকরে কেঁদে উঠে।

“তোকে এসব কে বললো?”

“কে বলবে আবার? দিদিইতো সব দেখালো এতক্ষণ। আচ্ছা মা, দিদিকে তোমরা এখন আর ভালোবাসোনা কেন?”

বিমল বিস্ময়ের সাথে বলে

“ভালোবাসি না মানে?”

“দিদি বলছিল, তোমরা নাকি ওকে আর আগের মত ভালোবাসোনা। ওকে দেখলে নাকি ভয় পাও। তাইতো ও তোমাদের সামনে আসতে চায়না। শুধু আমার কাছে আসে।”

মালতী চাপাস্বরে বলে,

“কোথায় তোর দিদি?”

জয় আঙুল উঁচিয়ে বলে,

“ঐ তো!”

বিমল আর মালতী দরজার দিকে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না। হঠাৎ মৃন্ময়ীর ঘরের সেলাই মেশিনটা নিজে থেকেই চলতে শুরু করে। তখন ঘড়িতে ভোর চারটে বাজে। জয়কে কোলে তুলে দুজনেই ছুটে যায় মৃন্ময়ীর ঘরে। মৃন্ময়ীকে দেখতে না পাওয়া গেলেও মৃন্ময়ীর মেশিনটা যে অবলীলায় চলছে সেটা ওরা দু’জনই দেখতে পেল।

মেশিনের উপর কে বসে আছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলনা। সামান্য একটু ভুলের জন্য আজ এই পরিবারটাকে এতটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কলেজের পুকুর পাড়টার গাঁ ঘেঁষে হেলান দিয়ে বসে আছে আজমল খানের একমাত্র ছেলে কুশান খান। একবুক হাহাকার নিয়ে পানিতে আনমনে ঢিল ছুঁড়ে চলেছে। মস্তিষ্কে স্মৃতিরা এখনো তাজা হয়ে আছে তার। দুদিন আগেও তার সাথে শেষ কথপোকথন হয়েছিল। গলার স্বর যেন এখন জীবন্ত কানের কাছে ভাসে। হাজার মানুষের ভীড় লেগে গিয়েছিল সেদিন। সাত গ্রামেও ওমন সুন্দরী একটি মেয়ে কেউ খুঁজে পাবেনা।

এমন কোন মানুষ ছিলনা যে একটিবার সেদিন মৃন্ময়ীকে শেষ দেখা দেখতে আসেনি। সবার মুখে শুধু সেদিন হাহাকার ছিল। একটি কথায় শুধু সবার মুখে ঘুরে ফিরেছিল। এত সুন্দর একটা বাচ্চা মেয়ে কি করলো এটা! বাপের একটি কথার জন্য জীবনটাই দিয়ে দিলো? চোখের পানি কেউ সেদিন আঁটকে রাখতে পারেনি। বাবা, মা সন্তানের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করেনা। অথচ মৃন্ময়ীর জীবনটা সম্পূর্ণ আলাদা গল্পে গেঁথেছিল ঈশ্বর। বাবা মায়ের জন্যই জীবন ত্যাগ করতে হলো তাকে। গ্রামের প্রতিটি মানুষ সেদিন ধিক্কার জানিয়েছিল এমন বাবা মাকে।

কিন্তু তার বিনিময়ে তো কুশান মৃন্ময়ীকে আর ফিরে পেলনা! ভাগ্যের জোরে সেদিন প্রেয়সীর মুখখানা শেষবারের মত দেখার সুযোগ হয়েছিল তার। এতটুকুকে সম্বল করেই বেঁচে আছে এখনো ছেলেটা। সারাদিন মরার মত পড়ে থাকে বাড়িতে। তাই আজ বন্ধুরা জোর করে কলেজে ধরে এনেছে। কিন্তু সে এখানে এসেও নির্বিকার। মৃন্ময়ীকে ছাড়া ওর মনে যে তুফান চলছে তা কী কারও চোখে পড়ছে? বিধাতা তো চেয়েছিলেন ওরা এক হোক, হয়েছিলোওতো।

তাহলে এটাও কী তিনি পারতেননা দুটি ভিন্ন ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে দুটি মানুষের মনকে এক করে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করতে?

 

পর্বঃ০৩

দেবপুর গ্রামে বসবাসরত বিমল সাহা ও মালতী সাহার একমাত্র মেয়ে মৃন্ময়ী। বিমলের আরও একটি আট বছরের ছেলে সন্তান আছে। চারজনের সুখের সংসার। বাজারে তিনটা স্বর্ণের দোকানও আছে। রমরমা ব্যাবসা তার। টাকা পয়সার অভাব কোনকালেই ছিলনা। অহংকরটাও তাই বেশিই ছিল। পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন দুইতলা বিশিষ্ট বাড়ি তৈরী করেছেন গ্রামে। মৃন্ময়ী অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে। আশেপাশের সাত গ্রামে খুঁজলেও অমন একটা সুন্দরী মেয়ে কেউ খুঁজে পাবেনা।

বাবার একমাত্র রাজকন্যা সে। যখন যেটা চায়বে বাবার কাছে সাথে সাথে সেটা সামনে হাজির হয়ে যায়। মালতীও মেয়ে অন্তপ্রাণ। মেয়ে কে চোখে হারায় সে। অমন সুন্দর মেয়ে ভালো না বেসে কী থাকা যায়?

“বাবা স্কুলে আজ আমার পরিক্ষার প্রথম দিন। ভালো রেজাল্ট করলে এবার আমাকে কী দেবে?”

“তোমার কী চায় বলো মা?”

অনেক ভেবে মৃন্ময়ী বলে,

“আমার একটা সুন্দর মোবাইল চাই বাবা!”

খাবার খেতে খেতে বিমল বাবু বললেন,

“মোবাইল দিয়ে কী করবে মা?”

“আমি ছবি তুলবো বাবা!”

“ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে মোবাইলই কিনে দিবো।”

ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হলো আজ। বাবার একমাত্র আদরের কন্যা তার প্রিয় বাবার কাছে একটা মোবাইল গিফট চেয়েছে। বাবাও মেয়ের আবদারে রাজি হয়ে গেছে। মৃন্ময়ী অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। পরিক্ষা শেষে খুব ভালো রেজাল্ট আসে। বাবার কাছ থেকে একটা ফোনও গিফট পায়।

সে কি খুশি মেয়ে! সকালে ফোন নিয়ে সোজা স্কুলে। নতুন ক্লাসে উঠেছে সেই সাথে নতুন ফোন। মৃন্ময়ীর খুশি এবার দেখে কে! স্কুলে ঢুকে সোজা পুকুর পাড়ের আম গাছের তলায় গিয়ে বসে।

“কুশান, বাবা আমাকে ফোন কিনে দিয়েছে দেখো!”

কুশান হাসিমুখে ওর ফোন হাতে তুলে নিয়ে দেখতে থাকে।

“যাক বাবা, এবার আর তোমার সাথে আমার যোগাযোগ করতে কোন সমস্যা হবেনা। যখন তখন মন চায়লেই ফোন করে কথা বলতে পারবো।”

“হ্যাঁ তোমার জন্যেইতো ফোন কিনলাম। না হলে এটা দিয়ে আমি কী করবো?”

প্রেমের শুরু অনেক আগে থেকে হলেও প্রেমটা পাকাপোক্ত হয় এই ফোন কেনার পর থেকেই। দিনরাত মৃন্ময়ী কুশানের সাথে কথা বলতে থাকে। স্কুলে গেলে দেখাতো হতোই। মৃন্ময়ীর মা যে ব্যাপারটা খেয়াল করেননি এমন নয়। তিনি বেশ কয়েকদিন যাবৎ মেয়েকে নজরদারিতে রেখেছেন।

প্রায় বছর খানেক হতে চললো ওরা চুটিয়ে প্রেম করেছে। সমবয়সী হওয়ায় সুযোগটা আরও বেশি পেয়েছে। গ্রামের মোড়লের একমাত্র ছেলে কুশান। তাই কোথায় কার সাথে কি করলো তা নিয়ে কেউ বেশি মাথা ঘামায়না। কুশান মুসলিম আর মৃন্ময়ী হিন্দু বলে কেউ ওদের তেমন সন্দেহের চোখেও দেখতোনা। যেহেতু একসাথে পড়াশোনা করে তাই বন্ধুরা একসাথে আড্ডাতো দিতেই পারে।

এতদিন সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও সমস্যা দেখা দিল মৃন্ময়ীর এস, এস, সি পরিক্ষার পর। এখনতো আর যখন তখন বাইরে বের হতে পারেনা। কুশান বের হলেও মৃন্ময়ীকে হাজারটা অজুহাতে বের হতে হয়। তারউপর সারাদিন ফোনে কথা বলে তাই মালতী তার স্বামীকে ব্যাপারটা জানায়।

একদিন মৃন্ময়ী বিকেল বেলা বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে মাকে পটিয়ে বেরিয়ে যায়। বিমলের সেদিন শরীরটা খারাপ থাকায় সেও দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখে মেয়ে বাড়িতে নেই। মালতীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে বান্ধবীর বাসায় গেছে। প্রথমে ব্যাপারটাকে অতটা আমলে না নিলেও যখন দেখলো দুই ঘন্টা পার হয়েছে মেয়ের বাড়িতে ফেরার কোন নামগন্ধ নেই তখন বিমল মালতীতে বসতে বলে বেরিয়ে পড়ে।

প্রায় আধাঘন্টা চারিদিকে খোজাখুজিও করে। বিমলের পরিচিত যারা মৃন্ময়ীর বান্ধবী ছিল সবার বাড়িতেও খোঁজ নেয়। কোথাও নেই মৃন্ময়ী। শেষমেশ স্কুলের সেই পুকুরপাড়ে মৃন্ময়ীর দেখা মিলে। সাথে আর কেউ নয় স্বয়ং কুশান। সন্ধ্যে প্রায় ছুঁই ছুঁই। গোধুলী লগ্নে দুজন আমগাছতলায় কাঁধে মাথা দিয়ে বসে পানিতে ঢিল ছুড়ছিল আর মধুর প্রেমালাপ করছিল। বিমল সোজা গিয়ে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে টেনে তোলে।

মৃন্ময়ী ভয়ে একেবারে চুপসে যায়। বাবার এমন রাগি রুপ আগে কখনো দেখেনি মৃন্ময়ী। বিমল কুশানকে দেখে আরও ক্ষেপে যায়। মুসলমানের ছেলে হয়ে একটা হিন্দু ঘরের মেয়ের সাথে কী করে এমনটা করতে পারে?

“তুই মোড়লের ছেলেনা?”

কুশান মাথা নিচু করে বলে,

“হ্যাঁ।”

“তোর বাপকে যদি এখন আমি সব বলি কী করবি তুই?”

কিশান দৃঢ়তার সাথে বলে,

“আমি মৃন্ময়ীকে ভালোবাসি। আপনি আব্বাকে বললেও আমার কিচ্ছু যায় আসবেনা।”

“হারামি বখে গেছিস? জানিসনা মৃন্ময়ী হিন্দু?”

“জানি।”

“জানিস যখন তখন আমার জাত খাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস কেন?”

বিমল একটা চড় বসিয়ে দেয় কুশানের গালে।

“বাবা তুমি ওকে মেরোনা।”

মৃন্ময়ী কাঁদতে কাঁদতে বলে।

“এত দরদ ওর জন্য? আর আমি যে তোকে এতো ভালোবেসে বড় করলাম! আমার কথাতো একবারও ভাবলিনা?”

“বাবা আমি ওকে ভালোবাসি।”

“চুপ আর একটা কথাও আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাইনা। চল আগে তুই বাড়ি।”

কুশানের দিকে মুুখ ঘুরিয়ে বলে,

“আর শোন তোর বাপকে আমি খবরটা জানাবো। দেখি তোর মোড়ল বাপ কি বিচার করে।”

বিমল কোনমতে মেয়েকে ওখান থেকে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে ঢুকে মালতীর সামনে মেয়েকে ছুঁড়ে মেরে দরজা জানালা সব বন্ধ করে।

“শোন মৃন্ময়ীর মা! মেয়ের পায়ে লাগাম দাও বলে দিলাম।”

“কী করেছে আমার মেয়ে বলবেতো?”

“মোড়লের ছেলের সাথে পিরিত করেছে তোমার মেয়ে। হাত, পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো আমি বলে দিলাম।”

ও বাবা তুমি এমন করছো কেন? ও আমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি বাবা। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা বাবা!”

“ওকে ছাড়া যদি তুই না বাঁচতে পারিস তাহলে তোর আর বেঁচে থাকতে হবেনা। আমি কী তোর জন্য এখন জাত, মান, কুল সব খোয়াবো? সমাজ আমাকে ত্যাগ করবে। আমি এ গ্রামে বাস করবো কী করে?”

“ও বাবা আমি নাহয় ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো!”

“শুনেছো তোমার মেয়ের কথা? একেবারে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তোমার মেয়ের। এই মেয়ের জন্য আমার আর বাইরে মুখ দেখানো লাগবেনা। ”

“মৃন্ময়ী তুই কী পাগল হয়ে গেছিস? ও মুসলমানের ছেলে তুই বুঝতে পারছিসনা?”

“মা আমি কোন মুসলমানের ছেলেকে ভালোবাসিনি। আমি কুশানকে ভালোবেসেছি।”

মৃন্ময়ী কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওর কান্না দেখে বিমলের বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে থাকে কিন্তু সে নিরুপায়। বুকে পাথর বেঁধে বলে,

“তুই ওই ছেলেকে ভুলে যা মা!”

কান্না জড়িত কণ্ঠে মৃন্ময়ী ওর মার হাত দুটো ধরে বলে,

“আমি কী করে ভুলবো ওকে মা! আমি যে ভালোবাসি ওকে!”

বিমলের মাথায় এবার রক্ত উঠে আসে। চোখ লাল হয়ে যায়।

“মালতী তোমার মেয়েকে সামলাও। আমি কিছুতেই তোমার মেয়ের জন্য সমাজচ্যুত হতে পারবোনা। দরকার পড়লে মেরে পুতে রেখে দিবো।”

মৃন্ময়ী কাঁদতে কাঁদতে অবাক হয়ে শোনে ওর বাবার প্রতিটি কথা। যে বাবার মুখ থেকে স্নেহভরা আদরমাখা কথা ছাড়া কোনদিন একটা শক্ত কথা শোনেনি সেই বাবা আজ বলছেটা কী?

মৃন্ময়ী চোখের পানি মুছে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“বাবা তুমি বলছো এই কথাগুলো?”

“হ্যাঁ আমি বলছি। আদরে আদরে তুই বাঁদর হয়ে গেছিস। আমার ভালোটা তুই এতদিন দেখে এসেছিস। প্রয়োজনে আমি কতটা খারাপ হতে পারি সেটা তুই জানিসওনা। আমি সাফ সাফ বলে দিচ্ছি, ঐ ছেলের সাথে যদি তুই আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস তাহলে তোর ঐ পোড়া মুখ আমাকে আর দেখাতে আসবিনা।”

“বাবা!”

“হ্যাঁ তোর মুখ যেন আমি আর না দেখি।”

বিমলের শেষের বলা কথাগুলো মৃন্ময়ীর বুকে গিয়ে বিঁধে। কানের চারপাশে বাজতে থাকে। বাবা যে ওকে এমন একটা কথা বলবে ও ভাবতে পারেনি কখনো। কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে থাকে ঘরে। বিছানায় মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কাঁদে।

 

(মৃন্ময়ী – এক অতৃপ্ত আত্মার গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ।)